বিনয়বাবু পেশায় সরকারি কর্মচারী, চারজনের পরিবার। স্ত্রী দুই কন্যা,, বড়ো জন নিশা,আর ছোট বোন দিশা। স্ত্রী বিভা। আর্দশ গৃহবধূ যাকে বলে সংসার ছাড়া কিছুই বোঝে না। সকলের মন জুগিয়ে নিজেকে উজাড় করে দেয় সারাদিন।বিনয়বাবুও খুব সৎ মানুষ। কোন রকম নেশা,বদ অভ্যাস কিছুমাত্র নেই। সর্বত্র খুব মানিয়ে গুছিয়ে চলে। সবসময় শান্তি বজায় রেখে চলতেই ভালোবাসেন। বলতে গেলে এককথায় সুন্দর পারিবারিক জীবন তাদের। ঠিক যেমন যেমন হওয়া উচিত।
এবার আসা যাক ওনার মেয়েদের করায়।বিনয়বাবুর দুই মেয়ের স্বভাব একে অপরের উল্টো।একজন যদি উচ্ছল মনোরম ঝর্ণা। অপরজন দুরন্ত সর্বনাশী আগ্নেয়গিরি।বড়ো মেয়েকে নিয়ে তাই তাঁর পরিবারে মাঝে মাঝে ছন্দ পতন ঘটে। শান্তির নীড়ে মাঝে মাঝেই অশান্তি হানা দেয়। পাড়াতেও তাঁর মেয়েদের নিয়ে নানা আলোচনা। রূপ লাবন্যে দুই মেয়েই কেউ কারো থেকে কম যায় না। কিন্তু স্বভাবটা বড়ো মেয়ের ছোট থেকেই অদ্ভুত টাইপের, যাকে বলে উগ্রচন্ডী, বদমেজাজি।তাই উনার খুব ভাবনা। এতদিন তো মেয়ে ছোট ছিল গোঁজামিল দিয়ে চলে গেছে। কিন্তু এখন তো মেয়ে বড়ো হয়েছে। কলেজ পাশ করেছে। এবার তো বিয়ে দিতে হবে। বড়ো মেয়ের যা স্বভাব কোন ছেলে যে পছন্দ করবে তাই নিয়ে কত্তা গিন্নির খুব চিন্তা। তবে ছোট মেয়েকে নিয়ে তাদের কোন ভাবনা নেই।
যাইহোক , চেষ্টা তো করতে হবেই, হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে তো হবে না।তাই পরিচিত মহলে মেয়ের জন্য সুপাত্রের খোঁজ খবর করতে শুরু করে। সম্মন্ধ আসতে থাকলো এদিকে ওদিক থেকে। একদিন বড়ো মেয়েকে ডেকে বললেন,মা তোমাকে আজ কিছু লোক দেখতে আসবে। ওরে বাবারে মেয়ে শুনেই বাজখাঁই গলায় বলে উঠলো,,,"আমি কি চিড়িয়াখানার বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে দেখতে আসবে।"
নারে মা এ দেখা সে দেখা নয় রে,,,বিনয়বাবু মেয়েকে বললেন।তবে কোন দেখা শুনি ? ,,, নিশা বললো। প্রজাপতি সংযোগ
মেয়ে- তবে কোন দেখা শুনি,,? প্রথম পর্ব এখানে শেষ হয়েছে,,,, তোমাকে ওনাদের পরিবারের বৌ করে নিয়ে যাবেন। তাই একটু দুই পরিবারের আর পাত্র পাত্রীর সাথে আলাপ পরিচয় মাত্র।
মেয়ে,,ও বুঝলাম, বেশ আসতে বলো।তবে হ্যাঁ কোন নেকা নেকা প্রশ্ন যেন আমায় না করে এই আমি বলে দিলাম।নইলে কুরুক্ষেত্র করবো।
- নানা কোন আছে বাজে প্রশ্ন ওরা করবে না।তুই দেখে নিস। যাক মা তুই রাজি হয়েছিস এটাই অনেক। আমি তাহলে ওনাদের খবর দিয়ে আসতে বলে দেই।
মেয়ে,,,,,,বাবা তুমি আমাকে কি ভাবো শুনি, মূর্খ,,? আমি সব বুঝি বুঝলে,,?
একটু উচিত কথা বলি এই যা। আর বলবো নাই বা কেন? এই যে দেখো সবসময় মেয়েদেরি কেন দেখতে আসবে। মেয়েরাও তো ছেলেদের দেখতে যেতে পারে।সেটা হয়নি কেন কখনো তুমিই বলো বাবা।
- সব বুঝিরে মা, কিন্তু এই নিয়ম চলছে প্রথম থেকেই। কিছু করার নেই।
-আমি এইসব মানবোনা বাবা,দেখ আমি কি করি । তাতে কেউ আমাকে পছন্দ করলে করুক না করলেও কোনো এসে যায় না।
কয়েক দিন পর এক ছুটির দিনে বিকেলে ছেলে পক্ষ এলো। বিনয়বাবু তো খুব ভয়ে ভয়ে আছেন মেয়ে আবার কোন লংকা কান্ড বাধাবে কে জানে। শুধু ঠাকুরকে ডেকছেন। যথা সময়ে নিশার ডাক পড়লো বাইরের ঘরে চেয়ারে বসবার।নিশা এলো তবে আর পাঁচটা মেয়েদের মতো লাজুক ভাব নিয়ে নয়। একেবারে নিজের স্বভাবে গড্ গড্ করে।কেন লজ্জা লজ্জা ভাব করবে,? পাত্র তো লজ্জা ভাব করে বসে নেই। শুরু হলো প্রশ্ন পর্বের পালা,,,,যেটাই জিজ্ঞেস করে কোন প্রশ্নের উত্তর নিশা সোজাসুজি দেয়না। উল্টো নিশার প্রশ্ন করে।
পাত্রপক্ষ - তোমার নাম কি মা,,?
