স্বরূপা রায়

বসন্ত স্মৃতি
“বসন্তটা এসেই গেল।” কফি কাপে বারান্দায় দাঁড়ানো রোহিতকে বললো সিমা।
“হ্যাঁ তাতে কি হয়েছে?”
“এই বসন্ত আমাদের দুজনের সাথে কত জড়িত বলো।”
“কিভাবে?”
“একি এটাও ভুলে গেছো?”
“আমি অতসত মনে রাখতে পারিনা।”
“এই বসন্তেই আমাদের প্রথম আলাপ, প্রথম প্রেমের শুরু, আমাদের বিয়ে।”
“ও আচ্ছা।”
“তোমার মনে আছে আমাদের প্রথম আলাপের কথা?”
“সে বহুদিন আগের কথা।”
“হ্যাঁ কিন্তু তাও আমার স্পষ্ট মনে আছে। তুমি আমাকে ১০দিন বলার পর আমি রাজি হয়েছিলাম দেখা করতে। গঙ্গার ধারে বসে আমরা দুজন দুজনেই মেতে উঠেছিলাম। আমার জীবনের খুব সেরা মুহুর্ত ওইদিনটা।”
“হুম বুঝলাম।”
“আমাকে প্রপোজ করাটা আমার আরেকটা সেরা মুহুর্ত। আবার সেই গঙ্গার ঘাট, বসন্তের হাওয়া চলছিল, শুধু তুমি আর আমি ছিলাম সেদিন। আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী ছিল গঙ্গানদী, গাছপালা, আকাশ, মাটি এরা।”
“হুম।”
“তুমি তখন খুব রোমান্টিক ছিলে। এখন দিন যাচ্ছে আর কেমন জানি একটা হয়ে যাচ্ছ।”
“বিয়ের ১০ বছর পরেও কি এখন আমি তোমাকে কোলে নিয়ে বসে থাকবো?”
“সেটা না। ভালোবাসা মানেই কি বউকে কোলে নিয়ে বসে থাকা? একদমই না। দুজনের একসাথে সময় কাটানো, সুন্দর মুহুর্তগুলো একসাথে বসে মনে করা, একসাথে ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।”
“বুঝলাম।”
“তুমিই একসময় বলেছিলে আমরা বিয়েটা ফাল্গুন মাসেই করবো। কারণ সেই বসন্ত। আজ তোমার কাছে এসবের গুরুত্বই নেই।”
“বয়স হয়েগেছে এখন আমার।”
সিমা এবার রোহিতকে জড়িয়ে ধরে বললো, “তুমি বুড়ো হয়েগেলেও আমার কাছে সেই প্রথমদিন আলাপ করা রোহিতই থাকবে। তোমাকে খুব ভালোবাসি গো। যেমনই থাকো, আমার সাথে থেকো সারাজীবন। কথা দিচ্ছি সারাজীবন তোমাকে সুখে রাখবো। কোনোদিন আমাকে ছেড়ে যেও না।”
রোহিতের চোখ জলে ভিজে ওঠে। সিমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “পাগলি, কোনোদিন তোমাকে ছেড়ে যাবো না।”
এর মধ্যেই ওদের মেয়ে রিশা ডাক দেই সিমাকে। সেই ডাক শুনে সিমা বলে, “মামমাম ডাকছে। আমি যাই। তুমি কফি শেষ করে আসো।”
সিমা চলে গেলে রোহিত কফি খেতে খেতে ভাবে, “সিমা, তোমার এই ভালোবাসার জন্যই আজ অবধি বলতে পারলাম না যে, আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে চাই। আমাদের মধ্যে অনেক অশান্তি হয়। আমার মনে হয় আমাদের আলাদা থাকাই ভালো। কিন্তু সবকিছুর শেষে তোমার ভালোবাসাই আবার আমাদের সম্পর্কটাকে মজবুত করে দেয়।”

swasroy1994@gmail.com


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.