জয়া চৌধুরী

!!আনন্দ!!

ঠিকানা বদল হয় যায়, যায়ই। যে ঠিকানায় জীবন কাটায় মানুষ সে ঠিকানা থাকে না মরে গেলে। চাও না চাও ঠিকানা বদলাবেই। তবু মায়া থাকে লেগে । সে মায়া ঠোঁটের কোনের লেগে থাকা সন্দেশের কিংবা বর্ষার ধোয়া পায়ের কড়ে আঙুলের ফাঁকের কাদাটুকুর মত ... যেভাবে মায়াকে দেখবে তুমি। চারদিকে কী অসম্ভব আনন্দ! এত আনন্দের ছররায় মাথা ঘুরতে থাকে বনবন করে। বাজারে অটোয় বাসে যেতে যেতে এখানে প্যান্ডেল ওখানে মাইক... আজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কাল বেবিদার প্রয়াণবার্ষিকী পরশু মাননীয় কানকাটা ফেকব্রত বাবুর স্থানীয় বাসস্টপ উদ্বোধন তার পরের দিন নিরিমিষ যাবে? তাও কী হয়? অক্তদান শিবির করা যাক। তারপর? সংগৃহীত রক্ত কোথায় যায়? সে পরে ভাবা যাবে আগে তারস্বরে আনন্দ করা যাক। তারপরের দিন? কালোসোনা বাবুর মায়ের ছেরাদ্দে লোক খাওয়ানো হচ্ছে। এর পরেও হরিসভা । অষ্টপ্রহর প্রীতম অরিজিত জিতের গানের সুরে হরিনাম। 

এর পরে হতে পারে বিশেষ ছাড়! পকেট কাটা বিপণী খোলার উল্লাসে মাইকের চিতকার। ইলিশ উৎসব ফিনিশ উৎসব কম পড়লে পাপড় ভাজা উৎসব হতে পারে। আনন্দ খুব আনন্দ সব জায়গায়। সারাক্ষণ ছেনি হাতুড়ি দিয়ে আনন্দের অনুভব ঢোকানো হচ্ছে কানে মনে মননে... যেমন করে গরুকে মোটা সূচ ঢুকিয়ে ইঞ্জেকশন দেয় ভেট। শপিং মলে গেছলাম। ঢুকতেই আঃ কী ঠান্ডা ভেতরটা! মন আগেই ফুর্তিতে গরগর করছিল। বিগ স্ক্রিনে প্রসেঞ্জিত উত্তমকুমারের পুরনো গান গাইছে, স্মুদলি এলিভেটর উঠে যাচ্ছে সেসব দেখতে দেখতে। উঠছে ভোগের দিকে আনন্দের দিকে। এক এলিভেটর শেষ হলে আরো উঁচুতে পরম লক্ষ্যে আর একটি এলিভেটর। এত আলো উচ্ছ্বাস ডিসকাউন্টের মাঝে দাঁড়িয়ে হাউহাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করল। এত আনন্দ কী এতটুকু বুক নিতে পারে? 

এই যে লেখাপড়া করে সংসারের নিজের মুখ উজ্জ্বল করল মায়ের দুধের বাছা মেয়েটা... তাকে তো ধর্ষণ করে দিল বারোটা ছেলে। ওরাও আনন্দ করছিল নিশ্চয়! যারা ক্ষেত খামারে কাজ করছিল তারাও যোগ দিয়েছিল সে আনন্দে। ওই যে ভিখিরি আশি বছুরে বুড়ি! রক্তের সর্বাঙ্গ ভিজে হাসপাতালে পড়েছিল যে। “মা” বলে ডেকে তাকে নিয়ে গেছিল গো । পাশে ঝোপে। “মা” এর যৌনাঙ্গে ধর্ষণ করেছিল সে। তারপর কাচ ও ঢুকিয়ে দিচ্ছিল যখন তখন নিশ্চয়ই ওঁর দারুণ আনন্দ হচ্ছিল! বৃন্দা দুপুরে সাড়ে বারোটা বেজে যায় ঘর মোছে মাথা হেঁট করে। সেই কাক ভোরে জল খেয়ে কাজে বেড়িয়েছিল সে। কিচ্ছুটি খায় নি। বাড়ি ফিরে জল তুলে রান্না চাপিয়ে চান করে দুটি খাবে। রাতেও দুট খাবে। মানে ২৪ ঘন্টায় সে দুবার খায়। দু বার??? সে তো অনেক... কত লোক একবারও খেতে পায় না দূর দূর গ্রামের গভীরে যেখানে লাইট নেই ফ্যান নেই। চাষ নেই। পাম্প চালানোর দরকারও নেই। কিচ্ছু নেই। কিচ্ছুর দরকারই তাঁদের নেই। কিন্তু মোবাইল আছে। সারাদিনেরাতে একবার খায় কত কত লোক এ ভারতে? তাতে কী হয়েছে? মডেলরা রোগা থাকার জন্য কত কৃচ্ছ্রসাধন করে! অমন না খেয়ে থাকা তারা আনন্দ করেই করে। ওঁরা কেন আনন্দ পায় না তাহলে? এত আনন্দ চারপাশে। ভাল আছে আমার চারপাশ। ভাল আছে সব্বাই। 

আনন্দ ব্রহ্মেতি ব্যাজানাত
আনন্দাদ্ধেব খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে।
আনন্দেন জাতানি জীবন্তি
আনন্দং প্রয়ন্ত অভিশং বিশন্তিতি।

সে আনন্দই ব্রহ্ম। আনন্দ থেকে এই সকল জাত। যখন জন্ম নেয় তখন আনন্দে থাকে। যখন লয় পায় আনন্দে প্রবেশ করে। আনন্দেই বিলিয়মান হয়।

তবু বেয়াড়া জল গড়াতে থাকে চোখ বেয়ে। পড়ুক। গঙ্গার অববাহিকায় থাকি আমরা। জলের গতি নিম্নমুখী। অত আমল দিলে চলে?


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.