তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
বহুরূপে অন্তরে আমার      -

আমার ভিতর অনেকগুলো তুমি আছে। তাতেই আমার সুখ বয়ে যায় নদীর মতো। সুখের সময়গুলো মেলে ধরলে যখন তখন ভোর হয়। কোন কোন তুমির অভ্যাস যেমন। বেশিটাই তো ধূসর পথের ধুলোয় ঢাকা, কখনও অনিচ্ছার প্লাবনে ডুবে থাকে কিছুদিন। তারপর জল সরে গেলে উৎসবের আকাশ থেকে শিশির এসে যখন মুখিয়ে থাকা ধানের শিষগুলিকে গর্ভবতী করে, তখনই আমি দেখতে পাই তুমিগুলোকে।

আসলে অনেকগুলো নয়, একটাই তুমি আছে নানারূপে। সেই ক্লাস ফাইভের ফার্স্ট বেঞ্চে বসা দু-বিনুনির তুমি স্কুল ছুটির পর বলেছিল আমার সঙ্গে চল, পোস্টাফিসে বাবা বসে আছে। বাবার কাছে পয়সা নিয়ে দুজনে আইসক্রিম খাবো। ক্লাস টেনের তুমি বলেছিল দাদার সঙ্গে আমাদের গ্রামে আসবে একদিন? জানি, বলতে চেয়েছিল, আমাদের বাড়ি আসবে একদিন? বলা সহজ ছিলনা। প্রাণের কথাও কেন যে বলা যায় না মুখে! তারপর কলেজের তুমি কে দেখে কতজন যে জ্যোৎস্নায় ভেসে গেছিল বেহিসেবি হয়ে! কিন্তু সে নিজের ক্লাস না থাকলেও একদিন কলেজে এসে বলেছিল আজ এসেছি শুধু তোর জন্য। তখন ক্যাম্পাসের গাছগুলি ভরে উঠেছিল ফুলে ফুলে। সিনিয়র দাদারা এসে বলেছিল আমার পত্রিকায় তোর কবিতা দে। স্টপেজে অনেকগুলি বাস এসে দাঁড়িয়ে বলেছিল তোমরা এই বাসে এসো।

তুমির আর এক রূপ, যার ঠোঁটে হাসিটি মোছেনা, আমাকে বলেছে অসীম শূন্যতা থেকে এনে দেবে অনন্ত বিরহ, যদি ভালোবাসি। বলেছে তুমি মানে অন্ধকার মহাশূন্যে সুর্যের সারি, ভগ্ন শহরে ইটভাঁটা।

আমার ভিতর সেই তুমি এক বয়ে চলা স্রোত। চোখ থেকে ঝরে পড়া জল আর মুখ থেকে ঝরে পড়া হাসির মিশেল। বহমান আত্মার মতন। আনন্দের অনন্ত যাপন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

নবীনতর পূর্বতন