পুজা মৈত্র

পুজা মৈত্র
পর্ব-২৫

গৈরিকা তড়িঘড়ি কলকাতা চলে আসায় অবাক হয়েছিল সুহার্ত। ও ভেবেছিল লেখাটা শেষ হলে বেড়াতে যাবে,তা না-লেখা শেষ হতে না হতেই কলকাতায় ফেরার বাই চাপল গৈরিকার মাথায়। বড্ড মুডি,পাগলি একটা। ওর পাগলামোগুলোও ভালোবাসে সুহার্ত। ওর মন রাখার জন্য নয়,নিজের মনের তাগিদে সব কথা শোনে। এখন ভীষণ ব্যস্ত। নিজে সাহা’জ-এ গেল,উপন্যাসের ব্যাপারে সমস্ত কথাবার্তা বলল,ফাইনাল প্রুফটাও দেখবে বলল। উপন্যাসটা নিয়ে খুব সিরিয়াস ও। একটু ভুলচুকও চায় না। কলেজে জয়েন করেছে,সাহিত্যসভায় যাচ্ছে-অনেকটা ছন্দে ফিরেছে এখন। উপন্যাসটার নামকরণ নিয়ে ভাবছে দুজনে। গৈরিকার কোনটাই পছন্দ হচ্ছে না। সাহা’জ এর তরুণবাবু হাতে চাঁদ পেয়েছেন যেন। ঠিক হয়েছে বইমেলার চতুর্থ দিন উপন্যাসটার উন্মোচন হবে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে। প্রতিবিম্বর মত সাহা’জও লাভ করতে চায়,তাগিদটা ওদেরই বেশি। কাল ডাক্তারের কাছে গৈরিকাকে নিয়ে গিয়েছিল সুহার্ত। এখন ওকে নর্মাল বলা যায়,বলেছিলেন ডাক্তারবাবু। তবে ঘুমটা কমে গেছে। আগে যেমন দিনে রাতে যখনই শুত তখনি ঘুমিয়ে পড়ত-এখন ঘুমাতে চায় না,জেগে থাকে। চুপচাপ ভাবটা কেটে গিয়ে এখন বরং অনেক কথা বলে। নিজের ব্যাপারে,বাড়ির ব্যাপারে,বাবা মা,রাণাঘাট,বন্ধুবান্ধব-সব কিছু নিয়েই অনেক অতি কথন করে। এসব ব্যাপারে ওকে আগে কখনো কথা বলতে দেখেনি সুহার্ত। এদের নিয়ে কথা বলতে বলতে গৈরিকার চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে যায়,মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সুহার্তর মনে হয় গৈরিকা ওদের কাছে যেতে চায় অথচ পারছে না বলেই ওদের কথা বলে নিজেকে খুশি করে। ওর খুশিতে বাঁধা দেয় না। মন দিয়ে শোনে। গৈরিকার কোলে মাথা রেখে গল্প শুনতে শুনতে তন্দ্রা আসে সুহার্তর। কিছুক্ষণ পর টের পেল গৈরিকা ওকে চুমু খাচ্ছে,কপালে। ঠিক মায়ের মত। মা-ও এইভাবেই সুহার্তকে চুমু খেত। কপালের মাঝখানে। ছোটবেলায় মা মারা গেছে। সুহার্তর তখন সাত বছর বয়স। মায়ের স্মৃতি বলতে ঐ আদরটুকুই সুহার্তর মনে লেগে আছে। গৈরিকার চুমুতে ঐ স্নেহ খুঁজে পায় সুহার্ত। পাশ ফিরে কোলের মধ্যে মুখ গোঁজে। আঁকড়ে ধরে দুহাতে। দু’চোখ জলে ভিজে আসে। গৈরিকা বলে।

-ঘুমোওনি?

-উঁহু।

-কেঁদো না।

-কাঁদছি না।

সুহার্ত চোখ মোছে।

-পাগল একটা।

গৈরিকা সুহার্তকে আরো আদর করে।

-আমি না থাকলে থাকবে কি করে?

-কোথাও যেতে দেব না তোমায়।

-আমি তো সুস্থ,ডাক্তারবাবু বললেন।

সুহার্ত উঠে বসে

-মানে? সুস্থ বলে চলে যাব আমি? চলে যেতে বলছ আমায়?

-যেতে বলছি না। আমি চাই তুমি থাকো। কিন্তু তোমার তো শুধু একটা জায়গায় আটকে থাকলে হবে না। তোমার নিজের জীবন আছে। ফ্যামিলি আছে,ভবিষ্যৎ আছে...

-তোমাকে ছাড়া আমার কিছু নেই। সব ফাঁকা।

-আমার জন্য তোমার লেখা নষ্ট হচ্ছে। শুধু আমার কাজ করছ। এই অনুলিখন,এই প্রকাশকের কাছে ছোটা,এই সাথে করে সাহিত্যসভায় যাওয়া...

-এগুলো আমার লেখার অনুপ্রেরণা। বইমেলাটা যাক,অনেক লিখব আমি।

-হ্যাঁ। বইমেলা গেলে তোমার চাপটা অনেক কমে যাবে। মন দিয়ে লিখবে তো?

-মন দিয়ে লিখব।

-আমাকে নিয়ে লিখবে?

-শুধু তোমাকে নিয়েই লিখব।

গৈরিকা হাসে

-তোমার কবিতায় রয়ে যাব আমি।

-কবিতায় কেন? আমার জীবনেও থাকবে। আমার পাশে থাকবে।

-আচ্ছা। থাকব।

-বালজাক কি বলেছিলেন জানো? পুরুষের প্রথম প্রেম যদি নারীর শেষ প্রেম হয় তবে তার থেকে মধুর প্রেম আর হয় না। আমাদের ভালোবাসাটা সবচেয়ে মধুর।

গৈরিকা হাসে।

-বকলে না তো? এমা আমি ভাবলাম বলবে,ভালোবাসা নয় সুহার্ত। বন্ধুত্ব।

-দিদিমণিগিরি করলাম না বলে আশাহত হলে?

-ঠিক। তোমাকে দিদিমণি না হলে মানায়?

-বন্ধুত্বও কি? সত্যি বন্ধুত্ব?

সুহার্ত গৈরিকার কপালে নেমে আসা চুল সরায়। ওকে চুমু খায়।

-তুমিই জানো। কি বলবে একে?

-নাম দেওয়া বড় কঠিন কিছু কিছু সম্পর্কের নাম হয় না। এটাও না হয় নামহীন হয়েই থাক।

-বাঃ রে! তোমার আমি কেউ হই না বুঝি? উপন্যাসে সবার চরিত্র আনলে,সবাইকে নিয়ে কাটাছেঁড়া করলে। এমনকি নিখিলেশদার জীবনের ঐ মেয়েটাকে নিয়েও...অথচ আমি বাদ।

-যা অমূল্য,তা লুকিয়ে রাখতে হয়,বাজারে বেচতে নেই।

সুহার্তর নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে। গৈরিকার চোখের চোখ রাখে ও।

-সত্যি আমি অমূল্য?

