২য় পর্ব। ঝটিকা সফর / চাম্ফাই – জোখাথার- রি ডিল
খজল থেকে সকালে ৮টায় রওনা দিয়েছি। রাস্তার একটা দোকানে করে নিলাম সকালের নাস্তা। আর্তুই, থিম্পুই, চাং আর সচিয়ার দিয়ে। আজ অনেকটা পথ। চাম্ফাই হয়ে আজ যাচ্ছি ভারত মায়ানমার সীমান্ত শহর জোখাথারে। তারপর জোখাথার থেকে মায়ানমারের রি-ডিল লেকে। চাম্ফাই ঢোকার কিছুটা আগে থেকেই প্রকান্ড চওড়া রাস্তা। এশিয়ান ডেভেলপমেন্টের টাকায় নতুন কনস্ট্রাকশন হচ্ছে। কাজ চলছে। শুরু হতে লেগে যাবে আরো দু এক বছর। ফোরওয়ে লেন। এখনো ম্যাকাডেমাইজ হয় নি। প্রকান্ড চাম্ফাই উপত্যকায় অনেক রাস্তা এদিকে ওদিকে প্রসারিত। ড্রাইভার জোসা এই রাস্তায়, এই প্রথম। একে ওকে জিজ্ঞাসা করে পথের হদিস নেয়। চাম্ফাই ছেড়ে আবার কিছুটা উপরে উঠে এসেছি। টয়লেট করার জন্য রাস্তার একপাশে গাড়িটাকে দাঁড় করাই। এখান থেকে ছবির মত লাগ জোখাথারকে। সাপের মত টিয়াউ নদী এঁকেবেঁকে প্রসারিত হয়েছে দুপাশের শৈলশিরাকে বিভাজিত করে। এপাশে ভারত আর ওপাশে মায়নমার।
চাম্ফাই থেকে জোখাথার ২৮কিমি। এটাই ভারত-বার্মা সীমান্ত শহর। বার্মার সাথে বানিজ্যের নিরিখে আইজলের পরেই চাম্ফাই জেলা। সীমান্ত সড়ক পেরিয়ে ভারতে আসে ইলেকট্রিক তার, প্রতিদিনের নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী, স্মার্ট ফোন, ইলেকট্রনিক গেজেট, জুতো, চশমা, যন্ত্রপাতি, টিউবলাইট আরো অনেক কিছু। অন্যদিকে ভারত থেকে সার(ইউরিয়া), জর্দা, মোটরসাইকেল বেবিফুড, সাইকেল, পেস্টিসাইড, ওষুধ, LPG গ্যাস, সোলার প্যানেল ওপারে যায় । LPG গ্যাসের দাম ওপারে খুব বেশী। ভারতীয় টাকায় ১৪.২কেজি সিলিন্ডারের দাম প্রায় ৩৫০০টাকা। ভারতীয় সীমা বরাবর মায়ানমারের ৩০০কিমির মধ্যে টিড্ডিম, ফ্যালাম, ক্যালিমিও শহরগুলিতে ভারতীয় পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা। সরকারের খাতায় প্রায় ৫০টির মত এক্সপোর্ট কোম্পানীর নাম নথিভূক্ত থাকলেও হাতে গোনা দু একটি কম্পানি মায়ানমারের সাথে বৈধ ভাবে আমদানী রপ্তানি করে। সরকারকে বৈধ করে দিয়ে সারা দিনে হয়ত দু একটা সুপারি বোঝাই ট্রাক ওপারে যায়, কিম্বা ওপার থেকে নিয়ে আসে সফটড্রিংস। জোখাথারের এপার ওপারে যা ব্যবসা চলে তা পুরোটাই প্রায় অবৈধ। ৫১০কিমি দীর্ঘ ভারত-বার্মা সীমান্তে, মিজোরামে প্রায় ১৫টি মত ক্রস বাউন্ডারি ট্রেডিং রুট আছে। কাঁটাতার বিহীন এই সীমান্তের সবচেয়ে বেশী অংশ আবার চাম্ফাই জেলাতেই। বস্তুতপক্ষে ভারতের জোখাথারে আর মায়ানমারের খাওয়াইমাই শহর দুটির মধ্যে সীমান্তের কোন অস্তিত্বই নেই। চেকিং ছাড়াই এপার থেকে ওপারে আর ওপার থেকে এপারে লোক আসছে। স্থানীয় নিয়ম অনুসারে সকাল ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উভয় দেশের নাগরিক বৈধ ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই অন্যদেশের ৪০কিমির মধ্যে যাতায়াত করতে পারে।
