ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য

রায়ান এবং নায়িকার মত মেয়েটা
এই হয়েছে মুশকিল । যখন গল্পগুলোর সবচেয়ে বেশি দরকার তখনই মাথার এবং মনের কোন আনাচেকানাচে গিয়ে মুখ লুকোবে শব্দ আর কনসেপ্ট তার তল মেলা ভার । ঠিক যেন পকেটমার পেয়ে পাবলিকের জটলা । উদোম ক্যালাও শরীরে যতক্ষণ না ঘাম ঝরে । এও বুঝি এক ধরণের ওয়ার্কআউট । হাতের সুখ করে পিটিয়ে নিলে যেন ভেতরে জমে থাকা ব্যক্তিগত রাগ বিরক্তি বঞ্চনার মেদমুক্তি । সাথে আছে সামাজিক কর্তব্য করার উপরি আনন্দ । যেমন পুলিশ আসতে দেখলে পাতলা হতে থাকে এইসব জটলার ঘনত্ব, তেমনি আমাকে লেখার খোঁজে আসতে দেখলেই অনুভূতিগুলো সরে গিয়ে সব ফর্সা । এমনিতে যখন টিউশনির গুঁতোয় মরমী বিকেলগুলো মরে যায়, দুটো টাকার মায়ায় একই কথা বলে যেতে হয় সামনের পড়তে অনিচ্ছুক ছেলে অথবা মেয়েটিকে, ঠিক তখন মনের ভেতর গল্পের আইডিয়ারা যেন পেখম মেলে নাচে । মানে এই যদি একটুকরো কাগজ আর কলম পাই নিদেনপক্ষে মোবাইলের কিবোর্ড, লক্ষ কোটি শব্দের মহাভারত যেন নেমে যাবে এইখানে বসেই। আমি যখন হাতড়ে পাচ্ছি চমতকার একটি আইডিয়া, স্টুডেন্ট তখন মেলাতে পারছেনা মেকানিক্সের কোন অঙ্ক । তার মা এসে রাগত গলায় বলছে, “ওই মাসে দুদিন আসনি, সেইটা মেকাপ করে দিতে হবে । কিম্বা এত টাকা দিচ্ছি তোমায়, মিড টার্মটা ধ্যাড়ালো কেন?” এইসব হাবিজাবি সামলে যখন শেষমেশ ছাড়া পাই, তখন গল্পরা গোল্লাছুটে হারিয়ে গেছে । তবে আরো একটা সময় খুব গল্প পায় আমার । সবে ফার্স্ট ইয়ার । কলেজের টাল সামলানো শিখছি । হয়ত একটা কঠিন অঙ্ক চলছে ক্লাসে । কথা গিলে নেওয়া ম্যাডাম রক্ষিতের লেকচার বুঝতে এমনিতেই হিমশিম সবাই । তারমধ্যে আলফা গামা বিটা ছেড়ে মন চলল গতকাল রাতের অর্ধসমাপ্ত গল্পের গিঁট ছাড়াতে । অথচ যখন দরকার, কোন বিশেষ কারণে মনের আঙ্গিনায় অনুভবের লাঙ্গল চালিয়ে তুলে আনতেই হবে ফসল, অমনি গোঁয়ার বলদের মত হাল ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে কলম । একটা অনলাইন প্রতিযোগীতায় দেওয়ার জন্য কতবার কতভাবে ভাবছি একটা গল্প, কিছুতেই জুত পাচ্ছিনা তেমন । এই দিন ফুরোনোর রাতবাতি জ্বেলে গল্প ফাঁদা যে কবে আমার বাধ্য হবে? 

উনিশ বছর বয়েস হয়ে গেল । এখনো কেউই বাধ্য নয়। 

বাড়ির পোষা বেড়ালটা সবার আদর খাবে । আমি ছুঁতে গেলেই এমন ফোঁস করবে যেন সত্যি বাঘের মাসি । আচ্ছা সে নাহয় একটু পেটে আদর করি , মাখনের দলার মত গুটি মেরে শুয়ে থাকে যখন । তা বলে অত্ত মেজাজ কেন বাপু ?

