পিনাকি

অশ্বত্থামা হতঃ - ইতি কুঞ্জরঃ

এই সময় রাত নিজের নিঃশ্বাস চেপে রেখেছে । এমন শব্দহীন নিস্তব্ধতাকে , গর্ভবতী নীরবতা বলা যায় । চারপাশের অন্ধকার , কুরুক্ষেত্রের খোলা ভূমিকে আরও ভয়ানক করে তুলেছে । হতাশা আর মৃত্যুর সীমাহীন ভূমি অসীমতার উপলব্ধি নিয়ে শুয়ে আছে । গিলে খাবে ভারতবর্ষকে । ধীরে – ধীরে এক যুগের অবসান আসন্ন । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ইতিমধ্যে এক প্রাচীন বিশ্বস্ত বটবৃক্ষের পতন হয়ে গিয়েছে ! তাঁর অবর্তমানে যুদ্ধ ভূমি অনেকটাই রিক্ত । তাও যুদ্ধ চলবে । কুরুক্ষেত্রের এক বিশেষ স্থানে পিতামহের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে । তীরের ভয়ানক তীক্ষ্ণ ফলা , তাঁকে এমন ভাবে বিঁধেছে , নিজের আক্রান্ত আর ক্ষত –বিক্ষত দেহ নিয়ে ভুমির উপর শয়ন করেছেন । 

পিতামহ ভীষ্মের অন্তিম ইচ্ছা, যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের প্রাণ টিকিয়ে রাখা। এই ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে দুপক্ষই যথেষ্ট ব্যবস্থা করেছে । নিরাপত্তা রক্ষী , সর্বক্ষণের জন্য দাসী , নামকরা বৈদ্য ---- ঘিরে রেখেছে । এক গভীর আর গর্ত খনন করে , তাকে ঘিরে দেওয়াল তুলে দেওয়া হচ্ছে । এখানেই বিশেষ পদ্ধতির ব্যবহার করা হবে । আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে হাতে -হাত রেখে মহারথী ভীষ্মের জীবনকে দীর্ঘায়ত করবার চেষ্টা চলছে । এই বদ্ধ পরিখার ভিতর বাতাসের আদ্রতা , তাপমাত্রা --- যাতে মরণাপন্ন রুগীর অনুকূল হয় ; সেই সাথে বিশেষ স্পর্শ কাতর পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য আধুনিক সরঞ্জাম এর মজুত করা হচ্ছে । 

এই কর্মকাণ্ডকে খুব দ্রুত সমাপ্তির রূপ দেওয়ার জন্য , সহস্র কারিগর কাজ করে চলেছে । 

দূরে , বেশ কিছুটা দূরে ; রাতের ছায়ায় এক বৃদ্ধ ব্রাক্ষ্মণ দাঁড়িয়ে আছেন । তাঁর দু’চোখ ভরা প্রতীক্ষার অবসানের ইঙ্গিত ।এত দিন বাদে সে কৌরব পক্ষের প্রধান সেনাপতি নির্বাচিত হয়েছেন । মহারথী ভীষ্মের অবর্তমানে হস্তিনাপুরের হয়ে কুরুক্ষেত্রে সেনাপতিত্ব করবার স্বপ্ন সফল হতে চলেছে । মাত্র দশ দিনের , অন্তিম সূর্য মুহূর্ত অবসানে , দিনের শেষেই এমন পরিস্থিতি এসে আত্মসমর্পণ করবে ! নিজেও বুঝতে পারেননি । বুকে পাথরের মতন যে কষ্টটা চেপে আছে , তাকে এই অপেক্ষার অনুভূতি দ্বারা পরিমাপ করা যাবে না । 

নিজের অবস্থান নিয়ে নিজেও সন্দিহান । দুর্ভাগ্য বশত নয় , সৌভাগ্যের প্রত্যাশী হয়েই আজ সে প্রিয় শিষ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন । এমন শিবিরে সে আছেন , যেখানে সম্মান নেই । শুধু এক বেতনভূক দায়িত্ববান মহারথী । 

হস্তিনাপুরের হয়ে গুরু দ্রোণ নিজের সবটুকু উজাড় করে দেবেন । এই সবটুকু দেওয়ার অঙ্গীকার তিনি করেছিলেন , তাইবলে তা পালন করতে পারছেন ? উল্টো দিকে শত্রু পাণ্ডবদের প্রতি তাঁর মোহ আজও অটুট । বিচিত্র মানুষের জীবন । বিচিত্র সেই জীবনের বাঁক , নদীর মতনই সে পরিস্তিতির সাথে - সাথে পাল্টিয়ে যায় । এখন যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে , পাণ্ডবদের অস্ত্র ধরতে শিখিয়ে ছিলেন তিনি । নিজের জীবনে সবকিছুর থেকেও প্রিয় যে , সেই অর্জুন ---- আজ প্রধান প্রতিপক্ষ । দ্রোণাচার্য নিজেও জানেন , নিজের হাতে পাণ্ডবদের হত্যা করতে পারবেন না । দুর্যোধনের হয়ে --- পাণ্ডবদের পরাজয়ের কারণ হবেন । একজন যোদ্ধার কাছে , ক্ষত্রিয়ের কাছে শত্রুর নিকট আত্মসমর্পণই ---- আসল মৃত্যু । পরাজিত পাণ্ডব আর মৃত পাণ্ডবদের মধ্যে তফাৎ নেই ।

