রঞ্জনকুমার সরখেল

বাংলা ছন্দের নবজাগরণ "ম্রৈত্যুয়িকী" : ১ম পর্ব
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে নতুন জোয়ার নিয়ে এল বিস্ময়কর "ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দ" এবং "ম্রৈত্যুয়িকী কবিতা"। ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দে কবিতা, ছড়া ও গান গড়েও যেমন মজা, তেমনি মজা পড়েও। স্বতন্ত্র গঠনের হলেও "ম্রৈত্যুয়িকী কবিতা" কিন্তু রস-সম্ভোগে অন্য সকল কবিতার মতই সমান উপভোগ্য। বাংলাদেশের কাজী মন্টু কলেজের বাংলাভাষা ও সাহিত্য (উচ্চশিক্ষা) বিভাগের বর্তমান বিভাগীয় প্রধান, প্রভাষক কালাচাঁদ মৃত্যু এই ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দ ও কবিতার উদ্ভাবক। তাঁর সম্পর্কে কিছু তথ্য এই প্রতিবেদনের শেষে দেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্বে "ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দ" নিয়ে আলোচনা করবো; দ্বিতীয় পর্বে "ম্রৈত্যুয়িকী কবিতা"।

প্রথম পর্ব :

"ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দ" আসলে এক যাদুকরী পঞ্চবৃত্তীয় মিতিপ্রধান ছন্দ অর্থাৎ একই সঙ্গে পাঁচটি ছন্দের সংমিশ্রণ। ছন্দগুলো হলো-- আক্ষরিক ছন্দ, বর্ণাভাস ছন্দ, দৃশ্যাক্ষরবৃত্ত ছন্দ, প্রাস্বরিক ছন্দ (সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত নির্মিত) এবং বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দ। এর মধ্যে প্রথম তিনটি ছন্দ আমাদের সকলেরই পরিচিত। প্রচলিত স্বরবৃত্ত বা দলবৃত্ত ছন্দকে কালাচাঁদ মৃত্যু বিজ্ঞানসম্মতভাবে "আক্ষরিক ছন্দ" বলে চিহ্নিত করেছেন। গবেষকের "ছন্দবোদ্ধা কবি: বিশ্বসাহিত্যে পদাঙ্কন" ও "বাংলা ছন্দের নামকরণ" শীর্ষক গবেষণাপত্রের প্রবন্ধের যুক্তি অনুসারে: প্রতিটি মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষরকেই এ ছন্দে একমাত্রা ধরা হয় বলেই "স্বরবৃত্ত" না বলে আক্ষরিক ছন্দ বলাই যুক্তিযুক্ত। তেমনি মাত্রাবৃত্ত বা কলাবৃত্তকে বর্ণাভাস ছন্দ, অক্ষরবৃত্ত বা মিশ্রকলাবৃত্ত ছন্দকে দৃশ্যাক্ষরবৃত্ত ছন্দ বলেছেন। ছন্দের এরূপ নামকরণের বৈচিত্র্য এই স্বল্প পরিসরে দেয়া সম্ভব নয়, অন্যত্র বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। 

বাংলা কবিতার এই তিন ছন্দ ছাড়া আরও দুটি ছন্দ আছে "প্রাস্বরিক" ও "বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক" ছন্দ। এই দুটি ছন্দই ম্রৈত্যুয়িকী কবিতা ও ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দের মূল বৈশিষ্ট্য। প্রাস্বরিক ছন্দে লেখা যে কোন একটি কবিতা রচনা করা মাত্রই তা বাংলা সাহিত্যে প্রচলিত আক্ষরিক ও বর্ণাভাস মূল এ দুই ছন্দসহ প্রাস্বরিক মিলে আপনিই ত্রিবৃত্তীয় ছন্দে গ্রন্থিত হয়ে যায়। বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দে রচিত একটিমাত্র কবিতা জুড়ে প্রচলিত তিন ছন্দসহ প্রাস্বরিক ও বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক সব মিলে পঞ্চবৃত্তীয় ছন্দের পরিমিতি স্বাভাবিকভাবেই পাওয়া যায়। এটাই ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দের বিশেষত্ব।

এর আগে দুটি ছন্দ একত্র করে বহু ছড়া-কবিতা যেমন-- স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত একত্রে স্বরমাত্রিক, স্বরবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত একত্রে স্বরাক্ষরিক এবং মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত একত্রে মিলিয়ে মাত্রাক্ষরিক ছন্দ নামে রচিত হয়েছে। কিন্তু একত্রে এক রচনায় পাঁচটি ছন্দের কাব্যচর্চা এখনো হয়নি। তবে ত্রিবৃত্তীয় প্রাস্বরিক ছন্দে কিছু চর্চা এর আগেও হয়েছে।