চাকা লাগানো একধরণের ঠেলা গাড়িতে করে কিছু রসুন এপার থেকে ওপারে যাচ্ছিল। আমরা তখন টিয়াউ নদীর ব্রীজের ওপর। পেট্রলের একটা বড় তেলের ড্রাম গড়িয়ে গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল বেশ কিছু বর্মী যুবক। ব্রীজের একপাশে, ভারতের দিকে একটা কংক্রিটের তোরণ। প্রবেশদ্বার। তেরঙা কালিতে লেখা- visit again। পাশেই আর্মি চেকপোস্ট। ছবি তুলতে নিষেধ করে এক জোয়ান। ভয়ে ভয়ে মোবাইল ক্যামেরা পকেটে ঢোকাই। জোখাথারের উত্তরে মনিপুরে মরি দিয়ে ভারত সরকার যে এশিয়ান হাইওয়ে নির্মান করেছে মায়নমারের সাথে আন্তর্জাতিক বানিজ্যের জন্য। সেই পথে মনিপুর ও নাগাল্যান্ডের উগ্রপন্থীদের ইনসারজেন্সী লেগেই থাকে। কখনো কখনো ট্রাক পিছু এই উগ্রপন্থীরা ৫০০০০টাকা পর্যন্ত কর নেয়। এই সব ঝুঁকি এড়াতে ব্যবসায়ীরা মিজোরামকেই বেছে নিয়েছে। ১৯৮৬র মিজো চ্যুক্তির পর থেকে এই অঞ্চল যথেষ্ট শান্তিপূর্ণ। সুপরিকল্পিত পরিকাঠামো ছাড়াই এখানে যে অবৈধ বানিজ্যের প্রসার ঘটেছে তার কারণ নিহিত আছে মিজো জাতিসত্ত্বায়। অনুমান প্রায় ৩০০০০মত বর্মী রয়েছে মিজোরামে। একই ভাবে অনেক মিজোরই রক্তের সম্পর্ক রয়েছে সীমান্তের ওপারে।
লোহার ব্রীজটা পেড়িয়ে মায়ানমারে চলে এসেছি ততক্ষনে। ব্রীজ পার করে হাতে ডানদিকে মায়ানমারের কাস্টম অফিস। ভারপ্রাপ্ত একজন পদস্থ অফিসার আমাদের সচিত্র পরিচয় আর ইনার লাইন পারমিট দেখতে চায়। জন প্রতি ২০টাকা করে এন্ট্রি ফি। ভারতীয় টাকায়। অদ্ভুত । কাস্টম অফিস ভারতীয় টাকাই নিয়ে নিলো। অফিসারটি এক বর্নও ইংরেজী জানে না। ভাগ্যিস জোসা ছিল। নাহলে ভাব বিনিময় করতাম কিভাবে? আমাদের গাড়ি ওপারেই রেখে এসেছি। গাড়ি নিয়ে মায়ানমারে প্রবেশ নিষেধ। শুধু পায়ে হেঁটে। চেকপয়েন্ট থেকে রি ডিল লেক ১২কিমি রাস্তা। একটা গাড়ি না হলে অতটা পথ যাবো কিভাবে? খাওয়াইমাই শহরে পাবলিক ভেইকেল বলতে বাইক। এমনটা আগে জানা ছিল না আমাদের। স্থানীয় ভাষায় কথা বলে জোসা ততক্ষনে ঠিক করে ফেলেছে তিনটি বাইক। জোসাকে দিয়ে আমরা ছয়জন। প্রতিটি বাইকে দুজন করে। বাইক পিছু ৪০০টাকা করে ভারতীয় টাকায়। আমরা তাতেই হ্যাঁ করে দিলাম। এছাড়া কোন উপায় নেই। ডোঙ্গা, পাশিহা, মাঙ্ঘাকা এই তিনজন আমাদের বাইকচালক। আমি আর তিস্তা ডোঙ্গার বাইকে। প্রবীর আর রাই পাশিহার বাইকে। সোনা আর জোসা মাঙ্ঘাকার বাইকে। ফোর্থ গিয়ারে গোঁ গোঁ শব্দ করে বাইক আমাদের নিয়ে সোজা শৈলশিরার উপরে উঠে যাচ্ছে ...... কিছুটা আসার পরেই পাহাড়ের উপর থেকে দেখতে পেলাম সেই স্বর্গীয় দৃশ্য। ছবির মত রি-ডিল। এবারে ঢালু পথে বাইক আবার নামতে থাকে শৈলশিরার বিপরীত পার্শ্বে। নেমে এলাম রি-ডিলের তলদেশে। চারপাশে প্রচুর লোকের সমাগম। প্রতিদিনই এখানে অনেক লোক আসে মায়ানমারের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। বাচ্চারা