সায়ন্ন্যা দাশদত্ত

কবি সম্বন্ধীয়
বিষণ্ণ কবিটি বসে আছেন ঘরে । বয়স হয়েছে ।বৃদ্ধপ্রায় ।সেঁতে ওঠা দেয়ালে ঠেস দিয়ে উনি কবিতা ভাবতে চাইছেননা সম্ভবত । কবিপত্নী পঙ্গু । ক্রমাগত গড়িয়ে পড়ছে লালা । উঠে বসতেও লোক লাগে । বিষণ্ণ কবিটি ঘেন্না করেন নিজের  যাবতীয় শব্দবিলাস ।

 ক্ষিদের ভেতর থাকতে থাকতে ইদানিং উনি টাকা দেখেন ঘুমে ! জেগে থাকলেও একমুঠো মাছভাতের বেশি উনি ভাবনা নির্মাণে অক্ষম । যাবতীয় কবিতা ওনার কাছে বেশ্যাবৃত্তি ।অহেতুক যতিচিহ্ন এবং ছন্দ প্রভৃতির বিন্যাস ওনার বমন উদ্রেক করে ।উনি বসে থাকেন দিন সমাপ্ত হয় ।আরো একটি দিনের সূচনা হলে নিজের মনেই হেসে ওঠেন তিনি ।প্রকৃত জানালার মাপ যে কতখানি সংকীর্ণ তা উনি বেশ ভালোই বুঝেছেন এতদিন ।কবিজীবন এবং আগুন সমার্থক হয়তো হয়নি তবুও সমস্ত অক্ষরের পাশাপাশি উনি নিরন্তর নিজের শয্যা রচনা করেছেন ।কথা ছিল প্রতিটি অক্ষর বিদ্যুতের মতো প্রবল হয়ে উঠবে ,শিখবে দাহিকা প্রণালী ।অথচ উল্টোমুখে সে দহন কবির জন্যেই নির্দিষ্ট এ সত্য তিনি আগে বুঝতে পারেননি ।তার প্রতিটি কাব্যগ্রন্থে অনুপম জাল রেখেছে মাকড়সা । কমে আসা চোখে তিনি নীরবে সেই বুনট পরীক্ষা করেন ।অদ্ভুত ভারসাম্যের লীলা ! প্রবল হাওয়াও সে বাহু ছিন্ন করতে অক্ষম। কেবল মৃদু দুলুনি আর বাকিটুকু রাঢ় ধুলোয় মাখা । যেটুকু রয়্যালটি পাওয়ার কথা থাকে আর যেটুকু তিনি পান ..মাঝের গল্প কেউ শোনেনা কখনো । ধুধু মাঠ আর শুকনো বুনো ভাঁটফুলের মায়ায় কবি কেবল ফাঁকির আওয়াজ খোঁজেন ।সমস্ত দলবদলের ইতিহাস ওনাকে নিপুণভাবে ভুলেছে ।পাঠকের ফাঁকা শুভেচ্ছাপত্র উড়িয়ে দেন বিধুর মাতাল চৈত মাসের হাওয়ায় ।পলাশ গাছে তারই তো রক্তপত্র । ডালেডালে মৃত্যুর ডাক ।

              সুগারের ওষুধটি তাচ্ছিল্য করে গড়িয়ে পড়ে খাটে ! বিক্ষত পায়ে উনি পঙ্গু স্ত্রীর মুখ মুছিয়ে দেন । রোদ , সূর্য , পাখি সমস্তটাই খাদ্য অথবা সবুজাভ নোট সেজে পাক দিয়ে ঘোরে চারপাশে  । কবি দরিদ্র । কবি অসহায় । ছটপটিয়ে উঠে দাঁড়ান । তার সমস্ত কাব্য অথবা কলম কিনে নেবে এমন কোন ঐশ্বরিক প্রকাশক ওনার কপাট নাড়া দেয়না । যাবতীয় উপাধি দড়িতে সাজিয়ে ধাপেধাপে কবি ঝুলন্ত হয়ে যান । এভাবেই কবিতাটি শেষ হয় ! !

dr.sayannya34@gmail.com


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.