-আমার চোখে অন্তত।

-তা হলে ভালোবাসো না যে।

-তোমাকে নষ্ট করতে ইচ্ছে হয় না। বড্ড নিষ্পাপ তোমার চোখদুটো। দেখেই স্নেহ জাগে।

-কপাল আমার!

সুহার্ত কপালে হাত দেয়।

-স্নেহটাও কিন্তু বড় পাওয়া।

সুহার্ত হাসে। গৈরিকাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে।

-যা দেবে তাতেই খুশি আমি।

অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে দুজনে। একে অপরের হৃদস্পন্দন শুনতে থাকে।

-উপন্যাসটা বইমেলায় বেরোবে তো?

গৈরিকা মুখ খোলে।

-এবার কার তাড়া দেখছি?

-সত্যি বড্ড তাড়া আমার।

-জানি। বইটা বেরোলে অনেকগুলো সত্যির উপর থেকে পর্দা উঠবে। অনেক মুখোশ খুলে যাবে।

-বইটা আমায় সব দায়মুক্ত করবে সুহার্ত। সব ঋন চুকিয়ে দেব। বিবেকের কোন পিছুটান থাকবে না।

-সত্যিই কি থাকবে না?

সব পিছুটান কি মোছা যায়? সুহার্ত ভেবে কুল পায় না। গৈরিকা জবাব দেয় না। সুহার্তই বলে আবার

-নিখিলেশদা সত্যিই বিয়ে করছে?

-বলল তো তাই।

-আমার তো বিশ্বাস হয় না।

-আমার এখন সব কিছুতেই বিশ্বাস হয়।

-করলে ঠিক করছে না। রিন্টু যখন চায় না তখন-গৈরিকা,তুমি আর আমি রাণাঘাটে যাই চলো। রিন্টুকে নিয়ে আসি। ও এখানে পড়বে এবার থেকে।

-না। থাক।

-কেন থাকবে কেন?

-রিন্টুর উপর নিখিলেশের জোর অনেক বেশি। আমি তো ফেলেই চলে এসেছিলাম। ফেলে আসা কোন কিছুরই মোহ রাখতে নেই।

সুহার্ত অবাক হয়ে গৈরিকার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিজের মনটাকে সময়ে সময়ে বড্ড কঠিন করে নিতে পারে গৈরিকা। তখন ওর চোয়াল কঠিন হয়ে যায়। চোখের থেকে সব আবেগ মুছে গিয়ে ভাষাহীন শূন্যতা ভিড় করে। সুহার্ত আর ঘাঁটায় না ওকে। কোন কথা বলে না ওরা।



    নিখিলেশ বাড়িতে ফিরেই অবাক হয়। আজ কলকাতা গিয়েছিল ও। কাল প্রেস ক্লাবে বই-এর উন্মোচন। সুদেববাবু শেষ মুহূর্তের আলোচনার জন্য ডেকেছিলেন। বেশ ভালো প্রচার হয়েছে বইটার। সমস্ত বড় দৈনিক আর ম্যাগাজিন বড় করে অ্যাড দিয়েছেন। নিখিলেশ বেশ সন্তুষ্ট। কাল সৌগতদাকে নিয়ে ও কলকাতায় যাবে। সৌগতদার থাকা দরকার। অনেকেই আমন্ত্রিত। বিশেষ অথিতির মধ্যে গৈরিকা আছে। সুহার্তও আছে। যদিও গৈরিকা আসবে না। তবুও সুদেববাবু নামটা রেখেছেন। গৈরিকা সান্যালের এক্স-হাজব্যান্ড নিখিলেশ ব্যানার্জী-এটা এখনো নিখিলেশের মুখ্য পরিচয়। এই পরিচয়টাকেই ভাঙাতে কার্ডে গৈরিকার নামের অনুষঙ্গ দিয়েছেন। গৈরিকা নিখিলেশকে একসাথে দেখতেও অনেকে আসবে। আঁচ করে নিতে চাইবে ওদের রসায়নটা। গৈরিকা না আসলেও একদিক থেকে বেশ ভালো প্রচার হবে,আসলে আর এক দিক থেকে। নিখিলেশ ফোন করেনি গৈরিকাকে। ওর রাগ এখনো কমেনি,সুদেববাবু করেছেন,এই যথেষ্ট। ও আসুক,এটা নিখিলেশ চায়না। এলেই সবাই বলবে গৈরিকাকে ব্যবহার করছে নিখিলেশ,ওর নামকে ব্যবহার করছে। তার থেকে না আসাই ভালো। বাড়ি ফিরেই দেখে দিদি,জামাইবাবু,শিঞ্জিনী,শিঞ্জিনীর মা-সবাই উপস্থিত। ওকে দেখেই শিঞ্জিনী ছুটে এল।

-কি হল,আপনার ফোন বন্ধ কেন?

ফোন বন্ধ রেখে সুদেববাবুর সাথে কথা বলছিল নিখিলেশ,খুলতে ভুলেই গেছে।

-বন্ধ রেখেছিলাম।

-একটু আক্কেল জ্ঞান থাকলে এরকম করতেন না। আমরা কত টেনশন করছিলাম জানেন? ফোন করে করে অস্থির হয়ে উঠেছিলাম।

-অত টেনশনের কিছু হয়নি। গিয়েছি যখন,ফিরেও আসব।

নবনীতা এগিয়ে এল

-রাস্তাঘাটে কত বিপদ আপদ হতে পারে জানিস না? মেয়েটার হাল দেখ কখন থেকে ঘরবার করছে।

শিঞ্জিনীকে আড়চোখে দেখে নিখিলেশ। ছলছলে চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মুখটা লাল হয়ে উঠেছে।

-শেষে থাকতে না পেরে আমাদের ডেকে পাঠাল। আমরা এসেও তো কিংকর্তব্যবিমুখ হয়ে গেছি। কি করবো,কোথায় যাবো,কাকে ফোন করবো...

-তোমাদের এত কনশার্ন দেখে আমি অবাক হচ্ছি। এসে গেছি,সুস্থ আছি,দেখে নিয়েছ-আর অত ন্যাকামো করতে হবে না। যে যার বাড়ি যাও।

-তোর সাথে এই জন্যই কেউ ঘর করতে পারে না।

-জানি তো,করতেও হবে না। কাউকে ঘর করতে বলিনি আমি।

শিঞ্জিনী বলে ওঠে

-থাক দিদিভাই। ওনাকে বোঝাতে হবে না। উনি ওসব বোঝেন না।

-ঠিক বলেছ। পাষাণ হয়ে গেছে একদম।

-এবার পথ ছাড়ো। হাত মুখ ধোব। খিদে পেয়েছে।

শিঞ্জিনীর মা রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ হলেন।

-ঠিক বলেছ বাবা,খেয়ে নাও। এই,খেতে দে। মানুষটা কতদূর থেকে এল। তার উপর কাল বই বেরোবে,মেলা চাপ।

নিখিলেশ চমকে তাকায়

-বই বেরোবে,আপনি জানলেন কি করে?

নবনীতা আর শিঞ্জিনী মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। নবনীতা বলে

-গৈরিকাকে ফোন করেছিলাম। তোকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না তো...

