বেলা এগারোটা বেজে গেছে অথচ নমিতার দেখা নেই। দেখা নেই কথা বলা ভুল বলা ভালো উঠোনটা ঝাড় দেওয়ার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না, যা শুনে মনে প্রাণে বল আসে যে তিনি এসেছেন, তিনি এসেছেন কর্মক্ষেত্রে। মুখটা ভার করা দেখে অনিরুদ্ধ তার স্ত্রী অবন্তী কে খানিক ব্যঙ্গ করে বলল... 'তোমার দেখা নাই রে , তোমর দেখা নাই '! কথাটা শোনা মত্রই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে বছর চল্লিশের অবন্তী। সাথে সাথেই বলে সে, 'সকাল থেকে ক কাপ হলো? বেসিনের কাপ গুলো তুমিই নিশ্চয়... '
একটা যে ফোন করবে নমিতা কে, সে সময়টুকুও হাতে নেই অবন্তীর। সকালের বাসী বাসন কোসন থেকে শুরু করে ব্রেকফাস্টের লুচি,বাঁধাকপির তরকারি তারপর ঘর-দোর পয় পরিষ্কার, উঠোন ঝাট পাট (পড়ুন যা সবচেয়ে বিরক্তি কর) কাজের ফাঁকে সময় কোথায় তার, নমিতার খোঁজ নেবার? না বলে কয়ে হঠাৎ হঠাৎ এরকম ছুটি অবন্তীর একঘেয়ে জীবনের স্বাদ বদলও বলা যেতে পারে। দুপুরে ইদানিং ঘুম হয়না অবন্তীর, সে মোবাইল ঘাঁটে, বই পড়ে তারপর উঠে আসে চায়ের কাপ হাতে। কিন্তু নমিতা না এলে দুপুরটাতে একটা দুর্দান্ত ঘুম হয় অবন্তীর। বিকেল হয়ে যায় সে ঘুম ভাঙতে । সেদিন অনি ছুটি থাকলে চা করে বৌ কে খাওয়ায়, যাতে সান্ধ্য কালীন আবার একটা সুন্দর স্ন্যাক্স অবন্তী তৈরি করতে পারে তার অগ্রীম আপ্যায়ণ আর কি ! কিন্তু আজ তো অফিসের দিন ! বৈকালিক সবুজ চা টা খেতে খেতে অবন্তী টের পেল পাড়ার মোড়ে মাইক লেগেছে, গানের কলিরা মাইক টেস্টিং এর জন্যে ভেসে আসতে থাকে... ' উরি উরি যায়, উরি উরি যায়, কিম্বা ' স্বোয়াগ সে করেঙ্গে সব কা স্বাগত '। অবন্তী ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাতে থাকে ! বিশ্বকর্মা পুজো ? না তো এখনও তো চারদিন বাকী ! তবে কি ...
এদিকে অবন্তী লক্ষ্য করে দেখেছে নতুন স্কচ বাইট খোলা হলেই কাকতালীয় ভাবে নমিতা কামাই কাই করবেই। এই ভয়ে অবন্তী পুরনো স্কচবাইট দিয়েই সাত আটমাস চালায়। কি কু ক্ষণে গত কালকেই একটা স্কচবাইট খুলেছিল সে কে জানে ! এ সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে আঙ্গুলের এক স্পর্শে স্যোসাল মিডিয়াতে ঢুকে পড়েই হক চকিয়ে যায় সে। রিক্যু পাঠিয়েছে নমিতা। সাথে সাথে অ্যাকসেপ্ট করতেই ম্যাসেজ আসে ইনবক্সে.. ' বৌদি ছরি গো। কাল গণেশ চতুর্থী তো তাই পাড়ার পুজোর কাজে ব্যস্ত আছি দুদিন পরসু যাচ্চি ।'
নমিতা ক্লাস সেভেন পাশ সেটা অবন্তী জানে। কিন্তু সে যেটা জানে না তা হলো গণেশ পুজো বাঙালীদের এতটা প্রাণের পুজো হলো কবে থেকে ! এটা তো মারাঠীদের পুজো। ওদিকে দরজায় বেল বেজেই চলেছে ! আচমকা জ্ঞানে ফিরে পাওয়ার মতোন দরজা খুলতেই পাশের ফ্ল্যাটের পম্পা বলল 'দিদি চলো পাড়ার মোড়ে ঠাকুরএসেছে। দেখবে চলো'! অবাক হয়ে তাকায় অবন্তী। কিসের ঠাকুর ? কি পুজো ? কিছুই বোঝে না সে। পাশ থেকে পম্পা বলে ওঠে 'গণেশ পুজো গো দিদিভাই, বেশ বড় করে হচ্ছে এবার। নাচ , গান, আবৃত্তি হবে। নতুন ঐ এপার্টমেন্টের লোকেদের হুজুগে এসব হচ্ছে গো , চলো দেখে আসি'। অবন্তী মনে মনে ভাবে বাঙ্গালী সত্যিই উদার অভিযোজনকারী। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার নামই তো জীবন-সংঘর্ষ।
নমিতা ক্লাস সেভেন পাশ সেটা অবন্তী জানে। কিন্তু সে যেটা জানে না তা হলো গণেশ পুজো বাঙালীদের এতটা প্রাণের পুজো হলো কবে থেকে ! এটা তো মারাঠীদের পুজো। ওদিকে দরজায় বেল বেজেই চলেছে ! আচমকা জ্ঞানে ফিরে পাওয়ার মতোন দরজা খুলতেই পাশের ফ্ল্যাটের পম্পা বলল 'দিদি চলো পাড়ার মোড়ে ঠাকুরএসেছে। দেখবে চলো'! অবাক হয়ে তাকায় অবন্তী। কিসের ঠাকুর ? কি পুজো ? কিছুই বোঝে না সে। পাশ থেকে পম্পা বলে ওঠে 'গণেশ পুজো গো দিদিভাই, বেশ বড় করে হচ্ছে এবার। নাচ , গান, আবৃত্তি হবে। নতুন ঐ এপার্টমেন্টের লোকেদের হুজুগে এসব হচ্ছে গো , চলো দেখে আসি'। অবন্তী মনে মনে ভাবে বাঙ্গালী সত্যিই উদার অভিযোজনকারী। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার নামই তো জীবন-সংঘর্ষ।
ghoshsilvia2@gmail.com
সুচিন্তিত মতামত দিন