রূপক সান্যাল

সাম্প্রতিক কালে শুধু যে কবি-সাহিত্যিক বা শিল্পী’দের সংখ্যাই বেড়েছে তা’ই নয়,সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছেন বিচারক-সম্পাদক-আলোচক-সমালোচক, এঁরাও। ফলে কে যে কার কাজকে ‘শ্রেষ্ঠ’ বানিয়ে দিচ্ছেন, আর কে হয়ে যাচ্ছেন ‘বিশিষ্ট’— এই তাৎক্ষণিক মূল্যায়ণের বিশ্বাসযোগ্যতাও খুবই ভঙ্গুর হয়ে উঠছে ক্রমশ।

শিল্পচর্চার অধিকার,লেখার অধিকার সবার আছে নিশ্চই। কিন্তু নিজের কাজের মান বিবেচনা না করে কেউ যদি শ্রেষ্ঠত্বের কিংবা ‘বিশেষ অধিকার’এর দাবী করে বসেন,আর তথাকথিত “বিচারকমণ্ডলী” যদি ‘মুখ দেখে মুগের ডাল’ পরিবেশনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন,তাহলে তা প্রকৃত শিল্পের প্রতি এবং শিল্পীর নিষ্ঠার প্রতি চুড়ান্ত অবিচার করা হয়। ধরা যাক,যদি কারুকে বর্তমান সময়ের পত্র-পত্রিকা কিংবা লেখক-কবিদের নিয়ে কিছু লিখতে বলা হয়,তিনি নিজের পছন্দের কিছু লেখকের নাম আর পরিচিত কিছু পত্রিকার নামের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। ব্যাস,তারপর সেটারই নাম হয়ে যায় প্রবন্ধ। অর্থাৎ ওই গণ্ডির বাইরে তাঁর যাতায়াত নেই,জানা নেই আর কোন তথ্য। কোথায় কে কোন সূক্ষ্ম যন্ত্রণাবিদ্ধ অভিজ্ঞতা চিত্রিত করে রাখছেন,কলমের কালিতে বা রঙ-তুলিতে,তার কোন খোঁজই পাওয়া যায়না সেসব লেখায়।

এসব কোন রাগ-দুঃখ-ক্ষোভের কথা নয়। যে সমাজব্যবস্থায় ‘চাটুকারিতা’ আজ প্রায় সর্বত্রগামী,সেখানে শিল্প-সাহিত্য এর আওতার বাইরে থাকবে, এমনটা আশা করা ভুল হবে। যদিও এই অবস্থার মধ্যেও কিন্তু কেউ কেউ একনিষ্ঠ চিত্তে শিল্প-সাহিত্যের চর্চা করে চলেছেন,কোন প্রকার ফুল-বেলপাতা-চন্দন আর কয়েক ডজন ঢাকের আওয়াজ থেকে বহু দূরে। তাঁদের জন্যই তো পথ চেয়ে বসে থাকি। ঠিক যেভাবে আমরা দু’ভাই-বোন উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে দূরের দিকে তাকিয়ে থাকতাম, মা’য়ের স্কুল থেকে ফেরার সময় হলেই।

পোশাকের ব্যবহার শুরু হয়েছিল লজ্জা নিবারণের জন্য। কিন্তু ক্রমশ তা যখন শোভাবর্ধক উপকরণে পরিণত হলো,তখন দেখা গেল,শোভা কতটা বর্ধিত হলো কে জানে,তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা লজ্জা নিবারণ করতেই ব্যর্থ হলো।

তবু শিল্পকর্মের প্রকৃত আর শেষ বিচারক ‘সময়’ এবং অবশ্যই পাঠক-দর্শক-শ্রোতা। তবে তাঁদেরও প্রশিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.