দ্রোণাচার্য এইসব কথা গুলো ভাবতে - ভাবতে একান্ত ভাবে নির্জন স্থানে চলে এসেছেন । এই রাতের অনবরত সীমাহীন নিস্তব্ধতা উপলব্ধি করছেন । দিনের আলোর সাথে এই রণভূমি --- বহু যোদ্ধা , রথী , সৈনিকদের আর্তনাদ , অস্ত্রের ঘর্ষণের ঝংকারে মৃত্যু গহ্বর মনে হয় । এখনে শুধুই মৃত্যুই অপেক্ষা করছে । সূর্য ডুবে যায় । ঘরে ফিরতে থাকা পাখিদের মতনই , যুদ্ধ বিমোহিত মানুষ গুলো নিজেদের হিংসা , ক্রোধ , অপমানকে --- লুকিয়ে রাখে । দিনের আলোয় সেইসব গোপন লালসার সন্ধান কেউ পায়না । সারাদিনের হিসেব তুলে রাখা থাকে , রাতের অবসরে জন্য । নিঃশব্দে ঝরে যাওয়া পাতার মতন যে প্রাণ চলে গিয়েছে—তারই উদ্দেশ্যে অশ্রুর অঞ্জলি বর্ষিত হয় । কুরুক্ষেত্রের এটাই দিনলিপি ।

চোখে হাত দিয়ে , বৃদ্ধ ব্রাক্ষ্মণের টের পেলেন - ভিজে যাওয়া চোখে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে । অতীতের এক সুন্দর বসন্ত দিনের ছবি দেখা যাচ্ছে । তখন দ্রোণাচার্যের বয়স বেশী নয় , মধ্যবয়স্ক । সেই সময়ে জীবনে এক সুন্দর মুহূর্ত এসে গিয়েছে । 


এই স্থান , নির্জনে ঈশ্বর চিন্তা র উপযুক্ত পরিবেশ । ব্রাক্ষ্মণের কাছে এমন স্থান উপযুক্ত । মানুষের মনে রাগের জন্ম নিলে , সে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে । দ্রুপদের কাছে , এমন ব্যবহার দ্রোণ আশা করেননি । এক ব্রাক্ষ্মণের আর ক্ষত্রিয় মিত্র হতে পারেন না --- এই কথা সে বুঝে গিয়েছে । নিজেকে সামাজ বদ্ধ মানুষ হিসেবেই দেখেন । তাঁর কাছে এখন বিকল্প পথ আছে ? নিজের অপমান মেনে নিলেও , পুত্র অশ্বত্থামার যে প্রতিনিয়ত অপমান হয়ে চলেছে ! এক স্নেহময় আর দায়িত্ববান পিতা হিসেবে নিজেকের এই দায়িত্ব অস্বীকার করবে কেমন করে ? এই সমাজ যেমন ভাবেই শ্রেণী বিভাগ করুক না কেন , আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনই কোন মানুষের সামাজিক সম্মানের পরিবর্তন করতে পারে । তাই তিনি দুর্যোধনের সমস্ত রকমের পাপ কর্মের সাথে ছিলেন । পাণ্ডবদের অন্যায় ভাবে বনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ।বারো বছরের বনবাসের দশ বছর কেটে গিয়েছে । অন্যায় ভাবে দ্যূত ক্রিয়ায় সব কিছু কেড়ে নেওয়া হয়েছে । দ্রোপদির বস্ত্রহরণ এর পাপ দেখেও দ্রোণের হাত স্থির ছিল ! দুই বছর শেষ হলেই , অন্তিম অজ্ঞাতবাস শুরু হবে । দ্রোণ টের পাচ্ছেন , পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাস শেষ হলেও , দুর্যোধন সব কিছু অস্বীকার করবে আর রাজ্য ফিরিয়ে দেবে না । যুদ্ধ অনিবার্য । অর্জুন এর জন্যই দিব্যাস্ত্র খুঁজতে ভারত ভ্রমণে গিয়েছে । দ্রোণের কাছে এই যুদ্ধ অন্তিম নির্ণায়ক । তাই নতুন অস্ত্রের সন্ধানে ভারত পর্যটনে বেড়িয়ে পড়লেন । 

