বিষয় দেখে ভির্মি খাচ্ছিলাম- কী লিখব! নঞর্থক লিখতে চাই না আমি। জীবনে না – কে বিশেষ প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব দিতে হয়। কিন্তু না- টাই সব নয়। বরং ভাবি মূল্যায়ন কী ! যে সব কাজ আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত করে যেতে হয় তা কতখানি দেশের দশের কাজে লাগল কতখানিই বা নিজের মঙ্গলে কাজে লাগল সেগুলোকেই হয়ত মূল্যায়ন বলি আমরা। পড়ার বইতে যেমন প্রতি অধ্যায়ের পরে সেখানে কী কী শেখা গেল তার ওপরে প্রশ্ন করা হয় রোজকার জীবনে আমরাও কি নিজেদের কাজের ভালমন্দ নিয়ে ভাবি? আমরা স্রেফ রোজ বেঁচে থাকি। এক বগগার মত যা যা কাজ করার সুযোগ আসে সেগুলো করে যাই। তারপর ক্লান্ত হলে ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু কাজের ফলাফল ভাবা গেল মন্দ হয় না কিন্তু। আমরা যারা অফিসে চাকরি করে বছরভর কাজের একটা খতিয়ান নিয়ে কনফিডেনশিয়াল রিপোর্ট তৈরী করে অফিস। তার ওপরে নির্ধারিত থাকে আমাদের প্রমোশন বা ডিমোশন। অথচ ব্যক্তি জীবনে কখনও ভাবি না এর গুরুত্ব।
আজকাল কেউ “পাপের” ভয় করে না। আগেকার দিনের সমাজে এটা কিন্তু বেশ ভাল একটা দিক ছিল। পুণ্য করলে স্বর্গলাভ আর পাপ করলে নরকবাস এই দুই পুরস্কার ও তিরস্কারের ব্যবস্থা। কিন্তু এখন আর ধর্মের চোখ রাঙ্গানিকে কেউ পাত্তা দেয় না। ফলে পাপের ভয় উঠে গেছে। সমাজে বিকৃতি বেড়েও গেছে দেখি। এ তো হবারই কথা। কেননা একটানা স্থিতাবস্থা কোনো বিষয়েই চলে না। সেইজন্যই ভগবানের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। অথচ মানুষ নিজের মনকে শিক্ষার মাধ্যমে গুরু বানিয়ে নিতেও শিখছে না। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। কাজের মূল্যায়ন হয় না বলে যারা খারাপ কাজ করতে চায় খারাপ কাজ করেই যায় আবার ভাল কাজ করতে চায় করেই চলে। অর্থাৎ নিজের ইচ্ছেয় যা এল তাই করো। কাউকে মান্য করার নেই। এতে ভাল মন্দ দুটো প্রভাবই পড়ছে। কেননা ভালর পথে চলার কাজ বরাবরই কঠিন। সংখ্যায় তাই ভাল কাজ কম চোখে পড়ে। টিভি খুললে কিংবা পত্রিকা পড়লে আজকাল কটা সদর্থক সংবাদ চোখে পড়ে তা বলুন না। তাই মানুষকে পুণ্যের লোভ কিংবা পাপের শাস্তির চোখ রাঙিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়ত একপক্ষে ভালই। সব মানুষের আত্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সমান দেখতে পাই না। সেক্ষেত্রে দুর্বল মানুষ কী করবে?
রোজ রাতে যদি ভাবি দিনটায় কীকী কাজ করলাম, এর মধ্যে গতানুগতিকতার বাইরে কী কী কাজ করলাম যাতে ব্যক্তি পরিবারসমাজ দেশ সব কিছুতেই উন্নতি হবার সম্ভাবনা। না হলে কুয়োর ব্যাঙ হয়ে যাবে মানুষ। আর সেটাই দেখছি চারপাশে। আপনি যে কোন দিন যে কোন টিভি সিরিয়ালের সংলাপ শুনুন। দেখবেন গতানুগতিক সংলাপ এবং নঞর্থক ঘটনাবলি। অর্থাৎ যে কাজ করলাম তার কোন ভাল দিক আছে কি না সেসব না ভেবেই সিরিয়াল করে যায়। মূল্যায়ন করলে ভাবার সুযোগ ছিল সেগুলি মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে কী না। ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে মা বাপ ঝাঁপিয়ে পড়ে মার্কশিটের ওপর। পাশাপাশি সে আত্মনির্ভরতা পরোপকার শান্তিপ্রিয় ইত্যাদি গুণ অর্জন করতে পারছে কি না সেটা ঢের জরুরী। অথচ সেকথা ওঁদের শেখাবে কে? তাঁরা বাপ-মা হয়েই ভগবান হয়ে গেছেন। তাঁদের যেন কোনো ভুল নেই। নিজেদের কাজের ঠিক ভুল নিয়ে ভাবতে বসলে অঘটন ঘটে না। এই সমাজে কিছুদিন আগে ঠাকুমার মৃত্যুর তিন দিনের মধ্যেই আয়োজন করা পার্টিতে কিশোর ছেলে আবেশের মৃত্যু ঘটে না। ঘরে ঘরে এত বিয়ে ভাঙে না। আমরা একে অন্যকে ভালভাবে না চিনেই পাশাপাশি সহাবস্থান করে যাচ্ছি। এতে আদৌ কী কোন লাভ হচ্ছে??? নিজেকে ও অন্যকে বিচার করতে শিখতে হবে। সহাবস্থান নয় সহ-মনা হলে সমাজ অনেক বেশি গ্রস্থিবদ্ধ উন্নত হবে। আর তার জন্য- চোখ রাখতে হবে খোলামেলা ও স্পোর্টিং। নিজের ভুল চিনে নিজেকে শুধরানোর কাজ হোক সবচাইতে কাম্য।
মূল্যায়ন সব সময় আগামী কাজের উন্নতি ঘটানোর সম্ভাবনা আনে। না হলে জীবনে শ্যাওলা পড়ে যাবে যে!
jayakc2004@yahoo.co.in
সুচিন্তিত মতামত দিন