আরে এদিকে শুনুননা, ওহ দাদা ওই ফুটো টার দাম কত? দেখুন ঠিকঠাক করে দামটা বলবেন, বাই দ্য ওয়ে ভার্জিন তো?
কি বললেন, পুরো জিন্দেগিমে স্রেফ একবার ইউজড হয়েছে! ইউজড হওয়া মাল, আবার স্রেফ একবার বলছেন, যত্তসব! ধুর, অন্য দোকানে যাই বরং।
আচ্ছা দিদি আপনার এখানে ভার্জিন মানে অব্যবহৃত ফুটো পাওয়া যাবে তো?? দেখুন টাকাপয়সা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু আমার বস ব্যবহার করা ফুটোতে হেব্বি এলার্জি। সারাজীবন অন্যের এঁটো করা খাবার চুষবো!
ধুসশালা, মুডটাই পুরো বিগড়ে দিলো। আগে জানলে তোর মতো ঘেঁটে খাওয়া মাগীদের দিকে হাত বাড়াতামনা। আমার পিওর খটখটে ফুটো চাই বুঝেছিস, যার উপর স্রেফ আমি একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবো, আমার রাজত্ব হবে। একটা ছোট্ট ফুটোর ভেতর গোটা পুরুষতন্ত্র, দেশকালসমাজ, কোরানগীতা সমস্তটা ঢুকিয়ে দেবো। আবার সুযোগ বুঝে হিড়হিড় করে টেনে বার করবো।
শোনো, ওসব চ্যাংড়ামো আমার পোষায়না। মেয়েমানুষ মানেই সাতজনম ধরে সতীত্বের তসবি জপা যোনি, মেয়েমানুষ মানেই সতীত্ব চিবিয়ে খাওয়া টইটুম্বুর শরীর। দরকার পড়লে সমাজের ঢাকনা উপুড় করে বড় শপিং মল থেকে ভালো দামে সেরার থেকেও সেরা "মেয়েছেলে" কিনে নিয়ে আসতে হবে, যেভাবে বিকোয় সব্জি মখমলি প্যাকেটে ভরে দশ পার্সেন্ট ডিস্কাউন্টে বিগবাজারে।
এবার ফোনটা হাত থেকে নামিয়ে একগ্লাস জল খেয়ে আসুন, যান। রিল্যাক্সড, রিল্যাক্সড! কয়েকটা উদাহরণ দিয়েছি মাত্র। আরো অনেক অনেক বাকি, শোয়ানো শিরদাঁড়া সোজা করে মফঃস্বলের দিকে ঘাটাঘাটি করে দেখুন।
বিয়ের প্রথম রাতে সাদা চাদর পেতে ভার্জিনিটি অর্থাৎ সতীত্ব টেস্ট হয় এখনো। প্রথমবার পেনিট্রেশনের সময় যোনিমুখ ঘিরে থাকা হাইমেন পর্দা ছিঁড়ে যায়। রক্ত বেরোয় সামান্য। ব্যস কেল্লা ফতে।
সতীত্বের পরীক্ষায় ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করতে পারলেই গোটা লাইফ বিন্দাস কাটবে, নাহলে আর কি! আস্ত পুরুষতন্ত্র রে রে করে তেড়ে এসে সামাজিক হারেমে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেবে নষ্টা অসতী কলঙ্কিনী নামে ট্যাগ করে।
অনেক স্বামী সোহাগীরা যারা মেয়েদের কাইন্ড অফ "মেয়েছেলে, মাগি, মেয়েমানুষ" বলে থাকে তারাই নাচতে নাচতে নিজের ভার্জিনিটি প্রমাণ করে, বেশ গর্বিতও ফিল করে। আসলে সত্যি বলতে ছেলেরা পুরুষতন্ত্রের স্রেফ ধারক, কিন্তু মেয়েরা পরিপাটি করে ভেতর ভেতর লালন করে, মেয়েরাই আদতে বাহক।
একটা কথা বলুনতো, সতীত্বপনার টেস্ট করিয়ে আপনি কোন বালটা ছিঁড়বেন। মেয়েদের শরীর নিয়ে এত ঘেন্না করে দাদা!