তেমনি হয়েছে দশ বছরের ছোট ভাইটা । আমার একার আদরে ভাগ বসিয়ে যখন জন্মাল, প্রথম ক’মাস কি যে মনখারাপে কেটেছে দিনগুলো । যেই মায়ের আমিই সব তাকে ভুলে মা শুধু ভাইয়ের কাছে সারাক্ষণ । এমনকি খাটে উঠতে গেলেও হাত পা ধুয়ে জামা ছেড়ে কত ঝক্কি সামলে যেতে হচ্ছে আমায় । কদিন আমিও খুব জেদ , কান্নাকাটি এসব করলাম । সুযোগ পেয়ে একদিন চড়ের দাগও বসালাম একরত্তি ভাইয়ের গালে । অবশেষে ক্ষান্ত হয়ে স্বীকার করতে হল, যাহ, তোকে মেনেই গেলাম । এ হেন ভাই এখন মূর্তিমান বিপদ । কথায় কথায় দিদিকে শাসন করে । “এইটা বোকা বোকা বলবিনা দিদি । অউডি গাড়ি দেখিসনি? বেব্লেড চালাতে পারিসনা” এমন কত্তকিছু । হয়ত সারাদিন বদমাইশি করে সন্ধেতেও ল্যাদ খাওয়ার উদ্যম নিচ্ছে ভাই ।

আমি বললাম, “যা না একটু বেগুনী নিয়ে আয় বাড়ির ঠিক পাশের চপের দোকান থেকে । বেশি করে ঝালনুন দিতে বলবি ওপরে”।

অমনি ভাই খেঁকিয়ে উঠবে , “আমি কি একটু নিজের মত থাকতে পারিনা” ? 

বয়েস সবে নয় যার , তারও নাকি স্পেস চাই নিজস্ব । মা অবশ্য বলে বিনু একটু কঠোর হ । কড়া কথা নাইবা বললি কাউকে, একটু ফণা তো তুলতে হয় মাঝেমাঝে । নিজের না হ্যা ইত্যাদি একটু স্পষ্ট বলতে শেখ । দুনিয়াটা কিন্তু অত কেকওয়াক নয় । চোরাস্রোতে ভেসে যাবি শেষে । থই পাবিনা ।

তা অথই দশা কিছুদিন ধরে চলছে বটে আমার । সেইসব পাহাড়ের গায়ে ঢলানি মেঘের মত আবছায়া সুখের টিপটিপ ঘিরে আছে যেন । কি যে কেলেঙ্কারী ! ওরকম লেমন কালারের পাঞ্জাবী কতজন পরে । ওরকম রিমলেস চশমা পড়ে তার চেয়ে আরো বেশি জন । পড়াশোনায় ভাল তাতেই পৃথিবী উল্টে যেতনা কারণ আমিও নেহাত এলেবেলে নই । আমাদের মোহিনীমোহন বালিকা বিদ্যালয়ের টপার ছিলাম উচ্চমাধ্যমিকে । কিন্তু এ ছেলেটা যেদিন মণীন্দ্র গুপ্ত আওড়াল নবীন বরণে, উদার স্বর আর সুঠাম বাংলা উচ্চারণে, “এক লক্ষ বছর পর সাব্যস্ত হবে তুমি আমার কি না/ওসব কথা এখন থাক....”কি যে ভুলভাল ট্রাফিকে আটকে গেলাম হৃদয়ের হাইওয়েতে ! 