স্নান করছে। বড়োরা সেলফি তুলতেই ব্যস্ত। কেউ কেউ পার্কের মত সামনের লনে বসে আছে। যতদূর চোখ যায় অসীম জলরাশি ...... আমরাও তুললাম কিছু গ্রুপ ছবি ডোঙ্গা, পাশিহা, মাঙ্ঘাকার সাথে। মানুষগুলো একদিন হারিয়ে যাবে। কিন্তু ছবিগুলো থেকে যাবে। যে ছবি কোনদিন সূত্রধরের মত স্মৃতি মনে করিয়ে দেবে। নতুন দেশ ... নতুন নিয়ম ... নতুন আদব কায়দা। ডোঙ্গা, পাশিহা, মাঙ্ঘাকা বাইকে স্টার্ট দেয়। আমরা ফিরে আসি আবার চেকপোস্টে। ইচ্ছে হলো একটু মায়ানমারের খাবার খেতে। কিন্তু কি খাবো? যে দোকানে যাচ্ছি, সেকানেই বিয়ার আর মদ। সাথে বাচ্চা গুলো আছে আমাদের । তাই অগত্যা এক দোকানে কোনমতে চা আর একপ্লেট চাউমিন খেয়ে ফিরে এলাম জোখাথারে।
রি-ডিল দেখে চাম্ফাইতে যখন ফিরলাম তখন বিকেল ৪টা। রাস্তাতেই বুক করে ফেললাম দুটো ঘর। চাম্ফাই ট্যুরিস্ট লজ। সন্ধ্যা নামতে আরো কিছুটা বাকি। জোসাকে মুরা পুকের কথা বলতেই জোল্টাং স্পোর্টস কমপ্লেক্সকে বাঁদিকে রেখে গাড়ি ঘোরালো। চাম্ফাই থেকে জোটে গ্রাম প্রায় ৬কিমি। চাম্ফাই কোর্টের মধ্যে দিয়েই রাস্তা। ৬কিমি যাওয়ার পরে রাস্তা আর নেই। ট্রেক পথে পায়ে পায়ে সামনের দিকে এগোতে থাকি। এখান থেকে চাম্ফাইকে ছবির মত লাগে। । চাম্ফাই উপত্যাকা হঠাৎই অরুনাচলের মেচুকা উপত্যকার কথা মনে করিয়ে দিল। কি প্রকান্ড সমতল ক্ষেত্র। তবে এখানে বড় কোন নদী নেই। পূর্ব হিমালয়ের সিন্টেক্সিয়াল বেন্ড এখানে পাহাড় গুলো কে নীচু তরঙ্গায়িত ভূমিরূপ দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয়ের ফলে পাহাড়ের উচ্চতা হ্রাস আর পলল ব্যাজনী গুলো একে অপরের সাথে জুড়ে গিয়েই এই বিস্তৃর্ণ সমতল ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। ভারত মায়ানমার সীমান্তবর্তী মিজোরামের এই জেলা মিজোরামের ফলের ঝুড়ি নামেও পরিচিত। জোটে গ্রামের দিকে যখন স্টেয়ারিং ঘোরালো জোসা , তখন সূর্য পশ্চিমে। চাম্ফাই উপত্যকায় দিনের শেষ আলো মুছে দিয়ে ঢুবে গেলো ২৫তারিখের সূর্য।
মুরা পুক সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। তবে লাইতিয়ারের নেতৃত্বে জোটে গ্রামে পুনরায় জনবসতির উদ্ভব হলে এই গুহার খোঁজ পাওয়া যায়। মোট সাতটা গুহার মধ্যে ধ্বসের ফলে একটা গুহা নষ্ট হয়ে গেছে। কথিত আছে এই অঞ্চলে বৃহদাকৃতির ঈগল যার নাম ছিল মুরা, সেই মুরা ঈগলের থেকে বাঁচতেই এখানকার আদিম অধিবাসীরা এই গুহা বানায়। পাহাড়ি পথ দিয়ে আমরা যখন পৌঁছালাম মুরা পুকে তখন প্রায় অন্ধকার। চারিদিকে ঝোপ জঙ্গল। বিচুটি পাতা, লম্বা ঘাস, ফার্ণ আর কাঁটা গাছ। ফ্লাশের আলোতে তুলে নিলাম দু একটি ছবি। জঙ্গল এত ঘন যে সাপ পোকামাকর থাকার সমূহ সম্ভবনা। আমি তাড়া দেই সবাইকে। বাচ্চাদুটিকে নিয়ে আগে আগে নামতে থাকি পাহাড়ের উপর থেকে। আলো কমে এসেছে। জোসা টর্চের আলোতে পথ দেখায় ......