আপনি কি জানেন, অনেক নারী হাইমেন পর্দা ছাড়াও জন্মায় অথবা সাঁতার, খেলাধুলা করতে করতে এই পর্দা ছোটবেলাতেই চিরে যায়। না এসব জানার দরকার নেই। জানবেনই বা কেন? আরে বেশি জেনে ফেললে মেরুদন্ডহীন পুরুষতন্ত্র ঝরঝর করে ধসে পড়বে যে। আপনারা ভেঙে গুুঁড়িয়ে যাবেন কিন্তু মচকাবেননা খবরদার।
আপনি থলে হাতে আলু পটল ভেন্ডি কিনতে যাননি, যে আঙ্গুল টিপে টিপে দেখবেন কোনটা ভালো কোনটা পচা, তারপর সুলভ দামে ফ্রেশ মাল কিনে ঘরে ফিরে চুষে নিংড়ে রস বার করে খেয়ে নেবেন। নারীমাংস আর ভাগাড়ের মাংসের মধ্যে পার্থক্যটা ঘেঁটে যায় তো! সেটাই স্বাভাবিক। যে পুরুষের লিঙ্গে পৌরুষত্বের প্ল্যাকার্ড সাঁটা, তাদের পক্ষে ওই পার্থক্যটা গুলিয়ে ফেলাই স্বাভাবিক।
ভালো কথা পুরুষদেরও ভার্জিনিটি টেস্ট করা যায়। কিন্তু দরকার টা কি! হ্যাঁ সত্যি বলছি কোনো দরকার নেই।
"মেয়েদেরই সবসময় কেন প্রমাণ করতে হবে" না এইধরণের ন্যাকা ন্যাকা কথা বলবনা। বরং বলি নিজেকে সম্মান করতে শিখুন। কেন এত সাক্ষ্য প্রমাণ দিতে হবে বলুন তো? যে ভালোবাসে, তার কাছে "আপনি" নামক ব্যক্তিটাই কাফি চায়ের শেষ চুমুকে গুলে নেওয়ার জন্য আর কিচ্ছুনা কিচ্ছুনা...
আরে বাবা খুব সিম্পল ম্যাটার, ভালোবাসলে শরীর কাছে আসবেই। আগে নিজে বিশ্বাস করুন স্বেচ্ছায় কারোর সাথে শোয়া কোনো অপরাধ নয়।
শরীরটা আদতে কোনো ফ্যাক্টরই নয়, পুরুষ নারী নির্বিশেষে বলছি, আসল ফ্যাক্টরটা হলো অনুভূতি। বারবার শরীর ভাগাভাগি করে খেলে অনুভূতিটাও যে টুকরো টুকরো ভাগ হয়ে যায়। তাই আপনি ইচ্ছে হলেও দশ জনের সাথে শুতে পারেননা, ঠিক কোথায় আমি নিজেকে বাঁধবো, আর কোথায় আলগা হবো সেটা নিজেই ঠিক করবেন, কিন্তু প্লিজ নিজেকে প্রমাণ করতে যাবেননা।
যারা ভার্জিনিটি দিয়ে সততা, অনুভূতি, সভ্যতা, ভালোবাসা মাপে, তাদের আমি .... ছাড়ুন, নাই বা বললাম, ঘেন্না করে। ভার্জিন বা ভার্জিনিটি এই শব্দগুলো আমার কাছে অত্যন্ত নোংরা শব্দ, এবং অপমানজনক।
যারা ভার্জিনিটি মারিয়ে বেড়ায়, তারা একরকমের হিপোক্রিট, তাদের থেকে প্লিজ দূরে থাকুন কারণ তারাই বেশ্যা বা ধর্ষিতাকে দেখলে খাবলা খাবলা থুতু ফেলে। অথচ লোকের সামনে এমন ভান করে, যেন মনে হয় রেপড অন্য কেউ নয়, তারা নিজেরাই হয়েছে।
এই এই, "আপনি ভার্জিন" তো? এরকম প্রশ্নের উত্তরে ডিরেক্ট বলবেন তোর মাবাপও ভার্জিন নয়রে শালা, নাহলে তুই জন্মাতি না।
নাহ, "খানকি, ভার্জিন" এইটাইপের কিছু শব্দ ইয়ার্কির ছলেও উচ্চারণ করবেননা। হ্যাঁ কথাটা আমিই বলছি, আপনারা ভালো করেই জানেন, কোনো ভাষা বা শব্দ নিয়ে আমার কোনোদিনও কোনো ছুৎমার্গ নেই। স্টিল বলছি যে শব্দগুলো আপনাকে জাজমেন্টাল, ও আপনার চরিত্রকে জেনেরালাইজ করে, আপনি ঠিক কতটা শুদ্ধ, কতটা সৎ, তার পরিচয় বহন করে, সে ধরনের শব্দ গুলো জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। সুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিন।
এইযে শুনছেন, মানুষের শরীরটাকে শরীর হিসেবেই রেসপেক্ট করুন। কোনো সিঙ্গেল শব্দ এনাফ নয় একটা গোটা মানুষকে আদ্যোপান্ত মাপার জন্য। ভাবুন ভাবুন বিষয়গুলো নিয়ে, অন্তত ভাবতে শিখুন এবার....
তথ্য ঋণ
সুচিন্তিত মতামত দিন