স্বাধীনতা_দিবস
১) ফুলেশ্বর স্টেশনে ছ'ঘন্টা পড়ে থেকে এক ব্যক্তির মৃত্যু, এগিয়ে এলেন না কেউ
২) ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু তরুণের, লাইনে পড়ে রইল দেহ, উপর দিয়ে চলে গেল পরের ট্রেন
৩) চোর সন্দেহে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে গণপ্রহার, নিখোঁজ যুবক, জানতেই পারল না পুলিশ
৪) ট্রাফিক সিগন্যালে দামী গাড়ির জানলায় কচি শিশুমুখ, হাতে স্বাধীনতা দিবসের খুদে জাতীয় পতাকা, কেনার আর্জি আরোহীর কাছে
৫) গত বছর বানভাসি অসমের প্রত্যন্ত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গলাজলে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হায়দরের নাম নেই নাগরিক পঞ্জীতে
আজকের সংবাদপত্রের হেডলাইন। নিরাশ করে? অবশ্যই।
লজ্জার স্বাধীনতা? কিছুটা তো নিশ্চয়ই।
কিন্তু বিশ্বাস করুন, সবটাই এই আত্মকেন্দ্রিক সমাজের, চিন্তাহীন বলগাহীন নির্বোধ উচ্ছ্বাসের ছবি নয়।
আজ, পাড়ায় পাড়ায় শুধু মাংসভাতের লাঞ্চ আর আরামের টিভিযাপনের বাইরেও চলছে রক্তদান শিবির। অসংখ্য মানুষ অপরিচিত অসুস্থ সহমানবদের কথা ভেবে রক্তদান করছেন--- পুরোটাই উপহারের লোভ অথবা মোচ্ছবের হুল্লোড় বলে উড়িয়ে দিলে, তাঁদের অপমান করা হবে।
আজ অনেক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান শহরের, গ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে, রোগীদের মাঝে ফল, মিষ্টি ( অবশ্যই চিকিৎসক অনুমোদিত) বিতরণ করছেন--- সবটাই নিখাদ প্রচারের লোভে বললে তাঁদের প্রচেষ্টাকে ছোট করা হয়।
স্বাধীন ভারতবাসী মানেই একশ্রেণীর সুবিধাভোগী গা বাঁচানো মানুষ বোঝায় না। এই ফেসবুকেই পরিচয় হয়েছে এমন কিছু মানুষের সঙ্গে, যাঁরা স্বদেশে তো বটেই, এমন কি বিদেশে থেকেও কাঁধে তুলে নিয়েছেন অন্তত একটি দুঃস্থ কিশোর/কিশোরীর উচ্চশিক্ষার সমস্ত ব্যয়ভার।
আমার এমন চিকিৎসক বন্ধু রয়েছেন, যিনি মাসে অন্ততপক্ষে একদিন নিখরচায় দরিদ্র রোগীদের দেখেন ও বিনামূল্যে ওষুধপত্র দেন।
এমন শিক্ষক বন্ধুকেও এই ফেসবুকেই পেয়েছি, যিনি প্রথম প্রজন্মের কিছু ছাত্রছাত্রীদের কাছে শুধু শিক্ষক বা mentor নন, অভিভাবক বিশেষ, যাঁর সিদ্ধান্ত সেই ছাত্রদের জীবনে চূড়ান্ত।
এখনো দরিদ্র ট্যাক্সিচালক তাঁর গাড়িতে ফেলে যাওয়া টাকা, গয়না পুলিশের জিম্মায় ফেরাতে যান। লোভ তাঁর পায়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল পরাতে পারে না।
এখনো পাড়ার মুখচোরা ছেলেটা সহপাঠিনীকে করা ইভটিজারদের কটূক্তির প্রতিবাদ করে ওঠে---ভয়ের পরাধীনতাকে জয় করেই।
এখনো পাশের বাড়ির বৌদির উপর স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোক অত্যাচার চালালে, এবাড়ির কলেজে পড়া সাধারণ মেয়েটি দৌড়ে গিয়ে কলিংবেল বাজায়--- নিরাসক্তির শিকল ভেঙেই।
এখনো দুষ্ট বিকৃতকামের প্রকাশ্য হস্তমৈথুনের ভিডিও তুলে তা ভাইরাল করে দেওয়ার সাহস রাখে দুই তরুণী ---- লোকলজ্জার চোখরাঙানিকে অগ্রাহ্য করেই।
এখনো রাজনৈতিক সৌজন্য দেখান কোনো কোনো রাজনীতিবিদ--- এই দুঃসময়েও--- মানসিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে। সস্তা রাজনীতির মোহ তাঁদের সদিচ্ছার কন্ঠরোধ করতে পারে না।
তাই, আমি হতাশ হই না। সহস্র নেই-এর মাঝে যেটুকু আছে, সেইটুকু আমার প্রৌঢ় চোখে দেখার প্রাণপণ চেষ্টা করে চলি।
নিন্দামন্দ তো অনেক হলো--- এবার একটু গ্লানিমুক্তির কথা ভাবি সবাই মিলে, আজকের দিনে হোক না এইটুকু অঙ্গীকার!
অবান্তর আকাশকুসুম ভাবনা? ক্ষতি কি? একপেশে নেতি চিন্তার পরাধীনতা থেকে মুক্তির পথ খুঁজবো না? আর কোনো দেশবরেণ্য সামনে থেকে পথ দেখাবার জন্য নেই যে--- এখন বরং আমরা নিজেরাই নিজেদের পথপ্রদর্শক হই।
জয় হিন্দ!
সুচিন্তিত মতামত দিন