দ্রোণাচার্য ভাবছিলেন , একান্তে চিন্তা করে কোন পথ পাওয়া যায় নাকি । যে পথ থেকে তিনি নিজের যুদ্ধ কৌশলকে আরও সক্ষম করে তুলতে পারেন । গুরু পরশুরামের অস্ত্র শিক্ষা , তাঁকে ক্ষত্রিয়দের কাছে অনন্য অস্ত্র শিক্ষক হিসেবে হয়ত জায়গা করে দিয়েছে , তিনি চাইছেন আরও নতুন কিছু বিদ্যা আয়ত্ত করতে – যাতে দ্রোণই একমাত্র বিকল্প হয়ে ওঠেন । 

উত্তর ভারতে আর এমন শিক্ষা অবশিষ্ট নেই , যা দিয়ে তিনি যুদ্ধ কৌশলে নতুনত্ব আনতে পারেন । উত্তর ভারতীয় ক্ষত্রিয়রা সেখানকার উপজাতিদের সাথে এখনো যুদ্ধে লিপ্ত । উপজাতিদের যুদ্ধ কৌশলের বিকল্প তাদের কাছে নেই । দ্রোণ জানেন , এই উপজাতীয়দের যুদ্ধ কৌশল যদি আয়ত্ত করা যায় , যুদ্ধে অর্জুনকে রুখতে পারবেন । অর্জুনের অধ্যবসায় তিনি জানেন ।সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠেছে , সততা , পরিশ্রম আর নতুনের সন্ধানের তীব্র ইচ্ছা থেকে ।

এত কিছু ভেবেই , দ্রোণ উপজাতিদের একান্ত গোপন যুদ্ধ কৌশল শিখবার জন্যই সুদূর দাক্ষিণাত্যে ছুটে এসেছেন । উপজাতিরা নিজেদের গোষ্ঠীর বাইরে কোন মানুষকে বিশ্বাস করেনা , আর সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ ছাড়া কোন বিদ্যাই আয়ত্ত করা সম্ভব নয় ।

দ্রোণাচার্য এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে , অতীতের কথা ভাবছিলেন । 

সামনে সরু স্রোতের শান্ত নদী বয়ে চলেছে ; দেখে মনে হচ্ছে কোন রমণীর আঁচল বিছিয়ে শুকোতে দিয়েছে -- বনভূমির বুকের উপর । এখানে জঙ্গল শান্ত । পাখিদের স্বর , বাদ্যযন্ত্রের নরম সুরের মতনই কান ছুঁয়ে চলেছে । দূরের পাহাড়টা , কুয়াশার চাঁদরে ঝাপসা। এখন ভোরের নরম আলো মেখেছে প্রকৃতি। দ্রোণ চেয়ে রয়েছেন । অনেক দূরের অতীতের মতন ঝাপসা চূড়াটার দিকে। চোখে বেয়ে জল নামছে ! এই অশ্রু কেন ? নিজের পাপের জন্য ! আপন জনের স্মৃতির জন্য ! ভবিষ্যতের জন্য ! চোখ বন্ধ করলেন । 

কানে আসল ঘুঙুরের শব্দ , চোখ মেলে দেখলেন -- তার দিকে এক নারী তাকিয়ে আছে ! নিম্মাঙ্গে কাপড় আর বুকে অন্তর্বাস রয়েছে , দু’হাতে বিশেষ ধরণের বালা , খোপা করা চুলের গোছা সাজানো -- পাহাড়ি বাহারি ফুলে । সেই ফুলের গন্ধ দ্রোণের ঘ্রাণকে মদিরার নেশার মতনই আকৃষ্ট করেছে । পায়ে ঘুঙুর , শব্দের উৎস বুঝতে অসুবিধা হল না। দ্রোণ চেয়ে আছেন । মহিলা মধ্যবয়সীর , তবে দ্রোণের তুলনায় কম । এই অঞ্চল উপজাতিদের বাসভূমি । সংগ্রহে যে মানচিত্র রয়েছে , সেখানে এই অঞ্চলের কথাই বলা হয়েছে । 

দ্রোণের গোপন পরিকল্পনা এদের রহস্যময় যুদ্ধ কৌশল শিখে নেওয়া । মনে খানিক উদ্বেগ ভাসছে । কেননা , উপজাতিরা নিজেদের স্থানে কোন বহিরাগতদের সহ্য করতে পারেনা । কিছু বুঝবার আগেই রমণী বলল – আর্য আপনি উত্তরাপথ থেকে এসেছেন ? 