প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখছি, প্রাস্বরিক ছন্দরীতি কিন্তু বাংলা কবিতার নিজস্ব ছন্দ নয়। ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, ল্যাটিন, সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষার কবিতার ছন্দরীতি থেকে প্রাস্বরিক ছন্দ এসেছে বাংলা কবিতায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "রাজা" কবিতায় প্রাস্বরিক ছন্দের পরিচয় পাওয়া যায়--

"মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তারি সঙ্গে কি মৃদঙ্গে সদা বাজে।"

"এই লভিনু সঙ্গ তব" গানটি ছাড়া প্রাস্বরিক ছন্দের কাছাকাছি স্বরমাত্রিক আর কোনো পূর্ণাঙ্গ রচনা কবিগুরু করেননি। যদিও তাঁর বেশ কিছু রচনায় আংশিকভাবেই প্রাস্বরিক ছন্দের উপস্থিতি দেখা যায়। এরপর তাঁরই পরামর্শে ছন্দের যাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তই প্রথম সংস্কৃত ছন্দ 'মন্দাক্রান্তা'র প্রাস্বরিক রূপ দেন--

"পিঙ্গল বিহ্বল ব্যথিত নভতল কই গো কই মেঘ উদয় হও
সন্ধ্যার তন্দ্রার মূরতি ধরি আজ মন্দ্র মন্থর বচন কও।"

সত্যেন্দ্রনাথের সংস্কৃত মন্দাক্রান্তা ছন্দই তাঁর প্রথম প্রাস্বরিক প্রচেষ্টা। তাই তাঁকেই প্রাস্বরিক ছন্দের জনক বলা হয়। প্রাস্বরিক ছন্দ পাই তাঁর 'দূরের পাল্লা' ছড়াটিতেও--

"ছিপখান তিন-দাঁড়- / তিনজন মাল্লা
চৌপর দিন-ভর / দেয় দূর পাল্লা!"

এটি ইংরেজি দ্বি-স্বরপার্বিক Spondaic ছন্দের কবিতার ছন্দরীতির রচনা হলেও চরণশেষের মুক্তস্বরটি তাঁর নিজস্ব সংযোজন। এই ছড়াটিতে কবি প্রথম ছ'টি স্তবকে প্রাস্বরিক ছন্দ ব্যবহার করলেও পরের স্তবকগুলিতে একইরূপ প্রাস্বরিক মাত্রা প্রয়োগ করেন নি। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর রচিত 'ছন্দ-সরস্বতী' গ্রন্থে ইরান-আরবের বিভিন্ন ছন্দ প্রাস্বরিক ছন্দে বাংলায় রূপান্তরিত করে বাংলা কবিতায় এর সম্ভাবনা নির্দেশ করেন। কাজী নজরুল ইসলামও তাঁর 'আরবি ছন্দের কবিতা'য় ১৮টি আরবি ছন্দের প্রাস্বরিক রূপ দেন। তারমধ্যে 'রমল'-এর একটি উদাহরণ--

খামখা হাঁসফাঁস / দীর্ঘ নিশ্বাস
নাইরে নাই আশ / মিথ্যা আশ্বাস

উপরিউক্ত তিনজন ছাড়াও সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, বিজয়চন্দ্র মজুমদার, ভুবনমোহন রায়চৌধুরী, বলদেব পালিত, মহেষচন্দ্র শর্মা, মুহম্মদ শহীদুলাহ্, হরিমোহন মুখোপাধ্যায়, হরগোবিন্দ লস্কর চৌধুরী, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, যতীন্দ্রপ্রসাদ ভট্টাচার্য, গোলাম মোস্তফা, দিলীপকুমার রায়, সুনির্মল বসু, নিশিকান্ত রায়চৌধুরী, বিমলচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ ও কিছু অনামি কবিগণ ভিনদেশি বা ভিন্নভাষার ছন্দের অনুকরণে প্রাস্বরিক ছন্দে বহু রসসমৃদ্ধ ছড়া-কবিতা রচনা করে বাংলা সাহিত্যে নতুন এক উজ্জ্বলময় অধ্যায়ের সূচনা করে গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অত্যাধুনিক কবিগণের চর্চা ও বোধগম্যতার অভাবেই এই প্রাস্বরিক ছন্দের অপূর্ব সৃষ্টিগুলো আজও অনাদরণীয়। আধুনিক কবিদের ছন্দচর্চার বিমুখতাই সম্ভবত এর প্রধান কারণ। ছন্দবিহীন গদ্যনির্ভর অকাব্যের প্রতি অত্যধিক ঝোঁকও একটা কারণ হতে পারে। আবার কমবেশি কিছু অভিজ্ঞ ও পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের "তিন ছন্দের বাইরে কিছু নেই" নামক গোয়ার্তুমিপূর্ণ উক্তি ছুঁড়ে দিয়ে বাংলা সাহিত্যে এ ধরনের ছন্দচর্চাকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে।