নিখিলেশের কাছে চিত্রটা পরিষ্কার হল,

-ও। আমাকে ফোনে পাচ্ছ না,অমনি ভাবলে আমি গৈরিকার কাছে গেছি কিনা? গোয়েন্দাগিরি করতে ফোন করলে তাই? বাঃ!

-গোয়েন্দাগিরি হতে যাবে কেন? খোঁজ নিচ্ছিলাম মাত্র। ওই তো বলল আজ তুই খুব ব্যস্ত,কাল বই বেরোবে। ওতো সব জানে দেখলাম,কই আমাদের তো কিছু বলিসনি?

-তোমরা কিছু বুঝবে না,তাই বলিনি। ওকেও আমি বলিনি। প্রকাশক বলেছেন।

-তা তো বলবেনই। গৈরিকা এলে তোর বই-এর কাটতি বাড়বে না? ও কত বড় মানুষ। তবে এভাবে ক’দিন চলবে?

-এভাবে মানে?

-এই দু’নৌকায় পা দিয়ে? তোর জামাইবাবু বলে দিয়েছে,মাঘেই তোদের চার হাত এক করে দেবে।

নিখিলেশ এতক্ষণ সহ্য করছিল। আর পারল না।

-তোমাদের কাউকে কোন কিছুর উদ্যোগ নিতে হবে না। আমার ভদ্রতার সুযোগ নিও না। স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি-এই মেয়েটাকে বিয়ে করতে পারব না আমি। ওকে পাগলামো বন্ধ করতে বল।

-পারবি না মানে?

-মানে পারব না। কথাটা অনেকদিন ধরে বলতে চাইছিলাম,সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আজ বলে দিলাম।

নিখিলেশ দ্রুত পায়ে ঘরে চলে গেল। ঘরের মধ্যে বাজ পড়েছিল যেন। সবাই নিঃস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।



গৈরিকা মন দিয়ে ফাইনাল প্রুফ দেখছিল,সুহার্ত ঘরে এল।

-ব্যস্ত?

-হুম।

-নিখিলেশদার বইটা দারুণ হয়েছে। খুব প্রশংসা হচ্ছে তো।

-ও।

-শুধু ও?

-যা স্বাভাবিক,তা হলে উত্তেজনা দেখানোর কিছু নেই।

-নিখিলেশদা সত্যিই খুব শক্তিশালী কবি। তবে সব কবিতাই যাপনের উপর লেখা। ভালোবাসার কবিতা তেমন নেই তো।

গৈরিকা প্রুফ থেকে মুখ তুলল

-ভালোবাসার কবিতা ভালোবাসা থাকলে লেখা যায়।

-তাও ঠিক। আমি যেমন,ভালোবাসার বাইরে কবিতাই লিখতে পারি না।

-ভালোবাসা উপচে পড়লে এমন হয়।

-ঠিক। তবে কাল নিখিলেশদাকে বেশ খুশি মনে হল।

নিখিলেশ খুব হবে। খুশি তো হওয়া উচিৎ। ওর বহুদিনের স্বপ্ন সফল হল।

-তা তো হবেই। তোমাকে কিছু বলল?

-না। কেমন এড়িয়ে গেল। গৈরিকা,আমার কেমন একটা মনে হচ্ছে।

-কি কেমন?

-নিখিলেশদা আমাকে ভুল বোঝে না তো? এটা ভাবে না তো যে আমার জন্যই তুমি...

-ভাবলে ভাবুক। সত্যিটা কি আমরা তো জানি।

-না তাহলে তো ভুল ভাবছে। আমি কি ফোন করব একবার?

-না। হয়তো নিজে বিয়ে করছে বলে এড়িয়ে যাচ্ছে।



ঐ মেয়েটা ফোন করেছিল। নিখিলেশের ফোন বন্ধ বলে গৈরিকাকে ফোন করে জানতে চাইছিল নিখিলেশ ওর কাছে এসেছে কি না। দিব্যি জোর দিয়ে কথা বলছিল। এত সাহস ওর। গৈরিকা কিছু বলেনি। শান্তভাবে সবার কথার জবাব দিয়েছে। ওর এখন কারোর সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছা করে না।

-হতে পারে। প্রুফটার তেমন ভুল আছে?

-না। একদমই কম।

-বাহ। চিরন্তনীর বইয়ের হাল জানো?

-খুব কাটতি নিশ্চয়।

-মুখ থুবড়ে পড়েছে। কেউ কিনছে না। যারা জাতিতে পড়ে নিয়েছে-তারা বলছে,ঐ লেখার জন্য আর পয়সা খরচ করতে পারবে না।

-তাই?

-তাহলেই বোঝো। অনিমেষ বসুর মুখ চুন এখন।

গৈরিকা মৃদু হাসল।

-কি হল? কিছু বললে না যে?

-সবাই নিজের নিজের স্থান একসময় না একসময় পেয়ে যায়। যে যতই উড়তে চেষ্টা করুক,ডানা ঝাপটাক-ভাগ্যে ওড়ার সীমা যতটুকু ততটুকু আকাশই পায়,তাই না।

সুহার্ত গৈরিকার হাতে চুমু খায়।

-ম্যাডাম,আজকাল বড্ড ফিলোজফিক্যাল কথা বলো কিন্তু।

-একটা সময় সবাইকে ফিলোজফিক্যাল হয়ে যেতে হয়। বিশেষত সেই নৌকাটাকে তো হতেই হয়,যে জানে তাকে সাগর পাড়ি দিতে হবে। বিস্তীর্ণ এক সাগর। যার আদি অন্ত দেখা যায় না। শুধু ভেসে যেতে হয়। ভেসে চলে যেতে হয়।

