নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত

আমোদিনীঃ বোধিপ্রাপ্তা
হ্যালো, তুমি কি গো আমু দিদি ,এভাবে বুঝি কেউ টেন্সান দেয়।সব্বাই কি চিন্তা করছে”ফোনের অপর দিক হইতে ক্ষোভ আসিয়া আমোদিনীর হাড় আর পিত্ত উভয়ই জ্বালাইয়া দিল।“ চার্জ ছিল না ফোনে,তাই আর ফোন করিনি।আমি বাড়ি ফিরেছি তখন প্রায় রাত বারো টা। ট্রেন লেট ছিল।তোরা সব্বাই ঘুমিয়ে পড়বি। আমি আবার ফোন করে বিরক্ত করবো।”কণ্ঠে মিষ্টত্ব লইয়া বলিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। মনের ভিতরে অন্য কথা গর্জন করিতেছিল।কাল রাত্রিকালে তাহার শয়ন করিবার উপযুক্ত কোন ব্যবস্থা ছিল না তাহার পিত্রালয়ে। সে না ফিরিয়া কি করিত।ফোন করিয়া তাহাদের চিন্তা ব্যক্ত না করিয়া যদি রাত্রি যাপনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করিত তাহা হইলে ভালো হইত।ফোনের মধ্য দিয়া তাহার কনিষ্ঠা ভগিনী অত্যন্ত রাগান্বিত কণ্ঠে বলিয়া চলিতেছে, “মেজকাকিমা দের ঘরে এক রাত থাকা যেত না? জামাইরা এসেছে তাদের তো একটু আলাদা ব্যবস্থা করতেই হবে।তুই খুব জ্বালাস।”“না চলে এলে আজকের কাজ গুলো হত না রে।” “চুপ কর, আমি সব বুঝি।তোর রাগ হয়ে গেল।তোকে জানতে বাকী নেই আমার।” “ওরে বাবা এই বয়সে আমার অত ভাব্বার বুদ্ধি নেই রে। এখন ব্যাংক যাবো। মাসকাবারি বাজার করবো।তোরা পরের সপ্তাহে আসিস।আমি ডাব-চিংড়ি খাওয়াবো”। ফোন কাটিয়া যাইল।আমোদিনী প্রবল চেষ্টা করিতেছে কোনরূপ কলহ বিবাদ যাহাতে না ঘটিয়া থাকে। তাহার একাকী জীবনের কষ্ট দুঃখ সে একা হজম করিয়া চলিবার চেষ্টা করিয়া থাকে।তাহার স্বামী একখানি ছোট গৃহ ভিন্ন জীবনে আর কিছু রাখিয়া যান নাই।তাহার গত হইবার পর আমোদিনীর কাছে তাঁহাকে লইয়া কোন সুখস্মৃতি নাই।পিত্রালয় তাঁহাকে আনন্দের হিসাবের মধ্যে রাখে না। যদিও কিছু বিকট পরিশ্রমের প্রয়োজনে তাহাকে অনুষ্ঠান গুলিতে ডাকিয়া লয়।তাহার পর সম্মানের খাতাটি তে যে তালিকা রহিয়াছে, সেখানে প্রায়শ নাম কাটা হইয়া থাকে। আমোদিনী ইহা তাহার বহু কালের অভিজ্ঞতা হইতে বুঝিয়া গিয়াছে।পিতা মারা যাইবার পরে তাহা আরও বাড়িয়া গিয়াছে।তাহার কষ্ট হইয়াছে এই কারণে কেহ চিন্তিত হয় নাই। সে তাহাদের নির্দিষ্ট শয়ন ব্যবস্থা কে মানিয়া না লইয়া চলিয়া আসিয়াছে। ইহা তে তাহাদের রাগ হইয়াছে।আমোদিনী ব্যাংক যাইল না। পা ছড়াইয়া টিভি দেখিতে লাগিল। 

নিজের যৎসামান্য খাবার রান্না করিয়া,খাইয়া,এক ঘুম দিয়াও দুপুর কাটিল না। 

বিকেলের দিকে পিত্রালয়ের জন্যে মন বিহ্বল হইল। 

কি কি আনন্দ হইতেছে,আরও কে কে আসিল, মা কি তাহার কথা মনে করিতেছে। মায়ের আয়া টিকে এক বার ফোন করিবে? মা যদি বিছানায় না পড়িয়া থাকিত তাহলে এতো খানি অপমান তাহার হইত না।তাহার চোখে জল আসিল।নিজের পুত্রের কথা মনে করিল।তাহার সহিত সম্পর্ক বড়ই খারাপ হইয়াছে। সে গৃহ বিক্রি করিয়া অর্থ দাবি করিতেছে।কিন্তু গৃহ ভিন্ন আর কিছু তাহার যে নাই। সে কোথায় যাইবে কিছুই সে বুঝিতে চাহে না। প্রতি মাসে একবার করিয়া আমোদিনীকে হুমকি দিয়া থাকে।পুত্রের আধুনিক সংসারে তাহার 

সম্মান জনক স্থান নাই। বাস্তবিক সমস্যাটি কাহাকে ও জানাইতে সক্ষম হয় না যে তাহার পুত্র তাহার পিতার ন্যায় বড় অমানবিক হইয়াছে। চোখ মুছিল আমোদিনী। ফোন করিল মায়ের আয়া কে। দুই বার রিং হইয়া গেল। 

সিরিয়াল গুলি সকল শেষ হইয়া গিয়াছে। এইবার শয়নের ব্যাবস্থাদি করিতে উদৌ্গী হইল আমোদিনী। অধুনা তাহার কিছু শুচিবাই হইয়াছে। বারংবার পা ধুইতে অনেক খানি সময় চলিয়া যায়। ফোন বাজিল। আয়ার ফোন। ফোন কাটিয়া আবার ফোন করিল সে। রাত্রিকালীন ভোজনকালে রুগ্না মা খোঁজ করিয়াছে আমোদিনীর। ফোনের অন্য পাড় হইতে মা কহিল, “ তুই না খেয়ে চলে গেলি। আজ কি ভালো আমড়ার টক হয়েছে কি বলবো।” আমোদিনী কহিল,“আমার টক সহ্য হয় না মা”। মা কহিল, “ তোর শসুর বাড়ি তে এই সব ভালো জিনিস খেতে জানে না। তুই ও ওদের সাথে থাকতে থাকতে আর ভালো জিনিস খেতে পারিস না।” মা আপন মনে বলিয়া চলিল।

মা ভুলিয়া গিয়াছে আমোদিনী একাকী দিনযাপন করে। তাহার স্বামী মারা গিয়াছে। তাহার মেধাবী কন্যাকে কেবল মাত্র রন্ধনশালার দক্ষতা ভিন্ন আর কোনকিছু দিয়া বিচার করা হয় না। আর পিত্রালয়ে তাহার কন্যা কে অন্য ভগিনীরা হিসাবে রাখে না, কারণ অর্থ খরচ করিবার সামর্থ্য তাহার খুব কম।ফোন নামাইয়া রাখিল আমোদিনী। প্রত্যহ সংবাদ মাধ্যম জানাইয়া থাকে একাকী বৃদ্ধ মানুষ পচিয়া গলিয়া বন্ধ গৃহে পড়িয়াছিল।সে আপন মনে হাসিয়া ফেলিল সে কদাপি কাহার মনোযোগ পাই নাই।তাহার মরদেহ হইতে যখন গন্ধ বাহির হইবে তখন লোকজন মনোযোগ দিতে বাধ্য হইবে। 

niveditaghosh24@gmail.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.