যা-ই হোক, প্রসঙ্গে আশা যাক। "প্রাস্বরিক" ছন্দ ও "বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক" ছন্দ দুটি বুঝতে হলে প্রথমেই আমাদের একটু প্রাথমিক আলোচনা সেরে নেয়া প্রয়োজন। আমরা জানি ছন্দবিন্যাসের মূল চাবিকাঠি শব্দ, যা মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষরে বিভক্ত। মুক্তাক্ষরকে কেউ কেউ মুক্তস্বর বা মুক্তদল বলেও আখ্যায়িত করেন। তেমনি বদ্ধাক্ষরকে বলেন বদ্ধস্বর/রুদ্ধস্বর বা রুদ্ধদল। এখানে ধরে নিচ্ছি, পাঠকরা মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষর-এর সঙ্গে পূর্বপরিচিত। তবুও দুয়েকটি উদাহরণ এখানে দেওয়া যাক। যেমন-- "শহর" শব্দটি আমরা কীভাবে উচ্চারণ করি? "শ+হর্"। এখানে "শ" মুক্তাক্ষর (সংক্ষেপে 'মু') এবং "হর্" বদ্ধাক্ষর (সংক্ষেপে 'ব')।

এবার আসি প্রাস্বরিক ছন্দের কথায়। যে ছন্দে মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষর নির্দিষ্ট ছকে পর্যায়ক্রমে প্রতি পর্বে, প্রতি চরণে ও প্রতি স্তবকে সুসজ্জিত থাকে, তাকেই প্রাস্বরিক ছন্দ বলে।

এখানে পর্ব বলতে বুঝতে হবে কবিতার যে অংশটুকু একত্রে বা একবারে উচ্চারণ করা হয় তাকেই। যেমন-- "মম চিত্তে"; "তিন দাঁড়"; এগুলো একেকটি পর্ব। আর চরণ মানে আমরা সবাই জানি, যাকে ইংরেজিতে Line বলা হয়। "নির্দিষ্ট ছকে পর্যায়ক্রমে" কথাটি- বারবার একইরকম অক্ষরবিন্যাসকে বোঝায়। যেমন-- "মম চিত্তে" ভাঙলে উচ্চারণে আমরা কী পাই? "ম-ম চিত্-তে" এবং অক্ষরবিন্যাসে দেখতে পাচ্ছি-- "মু মু ব মু"। (মুক্তাক্ষর=মু; বদ্ধাক্ষর=ব)। এভাবে প্রতিটি পর্ব বা প্রথম চরণের প্রতিটি পর্ব যেভাবে রচিত হবে, সম্পূর্ণ ছড়া বা কবিতাটি সেই একই পর্ববিন্যাসে গঠন করতে হবে। তবে শুধু মুক্তাক্ষর দ্বারা গঠিত পর্ব সমন্বয়ে রচিত সমস্ত রচনাই 'প্রাস্বরিক/বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক' উভয় ছন্দরূপ লাভ করবে। প্রাস্বরিক ছন্দের মাত্রাসংখ্যা আক্ষরিক বা স্বরবৃত্ত ছন্দের মাত্রাসংখ্যার অনুরূপ। অর্থাৎ মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষর দুই-ই এক মাত্রা গণ্য। এবার রচনার প্রথম দুটি চরণের পর্বগুলোর বিন্যাসের দিকে নজর দেওয়া যাক--

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
ম-ম চিত্-তে / নি-তি নৃত্-তে / কে যে না-চে
(মু মু ব মু) (মু মু ব মু) (মু মু মু মু)

তারি সঙ্গে কি মৃদঙ্গে সদা নাচে
তা-রি সঙ্-গে / কি মৃ-দঙ্-গে / স-দা বা-জে
(মু মু ব মু) (মু মু ব মু) (মু মু মু মু)

এখানে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, ভাগ করে দেওয়া পর্বগুলো— এর দুটি চরণেই প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের গঠন একই এবং তৃতীয় পর্বদুটির গঠন অন্য হলেও দুটি চরণের সামগ্রিক গঠন এক। এবার দেখা যাক, উপরিউক্ত লাইনদুটিকে কোন কোন ছন্দে গণনা করা যায় এবং তা কী কী মাত্রা পেল! এখানে আক্ষরিক বা স্বরবৃত্ত ছন্দে এবং দৃশ্যাক্ষরবৃত্ত বা অক্ষরবৃত্ত ছন্দে দেখা যাচ্ছে সবক'টিই পূর্ণপর্ব ৪ মাত্রা করে পাচ্ছে এবং কোনো অপূর্ণপর্ব নেই। আর বর্ণাভাস বা মাত্রাবৃত্ত ছন্দে দুটি চরণেই প্রথমে দুটি পূর্ণপর্ব (৫ মাত্রা) ও শেষটি অপূর্ণপর্ব (৪ মাত্রা)। সুতরাং এই রচনাটিতে দেখা গেল একই সঙ্গে এই তিন ছন্দ ও প্রাস্বরিক ছন্দ মিলে চতুর্বৃত্তীয় ছন্দ সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো প্রাস্বরিক ছন্দে গঠিত কবিতায়ই কিন্তু চতুর্বৃত্তীয় ছন্দ পাওয়া যাবে না। আরেকটি রচনা দেখি--