পর্ব-২৬

নিখিলেশ নিজের পড়ার ঘরে বসেছিল। সৌগতদা এইমাত্র গেলেন। খুব খুশি হয়েছেন মানুষটা। নিখিলেশকে নিয়ে ওনার অনেক স্বপ্ন ছিল। তার অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে আজ। বইটা সফল হয়েছে। সব জায়গায় প্রশংসিত হচ্ছে। অনেক কাগজেই ভালো রিভিউ বেড়িয়েছে। ‘বাংলা কবিতায় খোলা হাওয়া’, ‘নতুন যুগের কান্ডারী নিখিলেশ’, ‘একান্ত যাপনের কবি ও তার কবিতা’-এমন অজস্র শিরোনামে সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। বইমেলার দ্বিতীয় দিন প্রতিবিম্বের স্টলে একক কবিতা পাঠ রয়েছে নিখিলেশের। সুদেববাবু বলছিলেন,খুব ভিড় হবে নাকি। ওসব ভিড়ভাট্টা পছন্দ করে না নিখিলেশ। বেশি লোকজন দেখলে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে,নার্ভাস লাগে। কথা গুছিয়ে বলতে পারে না। আলোক বৃত্ত এড়িয়ে চলত এতদিন। এখন আলোতে এসে-কিভাবে তার মুখোমুখি হবে,ভাবছে। সৌগতদা বলেছে সব ঠিক হয়ে যাবে। একদিন সব ঠিক হয়ে যায়। কেউ যদি অটোগ্রাফ চায়? লজ্জা করবে নিখিলেশের। ভীষণ লজ্জা করবে,অথচ সফল হতে চেয়েছিল ও। সফল তো হতেই হত। না হলে প্রমাণ করা যেত না অনেককিছু। বইটাকে হাতে নেয় নিখিলেশ। বইয়ের গায়ে হাত বোলায়। সন্তান স্নেহে হাত বোলায়,তার ঘ্রান নেয়,তাকে চুমু খায়। নিখিলেশের চোখের জল বইয়ের পাতাগুলোকে ভিজিয়ে দেয়। এভাবে হয়তো আর্চিকে কখনো আদর করেনি নিখিলেশ এভাবে বুকে আঁকড়ে ধরেনি। বইটা যে ওর একান্ত কাঙ্খিত ছিল। পৃথিবীর সব কিছুর থেকে বেশি করে বইটাকে চেয়েছিল ও। বইয়ের মাধ্যমে সাফল্য চেয়েছিল। হয়ত প্রত্যেক মানুষই সবথেকে বেশি করে নিজের সাফল্য চায়। কেউ গৈরিকার মত খোলামেলা ভাবে,কোন রাখঢাক না রেখে চায়-কেউ বা নিখিলেশের মত নিভৃতে চায়,একান্তে চায়-তবুও চায়। আজ হঠাৎ করে গৈরিকার সমস্ত কার্যকলাপের যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা পেয়ে যায় নিখিলেশ। বইয়ের উৎসর্গ পত্রটা পড়ে-“শিউলি যার কোঁচড়ে দিতে পারলাম না-তাকে।” উৎসর্গপত্রটা কি পড়েছে গৈরিকা? বইটা দেখেছে একবার? তা হলে বুঝত ওকে নিখিলেশ কতটা ভালোবাসে। শুধু ওকে,আর কাউকে নয়। আর কারোর হতেও পারবে না কখনো। ব্যাক কভারে কবি পরিচিতিটা দেখে নিখিলেশ। “প্রাক্তন স্ত্রী গৈরিকা সান্যালের সাথে কবি একত্রে পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।” সুদেববাবু লাইনটা রেখেছেন। জোর করেই রেখেছেন। ব্যবসার কথা ভেবে রেখেছেন। হয়তো কাজেও লেগেছে। লাইনটা বারবার পড়ে নিখিলেশ। প্রাক্তন শব্দটা কি একান্ত জরুরী? শব্দটার উপর তর্জনী বোলায় নিখিলেশ। মোছার চেষ্টা করে-শব্দটা মোছে না। পাথর খোদাই করে লেখা যেন। জীবনেও মুচবে না। গৈরিকা এখন আবারো অন্যের-আর কখনো ওর হবে না।

সুহার্তর গলা পেয়ে চমকে তাকাল গৈরিকা।

-কি হল? এত মজা যে বাবুর? আনন্দ কিসের এত?

-গুড নিউজ।

-আবার কোন গুড নিউজ?

-গেস করো।

-বইটা ছেপে রেডি?

-অফকোর্স। সে তো রেডি হবেই। তিনদিন পরে উন্মোচন না?

-তাহলে,চিরন্তনীকে ঘাড়ধাক্কা দিয়েছে উচ্ছ্বাস?

-ওটা,ক’দিন পরে হবে। এখন মাকালটার সাথে লাভিডাবি চলছে তো...

-তাহলে কি আমি বুঝতে পারছি না,তোমার বিয়ে নয় তো?

গৈরিকা মজার সুরে বলল,

-আমার বিয়ে ক’দিন পরে হবে।

-বাবা পাত্রী দেখছে?

-ধুর! বাবার কোন কথাটা জীবনে শুনেছি যে এটা শুনব? বাবার কথা শোনার জন্য দাদা আছে,দিদি আছে-আমি বাবাকে থোড়েই কেয়ার করি?

-বাব্বা! বাহাদুর এলেন।

-বাহাদুরি দেখাব?

-না,থাক। এবার বলো কি হয়েছে? এত সাসপেন্স সহ্য হয় না।

-প্রতিবিম্ব থেকে তোমাকে ঐ দিনই সম্বর্ধনা দেবে। “কাটা তারের বেড়া”র জন্য।

-বই প্রকাশের দিন-ই?

-একদম। কনগ্র্যাটস্‌। মুখ মিষ্টি করাও।

সুহার্ত গাল বাড়িয়ে দিল। গৈরিকা ওর গালে আদর করল একটা।

-হয়েছে?

-হয়েছে। দাঁড়াও।

সুহার্ত গৈরিকাকে একটা চুমু খেল। গৈরিকা হাসল একটু। তারপর বলল

-ভাবছি,নিখিলেশকে ঐদিন আসতে বলব।

-বেশ তো। বলো। কালকেই তো নিখিলেশদার একক রয়েছে প্রতিবিম্বে।

-বইটা ওরও পড়া দরকার।

-উৎসর্গ পত্রটায় কি লিখলে?

-বই প্রকাশ হলে দেখো।

-নিখিলেশদাকেই নিশ্চয় উৎসর্গ করেছ?

-একজন কবিকে করেছি।

-আমার চান্স আছে?

-থাকতেও পারে। সুহার্ত,ঐ দিন রিন্টুকে আনতে বলব?  আমার ওকে দেখবে খুব ইছা করছে।

-কেন বলবে না। বলবে। রিন্টু এলে ওকে নিয়ে ফ্ল্যাটে চলে আসব আমরা।

-ওর বাবা ছাড়বেই না।

-আমি বুঝিয়ে বলব।

-বইটা রিন্টুকে দিয়ে উন্মোচন করাবে,ভালো হবে না?

গৈরিকার চোখে মুখে সন্তানের ছাপ দেখলে সুহার্ত। পূর্ণ ও। পরিতৃপ্ত যেন। কোন আফসোস নেই,খেদ নেই,স্থির হয়ে গেছে। স্বচ্ছ দিঘীর মত যাতে ঢেউ ওঠে না।

-করাবে। এটাই সঠিক হবে। ওষুধ খেয়েছ?

-তুমি খাইয়ে দাওনি,তাই ভুলে গেছি।

-এই যে বলো,তুমি বাড়ি চলে যাও,আমি একা থাকতে পারব?