ছেলেদের নিয়ে আমার বিশেষ ফ্যান্টাসি ছিলনা মনে আজ অবদি । তসলিমা পড়ে বেশ খচেই আছি বলা যায় । তাও কি যে হল, পায়ের তলায় কলার খোসা নেই, দুমদাম পিছলে গেলাম । উড়ে এসে জুড়ে বসা এন আর আই থুড়ি নন রিলিয়াবেল ইন্ডিয়ানটিকে আমার যাবতীয় ভরসাস্থল বানাতে মন এক্কেরে আকুলিবিকুলি । 

যুগে যুগে ভগবান ডুড পাঠায় বলেই কিনা সবকিছু ঠিকঠাক চলে । আমাদের জীবনে তমাল ছিল বলেই সামাল দিয়েছি কত বিপদ ! এরা আজন্মকাল বন্ধু হয় মেয়েদের, তাদের গুপ্তচর এবং দূত হিসেবে কাজ করলেও অন্য কোন দাবী রাখেনা । সেই মান্যবর তমাল খবর এনেছে ছেলেটা হেব্বি হাইফাই । চকচক করলেই সোনা হয়না জানি । কিন্তু এই ছেলে হাইফাই না হলেও তাকে আমি বাইবাই বলতে পারবনা । যেটুকু জানা গেল তা হল আমেরিকাতে জন্মেছিল ছোটবেলায় বাবার কর্মসূত্রে, নায়াগ্রাতে চান করেছিল কিনা জানতে পারা যায়নি যদিও । সেখানেই বহুদিন পড়াশোনা করে এদেশে পা রেখেছে সদ্য । দ্বিতীয়ত ছেলেটির মা হচ্ছেন দুঁদে আই পি এস । এমনধারা ছেলেপুলে সাধারণত সোমবার যে গাড়িতে কলেজে আসে, বুধবার সে গাড়িতে আসেনা । কিন্তু এ ছেলেকে মেট্রোর টিকেটে আমার সামনে দুদিন লাইন দিতে দেখলাম, ভিড়ে ধাক্কা খেতে দেখলাম মেট্রোতে, একদিন একজন বৃদ্ধাকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াতেও দেখলাম । তবে নির্ভুল বাংলা জানে সেটা আশা করিনি মোটেই । মণীন্দ্র গুপ্তটা হাই ডোজ হল আমার খানিক সেজন্যেই । 

তারমধ্যে আবার হাওয়াই চটি আর জিন্স পরে কলেজে আসে । সাথে ওই লম্বা ঝুলের একরঙ্গা পাঞ্জাবী, হালকা চাপদাড়ি তুলোর মত লেগে আছে ফুলের মত গালে । আসলে ফুলের মত বললাম কারণ পদ্মের মত গোলাপী ফর্সা ছেলেটা । আর দেখলেই মনে হয় কি নরম । আমি তো ডায়রীতে লিখেই ফেললাম মাঝরাতে, “পাঞ্জাবীটা সাদাই হোক, রাঙিয়ে দেবে অন্য কেউ”.......উফ, মানে এই আমার মত সদ্য লিখিয়ে বাংলা মিডিয়ামের আবেগে থইথই মেয়েগুলো যাদের কল্পনা করে ন হন্যতে পড়েছিল তেমন এক পিস ডবকা চোখের সামনে ঘুরে বেড়ালে “মন বান্ধিবি কেমনে” একথা সাহানা বাজপেয়ী একা নয়, আমিও বলছি । ছেলেটির নাম রায়ান । 

সে যাকগে । যখন অন্য মেয়েরা অপার বিস্ময়ে “মাটিতে যে আজ স্বর্গ এসেছে নামি”, থুড়ি স্বর্গদূত, এমন মুখ করে তমালের কাছে সেই ছেলের গল্প শোনে, আমি লাইব্রেরিতে গিয়ে লেখাপড়ার ভান করি । “গল্প শুনে তারে আমি অল্প অল্প” ভালবাসব এই বান্দা সেসব করবেনা । কিন্তু অথই দশা আমার চলতে থাকে । মনের গহনে উপচে পড়া নদী।