ছিপখান তিন দাঁড় / তিনজন মাল্লা
ছিপ্-খান্ তিন্ দাঁড়্ / তিন্-জন্ মাল্-লা
(ব ব ব ব) (ব ব ব মু)

চৌপর দিন-ভর / দেয় দূর পাল্লা
চউ-পর্ দিন্-ভর্ / দেয়্ দূর্ পাল্-লা
(ব ব ব ব) (ব ব ব মু)

সম্ভবত আর বিস্তৃত লিখে বোঝাবার প্রয়োজন নেই। এখানেও প্রতি চরণে ছন্দের মাত্রাবিন্যাসে দেখা যাচ্ছে-- আক্ষরিক ছন্দ ও প্রাস্বরিক ছন্দ- (৪+৪/৪+২); বর্ণাভাস ছন্দ- (৪+৪+৪+৩) মিলে এখানে ত্রিবৃত্তীয় ছন্দ গঠিত হয়েছে। লক্ষণীয় যে, "চৌপর দিনভর" (৩+৪) হওয়ায় দৃশ্যাক্ষরবৃত্ত ছন্দে মাত্রাবিন্যাস করা সম্ভব হল না বলেই এটি ত্রিবৃত্তীয় ছন্দের রচনা, চতুর্বৃত্তীয় হয়নি।

এবার আসা যাক বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দের আলোচনায়। এটিই বাংলা ছন্দের অভিনব নামকরণ। সংজ্ঞায় বলা যায়-- যে ছন্দে যুক্তবর্ণ, মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষর নির্দিষ্ট ছকে পর্যায়ক্রমে প্রতি পর্বে, প্রতি চরণে ও স্তবকে সুসজ্জিত থাকে, তাকেই বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দ বলে। পাঠককে বলবো উপরিউক্ত 'প্রাস্বরিক ছন্দ'-এর সংজ্ঞাটি আর একবার পড়ে এই সংজ্ঞাটি আবার পড়ুন। দেখতে পাবেন এখানে 'বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক'-এর সংজ্ঞায় একটি মাত্র শব্দ সংযোজন হয়েছে-- 'যুক্তবর্ণ'। আর সবই এক। অর্থাৎ প্রতিটি পর্বগঠনের সময় এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে-- পর্বের যেখানে 'যুক্তবর্ণ' আছে, প্রতি পর্বে সেখানেই বাধ্যতামূলক 'যুক্তবর্ণ' রেখে পর্ব গঠন করতে হবে। আর সমস্ত কৌশল হুবহু প্রাস্বরিক ছন্দের মতোই। এখানে আরেকটি কথা উল্লেখ্য যে-- যুক্তবর্ণ বর্জিত পর্ব দ্বারা গঠিত সমস্ত প্রাস্বরিক ছন্দই 'বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক' ছন্দে উন্নীত হবে। প্রাস্বরিক ও বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দের মাত্রাবিন্যাস একই। অর্থাৎ আক্ষরিক বা স্বরবৃত্ত ছন্দ, প্রাস্বরিক ছন্দ ও বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দ সবার ক্ষেত্রেই মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষর দুই-ই একমাত্রা-সমান গণ্য।

কালাচাঁদ মৃত্যু
এখানে একটা কথা জানিয়ে রাখার প্রয়োজন বোধ করছি যে, পৃথিবীর কোনো দেশে, কোনো ভাষার কাব্য সাহিত্যে এই বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দের উল্লেখ নেই। এই-ই প্রথম— কবিপ্রজন্মের পথি-কৃৎ শ্রদ্ধেয় কবি কালাচাঁদ মৃত্যুই এর উদ্ভাবক ও প্রবর্তক রূপে আবির্ভূত হলেন বাংলা কাব্য সাহিত্যে। এই ছন্দে কাব্য রচনা করা মাত্রই তা আকস্মিকভাবেই রচয়িতার অজান্তে পঞ্চবৃত্তীয় ছন্দে গঠিত হবে। আমি এই অভিনব ছন্দের নামকরণ উদ্ভাবকের নামের সঙ্গে মিলিয়ে "ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দ" বলে অভিহিত করলাম।

