ঠিকানা, অজানা
বাবা, তুমি কোন অজানা দেশে পাড়ি দিয়েছ জানিনা। তবে খুব জানতে ইচ্ছে করে, তোমার কষ্ট হয় না আমায় ছেড়ে থাকতে? আমার কথা একটি বারও মনে পড়েনা? মনে পড়েনা, ছোট বেলায় তুমি আমায় মসজিদে নিয়ে যেতে সঙ্গে করে। হাফ প্যান্ট, গায়ে হাফহাতা গেঞ্জি, আর যত্ন করে মাথায় টুপি পরিয়ে। তুমি নামাজ পড়তে আর আমি এধার থেকে ওধার ছুটতাম। গড়াগড়ি দিতাম। তুমি সাজদায় গেলে তোমার পীঠে চাপতাম। একবার তো ইমাম সাহেবের কাঁধে চেপে বসেছিলাম। সাজদা করতে গিয়ে কতবার যে ডিগবাজি খেয়েছি তার কোন হিসেব নেই। নামাজ শেষে অমনি তুমি বুকে জড়িয়ে ধরতে...? জানো বাবা, কত বছর হয়ে গেলো অমন করে আর কেউ জড়িয়ে ধরেনি।
তুমি আমায় মসজিদে নিয়ে যেতে ভালোই করতে। ঘরে থাকলে মনে হত মা নামায পড়ছে না, ঘোড়া-ঘোড়া খেলছে। যেমনি মা সাজদায় যেত পীঠে চেপে বসতাম। নড়তাম না। বসে থাকতাম। মাও উঠত না সাজদা থেকে। পাছে আমি পড়ি যাই। খেলতে খেলতে যখন নেমে পড়তাম মা মাথা ওঠাত। সালাম শেষে দু’গালে চুমু খেত। স্নেহের সেই চুমুগুলি এখন আর মা আমায় দেয়না, বাবা। তুমি মাকে বকে দিও তো।
আচ্ছা বাবা, কোন অজানা দেশে চলে গেছ বলো তো? ওখানে কি হোয়াট্সঅ্যাপ, ফেসবুক, ইমেল কিছুই নেই। নেই না..., তাই বলি। জানো, রোজ যখন ফেসবুক খুলি, হোয়াটসঅ্যাপ দেখি, ইমেল করি, ভাবি এই বুঝি তুমি আমায় মেসেজ করলে, এই তোমার ইমেল এলো...। আচ্ছা বাবা, চিঠি লিখতে তো পারো রোজ। রোজ না হয় নাই বা লিখলে, সপ্তাহে, মাসে, বছরে...। এতদিনে একটিও লেখোনি; কি নিষ্ঠুর তুমি? হয়তো বা বড্ড অসহায়? জানিনা...।
আচ্ছা, তুমি তো আমায় প্রথম চিঠি-লেখা শিখিয়েছিলে, যেবার হস্টেলে যাই। বলে ছিলে নিয়ম করে তোমায় চিঠি লিখতে। তোমার ঠিকানা জানিনা। তুমি পাবে তো এই চিঠি? বাবা তুমি ভালো থেকো। আমি ভালো নেই। আজ আবার হেরে গেছি এক সংগ্রামে, পাশে দাঁড়াবার কেউ নেই।
বাবা, আজকাল মা’র শরীরটাও ভালো নেই। খুব ভয় হয়, মাও যদি চলে যায় তোমার কাছে, কে থাকবে আমার সঙ্গে? কে দেখবে আমায়? কে আমায় আদর করবে? কেউ নেই কোথাও, ক’টা পাথরের মূর্তি ছাড়া...।
ইতি
তোমার বাবু / আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
সুচিন্তিত মতামত দিন