বেশ কিছুমাস কেটে গেছে কলেজের । ইতিমধ্যে আবার একটা কান্ড ঘটেছে । ইন্টার কলেজ ফেস্টে আমাদের তিনজনের একটি দলকে পাঠানো হচ্ছিল কুইজ করতে । আমি তুমি ও সখা নির্বাচিত । সিরাজুল, আমি এবং রায়ান । সিরাজুল সবচেয়ে কাছে থাকে ভেনুর । ও বলল “তোরা একসাথে পৌঁছে যাস” । আমি কালিন্দী, লেমন পাঞ্জাবী থুড়ি রায়ান শোভাবাজার । এই রায়ানের সাথে কলেজে তেমন কথা হয়না কিছুই । হয়ত কোনদিন ভাগ্যক্রমে পাশাপাশি বসে ক্লাস করতে হলে কেজো দু’একটা কথা । নিকুচি করেছে । আমিও আজ তাকে শুনিয়ে সিরাজুলকে বললাম, “একসাথে না হলেও পৌঁছে যাব ঠিক সময়ে” । 

রায়ান বলল , “না না, একসাথেই যাব । কোথায় মিট করা যায় বল”? 

আপ্লুত হওয়ার কিছু নেই আমার । কারণ এই ছেলে সবাইকেই তুমি বলে । বিদেশে বড় হয়েছে তো , কেবল “ইউ” শিখেছিল, তুই তুমির তফাত বোঝেনা মনে হয় ।

শোভাবাজারেই যাব, সেখানে মেট্রো স্টেশনে দেখা হবে । বললাম আমি । ওকে পিছিয়ে আসতে বলে লাভ নেই, আমি এগোনই ভাল । অন্যদিকে তো “নট নড়নচড়ন দশা” । মেট্রোতেই এগোই । 

যেতে যেতে দেখলাম ছেলেটা খারাপ কথা বলেনা । না মানে কথা বলার পরিমাণ ভালই । আর যা বলে সেগুলো এই মুহূর্তে আমার হ্যাল খাওয়া হাল থেকে “অরূপ তোমার বাণী” মনে হচ্ছিল যদিও, কিন্তু আদতে নিরপেক্ষ থাকতে হলেও মন্দ নয় কথাগুলো । এমনিতে যারা একমাস আমেরিকা যায় তারা ভিক্টোরিয়ার পরীতেও স্ট্যাচু অব লিবার্টি ভ্রম করে আজীবন । আমারি কিছু মাসি পিসি তাদের ছেলেপুলে আছে সেই গোছের । একে দেখলাম চন্দ্রকেতুগড় নিয়েও গল্প করল খানিকটা । ঠিক আছে , এই দুনিয়ায় আমার অবাধ্য সবাই । শাড়ির কুঁচি টু পাড়ার বুচি । আগেই যেমন বলছিলাম আর কি । রায়ান সেন আমার ইচ্ছেমত চলবে সেই দুরাশা নেই । আজ থেকে কুড়ি বছর পর মধ্যবয়েসী মেয়েলি আড্ডায় ফিরে দেখা প্রেম নিয়ে আলোচনায় এই মেট্রো যাত্রাটুকুই রইবে নাহয় । 

সে কুইজ জিতিনি আমরা একটুর জন্য, তিনজন মিলে সান্ত্বনা পুরস্কার নিয়ে লঞ্চ চড়ে আর ছোলা-বাটুরা খেয়ে সেইদিনটা কেটে গেল । মেট্রো করে বেলগাছিয়া এল রায়ান আমার সাথে।

“শোধবোধ হয়ে গেল কিন্তু” । রায়ান মুচকি হেসে বলল । 

এই একটা বাঙালি ছেলের থেকে বাংলা শুনে কেন যে আমি বিগলিত বন্যা হয়ে যাই ! 