এ ছন্দকে উদাহরণ সহযোগে বিশ্লেষণ করতে অবশ্যই আমাদের সাংকেতিক অবলম্বন প্রয়োজন হবে। যুক্তবর্ণকে এর পূর্বে কোন ছন্দেই কেউ আলাদাভাবে মূল্যায়ণ না করায় এর ভিত্তি কখনো তৈরি হয়নি। যুক্তবর্ণের আলাদা ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নতুন এই বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক বা ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দে মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষর আমরা চার ধরনের পাবো। উদাহরণে বলা যায়-- 'আকাশ' শব্দটিতে 'আ' সাধারণ মুক্তাক্ষর এবং 'কাশ্' সাধারণ বদ্ধাক্ষর। আবার 'দন্ত' (দন্+ত) শব্দটিতে একটি যুক্তবর্ণ (ন্ত) থাকায় অক্ষরদুটি সংযুক্তরূপ ধারণ করেছে— এখানে 'দন্' সংযুক্ত বদ্ধাক্ষর ও 'ত' সংযুক্ত মুক্তাক্ষর। আমরা বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দের সাংকেতিক চিহ্নগুলো প্রভাষক মৃত্যু'র গবেষণাপত্র "ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দ-বলয়" থেকে নেয়া হয়েছে; যাতে প্রত্যেকেই অনুরূপ সংকেত ব্যবহার করতে পারে এবং তাতে সকলের চর্চারও সুবিধা হবে। গবেষক উপরিউক্ত চার ধরনের অক্ষরকে নিম্নরূপ বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক সাংকেতিক চিহ্নে বিন্যস্ত করেছেন--

সাধারণ মুক্তাক্ষর (v); সাধারণ বদ্ধাক্ষর (—);
সংযুক্ত মুক্তাক্ষর (u); সংযুক্ত বদ্ধাক্ষর (÷)

এবার নিম্নের তিনটি শব্দ দিয়ে এই সংকেতগুলো আবারও বুঝে নেওয়া যাক। 'আকাশপাতাল', 'উড়নচণ্ডী ও 'অন্তরঙ্গ' শব্দ তিনটি দেখা যাক--

আকাশপাতাল = আ+কাশ্-পা+তাল্ = (v—v—)
উড়নচণ্ডী= উ+ড়ন্+চণ্+ডী = (v—÷u) 
অন্তরঙ্গ = অন্+ত+রঙ্+গ = (÷u÷u)

আশা করি পাঠক অক্ষরবিন্যাস ও বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দের সাংকেতিক চিহ্নগুলো ভালোমতো বুঝতে পেরেছেন। প্রয়োজনে আবারও বুঝে নিন কেন না, এরপর শুধু এ ছন্দে সাংকেতিক চিহ্নই ব্যবহৃত হবে।

আঁকে মৃত্যু নব ছন্দ,
করে লব্ধ কী আনন্দ!
প্রাস্বরিক গঠন : পূর্ণপর্ব- (vv÷u)

উপরের লাইন দুটি আমারই লেখা একটি ছড়ার অংশ বিশেষ। সাংকেতিক চিহ্ন অনুসারে মেলালে এর প্রতি পর্বে একই গঠন পাওয়া যাবে অর্থাৎ বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক রীতিতে গঠিত এটা একটি ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দের ছড়ার অংশবিশেষ। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই পুরো রচনাটি একই গঠনে হতে হবে। কবিতা বা ছড়া যে কোনো ধরনের রচনাই হোক না কেন তা যদি বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দরীতি মেনে রচিত হয় তাকেই ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দের কবিতা বলা হবে। মনে রাখতে হবে— ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দে গঠিত সকল রচনাই আক্ষরিক, বর্ণাভাস, দৃশ্যাক্ষরবৃত্ত, প্রাস্বরিক ও বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক এই পাঁচটি ছন্দের সংমিশ্রণে সৃষ্ট একটিমাত্র রচনা।

স্বর, অক্ষর, লয়-তাল প্রভৃতি বিন্যাসভেদে যেমন বিভিন্ন ধরণের ছন্দ আছে, তেমনি ছড়া-কবিতার কাঠামোগত বিন্যাসে বহুরকম কবিতা আমাদের পরিচিত। যেমন-- গৈরিশ, ত্রিপদী, চতুর্দশপদী প্রভৃতি। বহু ভিনদেশি ও অন্যভাষার কবিতাও বাংলায় রচনা হয়ে থাকে। যেমন-- সনেট, লিমেরিক, হাইকু, রুবায়েত প্রভৃতি। এই সকল ছড়া বা কবিতা যে কোনো একটি ছন্দের গঠনে গঠিত হয়ে থাকে। যদি এ ধরণের কোনো কাঠামোর কবিতা বা ছড়া ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দে অর্থাৎ বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দরীতি মেনে গঠিত হয়, তবে তা অবশ্যই পঞ্চবৃত্তীয় ছন্দে গ্রন্থিত হবে। এক্ষেত্রে ওই বিশেষ কাঠামোর রচনাটির নামের আগে 'ম্রৈত্যুয়িকী' কথাটি যোগ করে নতুন রূপটি চিহ্নিত হবে। যেমন-- ম্রৈত্যুয়িকী গৈরিশ, ম্রৈত্যুয়িকী ত্রিপদী, ম্রৈত্যুয়িকী সনেট, ম্রৈত্যুয়িকী লিমেরিক প্রভৃতি।