কিছুটা অবাকই হয়ে গেলেন ! মহিলা আর্য ভাষায় প্রশ্নটা করল । একজন উপজাতীয় নারীর মুখে এই ভাষা শুনে , দ্রোণাচার্য শুধু অবাকই হলেন না , মনে -মনে পরিচয় করবার জন্য আগ্রহ বোধ করলেন । কেননা , তিনি আর্য আভিজাত্যে লালিত ,সেই ঐতিহ্যের বিপরীতে কখনই হাঁটতে রাজী নন । ম্লেচ্ছ ভাষা মুখে উচ্চারণ করতেও কুণ্ঠিত হন । এই ভাষা অবশ্য তাঁকে শিখতেই হবে । 

হাত জোর করে বললেন - নিতান্তই ভ্রমণের উদ্দেশ্যে , আর দেশ দেখার জন্যই এখানে আসা । একান্তে সাধনা করব । নিজের বিষয়ে অধ্যায়ণ করব । 

মহিলা , দ্রোণের পায়ের কাছে বসল । একজন ভিন দেশী পুরুষের সামনে , উন্মুক্ত বক্ষ আর গুণ্ঠনহীন মুখে বসে রয়েছে । এমন স্বাধীনচেতা ব্যবহারে দ্রোণের বুঝতে অসুবিধা হলনা , এখানকার মহিলারা স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করে । 

-আপনার নাম ?

-আমি ব্রাক্ষ্মণ মন্দপালের পুত্র দ্রোণ । উত্তরাপথে এক হতভাগ্য দরিদ্র ব্রাক্ষ্মণ পরিবারে জন্ম । নিজের ভাগ্যকে খুঁজে চলেছি । 

-যদিও আপনি আমার থেকে বয়সে ও জ্ঞানে অনেকটাই প্রাজ্ঞ । আপনার চেহারা দেখে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা , উন্নত বংশের ছাপ বহন করে চলেছেন । আমি আমার জীবনের উপলব্ধি থেকে বলতে পারি , ভাগ্যকে খুঁজতে হয় সততা আর পরিশ্রম দিয়ে । ক্ষুধায় কাতর মানুষের কাছে ক্ষিধে আর খাদ্য দুটোই গুরুত্বপূর্ণ । তবে সবচেয়ে বেশী মূল্যবান ক্ষিধেই । 

-কেন ?

দ্রোণের মুখে সূর্যের সরল আল আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে । বনস্পতির ছায়ায় সে আর আরও স্নিগ্ধ হয়ে উঠল । মহিলা হাসল । ভরা বুক , শ্রাবণের মেঘের মতনই কাম পিপাসি । সে বুক কেঁপে উঠতেই , দ্রোণের শরীরে কাঁপন লাগছে ! নিজেকে সম্বরণ করে নিলেন , বললেন –আমায় বিস্তার করে বলুন । দেবী ...

-ক্ষিধে থাকে বলেই মানুষ খাদ্যের কাছে ছুটে যায় । খাদ্য সংগ্রহ করবার তাগিদ অনুভব করে । নিজের মধ্যে সেই আক্রমণাত্মক আদর্শ আনতে হবে । দেখবেন একদিন নিজের কর্মভূমিতে , পূজিত হবে । 

-আমি নিজের প্রিয় শিষ্যের চোখে নেমে গিয়েছি দেবী । 

-এমন কেন বলছেন ?

-সে অনেক কথা । আপাতত আমাদের এখানেই থামতে হবে । 

-কেন ?

-আমি শেষ রাতেই এই প্রান্তে এসে পৌঁছিয়েছি । ক্লান্ত । ক্ষিধেও পেয়েছে । নিজের হাতে রান্না করতে হবে যে । কাঠ সংগ্রহ করতে যাব । 

-আপনি যদি আমার গৃহে থাকেন , অসুবিধা হবে ?

-একদম নয় । আমার মতন একজন ভিনদেশীকে আশ্রয় দেবেন ! 

-আমরা মানুষকে বিশ্বাস করি । আপনি আমাদের আতিথ্য নিন । আমরা আপনার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে দেব । প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এর ব্যবস্থা করব । আপনাকে খাদ্য সংগ্রহের দায়িত্ব নিতে হবে না। আপনি হয়ত ধর্মীয় কারণেই অন্য জাতির হাতের রান্না খাবেন না ।

-আপনি জানলেন কেমন করে ?

-যেমন ভাবে আপনার ভাষা জেনেছি । 

-মানে ?

