মৌ দাশগুপ্ত

মৌ দাশগুপ্ত
আমার সাঁঝবেলা ও রবিঠাকুর 

তারপর একসময় সকাল দুপুর বিকালের গল্প শেষ হয়।
ঠাকুরঘর, দালানে, একচিলতে উঠোনে সাঁঝবেলা আনমনে আলতাছাপ আঁকে ।
মায়ের শাঁখে ধূপগন্ধী গৃহস্থের কল্যাণটুকু আসনপিঁড়ি হয়ে বসে ।
“বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দ…”

মায়ের আঁচলে দিনশেষের ক্লান্তি যেন হলুদ মশলার মিয়ানো গন্ধ ,
বাইরে বুড়ো বটের ডালে ডালে নীড়ে ফেরা পাখীদের ঘরে ফেরার ডাক,
তাদের ঢেউ ডানায় লবণ সমুদ্রের গন্ধ, আমি ক্লান্ত সে ঢেউ গুনে গুনে।

মনে হয়
'ভরা থাক স্মৃতিসুধায় হৃদয়ের পাত্রখানি'....

ছাদের আলসেতে উঁকি মারে
আধভাঙা চাঁদ,

ছাঁতলা দাগধরা দেওয়ালে আমার  অক্ষরমালারা নামাবলী বোনে।

বাউলদাদার একতারায় জড়িয়ে যায় অনির্বচনীয় সুর,
"জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ"...

থইথই অপেক্ষা উপচানো ঘরে আমি একা এক এক করে
চাহিদা-প্রত্যাশা, আশা-আকাঙ্খা, চাওয়া-পাওয়ার ডিঙা ভাসাই...
রান্নাঘরে মা রুটি সেঁকে,

মায়ের গুনগুন গান অনিবার্য নদীস্রোতের মত
উঠান জুড়ে, ঘর ভরে, ঢেউ তোলে…

“কতবার ভেবেছিনু আপন ভুলিয়া
তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া।“

সন্ধ্যাও বয়ঃপ্রাপ্তা হয়,গাঢ় হয়ে আসে অন্ধকার।

একাকী সাঁঝবেলায় জীবনের সহজপাঠ পড়ি,
 "আছে দুঃখ আছে মৃত্যু বিরহ দহন লাগে, তবুও শান্তি তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে"....।।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.