থেনজল
পেঁচানো রাস্তাটা সকাল থেকেই জট খুলে চলছে। তবু রাস্তা ফুরায় না। সজারু কাঁটার মত পাহাড়ের গায়ে চিরহরিৎ এর সবুজ সমাহার। খুবলে নেওয়া মাংসের মত যায়গায় জায়গায় স্ল্যাশ এন্ড বার্ন। ঝুম চাষ। গানের ছন্দে রাস্তা এগোয়। হঠাৎ ই ছন্দ পতন। মস্ত এক জেসিপি। সেলিং আরো ৯৬ কিমি। আজ যাচ্ছি থেনজল। ২৪০ কিমি। আর্তুই- পাউরুটি আর থিম্পুই খেয়ে বেড়িয়েছি গেস্ট হাউস থেকে। গানের হালকা শব্দ, বাতাস আর আচমকা একটা দুটো পাখির ডাক ছাড়া কোন কথা নেই চারপাশে। মাঝে মাঝে এভাবেই মৌন হতে ইচ্ছে জাগে। সব্বাই ভালো আছি..... বাস্তবে বা কল্পনায়।
তন্ন তন্ন করে এই পাহাড় জঙ্গলে খুঁজছি এক পিস হুলোক গিবন। হুলোক তো দূরের কথা একটা হুলো বিড়ালো চোখে পড়ল না। আসলে মিজোদের খাদ্যাভাসই পাল্টে দিয়েছে মিজোরামের জীব বৈচিত্রের মানচিত্র। যাওয়ার পথে ক্যান্সেল করলাম ফাংপুই ন্যাশানাল পার্ক। কিছু করার নেই ২৯তারিখে ফেরার ফ্লাইট। হাতে সময় বড্ড কম।
থেনজল ট্যুরিস্ট লজ। গতকাল থেনজলে ঢুকেছি রাত ৭টা৩০মিঃ নাগাদ। আজ আইজলে ফেরা। সকালে ঘুম ভাঙতেই বাইরে এলাম ক্যামেরাটা নিয়ে। সোনা রোদে ভেসে যাচ্ছে থেনজল উপত্যকা। একদম সমতল জায়গা। লজের বাইরে ন্যাশপাতি, আম, জাম আর সুপারির গাছ। লজের মালি খুব সৌখিন। গাছে গাছে লাগিয়েছে অর্কিড। রেড ভ্যান্ডা আর কিছু ডেনড্রবিয়াম দেখলাম। তবে variety-র নাম জানি না।
থেনজলও চাম্ফাইয়ের মত প্রকান্ড উপত্যকা। থেনজল কে কেন্দ্র করে একদিনেই ঘুরে নেওয়া যায় ভ্যনতোয়াং জলপ্রপাত, চোয়াংচিলি পুক আর আইজলে ফেরার পথে সিয়ালসুক, মুলফাং ও ফ্যালকনের ট্রাডিশনাল মিজো হাউস দেখে ফেরা। আজ সকালে বেড টি করেই বেরিয়ে পড়েছি MZ01Q-1895 নম্বর বোলেরো গাড়িটা নিয়ে। অদ্ভুত এক মায়াময় উপত্যকা ঠান্ডা বাতাস ... কিছুটা এগিয়েই সড়ক পথ ছেড়ে গাড়ি ঢুকে পড়ল জঙ্গলের রাস্তায়। বড় বড় কাশের গাছ রাস্তা আগলায় । কাঁটাগাছের পাতা গাড়ির সামনের কাঁচে বাধা পায়। বোঝাই যায় অনেক দিন এপথে কেউ আসে নি। কিছুটা এগিয়ে ই সেই স্বর্গীয় দৃশ্য। স্বচ্ছ কাঁচের মত জল ঝাঁপ দিয়েছে বিপরীত শৈলশিরা থেকে। তা প্রায় ৫০/৬০ফিট তো হবেই। শক্ত আর নরম পাথরের পর্যায়ক্রমিক অবস্থান। অত উঁচু থেকে জল ঝাঁপ দিয়ে বর্তুলাকার গর্ত করেছে স্পারের নীচে। টেকনিক্যালি এই গর্তকে বলে প্লাঞ্জপুল।
আইজল
আজ ২৮শে মে। সারাদিন কোন কাজ নেই। চাম্ফাই – জোখাথার- রি ডিল – সারছিপ – থেনজল – মুইফাং হয়ে গতকাল ফিরেছি আইজলে। উঠেছি চালতাঙের হোটেল সেরো’তে। রুমপ্রতি ভাড়া ৯০০টাকা প্রতিদিন। দীর্ঘ পাঁচ দিনের লম্বা রাস্তায় আমরা পাড়ি দিয়েছি ১৬৫০কিমি পথ। ভাঙ্গাচোরা সেই রাস্তায় কাদা আর ধ্বসের আস্তরণ। কোথাও কোথাও রাস্তাও নেই। গা হাত পায়ে খুব ব্যথা হয়েছে লম্বা জার্ণিতে। আজ শুধু রেস্ট আর গোছানোর পালা। মোবাইলে হোটেলের ওয়াইফাই। এতদিন নেটওয়ার্ক ঠিকমত ছিল না। ফেরার ফ্লাইট কালকে দুপুর ২টা ৫০মিঃ।
মিজোরামের রাজধানী আইজল। এই রাজ্যের সবচেয়ে জনবহুল শহর। ৮৫৭বর্গকিমি এই শহরে প্রায় ৩লক্ষ লোকের বসবাস। মিজো বিধানসভা, সিভিল সেক্রেটারিয়েট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অফিস এই শহরেই অবস্থিত।
এই রাজ্যে নারী-পুরুষের অনুপাত- ১০০০ জন পুরুষে ১০২৪জন নারী। স্পষ্টতই এখানে কোন লিঙ্গ বৈষম্য নেই। দোকান বাজার অফিস হোটেল সব জায়গাতেই মিজো নারীদের অংশগ্রহন পুরুষের থেকে বেশী। কেবলমাত্র পাবলিক ট্রান্সপোর্টে মহিলাদের অংশ গ্রহণ দেখতে পাই নি। মিজোরামের ২৫% লোক আইজল শহরেই বাস করে।