-আমিও উত্তরাপথের এক সম্ভ্রান্ত নর্তকী বংশের কন্যা । বহু ব্রাক্ষ্মণ সন্তানের যাতায়াত ছিল আমাদের পরিবারে। তারপর এখানে চলে আসা , সে অনেক গল্প । সবকিছু বলব । এখন শুনুন আপনি নিজের রন্ধন নিজেই করে নেবেন । আমরা শুধু আপনার যাতে কোন অসুবিধা না হয় , সেই দায়িত্ব নিতে চাই । 

দ্রোণ মাথা নিচু করে সম্মতি জানালেন । 


মদনিকা বুকের অন্তর্বাস পড়ছিল । পাশে নগ্ন হয়ে শুয়ে আছে কঞ্জর । দু’হাত মাথার পিছনে রেখে , মদনিকার দিকে তাকিয়ে । নির্মেদ দেহ , গায়ের চাপা রং । পীঠ পর্যন্ত শুকনো চুলের বাহার । স্তন দুটো নিটোল । কিছুক্ষণ আগে কামড়ের দাগ -- ক্ষত হয়ে ফুটে উঠেছে । সেখানে হাত রেখে মদনিকা বলল - ইস , আবার আজ আমাকে পাতার প্রলেপ দিতে হবে !

-দেবে । ক্ষতি নেই ।

-তোমার নেই , আমার আছে । এই বয়সে এক কন্যার মা হয়েও , এই সব খুব লজ্জা !

-তোমার কবে থেকে এতো লজ্জা হল ? সঙ্গমে আমার থেকে তোমার আক্রমণই বেশী । এই দেখো আমার পীঠে , তোমার নখের চিহ্ন ।

-আমারটা দেখো , সন্দুকে যখনই পাতার প্রলেপের কথা বলব , তখনই মিটিমিটি হাসবে । ছিঃ।

-দেখো , কেউ যদি হাসে তাতে আমি আমার ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে পারব না। 

কিছুক্ষণ মদনিকা , কঞ্জরের দিকে তাকিয়ে বলল – আসল কথাটা শুনবে ?

-কোন কথা ? 

-তুমিতো শুনতেই চাইলে না । শুরু করবার আগেই আমাকে সঙ্গমে বাধ্য করলে ।

-হ্যাঁ কিছু একটা বলবার জন্য ...

-আমি আমাদের তাক্ষীর জন্য উপযুক্ত স্বামী নির্বাচন করেছি । 

কঞ্জর এই কথা শুনে উঠে বসল । বলল – এত তাড়াতাড়ি ? মানে পাত্র পেলে কোথায় ! 

মদনিকা বলল - দু’দিন আগে এক তেজস্বী ব্রাক্ষ্মণ আমাদের আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন । মনে আছে ?

-উনি ? হ্যাঁ , উত্তরাপথ থেকে এসেছেন । মনে আছে । তুমি খুলে বলতো । এই ব্যাপারে আমার রহস্য একদম ভালো লাগছে না । 

মদনিকা পা টেনে , কঞ্জরের কাঁধে মাথা রেখে , ঘনিষ্ঠ হয়ে বসল । ওরা দু’জনেই ভূমিতে যে শয্যা প্রস্তুত করা হয়ে , তারউপর শুয়ে আছে । বাইরে দুপুরের নির্জনতা । এখানে প্রকৃতি সবসময় শান্ত নিজের মতন । 

মদনিকা আর কঞ্জরের একটা অতীত আছে । এইক্ষণে মদনিকা যে প্রস্তাব দিতে চলেছে , তার সাথে অতীতের সেই কাহিনী আরও বাস্তব হয়ে উঠবে । পাঠককে সেই পর্বে প্রবেশের আগে , আজ থেকে দশ বছর আগে , কৈলাস পর্বতের নির্জন সময়ে ফিরে যেতে হবে । তখন ছিল বসন্ত ঋতু । গাছে-গাছে পাখিদের সাথে ফুলেদের চুপিচুপি কথা , তাই বলছিল । কামনার রঙে চারিদিকে বনের ভিতর শুধুই সম্ভোগের প্রকাশ । টলটলে নীল সরোবর ভরে গিয়েছে পদ্ম ফুলে। নীল জলে ভাসছে রঙিন পদ্ম । সবুজ পাতায় মোমের মতন জলবিন্দু ! বসন্তের সুগন্ধ বাতাসে চারিদিক উতলা হয়ে উঠেছে । সরোবরের শেষ ধাপে এক নগ্ন পুরুষ মাথা রেখেছে এক কিশোরীর বুকে । খোলা বুকে মাথা রেখে চুমু দিচ্ছিল । 

এই স্থান নির্জন । এই স্থান একান্ত । এখানে নিভৃতে সঙ্গমে বাধা নেই । পুরুষটি কিশোরীর বয়েসের তুলনায় দ্বিগুণ বয়স্ক । কুবেরের একান্ত অনুচর সদাগর বণিক বিদ্যুতরূপ । সে নিজের পত্নীর সাথে একান্তে সময় কাটাচ্ছেন । 

এই সময় ওরা দু’জনে উপভোগ করছিল । কিছুটা দূরে দুজন লোক অপেক্ষারত , তাদের মুখে ফুটে উঠছে উত্তেজনা । একজন রোগা পুরুষ বিদ্যুৎরূপের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করে বসল !