'ত্রিপদী' খুবই জনপ্রিয় একটি গঠনকাঠামো। প্রায় সকল কবিই 'ত্রিপদী' রচনা করে থাকেন। এটি আক্ষরিক, বর্ণাভাস বা দৃশ্যাক্ষরবৃত্ত— এর যে কোনো একটি ছন্দে গঠিত হয়। 

আমি পরিকাঠামো ঠিক রেখে 'বিলাপ' নামে একটি ত্রিপদী কবিতা ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দে লিখলাম। ফলে আমার রচনা একটি ছন্দের পরিবর্তে পঞ্চবৃত্তীয় ছন্দে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই এটি চিহ্নিত হয়েছে "ম্রৈত্যুয়িকী ত্রিপদী" নামে। কবিতাটির অংশবিশেষ নিচে দিলাম। এখানে পরিসরের অভাবে প্রথম চরণের দুটি অংশ দুটি লাইনে রাখা হলো:

জ্যোৎস্না আঁকি রৌদ্র খাই, রাত্রে জাগি অন্তে নাই--
চন্দ্র আমি সূর্য নই;
বক্ষ খুঁজি ছত্র নাই, প্রান্ত দেশে জ্যান্ত যাই--
গুল্মজাতি বৃক্ষে রই।

শিক্ষা খুঁড়ি চর্চা চাই, যদ্দিনে না মৃত্যু পাই--
ছাত্র সাথি বিজ্ঞ মই;
ছন্দ ছড়া রপ্ত তাই, অন্ধ দিনে শান্তি পাই--
দুগ্ধপচা শুদ্ধ দই।

শ্রুতিঅন্ত্যমিল : ককখ/ককখ [সহধ্বনির পার্থক্যসৃষ্ট অন্ত্যমিল]

নিচে পঞ্চবৃত্তীয় মিতিপ্রধান ছন্দবিন্যাস দেখুন:

বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দগঠন: পূর্ণপর্ব-(÷uvv); অপূর্ণপর্ব-(÷u—)

আক্ষরিক/প্রাস্বরিক/বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দ: পূর্ণপর্ব-৪; অপূর্ণপর্ব-৩

বর্ণাভাস: পূর্ণপর্ব-৫; অপূর্ণপর্ব নেই এব দৃশ্যাক্ষরবৃত্ত : পূর্ণপর্ব-৪; অপূর্ণপর্ব নেই

বোঝাই যাচ্ছে, উপরের "ম্রৈত্যুয়িকী ত্রিপদী"টি ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দে গঠিত হওয়ায় মূলধারার তিনটি ছন্দ ছাড়াও প্রাস্বরিক ছন্দ ও বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দসহ মোট পাঁচটি ছন্দের সংমিশ্রণে পঞ্চবৃত্তীয় ছন্দের মর্যাদা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, "ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দ" বাংলাকাব্যের স্থিরতাকে ভেঙে এক গতিশীল প্রবাহে বাংলা কাব্যজগৎকে প্রভাবিত করবে। সারা বিশ্বের বাংলা কবিতার নবজাগরণ ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দ। তবে আর দেরি কেন? কলম তুলে আপনার পছন্দসই কাঠামোর কবিতা-ছড়া লিখুন ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দে। লিখুন ম্রৈত্যুয়িকী ত্রিপদী, ম্রৈত্যুয়িকী চৌতালা; লিখুন ম্রৈত্যুয়িকী চতুর্দশপদী বা ম্রৈত্যুয়িকী সনেট। ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দে লেখা হোক-- আরবি, ফার্সি, সংস্কৃত, ইংরেজি, ল্যাটিন ছন্দসহ রুবায়েত, শায়েরি, রমল, পদ্য, ছড়া, পাঁচালী, গান, অনুবাদকবিতা, গদ্যকবিতা, অষ্টছকঅনু, হাইকু, তানকা, লিমেরিক, ছড়াক্কা, শামেরিক, বাংলা লতিফা, ট্রিলোয়েট/তেপাটি, তের্জারিমা— যা ইচ্ছে!

নিচে ছন্দগবেষক, ছন্দসম্রাট কালাচাঁদ মৃত্যু'র একটি 'ম্রৈত্যুয়িকী সনেট' দিয়ে প্রথম পর্ব সমাপ্ত করব। তার পূর্বে জানিয়ে রাখছি—পরবর্তী পর্বে থাকছে "ম্রৈত্যুয়িকী কবিতা"। এক বিশেষ গঠনে তৈরি হয় ম্রৈত্যুয়িকী কবিতা। উদাহরণ ও নিয়মসহ তারই ব্যাখ্যা থাকছে দ্বিতীয় পর্বে (আগামি সংখ্যায়)।

ম্রৈত্যুয়িকী সনেট

স্বপ্নভ্রম

কালাচাঁদ মৃত্যু

বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দ-গঠন: vv—÷uvv/vvvv—

অন্ত্যমিল: কখখক: গককগ:: ঘগগঘ: কক

সীমাহীন ঋদ্ধহাসি হেসেছি যে দিন,
পৃথিবীর সৃষ্টিকূলে মায়াবী বাতাস

পেল প্রাণ মুক্তি দিতে; ভুলে উপবাস
আমি এক স্বপ্ন ছুঁয়ে করে গেছি ঋণ!

