বদিউর রহমান

সবই মায়া...
ত শতকের পঞ্চাশ ষাট দশকে রাস্তায় খুব কম সংখ্যায় মোটর বাইক স্কুটারের দেখা মিলত। আমাদের বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটার দূরের মাদ্রাসায় জি টি রোড ধরে যাওয়া আসার পথে মাঝে মধ্যে দেখতে পেতাম পচা ভাইকে স্কুটার চেপে যেতে। আমাকে দেখতে পেলে এক অদ্ভুত ধরণের হাসি দিয়ে চলে যেতেন। খুব ইচ্ছা হতো আমার হাঁটবার পথটুকু তাঁর স্কুটারে চেপে যেতে। তা আর কখনো হয়নি। তিনি অম্লান বদনে অর্থবহুল হাসি দিয়ে চলে যেতেন। 

অবশ্য আরও ছোটবেলায় আব্বার ছোট বিএসএ মোটর সাইকেলটা যখন রান্নাশালার বারান্দায় রাখা থাকতো তার উপর বসে মুখে বুরর আওয়াজ করে সেটা চালানোর অঙ্গভঙ্গি করতাম। খুব আবছা মনে পড়ে দু একবার আব্বার সঙ্গে ঐ মোটর বাইকের পেট্রোল ট্যাঙ্কের উপর বসে কোথাও কোথাও গিয়েছি। তার মধ্যে একবার মনে হচ্ছে আব্বার কোন পেশেন্টের বাড়িতে রাতের মিলাদে গিয়েছিলাম। মিলাদ শুনেছি কি না মনে নেই তবে এতটুকু মনে পড়ে ফেরার সময় আব্বা আমাকে ঘুম থেকে তুলে বাড়ি ফিরেছিলেন। 

মফঃস্বল শহরে আব্বার ডাক্তারি পেশা বলে অনেক সময় রুগীদের বাড়ি গিয়েও চিকিৎসা করতে হতো। সাধারণত ঐ ডাকগুলো চেম্বারে রুগী দেখা শেষ করে দুপুরের দিকে সারতেন। ঐ রকম একটা কল-এ যাওয়ার সময় বাইকের উপর অতর্কিতে একটা হনুমান ঝাঁপিয়ে পড়ে। আব্বা পড়ে গিয়ে আঘাত পান। তারপর ঐ বাইকটা বিক্রি করে দেন। তাই আমার বাইক চড়ার শখটা পুরোপুরি মেটেনি। পচা ভাইকে স্কুটারে দেখে খুব ইচ্ছে হতো সেটায় চড়ার। 

মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে কোন দিন কারো লিফট পেয়েছি বলে মনে পড়ে না- একমাত্র ঘোষ বাবু ছাড়া। তখনকার দিনে পাণ্ডুয়ায় অনেকগুলো রাইস মিল ছিল। পাণ্ডুয়া সংলগ্ন থৈপাড়ার ঘোষ বাবু চাকরি করতেন করিম রাইস মিলে। তিনি যাওয়া আসা করতেন সাইকেল চড়ে। সাইকেলটায় একটা ডাইনামো লাগানো ছিল অন্ধকারে আলোর জন্য। ঐ ভদ্রলোক আমাকে যখনই দেখেছেন তখনই সাইকেল থামিয়ে বলেছেন ছোট ডাক্তার উঠে পড়; মাদ্রাসার কাছে ছেড়ে দেবো। তাঁর ঐ ভালোবাসা আজও কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করি। 

এখন মনে পড়ে তখনকার দিনে রাইস মিল মালিকদের প্রত্যেকরই গাড়ি ছিল। তখন একমাত্র সত্যিকার ধনী ব্যক্তিরাই গাড়ি কিনতে সমর্থ ছিলেন। আব্বার কাছে তাঁরা অনেক সময় আমাদের বাড়িতে গাড়ি নিয়ে চলে আসতেন চিকিৎসার জন্যে। আমার আসা যাওয়ার পথে ঐসব গাড়িও হুস করে চলে যেত। ঐগুলোতে চড়ার কথা অবশ্য কোনোদিনও মনে হয়নি- কেন জানিনা। হয়তোবা সেগুলো আশাতীত ছিল বলে। অবশ্য তখনো কোন আশা করতে শিখিনি। অন্যদিকে আমার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেকে সন্দিহান ছিলেন। গাড়িতে লিফট পাওয়া ছিল কল্পনাতীত; কিন্তু বাইক-মোটরসাইকেল দেখলে তাতে চড়ার জন্য ব্যাকুল হতাম। 