এমন ঘটনায় আচমকাই বেশ হকচকিয়ে গিয়েছিল , এই দেহরক্ষীহীন স্থানে এমন আক্রমণ হবে ভাবতেও পারেনি । বিদ্যুত পাশে অগোছালো ভাবে থাকা কাপড় পড়ে নিল । কিশোরী লজ্জায় খোলা বুক হাত দিয়ে ঢাকল । 

-তুই কে ?

বিদ্যুতরূপের গলায় ঝাঁঝ । সামনের পুরুষটি জোর গলায় বলল – আপনি আমাদের বনভূমি দখল করে নিয়েছেন । এতদিন আমরা পাখি বিক্রি করে আমাদের জীবিকা চালাতাম । আপনারা অর্থবান । নিজেদের প্রতিপত্তি বিস্তার করে বনভূমি দখল করে নিচ্ছেন ! আমরা ভূমিপুত্র । আমাদের স্থান আমরা ছাড়বনা । আমাদের জঙ্গল আমাদেরই । আমি কঙ্ক ।

বিদ্যুতের মুখ থেকে মদের গন্ধ আসছে , জিহ্বা জড়িয়েছে । 

-কঙ্ক ! নাম শোনা শোনা মনে হচ্ছে ? তোরাই ...

-হ্যাঁ আপনাদের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহী ভূমিপুত্রের দলটি লড়াই করছে । আমিই সেই দলের নেতা।

-তোর এত বড় সাহস , আমার সামনে দাঁড়িয়ে ! তোরা আমার ব্যবসার অনেক ক্ষতি করেছিস । 

-আপনি আমাদের বনভূমি ছেড়ে দিন ।

-ওখানে আমি নগর বানাবো । নতুন সভ্যতার জন্ম দেব ।

-আমাদের বাসস্থানের সরলতা হারিয়ে যাবে । আমরা যাব কোথায় ? এই দেশ জ আপনাদের তার থেকেও অনেক বেশি আমাদের । তাও কেন আমাদের জীবিকা নষ্ট করছেন । 

-বেশ করেছি । জঙ্গল আমাদের দখলে । কুবের সমস্ত কিছু নিয়ে নেবেন ।

কঙ্ক হাতে বর্শা তুলবার আগেই , বিদ্যুত খুব দ্রুত ক্ষুর চালিয়ে দিল ! এই ছোট্ট ঘাতক অস্ত্রটি তার সাথেই থাকে । কিশোরী দেখল -- সামনের কালো রঙের জেদি পুরুষটির গলা দিয়ে রক্ত পড়ছে ফিনকি দিয়ে !

কঙ্ক নিথর দেহ সরোবরের সামনে পড়ে রইল । লাল রক্তের স্রোত নীল জলে মিশছে । 

এই দৃশ্য দেখে কিশোরী জ্ঞান হারাতে বসেছিল । বিদ্যুতরূপ আর কিশোরী বাদে , কঙ্কর ম্রিত্যুর মৃত্যুর দৃশ্য দেখল তার ভাই কঞ্জর । সে শোকে নিজেকে ধরে রাখতে পারল না । আক্রমণ করে বসল । 

সেইদিনের কিশোরীই আজকের মদনিকা । 

মদনিকা বলল – আমি নর্তকীর বংশের মেয়ে , বিদ্যুতরূপ আমার প্রভু ছিলেন । কুবের ব্যবসা করে দখল করা নারী সম্পদ , তাঁর অনুচরদের মধ্যে ভাগ করে দিতেন । তেমন ভাবেই উত্তরাপথ থেকে চলে আসা । সেই দিন তুমি আমকে উদ্ধার করেছিলে । আমি স্থায়ী আস্তানা পেলাম । পরিচয় পেলাম ।সম্মান পেলাম । সকলের কাছেই নিজের আত্মমর্যাদা প্রিয় ।

আজ দশ বছর পর সেই অতীতের মুক্তির আলো যেন মদনিকার মুখে ভেসে উঠেছে । জানালার কাছে গিয়ে , বাইরের দিকে মুখ করে বলল - দ্রোণ ব্রাক্ষ্মণ হলেও ক্ষত্রিয়দের সাথে তাঁর ওঠাবসা । শুনেছি উত্তরাপথের হস্তিনাপুরের সাথে তাঁর সম্পর্ক বেশ গভীর । ওখানে খুব তাড়াতাড়িই যুদ্ধ হবে ।

-যুদ্ধ ?

