রাগ রাগিণীর রূপকথারা ছুঁয়ে গেলে, জ্বলে ওঠা যায় শিখায়, ঝরাও যায় ঝমঝম,শুনেছি। ব্যাস! আরোহ-অবরোহ বিস্তারের ব্যাকরণে চাই নাকি একটু নির্ভুল ডুবসাঁতার। কিন্তু জানি, সুরের আনাচকানাচ সু-কথাদের সঞ্চারপথ হলে তবেই তা প্রতিবিম্ব হতে পারে মনের। প্রথম প্রেমপত্রও ঘেমে ওঠে অন্তর্বাসের একাকীত্বে, ভাষার লাজুক আনন্দে। বিরহিণীর বিলাপ হোক বা শোকের সন্তাপ, প্রকাশ তো সেই ভাষাতেই। যেখানে গিয়ে ফুরিয়ে যায় মনজ স্তব্ধতার রসায়ন, শব্দেতর শব্দের সীমানা ছাড়িয়ে কেঁপে ওঠে স্বনক, সেখানেই জন্ম নেয় ‘ভাষা'।প্রাণের ‘ভাষা'।
কিন্তু কলমের সম্ভ্রম কেড়ে নিলে ধর্ষিতা হয় ভাষার নারীত্ব। আবার কলমে যখন অতি ‘আধুনিকতা’র (?) ভুল সংক্রমন, তখন রচনা জুড়ে প্রকাশ্য মৈথুন দৃশ্যও সামান্য রূপকের আড়াল টেনে ছড়ায় ইনফ্রারেড, তাতিয়ে বাতাবরণ। ক্ষরণে গলনে উচ্ছ্বাস-তল ছাপিয়ে যায় বিপদসীমা। অশ্লীল গদ্যভ্রূণ অথবা নবজাত উত্তেজক কবিতারা ভাষার শরীরে রোপণ করে অজানা ভাইরাল জ্বর।
নাড়ী ছেঁড়া আত্মীয়তার প্রথম উচ্চারণ যার প্রশ্রয়ে,যার গৌরব প্রতিষ্ঠায় শহীদের রক্তলেখা এখনও কাঁচা গন্ধে বুঁদ, যার সম্মানে তারিখের শরীরে হাজার স্মৃতির ভীড়, তার রূপটানে আজ আমরা হাতে তুলে নিয়েছি এ কেমন উগ্র বিশেষণীয় প্রসাধন? সংগতিহীন পংক্তির দুর্বোধ্য বিন্যাসে ‘ভাষা’দেহে আঁকছি এ কোন উত্তরআধুনিক পোশাক, কবিতায় কবিতায়? জন্মসূত্রে পেয়েছি যে মধুমাখা ভাষার অধিকার ... দূষণ নয়, শ্রবণে আর জিভে লেগে থাক তার সুমধুর নির্যাস!
সুচিন্তিত মতামত দিন