গার্গী মালিক

#বসন্ত জাগ্রত
"বসন্ত এসে গেছে ...বসন্ত এসে গেছে - ভাবতে ভাবতে সত্যিই জীবনে বসন্ত এলো! 

প্রথম বসন্তের আলিঙ্গন! 
কী নিদারুন অনুভূতি! 
রেখায় রেখায় রেখে যায় 
ক্ষতচিহ্নের স্মৃতি।
নির্বাসিত আমি ..... 

আমার জানলা খুললে পাঁচমুড়ো পাহাড় নেই ... নেই শ্যামলী নদী , আছে ইঁট কাঠ পাথরের অবয়ব আর একটি মুকুলিত আম্রপালি। দইওয়ালা -সুধাদিদির আনাগোনা নেই , নেই রাজার চিঠি আসারও সম্ভাবনা। জালের ভিতর জাল - মসকুইটো নেটের মধ্যে জিও! সেও খানিক দমবন্ধ করা; চলচ্চিত্রের সাথে আর কতক্ষণ চলা যায়? 

অগত্যা টেনে নেওয়া রঙিন জীবন ... আবার এলো বসন্ত ... নানা রঙে ... 

মন ভালো তো সব ভালো।" - এতটা লিখে ডাইরিটা বন্ধ করল তুলি; সবুজ পেনটা রয়ে গেল পাতার ভাঁজে … বালিশে মাথা রেখে চোখ বুজল ... বড্ড ঘুম পাচ্ছে তার। 

ইদানিং তার অল্পতেই ঘুম আসে ... ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন আসে ... এলোমেলো ... চমকে ওঠে কখনো কখনো। আজ বারোটা দিন সে বন্দী ...সম্পূর্ণ অন্য জগতের মানুষ! কর্মব্যস্ত জীবন তাকে অবসর দিয়েছে ... এও এক কঠিন পীড়া; কাজ করার শক্তি নেই ... শক্তি থাকলেও উপায় নেই ... সংস্পর্শে আসার অনুমতি নেই। শারীরিক কষ্ট আজকাল তাকে আর পীড়া দেয়না ... মানসিক স্বাস্থ্য যদি সুস্থ থাকে। 

আজ দোল ... সকাল থেকেই কানে আসছে মাঝে মাঝে "হোলি হে এ এ এ" । ছোট্ট মেয়েটা দরজার ওপার থেকে করুণ চোখে তাকিয়ে - জিজ্ঞাসা করে - 

"মা তুমি আজ রং খেলবে না? "
- "খেলছি তো বাবু ... ওই দিকে চেয়ে দেখো "
সে দেখে মায়ের আঁকা অসম্পূর্ণ ছবিখানা - 

-"ওতো ছবি! আমি তোমায় আজ রং দেবনা?" 
-" না মা , আমার গায়ে রং দিতে নেই "

ছলছল চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে মুখ নিচু করে চলে যায় সে - অনেকদিন হল সে মায়ের কাছে যায়নি -মাকে জড়িয়ে ধরেনি -চুমুও খায়নি মায়ের গালে - দূর থেকে জালের আড়ালে সে মাকে দেখে; মায়ের জীবনে নববসন্তের আগমন, তাকে ঠেলে দিয়েছে অনেক দূরে! 

দূরত্বকে মেনে নিতে নিতে তুলির দুচোখ জুড়িয়ে আসে ... চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে আসে দুফোঁটা জল। আবার সে অবসন্ন দেহে তলিয়ে যায় ঘুমেরদেশে। হঠাৎ অনুভব করে - কে যেন ঠেলে ঠেলে ডাকছে তাকে - চোখ মেলে চেয়ে দেখে তার ছোট্ট সোনা! আজ সে আর কারও বারণ মানেনি - জানাতেই হবে নিজে মুখে এ খবর -নিশ্চিত করতে হবে মাকে - "মা আজ তোমার গাছে ফুল ধরেছে ... দেখো"

মোবাইল স্ক্রিনে থোকা থোকা হলুদ ত্রিকোমা! অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে তুলি ... মুকুলিত ডালগুলিকে কখনো দুষ্টু পোকা খেয়ে গেছে , কখনো বা দুষ্টু লোকে ভেঙে দিয়েছে; কত যত্নে সে তাকে সন্তান স্নেহে আগলে রেখেছিল এই দিনটির আশায়; এক বসন্ত তাকে একঘরে করেছে ... আর এক বসন্ত তার সন্তানকে সাজিয়ে তুলেছে হলুদ ফাগে! ছলছল চোখে অস্ফুট স্বরে সে বলে ওঠে - 

"আজই তোদের ফুটতে হল!
ওরে প্রথম কলি, 
হলদে আবির মাখিয়ে গালে 
দোল দিয়ে যায় অলি।" 





Previous Post Next Post