-হ্যাঁ গৃহযুদ্ধ । এই সেই সুযোগ । বনবাসী ভূমিপুত্ররা বহু দিন ধরে এমনই সুযোগ খুঁজছিল । দ্রোণকে যেমন ভাবেই হোক আমাদের দিকে আনতেই হবে । তাক্ষীকে সে পত্নী হিসেবে গ্রহণ করবে ।

কঞ্জর উঠে , মদনিকার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো । 

-অসম্ভব । ব্রাক্ষ্মণ কখনই উপজাতি ভূমিকন্যাকে পত্নী হিসেবে মেনে নিতে পারেন না । তাছাড়া তিনি বৃদ্ধ । 

মদনিকা বলল – কে বলল ?

-মানে ?

-সে এখনও দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম আছে । আমরা মেয়েরা সব বুঝি । আমাকে সে বলেছে , হস্তিনাপুরকে যুদ্ধে জয়ী করবার জন্য আমাদের সাহায্য চায় । আমরা আমাদের গোপন অস্ত্র দিয়ে তাঁকে সাহায্য করব । যুদ্ধ শেষে হস্তিনাপুর জয়ী হলে , যুবরাজ দুর্যোধনকে বলে আমাদের জমির লড়াইয়ে সহায়তা করবেন । তাক্ষীকে নিজের পত্নী হিসেবে মেনে নিতে অসুবিধা নেই । পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাস শুরু হলেই , সে আমাদের এখানে আসবে । তাক্ষীর সাথে সময় কাটাবে । আমাদের শুধু ওদের গর্ভজাত সন্তান চাই , যারা ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে । বনবাসী ভূমিপুত্রদের নায়ক হবে । তত দিনে মেয়েটা রজঃস্বলা হয়ে উঠবে । আশা রাখছি । 



কুরুক্ষেত্র থেকে বেশ কিছুটা দূরে নির্জন স্থানে দ্রোণাচার্য দাঁড়িয়ে । তাঁকে ঘিরে রয়েছে অন্ধকার রাতের নিস্তব্ধতা । কেউ আসবে । সেই অপেক্ষা তাঁর মুখে উঠেছে । 

রণভূমিতে কাল সূর্য উঠবার সাথে - সাথে হস্তিনাপুর নতুন সেনাপতি পাবে । গোটা ভারতবর্ষ দেখবে , শিষ্য আর গুরুর লড়াই । দ্রোণ এই সব কথা ভাবতে –ভাবতে মাটিতে বসে পড়লেন । নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল । 

নরম অথচ দৃঢ় হাত , বৃদ্ধ ব্রাক্ষ্মণের কাঁধ স্পর্শ করল ! 

ঘাড় ঘোরাতেই , মুখে হাসি ফুটল । বললেন – যাদব শ্রেষ্ঠ , দ্বারকানাথ প্রণাম নেবেন ।

কৃষ্ণের ঠোঁটে ঠাণ্ডা হাসি । - আপনি কেমন আছেন ?

-আমার অবস্থায় থাকলে আপনি কেমন থাকতেন ?

-এটা ব্যক্তি আর পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে । আমাদের পরিস্থিতি এক হতে পারে । কিন্তু ব্যক্তি আমরা আলাদা । বুঝলেন ?

-আপনি আমার বার্তা পেয়ে এসেছেন , আমি সম্মানিত ।

-গুরু দ্রোণ আমরা দুই বিপক্ষ শিবিরের সেনা । আমি জানি আপনি হস্তিনাপুরের জন্য নয় , নিজের বংশ , পুত্রের পরিচয়ের জন্য হস্তিনাপুরের হয়ে লড়ছেন । আমরা কেউই আমাদের শত্রু নই । আসুন আমরা দেওয়া -নেওয়ার হিসেবটা আগে বুঝে নিলাম । 

-মানে ?

-দেখুন , আমি গুপ্তচর মারফৎ আপনার গোপন বিবাহের কথা জেনেছি । আপনি দক্ষিনাপথে মদনিকা নামে এক উপজাতীয় নর্তকী বংশের কন্যাকে বিবাহ করেছেন । ক্ষত্রিয়দের সাথে বনবাসী ভূমিপুত্রদের দীর্ঘ দিনের সংঘর্ষ তা রীতিমতন দাবানল হয়ে উঠেছে । তাই আপনি ক্ষত্রিয় সমাজেরও শত্রু । এই কথা যদি ক্ষত্রিয় সমাজ জানতে পারে , আপনার সম্মান থাকবেনা। শুধু তাই নয় হস্তিনাপুরের সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার যে স্বপ্ন আপনি দেখেছেন --- তাও ধূলিসাৎ হয়ে যাবে । 

দ্রোণ দু’হাত দিয়ে কৃষ্ণের পা ধরতে গেলেন । কৃষ্ণ পা সরিয়ে নিয়ে -- হাত ধরে ফেলল ।বলল - ছিঃ । আপনি জ্ঞানী । এই কাজ করে আমাকে কেন ছোট করছেন ! আপনি গোপন অস্ত্র শিক্ষার জন্য এই বিবাহে রাজি ছিলেন । আমি অন্যায় দেখিনা । 