মহাকাল-গর্ভ ফুঁড়ে এনেছ আমায়;
কত সুখ মূর্ছা গেল, পেল না জীবন

অভিশাপ, নিন্দা ছাড়া—শুধু আমরণ
সয়ে যাই বন্দিদশা শিকলে টানায়...

নিরাশার সঙ্গী হয়ে ঘুরেছি আঁধার;
কেন এই মিথ্যাচারে মজে বেদনায়

পরাধীন মৃত্তিকাতে গড়েছি আলয়?
এত সুখ, দীর্ঘনদী কে আছ বাঁধার!

আছে কার সাধ্য চোখে লাগাবে আগুন?
অসহায় গুপ্তবিষে হয়ে যাবে খুন...



মাত্রাবিন্যাস:

প্রস্বরিক, বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ও আক্ষরিক ছন্দ: ৭+৫

দৃশ্যাক্ষরবৃত্ত: ৮+৬ বর্ণাভাস: ৯+৬

কবিতাটির প্রতি চরণের বর্ণক্রম দেখুন:

১ম, ২য়, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম, ১১ তম অক্ষর (v): সাধারণ মুক্তাক্ষর 

৩য় ও ১২ তম অক্ষর (—) সাধারণ বদ্ধাক্ষর

৪র্থ অক্ষর (÷) সংযুক্ত বদ্ধাক্ষর

৫ম অক্ষর (u) সংযুক্ত মুক্তাক্ষর 

দৃশ্যাক্ষর বর্ণক্রমে ৬ষ্ঠ বর্ণটি যুক্ত।

গবেষকের পরিচিতি : "কালাচাঁদ মৃত্যু" ছদ্মনাম বা ডাকনামেই তিনি সর্বত্র পরিচিত। তাঁর প্রকৃত নাম: এমডি. সেলিম চৌধুরী। অন্য ছদ্মনাম : কৃষ্ণাশশি, কৃষ্ণেন্দু। তিনটি ছদ্মনামেরই একই অর্থ : Black Moon. পিতার নাম: আনোয়ার হোসেন চৌধুরী; মাতার নাম: চৌধুরী সুমি বিবি। জন্মস্থান: গ্রাম: পশ্চিমপাড়, কলেজ রোড, কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ। জন্ম তারিখ: বঙ্গাব্দ: ২ পৌষ, ১৩৮৯ (খ্রি. ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮২) বৃহস্পতিবার। বর্তমান নিবাস: গ্রাম: পিত্তলপাড়া, ডাক: ছিকটিবাড়ি, উপজেলা: কোটালিপাড়া, জেলা: গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ। স্কুলশিক্ষা: মদনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিয়াভাঙ্গা; বাগান উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিকিরবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোটালিপাড়া; কানাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানাইপুর, ফরিদপুর; কানাইপুর কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়, ফরিদপুর; কোটালিপাড়া পাবলিক ইনস্টিটিউশন, সিকিরবাজার; বালিয়াভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়; কমলকুঁড়ি বিদ্যানিকেতন, কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ; এসএসসি: কোটালিপাড়া পাবলিক ইনস্টিটিউশন, সিকির বাজার; এইচএসসি: কোটালিপাড়া শেখ লুৎফর রহমান সরকারি কলেজ; বিএ-অনার্স (বাংলা): সরকারি রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ফরিদপুর ও ঢাকা কলেজ, ঢাকা (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধীনে); এমএ (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য) : ঢাকা কলেজ, ঢাকা (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধীনে); এমএ (আইসিটি) : ঢাকা কলেজ, ঢাকা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণাসমূহ: বাংলা ছন্দের নামকরণ, ছন্দবোদ্ধা কবি: বিশ্বসাহিত্যে পদাঙ্কন, ধ্বনি-বর্ণের বিরোধাবাস, স্বরধ্বনির মৌলিকত্ব, গণিত গবেষণা, বস্তুবাদী দর্শন, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থ, প্রাণি ও উদ্ভিদবিজ্ঞান গবেষণা: উৎস: ফেসবুক: 'Kalachand Mrityu'। ★ বাংলা কাব্যসাহিত্যে যে