১৮৭১-৭২ সালে ব্রিটিশরা প্রথম এখানে আসে। তখন আইজল ছোট্ট একটি গ্রাম ছিল। পরবর্তীতে ১৮৯২-৯৫ সাল নাগাদ সড়ক নির্মাণের ফলে শিলচরের সাথে আইজলের যোগাযোগ শুরু হয়। এই শহরের মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়েছে কর্কটক্রান্তি রেখা। আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ুর অন্তর্গত আইজলের গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা ২০-৩০ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। যেখানে শীত কালে ১১-২১ডিগ্রী। মেঘবহুল এ রাজ্যে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশী।
মিজোরামের প্রধাণ জাতি মিজো ছাড়াও দক্ষিণে লাই ও মারা উপজাতিদের বাস। আর উত্তর পূর্বে মার। এখানে ৯৫% খ্রীষ্টান। হিন্দু , বৌদ্ধ, ইসলাম মেরেকেটে ৫% এর বেশী নয়। প্রটেস্টান্ট চার্চকে এখানে প্রেসবেটেরিয়ান চার্চ বলে। আইজলের কিড্রোন ভ্যালিতে সলোমন টেম্পল’ই মিজোরামের সবচেয়ে বড়ো চার্চ। আইজলে আসলে এখানে আসতেই হবে। যদিও মূল শহর থেকে অনেকটাই দূরে। গাড়ি রিজার্ভ করে এক দিনেই দেখে নেওয়া যায় লুয়াংমুয়াল হান্ডিক্রাফট সেন্টার, বড় বাজার, চানমারি সালভেশন আর্মি চার্চ, ডুর্টলাং কে ভি প্যরাডাইস, বাবুতালাঙ এর মিউজিয়াম(সুমকুমা পয়েন্টের কাছেই) আর বেথলেহেমভেঙের চিড়িয়াখানা। “ভেঙ” শব্দটা কোন জনপথ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। আমরা যেমন “পুর” বা “পাড়া” শব্দ ব্যবহার করি , তেমনি । খ্রীষ্টান দের মধ্যে প্রায় ৭০% প্রটেস্টান্ট। ব্যপটিস্ট আর ক্যাথলিক মিলিয়ে ৩০%। প্রেসবেটেরিয়ান চার্চের সদর কার্যালয় আইজলে। যেখানে ব্যাপটিস্ট চার্চের লুঙলেই।
খাই খাই
লাংফাং – ভাত ও চানা সহ একটা মিশানো খাবার। এর সাথে পর্ক/ চিকেন/ বিফ থাকে। খ্রীষ্টান হওয়ার কারণে সব ধরণের মাংসেরই চল আছে এখানে।
ডাল – মিজোদের ডাল আমাদের মতই। তবে মিজোরা সাধারণত মুগ মুসুর ছোলা সবধরণের ডাল মিশিয়ে মিক্সড ডাল বানায়। কিছু টমেটো কুচি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও পরিমান মত লবন দিয়ে একদম আমাদের মতই ডাল রান্না করে মিজোরা। তবে ডালের মধ্যে সব্জি হিসেবে আলু কিম্বা বগবন(বেগুন) দেওয়ার রীতি আছে। মিজোদের এই ডাল পিওর ভেজ ডিশ। ভাত ও রুটি দিয়ে দিব্বি খাওয়া যায়। সব হোটেলেই ডালফ্রাই পাওয়া যায়।
রতুয়াই – আরো একটি ভালো মিজো সাইড ডিশ হল রতুয়াই। কচি বাঁশের আগার অংশটা পরিস্কার করে কেটে নিয়ে লঙ্কা সহ গরম জলে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর আদাকুচি ও টমাটো দিয়ে কিছুটা নুন সহ পেস্ট করে সেদ্ধ বাঁশ গুলিকে ছোট ছোট টুকরো করে মাখিয়ে দিলেই হয়ে গেলো রতুয়াই। খুব সোজা কিন্তু সুস্বাদু। গরম গরম ভাতে এটা একদম ভেজ খাবার।
বাই – ভাতের সাথে আমাদের এখানে যেমন সব্জি, মিজোরামে তেমনি লাঞ্চ বা ডিনারের সাথে বাই। বিভিন্ন স্থানীয় সব্জি লম্বা লম্বা করে কেটে অল্প আঁচে দু একটা লঙ্কাসহ সেদ্ধ করলেই হয়ে গেলো। তেল, ঝাল, মশলার ব্যবহার নেই বললেই চলে। এটি খুব স্বাস্থ্যকর একটা খাবার। অনেকটা বাই খেলে, পরদিন পেট পরিস্কার হবেই। আর যাত্রাপথে পেট পরিস্কার না হলে , পরবর্তী খাবার খাবেন কি ভাবে? তবে বাই খাওয়ার আগে একবার শুনে নেবেন ভেজ, না ননভেজ! কারণ কখনো কখনো স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য সব্জির সুপে পর্কতেল মিশিয়ে দেওয়া হয়। ঋতু অনুযায়ী বাই প্রস্তুতিতে সব্জি পালটে যায়। আমরা কুমড়ো শাকের বাই, বিনের বাই, বাঁধা কপির বাই, রাই শাকের বাই, চিঙগিট শাকের বাই কিম্বা দ্বাল শাকের বাই খেয়েছি। বাইয়ের মধ্যে বগবন দেওয়ারও চল আছে। দ্বাল গাছের শুকনো পাতায় তামাক মুড়ে ধূমপান করাও এখানে প্রচলিত অভ্যেস।
ছুম হান – এটাও একধরণের বাই। মিক্সড ভেজিটেবিল বড় বড় করে কেটে রাখতে হবে প্রথমে। তারপর সামান্য জলে টমেটো আদা লঙ্কা পরিমান মত দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে সব্জিগুলোকে জলে ছেড়ে দিতে হবে। অল্প আঁচে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিলেই মিক্সড সব্জি। পিওর ছুম হান।