-ও আমার মুখের কথা। একা থাকতে ভয় পাই আমি। একাকীত্বে ভয় পাই।

-ভয় নেই। আমি আছি। কখনো তোমায় ছেড়ে যাবো না।

-কে কখন কাকে ছেড়ে যায়,বলা যায় না। এর কোন সরল গাণিতিক সমীকরণ নেই। যে চলে যায়,সে যে যেতেই চায়-এমন নয়। সে হয় তো থাকতে চেয়েছিল,খুব করেই থাকতে চেয়েছিল। অথচ পারল না।

সুহার্ত জানে গৈরিকা নিজেকে বলছে। নিজের আর নিখিলেশের সম্পর্ক নিয়ে বলছে। যে সম্পর্কটা থাকার ছিল,হওয়ার ছিল-অথচ থাকল না।

আর্চিকে দেখে কষ্ট হয় নিখিলেশের। চুপচাপ হয়ে গেছে ছেলেটা। কোন কথা বলে না,নিখিলেশ সেদিন মারার পর থেকে,বাবার ধারে কাছে ঘেঁষে না তেমন। ‘মামমাম যাবো’-ভুলেও বলে না আর। শিঞ্জিনী বলে পড়ায় মন নেই। মিসের কাছে বকা খায় রোজ। আজ নিখিলেশ বাড়ি ঢুকেই দেখেছে আর্চির স্কুল থেকে গুচ্ছের কমপ্লেন এসেছে,আবার শিঞ্জিনী সেইজন্য ওকে নীলডাউন করিয়ে রেখেছে। নিখিলেশ কোনদিন শিঞ্জিনীর শাসনে বাধা দেয় না। আজও দেয়নি। স্কুলের কমপ্লেন ডায়েরিতে হাজারটা অভিযোগ-পড়া পারেনি,ক্লাসে মন দেয়নি,মারামারি করেছে-এরকম কেন করছে কে জানে? ওর মন মত কিছু হচ্ছে না বলে ওর শিশুমন বিদ্রোহ করে উঠছে না তো? কেউ ওর কথা শোনে না,তাই ও কারোর কথা শুনবে না-এমনটা ভাবছে হয়তো। আর্চির কমপ্লেন ডায়েরি দেখেও নিখিলেশ বকেনি আজ। সই করে দিয়েছে। ছেলেকে কাছে  নেবে আজ। ওকে বইমেলা বেড়াতে নিয়ে যাবে। বাবার সাফল্যটা ও দেখুক-এটা চায় নিখিলেশ। ফোনটা বেজে উঠল হঠাৎ। গৈরিকা। না নিখিলেশ আজ রাগবে না। ভালোভাবে কথা বলবে।

-হ্যালো।

-কনগ্র্যাচুলেশন্‌ নিখিল।

গৈরিকার গলায় স্বাভাবিকতার ছোঁয়া পেল নিখিলেশ।

-থ্যাংক ইউ।

-থ্যাংকস কিসের? তোমার বইয়ের সাফল্যে খুব খুশি আমি।

-শুনে খুশি হলাম। তোমার উপন্যাসও তো পরশুর পরের দিন বেরোবে।

-হ্যাঁ। শনিবার। ঐ দিন প্রতিবিম্ব থেকে সম্বর্ধনা দেবে আমায়।

-জানি। কাঁটা তারের বেড়া’র জন্য। খুব ভালো হয়েছে।

-পড়েছ?

-হ্যাঁ। পড়ে ফেললাম। অনেকদিন পর একটা ক্লাসিক লিখলে।

-এরপরের বইটা আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। জীবন নিয়েই লেখা তো। সব ক’টা সত্যি খোলামেলা চোখে বলেছি। একটা স্বীকারোক্তি বলতে পারো।

-সব সত্যি বলা কি ঠিক?

-সবসময় নয়। ক্ষেত্রবিশেষে বলতে হয়। না হলে সুযোগ চলে যায়। যাইহোক,ঐ দিনের অনুষ্ঠানে রিন্টুকে নিয়ে তুমি আসবে।

-আমি?

-হ্যাঁ তুমি। উপন্যাস যেমন আমার,তেমন তোমারও। আসবে তো?

-যাবো।

-রিন্টুকে নিয়ে আসবে কিন্তু।

-আচ্ছা। ওকে এমনিতেই কাল নিয়ে যেতাম।

-কালতো তোমার একক,তাই তো!

-কাল আর আনব না,একেবারে ঐ দিন আনব।

-ঐদিন এসে কিন্তু ক’দিন এখানে থাকবে রিন্টু। যেতে পারবে না।

গৈরিকা স্বাভাবিক অধিকার দেখাল। নিখিলেশ খুশি হল। সেদিনকার কথাগুলো ওর মনে ছাপ ফেলেনি তাহলে? স্বস্তি পেল। গৈরিকার কাছে আর্চিকে দিয়ে আসবে সেদিন। আর্চিটার মনের কষ্ট কমাতে হবে,

-থাকবে।

-ঐ বইটা ওকে দিয়েই উন্মোচন করাব।

-আর্চিকে কে দিয়ে?

-হ্যাঁ। প্লিজ না করো না। আমার ভালো লাগবে।

-আচ্ছা। করিয়ো।

-রিন্টুকে দেবে একটু?

নিখিলেশ ডাকল

-আর্চি...আয়...মামমাম ফোন করেছে।

অরিন একছুটে হাজির হল

-মামমাম?

-হ্যাঁ। নে,কথা বল।

-হ্যালো,মামমাম?

-হ্যাঁ।

-তুমি এলে না তো? আমি সত্যি ভালো ছেলে হয়ে ছিলাম। বাবাকে জ্বালাতন করিনি। একবারও ‘মামমাম যাবো’ বলিনি। বাবাকে কষ্ট দিই নি।

নিখিলেশ অবাক হল। গৈরিকার সাথে কবে কথা হয়েছিল আর্চির?

-গুড বয়। ভালো ছেলে হয়ে থাকবে সবসময় কেমন?

-হ্যাঁ। তুমি আসবে তো?

-না। তুমি আসবে,শনিবার। বইমেলায়।

-সত্যি?

-তিনসত্যি। সেজেগুজে চলে আসবে বাবার সাথে।

তারপর তোমার কাছে?

-হ্যাঁ।

-কি মজা! গৈরিকা ফোনের মধ্যে ছেলেকে দুটো চুমু খেল।

-আই লাভ ইউ।

-লাভ ইউ টু মামমাম।

ফোনটা কেটে নিখিলেশ ছেলেকে কোলে নিল।

-মামমাম যাওয়া হবে শনিবার।

-হ্যাঁ,বাবা।

-আর্চি মামমামের কথায় ভালো ছেলে হয়েছিল? জেদ করত না,তাই না?

হ্যাঁ। সৌমীদিদির ফোন থেকে ফোন করেছিলাম মামমামকে। মামমাম বলেছিল তোমার খুব কষ্ট। তোমাকে যেন জ্বালাতন না করি। মামমাম ফোন করলেই তোমার কষ্ট কমে যাবে। মামমাম আবার এখানে চলে আসবে,আমাদের কাছে থাকবে।

নিখিলেশ চমকে উঠল। তাহলে এই কথাটা বলবে বলেই ডুয়ার্স থেকে ফোন করেছিল গৈরিকা। ফিরতে চেয়েছিল ও। ভালবাসতে চেয়েছিল। অথচ নিখিলেশ ওকে সেদিন কি না কি বলেছে-কতটাই না আঘাত দিয়েছে। নিজেকে সজোরে লাথি কষাতে ইচ্ছা হল নিখিলেশের।

-মামমাম তোমায় ফোন করেনি বাবা?

-করেছিল।

-জানতাম করবে। আমি সব বলেছি তো।

-কি বলেছিস?