-কৃষ্ণ , আসল কথা হচ্ছে মদনিকার কন্যা তাক্ষী গর্ভবতী । আমার সন্তানের মা সে । আমি চাইনা অশ্বত্থামার কাছে ছোট হতে । আমি এই কন্যাকে বিবাহ করেছিলাম শুধুই লেনদেনের শর্তে । কুরুক্ষেত্রে অর্জুনকে রুখতে , আমার উপজাতীয় যুদ্ধ কৌশল ব্যবহার করবার উদ্দেশ্য ছিল ।ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে তার বিন্দুমাত্র কদর নেই । সে আমার সন্তানকে জন্ম দিতে চলেছে। এই কুরুক্ষেত্রের দিকেই আসছে । মদনিকা গোপন বার্তা য় জানিয়েছে , আমাদের এই গৃহযুদ্ধ প্রকৃত সময় ভূমিপুত্রদের জন্য । তারা আচমকাই আক্রমণ করতে প্রস্তুত ।

কৃষ্ণ বলল – আপনি কার পক্ষে ?

-ক্ষমতার । নিজের ঔরসজাত সন্তানকে অস্বীকার করছি । বনবাসী ভূমিপুত্রদের লড়াই একান্ত তাদের। আমি ক্ষত্রিয়দের পক্ষে । ভারতবর্ষে যে আদি বনভূমিতে সম্পদ রয়েছে তা নিয়ে ভবিষ্যতে ক্ষত্রিয় আর বনবাসী ভূমিপুত্রদের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য । খুব ভালোভাবে এই সত্য আমিও টের পেয়েছি , যুদ্ধে যেই পক্ষই জয়ী হোক , ভারতবর্ষে ক্ষত্রিয় আর ব্রাক্ষ্মণদের প্রভাব প্রতিপত্তির পথে বাঁধা হতে পারে ----- বনবাসী ভূমিপুত্ররা । তাক্ষীর সন্তান আগামী দিনে , আমাদের বিরুদ্ধেই অস্ত্র তুলবে । সে ক্ষত্রিয়দের কাছে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে । আমি আমার শ্রেণির পক্ষে । 

-আপনি আমাদের কাছে কি চাইছেন ?

-কৃষ্ণ , অর্জুন আমার পরম প্রিয় বিশ্বাসযোগ্য পাত্র । তুমি চতুর রাজনীতিবিদ । তাক্ষীকে গোপনে হত্যা করবার দায়িত্ব তোমাকে দিলাম । আমি বাইরের কোন মানুষকে বিশ্বাস করতে পারব না। 

-সে যে গর্ভবতী !

-সে এখন শত্রু শিবিরের প্রধান অস্ত্র । তাক্ষীকে আর আমার পত্নী , নারী হিসেবে দেখো না । 

-আপনি যে কথা দিয়েছিলেন ।

-তাইতো তাকে গোপনে হত্যা করবার ভার তোমাদের দিলাম । তাকে বিয়ে করেছি । আমার সন্তানের মা হতে চলেছে । এইসব কিছুর থেকেও আজ সে আমার শত্রু । যুদ্ধে শত্রুপক্ষ কে পরাজিত করাটাই আমার ধর্ম । 

-আর আমরা ?

-আমি পাণ্ডবদের মধ্যে কোন ভাইকেই হত্যা করব না । নিশ্চিন্তে থাকো । শুধু এটা দেখো আমার এই গোপন পাপ যেন আমার পুত্র অশ্বত্থামাও না জানতে পারে । যদি জেনে যায় , আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার উপায় নেই । 

দ্রোণ কৃষ্ণের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল ।

কৃষ্ণের গভীর চোখে তখন অন্য গণিতের ইঙ্গিত । দ্রোণাচার্যের প্রস্তাব সে গ্রহণ করল । অর্জুনকেই এই গোপন দায়িত্ব নিতে হবে । 

রাত বাড়ছে । ঝি ঝি পোকার শব্দ নীরবতার উৎসবকে উদযাপন করছে । গভীর নীল আকাশে , সাদা চাঁদের বুকে , মেঘের পাতলা আস্তরণ – ভেসে চলেছে । এই বড় প্রান্তরে দুজন বিপক্ষ শিবিরের যোদ্ধা , মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে । তাঁদের হাতে অস্ত্র নেই । শুধুই অতীত আর ভবিষ্যতের সমীকরণ । এই সমীকরণই তাঁদের অমোঘ আত্ম রক্ষার কৌশল । এই রণভূমিতে বিশ্বাস বলে কোন শব্দ নেই । 

ক্ষমতা দখলের যুদ্ধে নীতিও থাকতে নেই । 


পিনাকি
পিনাকি
chakrabortypinaki50@gmail.com


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.