মারছা রাওয়াত- এটি একধরণের চাটনি বিশেষ। পেঁয়াজ ও আদা ঝুড়ি করে গরম জলে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর হালকা ভাজা কাঁচা লঙ্কার পেস্ট দিয়ে মাখিয়ে নিলেই মারছা রাওয়াত প্রস্তুত। যে কোন মিলের সাথেই পরিবেশন করা যায়।
সানপিয়াউ – সেদ্ধ ভাতের মন্ডের সাথে ধনে পাতার পেস্ট ও চাক চাক করে কাটা পেঁয়াজ ও লঙ্ক গোলমরিচের গুড়ো সহ মাছের টুকরো ও চালের গুড়ো মিশিয়ে প্রস্তুত। সানপিয়াউ-এ কখনো কখনো মাছের পরিবর্তে মাংসের টুকরোও ব্যবহার করা হয়। ভেজ সানপিয়াউ-এ মাছ বা মাংসের পরিবর্তে চালের তৈরি একধরণের লম্বা লম্বা পাঁপড় ভাজা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
পর্ক স্যুপ - সাদা শূকরের মাংসের বাদি(তৈলাক্ত সাদা অংশ) গরম জলে সেদ্ধ করে সামান্য গোলমরিচ মিশিয়ে একগাদা জল সহ স্যুপ।
চাঙ বাঙ কঙ – চালের গুড়ো দিয়ে বানানো চারকোনা পিঠে জাতীয় খাবার। সকালের নাস্তাতে খাওয়া হয়। খেতে নোনতা স্বাদ। সব্জি, চ্যেঠানি বা চানা দিয়ে খাওয়া যায়। আমরা যাকে ঘুঘনি বলি, এখানে তা চানা।
সচিয়ার – চাল সহ অন্যান্য দানা শস্য (বার্লি /ওট/ গম) মিশিয়ে এক ধরণের সেদ্ধ নরম মন্ড। সকালের টিফিন। এটাতেও তেল, ঝাল , মশলা নেই। আমাদের ড্রাইভার জোসার ফেভারিট ডিশ।
চ্যোঠনি – পেঁয়াজ, ধনেপাতা, লঙ্কা, টমেটো দিয়ে প্রস্তুত এক ধরণের চাটনি। সব খাবারের সাথেই খাওয়া যায়।
জোঙথ্রা- এক ধরণের কালো কালো বীজ। স্বাদ তিতকুটে। এই বীজের সাথে লঙ্কা ও মশলা মিশিয়ে এক ধরণের চাটনি। জোঙথ্রার বেশ চল আছে এখানে। তবে আমার স্বাদটা একদম ভালো লাগে নি। গন্ধটাও বাজে।
নারকোটিক
ভারত বার্মা সীমান্ত শহর জোখাথার। জেলা চাম্ফাই। জোখাথারের ওপারে খাওয়াইমাই। মায়ানমারের সীমান্ত শহর। টিয়াউ নদীর উপরে একখানা লোহার ব্রীজ। ব্রীজের এপার ওপারে কর্মসংস্কৃতি, জীবনযাপন প্রণালী, গৃহনির্মানে ভিন্নতা স্পষ্ট। খাওয়াইমাই যেখানে সেখানে মদের আড্ডা। সাধারণ চায়ের দোকান কিম্বা ফাস্ট ফুডের দোকানেও দেদারসে মদ বিক্রি হচ্ছে। রি ডিল হ্রদের ধারেও বিয়ারের অনশপ। মিজোরামে মদ বেআইনি না হলেও মদ খাওয়ার প্রবনতা এমনিতেই কম। ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত নাকি মিজোরামে মদ বেআইনি ছিল। কারণ বহুদিন আগে বিষাক্ত মদ খেয়ে নাকি প্রচুর লোক মারা যায়। তারপর থেকেই মদ বন্ধ ছিল এখানে। কিংফিশার জ্যু(Zu) ক্যান মাত্র ৬৫টাকা থেকে ৭০টাকাতেই পাওয়া যায় আর রাম জ্যু ফুল বোতল ১৮০টাকা। অন্যদিকে মায়ানমারে এক বোতল বিয়ারের দাম ২৫০ ভারতীয় টাকায়। চার্চের হস্তক্ষেপের কারণেই মদ খাওয়ার প্রবণতা মিজোরামে কম। সরকারি আইনের চাইতেও মানুষ বেশী ভয় পায় ধর্মীয় পাপ-পুন্যে। রাষ্ট্র ও সরকারের প্রভাব সামাজিক হলে, ধর্মের প্রভাব আমাদের রক্তে। এস সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে টিয়াউ নদীর লোহার ব্রীজটা ক্রস করে ভারতে ঢুকছি। হঠাৎ একটা ছোট্ট বর্মী মেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আমার অরিজিনাল কাগজের খাম টা ফেরত দিয়ে গেলো। ভাগ্যিস ... । প্যাকেটের ভেতরে আমার ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, আই এল পি, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ট্রাভেল ইনফরমেশন, ফ্লাইটের টিকিট সব কিছু। মায়ানমারের যে দোকানটাতে বসে আমরা চা আর নুডুলস খেয়েছিলাম সেই দোকানেই ছাড়া পড়েছিল কাগজের প্যাকেটটা। একগাল হেসে বাচ্চা মেয়েটি আমার হাতে তুলে দিল প্যাকেট টা। মাথায় তখন এক অদ্ভুত প্রপ্তিযোগ। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বেমলুম ভুলে গেলাম বাচ্চা মেয়েটার ছবি তুলতে। ভুলে গেলাম ওর হাতে কিছু বকশিস দিতে। চলার পথে কত কিছুই ভুল হয়ে যায়। ইচ্ছে না থাকলেও ......