-সব। পিসিমণি,পিসেমশাই বলে না-মিস নতুন মামমাম হবে-আমার তো নতুন মামমাম চাই না। শুধু মামমাকেই চাই।

নিখিলেশের চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছিল।

-বাবা,কেঁদো না। আমি সরি। আর বলব না।

-আমাকে বলিসনি কেন আর্চি? তোর মামমামের জায়গায় কাকে আনব আমি? কাউকে আনতে পারব না।

-মিসকেও না?

-একদম না।

-এমা! আমি মামমামকে বললাম যে?

-মামমাম কত কষ্ট পেল বল তো?

-ফোন করে বলে দাও তাহলে?

-থাক। শনিবার তোর মামমামের সামনাসামনি গিয়ে বলব।

সত্যিটা ও জলের মত বুঝতে পেরেছে আজ। গৈরিকা নিখিলেশকে ভালোবাসে। নিখিলেশকেই ভালোবাসে। ওর আত্মহত্যার চেষ্টাটাও নিখিলেশের জন্যই। নিখিলেশকে ভাগ না করতে পেরে-মরে যেতে চেয়েছিল গৈরিকা। এত পজেসিভ যে-সে ভালোবাসে না,তা হয় নাকি? শনিবারেই সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে দেবে। সব ঠিক করে দেবে নিখিলেশ। আর্চির জন্য ওর মামমামকে নিয়ে আসবে,কোথাও যেতে দেবে না ওকে আর।

পর্ব-২৭ ( শেষ পর্ব ) 

সুহার্ত গৈরিকাকে তাড়া দিতে ঘরে ঢুকল। এতক্ষণ সাজতে লাগে? পাঁচটা থেকে অনুষ্ঠান,সাড়ে চারটে বাজতে গেল-এখনো সেজে চলেছে। উফ! মেয়েরা পারেও। সব মেয়েদের মত যে গৈরিকাও এভাবে সাজগোজ করতে ভালোবাসে কে জানত? নাকি আজ খুব বিশেষ অনুষ্ঠান বলে এত সাজ।

-কি গো তোমার হল?

গৈরিকার দিকে চোখ পড়তেই থমকে গেল সুহার্ত। ময়ূরকণ্ঠি রঙের বেনারসী পড়েছে। নতুন কিনেছে নিশ্চয়। সারা গায়ে গয়না। সোনারই তো মনে হচ্ছে,হার,বালা,কানের দুল,চূড়-এত সব পড়ে বইমেলা যাবে? দিনকাল খারাপ। কোথা থেকে কি হয়ে যায় কে জানে?

-কেমন লাগছে আমায়?

লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে গৈরিকা বলল। চোখে কাজল দিয়েছে,আইশ্যাডো। হালকা মেকআপ করেছে মুখে। বেশ লাগছে ওকে। খুব সুন্দর লাগছে। এমনভাবেই তো রোজ থাকতে পারে,তা না পেত্নীর মত হয়ে থাকবে।

-খুব সুন্দর। এমন ভাবেই তো সেজে থাকতে পারো।

-সবসময়?

-হ্যাঁ।

-তোমার ভালো লাগবে?

-লাগবেই তো।

-তাহলে এমনভাবেই রয়ে যাব। সারাজীবন।

সুহার্ত এগিয়ে এল। গৈরিকার এখনো চুল বাঁধা হয়নি। খোলাচুলে হাত বোলালো। মুখটা তুলে ধরল। চুমু খেল ওকে। কপালে গালে-গৈরিকা নিঃশ্বাস বন্ধ করে ছিল। সুহার্ত নিজেকে আটকাল না। ওর ঠোঁটে ঠোঁট ঠেকাল। গভীর আবেগে চুমু খেল ওকে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল। গৈরিকা বাধা দিল না। সুহার্ত সমস্ত ভালোবাসা জড়ো করে গৈরিকাকে আদর করছিল। অনেকক্ষণ চুমু খাওয়ার পর সুহার্ত ছাড়ল ওকে।

-রাগ করোনি তো?

-না।

-কিছু ভুল করলাম কি?

-না তো।

-ভালোবাসবে আমায় গৈরিকা? একটু ভালোবেসে দেখোই না। আমি তোমায় ঠকাব না।

-সে বিশ্বাস আছে।

সুহার্তর মুখ হাসিতে ভরে গেল।

-ভালোবাসবে তাহলে? এসো না-ভালোবাসার একটা চারাগাছ লাগিয়ে দুজনে মিলে জল দিয়ে তাকে বড় করি?

সুহার্ত এই প্রথম ভালোবাসার দাবি জানাচ্ছিল।

-তুমি খুশি হবে তাতে?

-হব মানে? খুশিতে পাগল হয়ে যাব।

গৈরিকার চোখে জল দেখল সুহার্ত। ও নিজেও কাঁদছিল।

-কেঁদো না। কাজল লাগিয়েছ। চোখের জলে কাজল নষ্ট হয়ে যাবে।

গৈরিকা হাসল। মিষ্টি সে হাসি। সুহার্তর সব পাওয়া হয়ে গেল তাতে।

-তুমি আমার। আমার তো গৈরিকা?

-কে কার,সে দাবি কি কেউ করতে পারে?

-ওসব হেঁয়ালি ছাড়ো। আজ তোমাকে বলতেই হবে।

-রাতে বলব না হয়?

-ঠিক তো?

-হ্যাঁ। তুমি সম্ভবত তাড়া দিতে এসেছিলে আমায়।

-ওঃ হো! দেখেছ? ভুলেই গিয়েছি। চলো, যাই,নাকি?

-তুমি এগোও। আমি আসছি।

-একা আসবে?

-না ড্রাইভার বলা আছে। গাড়িতে যাবো।

-বলছিলাম কি,এতসব গয়না না পরলেই নয়? বোঝোই তো যা দিনকাল...

-ভয় নেই,কিছু হবে না আমার। তুমি যাও,গিয়ে সব ব্যবস্থাপনা দেখো। আমি আসছি।

সুহার্তর গৈরিকাকে ছেড়ে যেতে একটুও ইচ্ছা করছিল না। আজ ও গৈরিকাকে একমুহূর্তও ছেড়ে থাকতে পারবে না। গৈরিকা ওকে ভালোবাসে এই সত্যিটা গৈরিকার চোখে পড়তে পেরেছে সুহার্ত। আজ আর নিজেকে আটকাবে না। গৈরিকার স্রোতে ভাসবে ও,ভাসতে হবে ওকে।

মেলায় এসে থেকে ভারি মজা হয়েছে অরিনের। বাবা ওকে নতুন জামাকাপড় পরিয়ে নিয়ে এসেছে। আজ ট্রেনে নয়,গাড়ি করে এসেছে ওরা। অরিনকে বাবা বলেছে,মামমামও ফিরবে। তাই গাড়ি নিয়ে আসা। ট্রেনে যেতে মামমামের কষ্ট হবে। মামমাম আজ মস্ত বড় ফাংশান। যেখানে হবে সেই হলটায় ভর্তি লোক। সবাই মামমামের জন্য এসেছে। বাইরেও সব লোকেরা ভিড় জমিয়েছে। কখন গৈরিকা সান্যাল আসবে। বাবা দেখিয়েছে কত রিপোর্টার এসেছে,ক্যামেরা এসেছে-এরা সব নিউজপেপার আর চ্যানেলের লোক। মামমামের প্রোগ্রামটা কভার করবে। একটা দোকানের সামনে লোকের লম্বা লাইন দেখিয়েছে বাবা। ওখানে নাকি লোকেরা অপেক্ষা করছে,কখন বই বেরোবে-আর তখন ওরা কিনতে পারবে। এই বইটা নাকি ওদের নিজেদের বই। বাবা বলছিল এতে মামমাম আছে,বাবা আছে,এমনকি অরিনও। অরিনকেই নাকি বইটার র্যােপার খুলতে হবে। এটা মামমাম চায়। সবাই এসেছে,শুধু মামমাম নেই। কখন আসবে কে জানে? উশখুশ করছিল অরিন। বাবা বুঝাল

-কি হল?