পচা ভাইয়ের এক সৎ ভাই ছিলেন- জালাল ভাই। যখন একটু বড় হয়েছি তাঁকে দেখতাম একটা সুন্দর মোটর সাইকেল চালাতে। তাঁর কলবাজারের বাড়ি থেকে জিটি রোড ধরে পূব দিকে ওদের রাজ্জাকিয়া রাইস মিলে বা হাটতলার দিকে যাওয়া আসা করতে দেখতাম। শ্যাম বর্ণের মানুষটা খুব পরিপাটি সাজগোজ করে থাকতেন। ওনার বাইক চালানোর ভঙ্গিটাও ছিল খুব সুন্দর। মুকুল সিনেমার কাছে জিটি রোডে যে বাঁকটা আছে সেখানটায় বাইকটা একটু আস্তে করলে দেখতাম বাইকের আওয়াজটাও কেমন পাল্টে যাচ্ছে। বাইক চালানোরও একটা ছন্দ হয়। ঐভাবে চালানোটাও একটা আর্ট। আমি বাড়িতে থাকাকালীনও ঐ জায়গাটায় বাইকের ছন্দময় আওয়াজ থেকেই বুঝতে পারতাম জালাল ভাই যাচ্ছেন। ঐ ছন্দটা পচা ভাইয়ের স্কুটারে ছিলনা। 

ইতিমধ্যে পচা ভাই তাঁর পুরানো ল্যাম্ব্রেটা স্কুটার পাল্টে ভেস্পা স্কুটার চড়া আরম্ভ করেন। অবশ্য তাতে আমার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। আরও একটু বড় হয়ে আমি কোলকাতার আলিয়া মাদ্রাসায় পড়তে আরম্ভ করি। সেখানে একজন মৌলানা আবু সালমা সাহেব আমাদের পড়াতেন। বেশ লম্বা-চওড়া মানুষ; বড় বড় চোখ। প্রায়শই চোখগুলো লাল হয়ে থাকতো। আর বিশেষ লক্ষণীয় ছিল তাঁর মুখ ভরা লম্বা দাড়ি। পড়ানোর সময় মাথা নাড়লে দাড়িটাও অদ্ভুত ভাবে কেঁপে উঠত। পড়াতে পড়াতে মাঝে মধ্যেই উনি হঠাৎ করে দাঁত চেপে স্বগতোক্তি করতেন; বলতেন- আভি যা, আভি যা। অনতিবিলম্বে অন্যান্য সিনিয়র ছাত্রদের কাছে জানতে পারি উনি জীন বশ করেছেন। পড়ানোর সময় তাঁরা উদয় হলে তাঁদেরকে ঐসব বলেন। আরও জানতে পারি তিনি জীন মারফৎ অনেক কিছু জেনে বলে দিতে পারেন। হারিয়ে যাওয়া মানুষ বা চুরি যাওয়া জিনিসপত্র সম্বন্ধেও খোঁজ দিতে পারেন। 