উত্তর দিলামনা । “নবীন বরণের মুগ্ধতার ঋণ আগে শোধ কর তুই আমার” । মনেমনে বললাম ।

সময় কেটে যাচ্ছে যেমন যায় । আমার জীবনে তীর মারার মত কিচ্ছুটি ঘটেনি । আবার একটা ফেব্রুয়ারী মাস । আমার বাবা মা সেই যুগে বিয়ে করেছিলেন প্রেম দিবসে, অবশ্য তারা ক্যালেন্ডার নয়, পাঁজি দেখে করেছিলেন সেটা আমি জানি । আমার জীবনে ওসব কেবল গল্প । তাও এই যে রোজ ডে, জ্যাক ডে কতকিছু চলে গোটা ফেব্রুয়ারী জুড়ে প্রায়, এই সময়গুলো আমি কার্ডের দোকান, গিফটশপ এড়িয়ে চলি । পাড়ার ভন্টুদাও দেখলাম তার ফুলের দোকানে লিখে রেখেছে, “ভেব নাকো প্রলাপ/তুমিই আমার গোলাপ” । এরও মাথায় কাব্যি এসে যায় মধুমাসে । গোলাপ কিনলে কাঁটা ফ্রি । এই ছাড়া আমার ডায়রীতে আর কিছু লেখা হয়না এখন । যদিও রায়ানের সাথে ভালই কথা হয় আজকাল । কুইজের পর থেকে অতটা দূরত্ব নেই । বন্ধু হয়েছি হয়ত, মাঝে একবার ব্রিটিশ কাউন্সিল গেছিলাম দুজন মিলে । কফিশপে নোট্‌স মেলান ইত্যাদি । আমাদের পাস ক্লাসগুলো আলাদা । কিন্তু সময় মিলে গেলে মেট্রোতে দেখা হয়ে যায় আগের মতই । তবে আগে যেমন চোরের মত দেখতাম এখন হাসিমুখে কথা হয় । 

ওইটুকুই । নিজের কপালের ওপর ভরসা আর নেই । এ সম্পর্ক যেদিকে গড়াচ্ছে উজ্জ্বল ভবিষ্যত একেবারেই নয় । বড়জোর ওর বিয়েতে একপিস নেমন্তন্নর কার্ড পেতে পারি তাও যদি মনে কিল মেরে এই বন্ধুত্ব টেনে নিয়ে যাই তদ্দিন । 

গপ্প কাব্যি সেঁধিয়ে গেছে বইয়ের পেটে আজকাল । আমাদের মধ্যবিত্ত সংসার । বুঝে গেছি গল্প লিখে নাম টাকা কোনটাই হবেনা বিশেষ, তারচেয়ে পড়াশোনার শক্ত নোঙ্গরে জীবন লাগালে বেঁচেবর্তে থাকব । 

ভুলেই গেছিলাম আমার সেই প্রতিযোগীতার কথা । আজ হটাত মনে পড়ল ভিড় বাসের মধ্যে । ভুল সময়ে ঠিক কিছু মনে পড়লে কি যে অস্বস্তি হয়। এমনি ধৈর্য আমার ভালই। কিন্তু আজ মনে হল যে গল্প আমার লেখা হয়ে ওঠেনি, কিন্তু লিখতে চেয়েছিলাম খুব, সেগুলো কারা কিভাবে লিখল একবারটি দেখি। পাশে রাগী মাসীমা দাঁড়িয়ে, তাও পকেট থেকে মোবাইলটা খুলে বের করলাম ওয়েবসাইট। 

“বাসে লোকে সোজা দাঁড়াতে পারছেনা, তারমধ্যেও মোবাইল”। টিপ্পনী ভেসে এল । 

বেপাত্তা করে ঝাঁপিয়ে দেখছি বিজয়ীদের নাম । 

দ্বিতীয় পুরষ্কারঃ রায়ান সেন, পাশে আমাদের কলেজের নাম! গল্পের নাম, নায়িকার মত মেয়েটি 

তলে তলে এই ! 