-মামমাম,

-আসবে,

-কখন?

-পাঁচটা বাজে সবে। আসবে।

-পাঁচটাতেই তো প্রোগ্রাম।

-হুম,জ্যামে পড়ে গেছে হয়তো। আর্চি,দেখছিস কত বড় বড় লোক তোর মামমামকে দেখতে এসেছে?

-এরাও রাইটার?

-অনেকেই। কেউ রাইটার,কেউ পোয়েট,কেউ এডিটর...

-মামমাম এদের সবার থেকে পপুলার?

-সবার থেকে। স্টার একদম। দেখছিস না,কত বড় বড় করে মামমামের ফটো টাঙিয়েছে?

-তাই তো। বাবা,মামমাম ফিরবে তো আজ?

-ফিরবে। না হলে তোকে মামমামের কাছে রেখে দেব।

-স্কুল?

-হবে খুনি। এমনিতেই পড়াশুনায় যা মন। আর স্কুলের বাহানা দিতে হবে না।

নিখিলেশ দেখল অর্চির মুখটা ছোট হয়ে গেল। মাথা নীচু করল ও। নিখিলেশ ওর মাথায় আদরের হাত রাখল

-আর মুখ ভার করে কাজ নেই। মামমাম এসে যদি দেখে,তাহলে ভাববে আমি তোকে বকেছি। বকে দেবে আমায়।

অরিন বাবার কথায় হেসে ফেলল। গোপাল সরকার এলেন তখনি। নিখিলেশ মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিতে চাইলেও চোখে চোখ পড়ে গেল।

-আরে,নিখিলেশ যে! তুই তো কামাল করে দিয়েছিস। দারুণ লিখেছিস।

-কি লিখেছি?

-কবিতা। তোর বইটা পড়লাম। খুব ভালো হয়েছে।

-লিখতে শিখেছি এতদিনে তাহলে।

-লিখতে তুই বরাবরই পারতিস।

-চ্যানেলটা করতে পারতাম না এই যা।

গোপাল সরকার চেপে গেলেন। নিখিলেশকে ঘাঁটিয়ে লাভ নেই। ওকে আর আটকানো যাবে না। বরং ওর গুডবুকে থাকা ভালো।

-বাদ দে না ওসব। অনেকদিন তো হয়ে গেল।

-কিছু যন্ত্রণা ভোলা যায় না।

নিখিলেশের চোয়াল দৃঢ় হল। গোপাল সরকার অপ্রস্তুতে পড়ে কথা খুঁজছিলেন। সুহার্ত এল।

-নিখিলেশদা,এই তো। এসে গেছ তুমি। আর এই যে রিন্টু।

সুহার্ত অরিনের গাল টিপে দিল। অরিন অবাক হল। এই নামে তো শুধু মামমাম ডাকে। আঙ্কলটা জানল কি করে?

-আজ তো রিন্টু বাবুর দিন। বইটা তুই-ই উন্মোচন করবি। তারপর এখান থেকে আমরা চলে যাবো মামমামের ফ্ল্যাটে।

গোপাল সরকার আড়চোখে নিখিলেশের দিকে তাকালেন। নিখিলেশ বুঝল ওনার মনে কি চলছে। প্রসঙ্গ বদলাল তাই।

-গৈরিকা এল না তো?

-আসছে। আর বোল না তো। সাজগোজ করতে ঘণ্টা তিনেক লাগাল কম করে। কত করে বললাম চলো একসাথে যাই। না,তুমি যাও। আমি পরে যাচ্ছি।

-একা?

-না,ড্রাইভার থাকবে। গাড়িতে আসবে।

অরিন ভাবছিল এই আঙ্কলটা কে? নীল আঙ্কল তো নয়। নীল আঙ্কল তো এখন একটা অন্য আন্টির সাথে থাকে। সৌমীদি পেপারে দেখিয়েছিল। তাহলে এ কে?

-ও,গোপালদা,আপনি বসুননা। সুহার্ত ভাই ওনাকে একটু বসিয়ে দে।

সুহার্তর সাথে কোনরকম তিক্ততা রাখতে চায়না  নিখিলেশ। গৈরিকার মনে সুহার্তর প্রতি বন্ধুত্বের অতিরিক্ত কিছু নেই। ও ভালোবাসে,ওর নিখিলেশকেই ভালোবাসে।

-আচ্ছা। নিখিলেশদা তুমিও বসো।

সুহার্ত চলে গেল।

-বাবা...

-বলো।

-আঙ্কলটা কে?

-সুহার্ত আঙ্কল।

-মামমামের বন্ধু?

-হ্যাঁ। খুব ভালো বন্ধু। আমারও খুব কাছের মানুষ। আঙ্কলটাই তোর মামমামের শরীর খারাপে সেবা করে সুস্থ করে তুলেছে।

-তাহলে তো খুব ভালো। নীল আঙ্কলের মত পচা নয়।

-নীল আঙ্কল পচা কেন?

-আমার সাথে রুড বিহেভ করত। মামমামকে আমার কাছে আসতেই দিত না। শুধু নিজেই গল্প করত। বেশ হয়েছে ঐ পচা আঙ্কলটা আর মামমামের সাথে নেই। ওর জন্যই তো মামমাম আমাদের কাছে থাকত না।

নিখিলেশ চুপ করে গেল। আর্চি ওর এইটুকু বয়সেই অনেক কিছু জেনে গেছে,যা ওর জানার কথা নয়। মিসকেও নতুন মামমাম হতে দেবেনা,নিখিলেশ আর্চির মাথায় চুমু খেল। বাবা আর মামমামকে একসাথে পাবে ও এবার থেকে। এইটুকুই ওর চাওয়া। ওর চাওয়াটা পাওয়া করবে নিখিলেশ।