পচা ভাইয়ের ভেস্পা স্কুটারটা তাঁর গ্যারেজ থেকে চুরি হয়ে যায়। খবরটা পাণ্ডুয়ায় শুনে পচা ভাইকে ঐ মৌলানা সম্পর্কে বলতে উনি আমাকে বললেন ঐ মৌলানা সাহেবকে পাণ্ডুয়ায় নিয়ে যেতে। মৌলানা সাহেবকে সব বললাম। উনি যেতে রাজি হলেন। আমি সঙ্গে করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে গেলাম। পচা ভাই এলেন। সঙ্গে তাঁর আত্মীয়র একটা ছোট মেয়ে। মৌলানা সাহেব সব শুনে তাঁর ব্যাগ থেকে একটা কাজলের কৌটা বের করলেন। আমার হাতটা নিয়ে বুড়ো আঙুলের নখের উপর ঐ কাজল লাগালেন। উনি বিড় বিড় করে কী সব পড়ে আমার হাতে ফুঁক দিতে থাকলেন। মাঝে মধ্যে জিজ্ঞেস করলেন ঐ নখে কিছু দেখতে পাচ্ছি কি না। বেশ কিছুক্ষণ ঐ রকম চলল। আমি কিছুই দেখতে পাইনি। তখন উনি ঐ বাচ্চা মেয়েটাকে ডেকে তার আঙুলে ঐ কাজল লাগিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলল- একটা গাছতলায় প্রশস্ত জায়গা দেখা যাচ্ছে। তারপর বলল, একজনকে দেখতে পাচ্ছি। মৌলানা সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন কী রঙের কাপড়ে দেখছ। উত্তরে বলল, সবুজ রঙের কাপড় পরা। মৌলানা সাহেব ওকে বলতে বললেন যে ঐ জায়গাটা ভালো করে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে সেখানে একটা চেয়ার দিতে বলো। সব কিছু সেই মতো হতে থাকলো। মেয়েটি বলল আর একজন সেখানে এসে চেয়ারে বসলেন। মৌলানা সাহেব মেয়েটিকে বললেন ‘ওঁকে সালাম করে ঐ চুরি যাওয়া স্কুটারটা সম্পর্কে বলো।’ তখন মেয়েটি বলতে থাকলো যে সে পচা ভাইয়ের বাড়ির কাছে একটা ছেলেকে এগিয়ে যেতে দেখছে; সে সদর দরজার কাছে দেওয়াল টপকে গ্যারেজের কাছে গেল; স্কুটারটা নিয়ে ঠেলতে ঠেলতে কলবাজারের এলাকা পার করে জিটি রোডে স্কুটারটা স্টার্ট দিয়ে পশ্চিম দিকে যাচ্ছে। একটু পরে একটা রেল ফাটক। দেখল সেটা বন্ধ। তাই ছেলেটা সেখানে থামল। তারপর বলল আর সে রকম কিছু স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না। বারবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও সে বিশেষ কিছু আর বলতে পারলো না। মৌলানা সাহেব বললেন, ‘তার অর্থ রেল ফাটক পার করে চোর স্কুটার সমেত কোথাও পালিয়েছে।’ পচা ভাই স্বভাবতই খুব উত্তেজিত হয়ে আশা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত স্কুটারটার একটা হদিস পাওয়া যাবে। ব্যাপারটা এগুচ্ছিল সেভাবেই। তাই তিনি মৌলানা সাহেবকে বারবার অনুরোধ করতে থাকলেন আবার চেষ্টা করতে। মৌলানা সাহেব জানালেন ‘একটা ব্যাপারে একবার মাত্র জিজ্ঞাসা করা যায় দ্বিতীয়বার নয়; নচেৎ উনারা ভীষণ রাগ করেন তাতে হিতে বিপরীত হয়।’ পচা ভাইয়ের ভাগ্য ভাল; সেই চুরি যাওয়া স্কুটারটা রেলগেট পার করে একটা গ্রামের পুকুরে ডুবন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় মাস খানেক পর। 

যে সময়কার কথা বলছিলাম তখন মোটর সাইকেল-স্কুটার উৎপাদনের কোম্পানিও ছিল হাতেগোনা। তারপর থেকে দেখলাম জাওয়া, এজদি, লুনা ইত্যাদি মোটরসাইকেল। ইতিমধ্যে ভেস্পা হাতবদল হয়ে হল বাজাজ। বাজাজ এর স্কুটার কিনতে অগ্রিম পাঁচশ টাকা দিয়ে বুক করলে ছ-সাত বছর পর স্কুটার পাওয়া যেত। অনেকে ঐভাবে স্কুটার পেলে তিন চার হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি করত। 