যার জন্য আমি নায়িকা হতে চেয়েছিলাম, মন দিয়ে একদিন কত বেসন, দই, স্ক্রাবার ঘসেছি মুখে, তার চোখে কোন মেয়ে নায়িকার মত আসলে, জানতে ইচ্ছে করছিল খুব। 

খেয়াল না করে বাসে একটা স্টপ এগিয়ে চলে গেলাম গল্পের শেষে পৌঁছতে গিয়ে। 

এরম এক ধড়িবাজ ছেলেকে ভাল লেগেছিল আমার ! এরকম গল্প যে লেখে তাকে আমি একটুও ভরসা করিনা আর। 

কলেজে বেশ কদিন সটান এড়িয়ে গেছি তাকে ! মেসেজের রিপ্লাই দিইনি । 

একদিন আমায় ধরল গেটের মুখে ! 

“কি ব্যাপার তোমার”? 

কিছুই হয়নি ভাব দেখিয়ে বললাম, “মানে”?

“মানে কিছু নয় ! তুমি আমায় এড়িয়ে চলছ কেন”? 

বল আমার কোর্টে ক্রমশ। 

“কই, না তো” । 

“আলবাত তাই” ! 

সে অনেক জোরজার হল ।

শেষে বললাম , “আমার প্রেমিক চায়না আমি ছেলেদের সাথে বেশি মিশি” । 

“ওহ! সরি” ! 

লেমন পাঞ্জাবী ফিরতি মুখে হোঁচট খেল দুবার।

মেসেজ টাইপ করছি আমি আয়েশ করে । 

“এক লক্ষ বছর পর সাব্যস্ত হবে তুমি আমার কি না/ওসব কথা এখন থাক.....তারচেয়ে বল এখন, গল্পটা কাকে নিয়ে লিখলি? কলেজের প্রথম দিন কচি কলাপাতা রঙের সালোয়ার তো শুধু একজনই পড়েছিল”। 

পাঠানোর সাথে সাথে রিপ্লাই এলনা । ওই হাইফাই ছেলে ফিরে এল ! 

“ভেবেছিলাম তুই নিয়মিত ওই পেজ চেক করিস, লাইক কমেন্ট করিস । নিশ্চয়ই আমার গল্পটা দেখবি । আলাদা করে কিছু বোঝাতে হবেনা তোকে । প্রেমের গল্প প্রতিযোগীতা হলে তোকে ছাড়া আর কাকে নিয়ে লিখব বল? কতদিন হয়ে গেল, তুই তো কিছুই বললি না” । 

এক শ্বাসে বলে গেল কথাগুলো রায়ান । ফর্সামুখে আবিরের ছড়াছড়ি উত্তেজনায় । 

আমার চোখ থেকে ফুটন্ত দুধের মত উথলে আসছে সুখ, কান্না। 

“এই বুদ্ধি নিয়ে তুই গল্প লিখিস ? আর আমায় তুই বলছিস কেন রে? এতদিন তো তুমি তুমি বলে মাথা খেতিস” । আমি বললাম।

“তোর তো তুমি বললে ন্যাকা ন্যাকা লাগে” । 

“অন্য কেউ বললে লাগে, তুই যদি ‘তুমি’ বলিস তাহলে লাগেনা” ! 

তারপর আর শব্দ বিনিময় হলনা বিশেষ । 

আমরা দুজন আস্তে আস্তে হাঁটছিলাম অনেকক্ষণ । 

শক্তির কিছু লাইন মনে পড়ছিল কেবল , “একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা করো/দেখবে, নদীর ভিতরে, মাছের বুক থেকে পাথর ঝরে পড়ছে/পাথর পাথর পাথর আর নদী-সমুদ্রের জল...”

<ritusxc@gmail.com>



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.