আসামে যা গুয়াপান এখানে তা কু-ভা। মেঘালয়ে কুয়াই। নাম যাই হোক না কেন, ফারমেন্টেড সুপারি, পানপাতা আর কলাপাতায় অল্প চুন। দশটা পানপাতা ও সুপারির প্যাকেটের দাম ২০টাকা।
মিজো নারী-পুরুষ সবাই কম বেশী ধূমপানে আসক্ত। চাম্ফাইয়ের ২০০কিমি পথে যা যা জিনিস বিক্রি হয় তার সিংহ ভাগই চীন , দক্ষিণ কোরিয়া আর মালোয়েশিয়ার। আসে মায়ানমার হয়ে। যে কোন জিনিসপত্রের দাম ভারতের থেকে কম। ২০টি কিং সাইজ চীনা ফারস্টার সিগারেটের দাম যেখানে মাত্র ৩০টাকা সেখানে ১০টা অর্ডিনারি ফ্লেক সিগারেটের দাম ৫০টাকা। কৃষিকাজের সাথে সাথে চাম্ফাই জেলার অন্যতম অর্থনীতি মায়ানমারের সাথে বৈদেশিক বানিজ্য। বানিজ্য এখানে অবাধ ও দুনম্বরি।
নেশা করার সময় আমরা অজুহাত খুঁজি বটে। কিন্তু সব নেশাই আসলে মানসিক। তবে খ্রীষ্টান মিশনারি ও চার্চ সংস্কৃতি এদিক থেকে উত্তরপূর্বের বাকি ছয়টি রাজ্য থেকে আলাদা করেছে।
এসো শিখি মিজো
নদী – লুই (LUI) পাহাড় – তলাং (TLANG)
উপত্যকা - ছিং চিপ (CHHING CHHIP) রাস্তা – কোং (KAWNG)
জঙ্গল – রামহুনি (RAMHUNI) গুহা – পুক (PUK)
ঝরণা –টুইখথলা(TUIKHAWHTHLA) জল – টুই (TUI)
বাড়িঘর – ইন (IN) হ্রদ – ডিল (DIL)
ছেলে – মিপা (MIPA) মেয়ে – মেইচিয়া (HMEICHHIA)
ধন্যবাদ – কা লোম এ (KA LAWM E) আবার দেখা হবে - মাংথ্রা (MANGTHRA)
তারিখ – থি (THI) দিন – ছুন (CHHUN)
রাত – জান (ZAN) মিল/খাবার – চউ (CHAW)
ঘুম – মু (MU) ভালো – থ্রা (THRA)
খারাপ – ছিয়া (CHHIA) উঁচু পাহাড়ের মাথা – চিইপ (CHIP)
খাবার – সার (SAR) মাটি /ব্রিজ – লেই(LEI)
ডিম – আর্তুই (ARTUI) চা – থিম্পুই (THIMPUI)
পুড়ি – চাং (CHANG) সবজি –লিয়া (LIA)
মদ – জু(ZU) হোটেল – ডাওয়ার (DAWAR)
উঁচু – সাং (TSANG) নীচু – নিয়েম (HNIAM)
ফুল – পাঙপার (PANGPAR) বিশ্রাম – চ্বল(CHAWL)
অপেক্ষা – নঙক(NGAK)
A+W=O
N+G=ENG
C+H=CHO
H= SILENT
আবার আসিব ফিরে
যাত্রাপথে বাকি থেকে গেল অনেক কিছুই ......