আমি তখনও কোলকাতায় পড়াশোনা করছি। ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম। পাণ্ডুয়ার আমার সমনামেরই এক বন্ধুর সঙ্গে আমার মামার বাড়ি শক্তিগড়ের তাতখন্ডে মাছ ধরতে যাচ্ছিলাম। বন্ধুটির এক আত্মীয়র জাওয়া মোটরসাইকেলের পেছনে বসে, বন্ধুটি চালাচ্ছিল। মেমারির কাছাকাছি পৌঁছে বন্ধুটি আমাকে বলল, ‘এবার তুমি চালাও।’ আমি মোটরসাইকেল চালাতে জানতাম না। ও একটু শিখিয়ে দিল। চালাতে পারলাম। বেশ ভালো লাগল। ইচ্ছা হল আব্বাকে বলে একটা স্কুটার কিনব। দু-চারদিন পর আব্বার মন-মেজাজ বুঝে কথাটা বললাম। আব্বা এক বাক্যে না বলে চেম্বার চলে গেলেন। অবশ্য আমার আব্বা এমনিতেও খুবই মিতব্যয়ী ছিলেন। ভাবলাম কী করা যায়। বুদ্ধি গেল খুলে। জানতাম গদাচাচা সুন্দর করে প্রস্তাবটা দিয়ে আব্বাকে ঠিক রাজী করতে পারবেন। এও জানতাম চাচার উপর আব্বার একটা দূর্বলতা আছে। চাচাকে অনুরোধ করলাম আব্বাকে রাজী করাতে। চাচা তাঁর অভ্যাসানুসারে হালকা কাঁধ ঝাকুনি দিয়ে বললেন ‘দেখব চেষ্টা করে’। উনি আব্বাকে ঠিক রাজী করালেন। যথারীতি স্কুটার বুক হল, সেটা ৩২০০ টাকায় কেনা হল। পাঁচশ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রথম ফ্রী সার্ভিসটা কোলকাতায় ঘুরে বেড়িয়ে স্কুটারটা পাণ্ডুয়া নিয়ে গেলাম। আব্বার কোনো বার্তা চাচাকে পৌঁছাতে আমাদের আসল দেশের বাড়ি মোগলামপুর যেতাম ঐ স্কুটারে চড়ে। কোলকাতা চলে এলে স্কুটারটা পাণ্ডুয়াতেই থাকত। সার্ভিসিং এর দরকার পড়লে সেটা চালিয়ে বাজাজের কলকাতার ওয়ার্কশপে চলে আসতাম। একদিকের পচাত্তর-আশি কিলোমিটার স্কুটার চালানোর কোনো ক্লান্তি ছিলনা। কিছু পয়সা লাভ করার আশায় আমি আরো একটা স্কুটার বুক করেছিলাম। সেটা যখন পেলাম সেজভাই সেটার দাম মিটিয়ে দিয়ে নিয়ে নিলেন। কিছু লাভ করা আর হলনা।

আশির দশকে বিদেশী মুদ্রায় বুক করা যেত বাজাজের চেতক স্কুটার। বুক করার কিছুদিনের মধ্যেই পাওয়া যেত। আগের স্কুটারগুলো ছিল ১৫০ সি সি। চেতক হল ১৭৫ সিসি আর এর চাকার সাইজ বড়। তাই একটু উঁচু। সে সময় মেজভাই ছিলেন বিদেশে চাকরিরত। উনি আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। ওকে চিঠি দিয়ে জানালে, আমার নামে একটা চেতক বুক করে দাম মিটিয়ে দেন। সেই স্কুটারটা এখনও বর্তমান। এখন সেটা খুব একটা ব্যবহার করিনা, কখনো সখনো সেটা নিয়ে শুধু বাজারে যাই। তবে এখনও ২০১৭ সালেও সেটা সচল। একদিন বাজার যাব বলে সেটা বের করেছি। সামনের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোকের স্ত্রী আমাকে হঠাৎ বলে বসলেন ‘আপনার এই পুরাতন স্কুটারটা বিক্রি করবেন?’ আমি আকস্মিকতায় বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম ‘এটা নিয়ে আপনি কী করবেন?’ আইটি কোম্পানীর বিশাল অফিসারের স্ত্রী বললেন ‘আমার ড্রাইভারকে দিতাম; ওর আসা যাওয়ার খুব অসুবিধা হচ্ছে; স্কুটারটা পেলে ওর সুবিধা হয়।’ স্কুটারটা যে নিম্ন বৃত্তির কর্মীর ব্যবহার্য হয়ে গেছে আমার জানা ছিলনা। ওদের দৃষ্টিতে আমার নিম্নস্তরের অবস্থানের কথা কল্পনা করে আমার শিক্ষকতার সামাজিক মর্যাদা এক নিমেষে ধুলোয় লুণ্ঠিত। অতি সন্তর্পনে তাঁদের সামনে এখনও কুন্ঠার সঙ্গে বিরাজ করছি। দাদার স্নেহভরা দানকে কয়েকটা টাকার বিনিময়ে অমর্যাদা হতে দিতে পারিনি। 