সব কাঠামো ও ছন্দ গবেষণা করে আবিষ্কার করেছেন: ১। পরিবেষ্টন মিত্রাক্ষর; ২। সমুদ্রবেষ্টন; ৩। বর্ণাদ্যক্রম; ৪। স্বরাদ্যক্রম; ৫। উল্টোরথ; ৬। সমাক্ষারাদ্য; ৭। ক্রমযোগাক্ষরা; ৮। ক্রমহ্রাসাক্ষরা; ৯। বর্গাক্ষরা; ১০। ম্রৈত্যুয়িকী; ১১। ষটষ্টাদশী; ১২। ত্রিপঞ্চকী; ১৩। দশপ্তকেন্দু; ১৪। চন্দ্রৌনিশি; ১৫। শ্রুতিবৃত্ত ছন্দ; ১৬। দৃশ্যাক্ষরবৃত্ত ছন্দ; ১৭। বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক ছন্দ; ১৮। মুক্তক অমিত্রাক্ষর; ১৯। বর্ণক্রম-প্রাস্বরিক সনেট; ২০। একান্ত্যানুপ্রাসিকী। ২১। মুক্তক সনেট; ২২। পরিবেষ্টন সনেট। পেশা: নাট্যকর্মী, কোটালিপাড়া নাট্যকলা একাডেমি; ১৯৯৮, ফরিদপুর থিয়েটার; ২০০৩, নাট-নালন্দা; ঢাকা ২০০৪ থেকে ২০১০, সহকারি শিক্ষক: উমাচরণ সার্বজনীন উচ্চ বিদ্যালয়, ছিকটিবাড়ি; ২০১০, উমাচরণ পূর্ণচন্দ্র সার্বজনীন উচ্চ বিদ্যালয়, দেবগ্রাম, কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ ২০১১-১৩। বর্তমান পেশা: প্রভাষক, বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, (উচ্চশিক্ষা শাখা), কাজী মন্টু কলেজ, ভাংগারহাট, কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ২০১৩ থেকে। সম্পাদিত পত্রিকা: প্রত্যাশা, ২০০৩-০৪; অলঙ্কার, ২০০৪-০৫; অগ্নিবার্তা, ২০০৪-২০১৩; হৃদয়ে কোটালীপাড়া, ২০১২। সম্পাদিত গ্রন্থ: Rules of Fill in the Blanks, ঢাকা, বাংলাদেশ, ২০০৮। তাঁর লেখা যে যে পত্রিকায় ছাপা হয়েছে— ইত্তেফাক, ইনকিলাব, কালের খেয়া, মাতৃমুক্তি, ভোরের রানার, ধুপছায়া, চাঁদকণ্ঠ, বেতার বাংলা, অগ্নিবার্তা, সন্ধ্যাতারা, ঝিলিক প্রভৃতি । অনলাইন পত্রিকা ও ফেবু গ্রুপের নাম সমূহ: fb: Kalachand Mrityu; ছন্দের পথে রস ও অলঙ্কার, কবি ও কবিতার আসর, ছন্দ কবিতার অনুশীন'সহ অনেক ফেবু গ্রুপে লেখালেখি চলমান। ছকানু, অনলাইন প্রকাশনা, ছন্দ কবিতার অনুশীলন ম্যাগ। শখ: সাহিত্য ও বিজ্ঞানচর্চা এবং নতুন নতুন উদ্ভাবন। লক্ষ্য: শিক্ষকতা, সাহিত্যসেবা। এককথায় জীবনদর্শন (self quote) : জীবন হোক মৃত্যুর মতোই অবিনশ্বর।

তথ্যসূত্র : (১) বাংলা ছন্দের নামকরণ; (গবেষণামূলক প্রবন্ধ); কালাচাঁদ মৃত্যু; ২০০৪; প্রত্যাশা পত্রিকা, বাংলাদেশ। (২) ছন্দবোদ্ধা কবি: বিশ্ব সাহিত্যে পদাঙ্কন (গবেষণামূলক প্রবন্ধ); কালাচাঁদ মৃত্যু; ২০০৫; সবুজ বাংলা পত্রিকা; বাংলাদেশ। (৩) ম্রৈত্যুয়িকী ছন্দ-বলয় (গবেষণামূলক প্রবন্ধ); ২০১৬; ছন্দের পথে রস ও অলঙ্কার (বর্তমানে যন্ত্রস্থ); সত্যারতি, কলকাতা, ভারত। (৪) রবীন্দ্র রচনাসমগ্র; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; প,ব, সরকার, ভারত। (৫) গীতবিতান; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; বিশ্বভারতী, ভারত। (৬) ছন্দ-সরস্বতী; সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। (৭) আরবি ছন্দের কবিতা (প্রবন্ধ); কাজী নজরুল ইসলাম; চৈত্র ১৩২৯; প্রবাসী পত্রিকা, ভারত। (৮) ছন্দ-সমীক্ষণ, আবদুল কাদির; নভেম্বর ২০০১; শিখা প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা, বাংলাদেশ। (৯) কুসুমে বসবাস; হাসান আলীম; বইমেলা ২০০৩; স্বচ্ছন্দ প্রকাশন; ঢাকা, বাংলাদেশ।

rksarkhel72@gmail.com



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.