লুয়াঙটলাই ও সাইহা জনবসতির মাঝে চিম্পটুইপুই নদী।
সাইহার পাশে ফঙপুই ন্যাশনাল পার্ক(ব্লু মাউন্টেন)। মিজোরামের সবচেয়ে উঁচু পর্বত ভারতের একমাত্র হুলোক গিবনের আবাসস্থল। এই অরণ্যের হাতিরা প্রায়সই আন্তর্জাতিক সীমানা পেড়িয়ে মায়ানমারে ঢুকে যায়। হাতি ছাড়াও এই ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারিতে রয়েছে বুনো কুকুর, বার্কিং ডিয়ার, লিফ মাংকি, বাঘ, চিতাবাঘ, সজারু ও বন বেড়াল। পাখিপ্রমীদের কাছেও এটি স্বর্গরাজ্য।
চাম্ফাই শহর থেকে প্রায় ৪০কিমি দক্ষিণে ভ্যঙছিয়া। এখানে ১৫ফিট উচ্চতা বিশিষ্ট ১০০টিরও বেশী পাথরের মনুমেন্ট রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি চাম্ফাই শহরের জোল্টাং স্পোর্টস কমপ্লেক্সের উল্টোদিকের একটা পথ চলতি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত। ভ্যঙছিয়ার এই হেরিটেজ সাইট টি (কাটছুয়া রোপুইথি) ২০১৫সালে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের প্রচেষ্ঠায় নতুন করে আবিষ্কৃত হয়। এই জায়গাটা মিজোরামের স্টোন হেঞ্জ। পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রী ও বিভিন্ন আকারের পাথর প্রমাণ করে এই অঞ্চলের অতীত অস্তিত্ত্ব। মাটির তলায় লোহা , মাটির পাত্র ও বিভিন্ন সামগ্রীর কিছু খন্ডিত ও কিছু সম্পূর্ণ অংশ পাওয়া গেছে এখানে। সমাধিস্থল, জল রাখার স্থান প্রভৃতি এই অঞ্চলের অধিবাসীদের বিস্তারিত জীবনযাপন প্রণালী জানতে সাহায্য করে।
আইজলের পাশে রেইয়েক ও একটা দেখার জায়গা। আইজল থেকে ৩৫কিমি দূরে। রেইয়েক বেড়াতে এলে সারাদিনই লেগে যায়। বাস রাস্তার শেষে সামান্য কিছু পথ ট্রেক করে উঁচুতে উঠতে হয়। পাহাড়ের পূর্বদিকের ঢালু প্রান্তর অরণ্যে আবৃত। এই পাহাড়ের উত্তর দিকে রয়েছে অনেক কটি গুহা ও একটি ওভারহ্যাং। এখানে থাকার জন্য আছে ট্যুরিস্ট রিসোর্ট। ট্যুরিস্ট রিসোর্ট ছাড়াও এখানে একটি ট্রাডিশনাল মিজো গ্রাম আছে।
চেরো নৃত্য। বাঁশের তালে তালে মিজো নারীরা এই নৃত্য পরিবেশন করে। এটি মিজোরামের চেরো উৎসব নামেও পরিচিত। অদ্ভুত তাল ও শরীরি সন্তুলনের মাধ্যমে এই নৃত্য করা হয়। তবে ডিসেম্বর মাসের প্রথম ১০দিন চলে এই নাচ। সময়ের সাথে ব্যাটে-বলে না হলে এই নাচ দেখার উপায় নেই।
ফিরে দেখা
সিকিম বা দার্জিলিং এর মত পরিকল্পিত ট্যুরিজম এখনো গড়ে ওঠে নি মিজোরামে। তাই বেড়াতে এলে গ্রুপে আসাই ভালো। ৬ থেকে ৮জনের দলে এলে খরচটা একটু কম হবে। মিজোরামের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গাতেই ট্যুরিস্ট লজ আছে। বেসরকারি হোটেলে না উঠে ট্যুরিস্ট লজ গুলিতেই ওঠা ভালো। তবে আগে থেকে বুক করে রাখাটা জরুরী। ট্যুরিস্ট লজ গুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সস্তা। ২টি পাসপোর্ট সাইজ ছবি সহ একটি সচিত্র পরিচয় পত্র সাথে রাখুন ILP র জন্য। মাথায় রাখতে হবে ট্রান্সপোর্ট খরচই সবচেয়ে বেশী। তাই আইজলে পৌঁছে একদিন অতিরিক্ত সময় হাতে রাখুন। গাড়ি বুকিং ও ট্যুরিজম অফিস থেকে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। খাবার নিয়ে যাদের বাছবিচার আছে তারা ননভেজ খাবেন না। মিজো ভেজ খাবার যেখানে সেখানে পাওয়া যায়। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মনে রাখবেন এখানে হিন্দি চলে না। শহর ছাড়া ইংরেজীর চল কম। কাজেই ভালো একজন ইংরেজী জানা ড্রাইভার সাথে নিন।
Driver
____________
Joshua Zoramliana
BUNGKAWN, AIZAWL
ph : 9774395235 & 9089263283
Nirmal Chhetri
9612233112
Hotel/Tourist Lodge
______________
Tourist Lodge
Chaltlang, Aizawl
Hotel Serow,
Chaltlang, Aizawl
এছাড়া
Hotel TK
Cosmo Hotel
city Hotel
CAR BOOKING
____________
RRCar rent
Model Road, Aizawl
City Car Bazar & Rental
Hmarveng Road, Aizawl
TBC Car rental
Chanmari Ramhlun Road, Aizawl
Tourist Information
____________________
DIRECTOR OF TOURISM
Govt of Mizoram
Aizawl- 796001
(contact - 0389-2333475/ 2334474/ 2335677/ 2333475)
tarai.tushar@gmail.com
Tags:
ভ্রমন