ইদানীং স্কুটারটার মন-মর্জি ভাল নয়। আমাদের স্বজাতের একজন মিস্ত্রী প্রায় ৯০০ টাকা খরচ করালো। ঠিক হলনা। বাজার থেকে ফেরার পথে ওটা বন্ধ হল। কোনপ্রকার ঠেলেঠুলে ঘেমে-নেয়ে সেটাকে নিয়ে বাড়ি পৌছালাম। মিস্ত্রীকে ডাকতে সে এসে বলল ‘আপনার স্কুটার বসে থাকে বলে পেট্রোলটা পচে গেছে’। প্রায় তিন-চার লিটার পেট্রোল ফেলে দিলাম। নতুন তেলেও সে আর চলেনা। তখন মিস্ত্রী বলল ‘প্লাগ শর্ট’। নুতন প্লাগ দিয়ে স্টার্ট হল। সাহসে ভর করে আবার সেটা নিয়ে বাজার গেলাম। মাঝপথে আবার বন্ধ। অনেকক্ষণ কিক করে করে আমি, সিনিয়র সিটিজেন, ক্লান্ত। ঠেলতে ঠেলতে আবার নিয়ে এলাম। এবার দেখালাম আর একজন মিস্ত্রী শৈলেনকে। তাঁর কথামত ৮৫০ টাকায় লাগালাম কার্বোরেটর। সেটা ওয়েলিংটন থেকে কিনে এনে সল্টলেকের বাড়িতে দিয়ে গেল আমার এক ছাত্র নাসীম। কার্বোরেটর লাগাতে শৈলেন পাঠালো তাঁর এক শাগরেদকে আমাদের বিল্ডিঙয়ে। কিন্তু স্কুটার সচল হচ্ছেনা। ঐ শাগরেদ যখন আমাদের বিল্ডিঙয়ের নীচের গ্যারেজে কাজ করছিল আমাদের কেয়ার টেকারের স্ত্রী তার শশুরকে চিৎকার করে বকে যাচ্ছিল। তার শশুর দু-একটা কথার উত্তর দিলে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে আরো তীব্র আক্রমণ করে চলেছিল তার শশুরকে। তার উচ্চস্বরে চিৎকার দিব্যি শোনা যাচ্ছিল আমাদের ফ্ল্যাট থেকে। স্কুটার সারানোর কাজটা দেখতে নীচে নেমে কেয়ার টেকারের বাবাকে চুপ করতে বললে তিনি চুপ করে যান। তাও বউমার বজ্র নিনাদ চলতেই থাকে। আমার কথাতেও কোন কাজ হলনা। ঐ ব্যাপারে আর নাক গলান ঠিক নয় ভেবে স্কুটার সারানোর কাজ দেখতে থাকি। কম বয়সের মিস্ত্রী ভাস্করকে বললাম ‘যখন বিয়ে করবে ভেবে চিনতে করবে।’ সে বলল, ‘আমার বিয়ে হয়ে গেছে।’ আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি ‘তোমার বয়স কত?’ বলল ‘বাইশ’ বললাম সে কি এই বয়সেই বিয়ে করেছ? তা তোমার বউও কি এরকম ঝগড়া করে? বলল, ‘না, সে একেবারেই অন্যরকম। বাড়ির সব কাজকর্ম করে, মা-বাবাকে যথারীতি যত্ন-আত্তী করে, এরকম না। সে খুব ভাল।’ শুনে বললাম, ‘তুমি বড় ভাগ্যবান। ভালোভাবে সংসারধর্ম কর।’ 

প্রসঙ্গ পাল্টে ছেলেটি হঠাৎ আমাকে বলল, ‘আর কতদিন এই পুরানো দুচাকা চড়বেন? আমার কাছে একটা চার চাকা বিক্রির খবর আছে; ভদ্রলোক মাত্র দুবছর ব্যবহার করেছেন; মাত্র আট হাজার কিলোমিটার চলেছে। এখন আর গাড়িটা চালান না। গ্যারেজ নেই তাই ভদ্রলোকের বাড়ির সামনে রাখা আছে’। হঠাৎ সে তাঁর জিন্সের পকেট থেকে মোবাইল বের করে গাড়িটার ছবি দেখালো। জিজ্ঞেস করলাম, ‘তা প্রায় নুতন গাড়ি, বেচে দেবেন কেন?’ বলল, ‘উনার স্ত্রীর জেদাজেদীতে গাড়িটা কিনতে বাধ্য হয়েছিলেন। স্ত্রী ডিভোর্স করে চলে গেছেন। তাই উনি ওটায় আর চড়েননা।’ ফোনে গাড়িটার ছবি দেখতে দেখতে আমার মনে হল শুধু গাড়িটা রাস্তায় পড়ে নেই ভদ্রলোককেও রাস্তায় বসিয়ে তাঁর স্ত্রী চলে গেছেন। কেন জানিনা আমার মনে হল গাড়িটার স্বায়েদ শুভ নয়। ঐ গাড়ি যত কম দামেই বিক্রি হোক না কেন আমি নেব না। নিলে যদি আমার স্ত্রী...। 


matin.cu@gmail.com


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.