সাজগোজ হয়ে গিয়েছিল। এবার শুধু যাওয়ার অপেক্ষা। আয়নায় নিজেকে দেখল গৈরিকা। এক অদ্ভুত মুগ্ধতা ওকে গ্রাস করল। না। নিখিলেশ আজ ওকে দেখলে চোখ ফেরাতে পারবে না। শিঞ্জিনীর কথা মাথাতেই আসবে না ওর। একটাদিন জিতে যাবে গৈরিকা। একটা মাত্র দিন ওর সমস্ত ক্ষতে প্রলেপ হয়ে রইবে যেন। ক’টা বাজে? ঘড়ি দেখল গৈরিকা। সাড়ে পাঁচটা। এতক্ষণে ওরা সবাই মিলে ওকে খুঁজছে। পাচ্ছে না,পাবে কি করে? ফোনটাকে তো নট রিচেবল করে রেখেছে গৈরিকা। ছাদে উঠেছে ও। ছাদ থেকে নীচটা দেখল।  আলসের উপর দিয়ে ঝুঁকে দেখছে ছোট্ট ছোট্ট বস্তুগুলোকে। গাড়ি,মানুষ,জন্তু-সবই অস্পষ্ট। সবই ক্ষুদ্র। শীর্ষে থাকলে নীচের সবাইকে ক্ষুদ্র বলেই মনে হয়। সব ভয়কে জয় করে  আবার শীর্ষে গৈরিকা। শীর্ষেই রয়ে যেতে চায়। এখানকার হিমশীতল একাকীত্বে অভ্যাস হয়ে গেছে ওর। গৈরিকা দুহাত মেলে দেয়। পাখির ডানার মত। উড়তে ইচ্ছা করে ওর। ভেসে যেতে ইচ্ছা করে। নিজেকে বড্ড হালকা লাগছে আজ। ‘পাপসমীক্ষা’ লিখে ওর মনে কোন ভয় নেই। সব সংকোচ মুক্ত আজ ও। এতক্ষণে নিশ্চয় রিন্টুটা বইটা উন্মোচন করে ফেলেছে। স্টল থেকে বিক্রিও শুরু হয়ে গেছে। মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে চেটেপুটে খাচ্ছে গৈরিকার পাপের ব্যাখ্যান,খাক। তাতে কিছু এসে যায় না গৈরিকার। ওর মনে আজ একটা পূর্ণতার বোধ কাজ করছে। মনটা কানায় কানায় ভর্তি আজ। পরিপূর্ণ। তৃপ্তও। কোনও আক্ষেপ,অভিযোগ নেই ওর। কোন ক্ষোভ নেই। সমস্ত কাজ সারা হয়ে গেছে। পূর্ণবৃত্ত এঁকে ফেলেছে ও। আর কিছু করার নেই। আর কিছু চাওয়ার নেই,কিছু পাওয়ার নেই। ঐ গল্পের শেষটা ও নিজে হাতেই লিখেছে। এবার অন্যগল্প। অন্য পথ। অন্য সব কিছু-ওকে অন্য ডাক দিচ্ছে। ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে এখানকার সবকিছু। নিখিলেশ,সুহার্ত,ইন্দ্রনীল,উচ্ছ্বাস,অনিকেত আঙ্কল...সব। শুধু একটা মুখকে মুছতে পারছে না গৈরিকা। কিছুতেই মুছতে পারছে না। রিন্টু...গৈরিকার চোখে এক ফোঁটা জল আসে। চোখ মুছে ফেলে ও। রিন্টুর মামমাম থাকবে,ওর কাছেই চিরদিন থাকবে-ওর মনের মধ্যে থাকবে।

-সাড়ে পাঁচটা বাজে। আর তো অপেক্ষা করা যায় না। পাবলিক স্টল ভেঙ্গে ফেলবে এবার।

তরুণ সাহা উত্তেজিত হয়ে কথাটা বললেন। সুহার্ত নিখিলেশের দিকে তাকাল।

-ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না,হয়তো মেট্রোতে আছে। নট রিচেবল বলছে যখন।

-না,না-গাড়িতে আসবে বলেছে তো।

পরে ভাববেন ওসব। আগে উন্মোচনটা হোক। পরে ম্যাডাম এসে বক্তব্য রাখবেন। তরুণ সাহা ব্যবসায়ী। গৈরিকা সান্যালের খামখেয়ালিপনা সবাই জানে। ওর খামখেয়ালিপনার জন্য এতবড় ক্ষতি হতে দিতে পারেন না উনি। বইটার চাহিদা এখন তুঙ্গে। তাই উন্মোচন হওয়া জরুরী।

-নিখিলেশদা,তুমি রিন্টুকে নিয়ে স্টেজে যাও। উন্মোচনটা হোক।

মানে? গৈরিকা না থাকলে উন্মোচনের মানে কি?

-গৈরিকা খুব করে চেয়েছে রিন্টুকে দিয়ে উন্মোচন হোক,এটা ওর স্বপ্নের বই। আমি চাই না এর উন্মোচনে কোন বিঘ্ন ঘটুক। তুমি উন্মোচনে যাও। আমি দেখছি।

সুহার্ত হল থেকে বেরিয়ে আসে। একটা কু চিন্তা ওকে কুরেকুরে খাচ্ছে। গৈরিকা আবারও কোন ভুল করল না তো? না,না ডাক্তারবাবু তো তো বলেছিলেন ও সম্পূর্ণ সুস্থ। আর কোন অবুঝের মত কাজ করবে না। ফ্ল্যাটের বেসফোনে রিং করল ও।

-মায়াদি,গৈরিকা কোথায়?

-দিদিমণি তো বেরিয়ে গেছেন।

-কখন?

-তা অনেকক্ষণ। কেন দাদা?

-না,তুমি রাখ,আমি দেখছি।

সুহার্ত উদভ্রান্তের মত খোঁজে গৈরিকাকে। উন্মাদের মত ছুটে বেড়ায়। মেলার স্টলে স্টলে,লোকের ভিড়ের মধ্যে,খাবারের দোকানে,গোল হয়ে বসা আড্ডায়। হোঁচট খায় ও,ধাক্কা খায় অশ্বত্থমা মিত্র,ইন্দ্রনীল বসু,চিরন্তনী কুণ্ডুর সাথে। ওদের লক্ষ্য করে না সুহার্ত। ওরা ঝাপসা হয়ে যায়। তন্নতন্ন করে গৈরিকাকে খোঁজে সুহার্ত। খুঁজতে খুঁজতে হাঁপিয়ে যায়। দাঁড়িয়ে পড়ে। ঘনঘন শ্বাস নেয়। পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে ফোন করে আবার,আরো একবার,অসংখ্যবার। একটাই উত্তর আসে, “দিস নাম্বার ইজ প্রেজেন্টলি নট রিচেবল।”  “পাপসমীক্ষাটা আজ রাতের মধ্যে পড়ে শেষ করে ফেলতে হবে। গৈরিকা সান্যাল নাকি সব বলে দিয়েছে এই বইয়ে। আচ্ছা,তাহলে এরপর উনি কি বলবেন? বলার কিছু থাকল কি?” সুহার্ত নিজের ভুলে নিজেই স্তব্ধ হয়ে যায়। এত সহজ হিসাবটা ও ভুল করে ফেলল-কি করে করল ও? কি করে? আকাশের দিকে বিহ্বল চোখে তাকিয়ে থাকে সুহার্ত। ধ্রুবতারার ঠিক পাশে একটা অচেনা তারা চোখে পড়ে ওর। শীর্ষে,সবার উপরে। 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.