‘শব্দের মিছিল’ এর ‘একমুঠো প্রলাপ’ এ এই মাসের কবি প্রমিতা ভৌমিক। তরুণ প্রজন্মের এই লিটেরারি আইকন ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন তাঁর মৃদু নম্র অথচ ঋজু ভঙ্গীমার জন্য। দুর্দান্ত স্কলার আবার স্বেচ্ছায় সব ছেড়ে আসা এক সন্ন্যাসিনী যেন যিনি কবিতায় সমর্পিত। তাঁর মুখোমুখি হওয়াটা এক অনন্য অভিজ্ঞতা । ‘শব্দের মিছিল’ এর পক্ষ থেকে তাঁকে অনেক কৃতজ্ঞতা , ভালোবাসা । তাঁর কস্তুরী আমোদিত করুক আমাদের সাহিত্য জগত এই কামনা ।
পড়াতে লোরেটো কলেজে । ইউ জি সি রিসার্চ স্কলার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের । তো সেসব ছেড়েছুড়ে এই কবিতা রোগ কেন? না তেমন পয়সা আছে না আছে অন্য নিশ্চয়তা। এই যে মণীন্দ্র গুপ্ত চলে গেলেন, শুনলাম কুড়ি পঁচিশ জন শেষযাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলেন...
শুধুমাত্র সাহিত্য ভালবেসে ডাক্তারি পড়া ছেড়ে চলে এসেছিলাম কবিতার কাছে। তবে এমন অনেকেই আছেন,যাঁরা পেশা আর ভালবাসা- দুটোকে সমান ভাবে চালিয়ে যেতে পারেন। আমি পারি নি। আর পয়সা বা নিশ্চয়তার জন্য কেউই বোধ হয় কবিতা লেখেন না। কবিতা যেটুকু দেওয়ার,সেটুকুই দেবে আমাকে।তার থেকে বেশিও দেবে না,কমও না।
আজ ভুবনেশ্বর কাল নর্থবেঙ্গল পরশু দাক্ষিণাত্য । সব ছোটাছুটি ই কবিতার জন্য।
বাড়িতে সবাই খুশি মনে মেনে নেয়?
কবিতা যাপন কি একধরণের ক্ষ্যাপামিও নয়?

অন্য আরো অনেক রকম যাপনের মতো এটাও এক ধরনের বেঁচে থাকা,বেঁচে ওঠা।
তুমি তো ফেসবুকে বেশ সচল দেখি। ক'দিন ধরে খুব শোরগোল চলছে, পাঠক খুব সহজেই এতে করে নামী কবির নাগাল পেয়ে যাচ্ছে।
তোমার মত কি?
পাঠক কবির নাগাল পেলে ক্ষতি কী?
বরং এটা ভাল বলেই মনে হয় আমার।
কবিতা লেখ না কবিতা লেখে তোমায়?
ভালো কবিতা কি তৈরী করতে হয়?
কবিতা লিখি,কবিতাও লেখে আমায়। এটা একটা ‘কনটিনিউয়াস প্রসেস’। কখনো-কখনো তো তৈরি করতে হয় ভাল কবিতা। কখনো-কখনো সাদা পাতার সামনে হাত পেতে বসে থাকতে হয় দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। তবে এই পথ চেয়ে থাকাতেও একটা অদ্ভুত আনন্দ আছে।
তোমার সাম্প্রতিক কবিতার বই তো "শূন্যের কাছে স্বীকারোক্তি " ?
নাকি আরও কিছু আছে?
পরবর্তী প্ল্যান কি?
হ্যাঁ, আমার সাম্প্রতিক কবিতার বই ‘শূন্যের কাছে স্বীকারোক্তি’।
‘পরবর্তী প্ল্যান’ সম্বন্ধে এখনো কিছু ভাবি নি।
কবিতার ভাষা নিয়ে কোন ছুৎমার্গ আছে?
কিভাবে দেখ কবিতার ভাষা বিবর্তন?
না, কবিতার ভাষা নিয়ে ছুৎমার্গ নেই আমার। কবিতার বিষয়বস্তু যে ভাষা দাবি করে,আমি সেই ভাষা ব্যবহারেই বিশ্বাসী। যেকোনো ভাষাই বিবর্তনশীল। কবিতার ভাষাও তাই। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে বিষয়বস্তুর বদল এবং বিষয়বস্তুর সঙ্গে-সঙ্গে ভাষার বদল অবশ্যম্ভাবী।
লবিবাজির বাইরে থেকে কবিতাকুম্ভ সামলাচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু।
বিশাল অংশই মাতোয়ারা নিজ নিজ অনুরাগী গ্রুপ তৈরীতে। তোমাকে দেখিনি সেভাবে কোথাও।
তার পরও সফল তুমি। এর সিক্রেট কি?
সফল কিনা জানি না। তবে লবিবাজি থেকে সব সময়ই দূরে থাকতে চেয়েছি।
নিজের কাজ করে যেতে চাই। শেষ পর্যন্ত তো কাজটাই থাকবে,যদি থাকার মতো আদৌ হয়।
কবিতার বাইরে গদ্য বা প্রবন্ধ চর্চা কর?
প্রথম ভালোলাগা কোনটি?
কবিতার বাইরে গদ্য বা প্রবন্ধ লিখি। তবে কম। প্রথম ভালো লাগা কবিতাই।
কোন লিটেরারি ট্রাডিশান আছে পারিবারিক?
নাকি ফার্স্ট জেনারেশান রাইটার?
পেট্রন পেয়েছিলে কাউকে না কি সেল্ফ মেড?
না, পারিবারিক লিটেরারি ট্র্যাডিশন নেই।
প্রাথমিক ভাবে সেভাবে পেট্রন পাই নি কোনো। বলা যায়, ‘সেলফ মেড’।
তোমার কবিতা খুব লো কি তে বাজে গড়পরতা সংবেদনশীলতার কাছাকাছি। হুড়ুম দুড়ুম শব্দ নিয়ে ক্যাকোফোনিক পাকামি বা পাঠককে নির্বোধ ভাবার ঔদ্ধত্য নেই। যুগের চলতি হাওয়া এড়ালে কি সচেতন স্টাইলেই নাকি এটাই তোমার মজ্জাগত ?
সচেতন ভাবে যুগের চলতি হাওয়া এড়ানোর কথা ভাবি নি কখনো। এটাই আমার নিজস্ব স্টাইল। আমি যেভাবে জীবনকে দেখি, যাপনকে অনুভব করি; সেভাবেই কবিতাকেও গড়ে তুলি।
বাড়তি কিছু বলতে চাও, জানাতে চাও পাঠককে যা আমি ...
জিজ্ঞেস করি নি কিন্তু জানানো দরকার?
না, বাড়তি কিছু বলতে চাই না। আমি এমনই কথা কম বলি।
চেষ্টা করি, কম কথা বলে বেশি কথা প্রকাশ করতে।
সুচিন্তিত মতামত দিন