মদিনা দুহাতে বুক-পিঠ ধরেও আটকে রাখতে পারছে না। বুড়ো মানুষের গায়ে এত জোর কি করে হয়? শীর্ণ শরীরে যেন অসুরের শক্তি। ঘরে খাবারের অভাব, তার উপর খরায় ভাল চাষ নাই... মেঘ নাই, জল নাই...পোটোপাড়ার দারুণ অসময়। ঠিক এই সময়ে গেল মনিরুদ্দিন। যাবার আগে মেঘ দেখতে চেয়েছিল লোকটা, দেখা আর হল কই! তবে কবর দিয়ে ফেরার পথে আকাশ কালো করে মেঘ এল, খোদাতাল্লার দয়া, কিন্তু বৃষ্টি হল না । তিনদিন ধরে কালো আকাশ সরার মত ঝুলে রইল পোটোপাড়ার মাথার উপর। যেন একটা ঢিল ছুঁড়ে দিলেই হুস করে জল ঝরে পড়বে। মদিনার কালো আকাশ দেখে আছাড়ি-পিছাড়ি কান্না...লোকটা ম্যাঘ দেখতে চেয়েছিল...দেখল নাই রে...!!!
তিনদিনের রাতে শুরু হল আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি...থামে আর না। জল...জল...চতুর্দিকে জল। এমন বৃষ্টি বুঝি কেউ দেখে নি কোনকালে! রাত ফুরিয়ে সকাল হল বটে, আঁধারে-আঁধারে সকালটা বাদুলে হয়ে ঝুলে রইল। গলে যাওয়া, ক্ষয়ে যাওয়া মাটির পৈঠেতে বসে বসে বৃষ্টি দেখে প্রভাকর, মদিনা, গনশা, জয়নাল, আমিনার দল। চোখে মুখে ভয়, বাসি মুখে চা টুকুও জোটেনি। বৃষ্টিতে খসে খসে পড়ছে দেয়াল। গলে ধুয়ে যাচ্ছে ঘর...মাটি।
মদিনার চোখেও বৃষ্টিধারা ঝরে পড়ছে গাল ছাপিয়ে...বুক ছাপিয়ে।
পোটোপাড়ায়...বর্ষা নেমেছে...বর্ষা নামছে অতি দ্রুত...!
chatterjee.jharna@gmail.com
সুচিন্তিত মতামত দিন