নিশা - একটু আগেই তো আমার বাবা আমাকে নাম ধরে ডাকলো , শুনতে পাননি,,,? ন্যাকা,!
পাত্রপক্ষ - ওহ, তাই তো, আচ্ছা আচ্ছা , তোমার বাবার নামটা তো বলো।
নিশা - আমার বাবার নাম না জানলে আমাদের বাড়িতে কি করে চিনে এলেন,? আশ্চর্য তো। এই যে শুনুন আমাকে দেখতে এসেছেন দেখলেন ব্যাস।অত সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো না বুজলেন।তাতে আমাকে আপনাদের বৌ করলে করবেন না করলে না করতে পারেন তাতে আমার কিছু যায় আসে না। এবার পাত্রের উদ্দেশ্যে নিশা বলল,,,,,এই যে পাত্র আমাকে যদি বিয়ে করতে হয় আমাকে যেমন দেখছেন ঠিক এভাবেই পছন্দ করতে হবে। আমি অত বৌ বৌ ভাব করে থাকতে পারবোনা।ভেবে জানাবেন।এই আমি চললাম। হাহাহা,,, পাত্রপক্ষের তো বিষম খাবার যোগাড়। পালাতে পারলে বাঁচে আর কি।ঘটক মহাশয় ও ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেলেন।আর বিনয়বাবু তার স্ত্রীর কথাতো বলাই বাহুল্য।
আগের পর্বে শেষ হয়েছে যেখানে,বিনয়বাবু আর তার স্ত্রীর তো কথা বলাই বাহুল্য। সবাই চলে গেলে বাড়িতে একটা অদ্ভুত নিরবতা নেমে এলো।কারো মুখে কোন কথা নেই।যে যার মত চুপচাপ। অনেকক্ষণ পর নিশাই নিরবতা ভঙ্গ করে সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, তোমাদের এত ভাবতে হবে না। আমার কপালে যা আছে হবে।তাই বলে আমি বিয়ের জন্য ওরকম সঙ্গ সেজে বসে থাকতে পারবোনা। আমি কি সারাজীবন সঙ্গ সেজেই থাকবো নাকি। আমি যেমন তেমন করেই আমাকে পছন্দ করতে হবে। আমি মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারবোনা।
এরপর অনেক পাত্রপক্ষ এলো গেল নিশাকে কেউ আর পছন্দ করলোনা।কেউ কেউ নিশার বদলে দিশার জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসে বিনয়বাবুর কাছে। কিন্তু বিনয়বাবুও বদ্ধপরিকর বড়ো মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে ছোট মেয়েকে বিয়ে দেবেন না। ঠিক এই রকম পরিস্থিতিতে এক পাত্র পাওয়া গেল। সেই পাত্রও পাত্রী খুঁজে খুঁজে প্রায় হতাশ। একদিন পাড়ার চায়ের দোকানে বিনয়বাবুর এক বন্ধুর সাথে ভগবান প্রেরিত সেই পাত্রের আলাপ । মেয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাত্র আগেই শুনেছে। পাত্র এক পাড়াতেই থাকে চাকরির সুবাদে।আলাপ দিতেই পাত্র রাজী হয়ে গেল।বিনয়বাবুর বন্ধুতো অবাক। কেমন ছেলেরে বাবা সব জেনেও এত আগ্রহ , কিছু গন্ডগোল নেই তো ,,? তবে যাইহোক,বিনয়বাবুকে জানিয়ে দিন তারিখ ঠিক করে নিলেন কবে আসবে নিশাকে দেখতে।
তিনদিন পর পাত্র পাত্রীকে দেখতে এলো। পাত্রের নাম বিজয়। কলিং বেলটা বাজাতেই ভেতর থেকে বাজখাঁই গলা শোনা গেল,,,,,, কোন আপদরে আবার।
পাত্র - আমি তোমার যম।
পাত্রী -তাই নাকি ,,? আমি তো তোমার চিত্র গুপ্ত।খাতায় হিসেব লিখে ছেড়ে দেব বুঝলে যম বাবাজি।
পাত্র - এই রে আবার বাবাজি বলছে। ঠিক আছে চলবে।সে দেখা যাবে কে কার হিসেব লিখবে। আগে তো প্রবেশ দ্বার খোলো।
দরজা খুলে দিল। পাত্র আর ঘটক মানে বিনয়বাবুর বন্ধু দুজনে ঘরে এসে বসলেন। ততক্ষনে কর্তা গিন্নি তটস্থ হয়ে আছেন। অবস্হা সামলানোর জন্য। যাই হোক বিজয়ের নিশাকে খুব পছন্দ হলো জানিয়ে দিলো।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলুন।
বিনয়বাবুর যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার মতো অবস্থা হলো। এতদিনে কেউ তো তার বড়ো মেয়েকে পছন্দ করেছেন।একরকম আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা।তাই তার বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সাতদিন পর বিয়ে। দেখতে দেখতে চলে এলো সেই শুভদিন। যথার্থ ভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে গেল। এবার মেয়ে জামাই বিদায়ের পালা।এই মেয়ে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে কি করবে কে জানে,তা নিয়ে বিনয়বাবুর বাড়িতে সবাই খুব দুশ্চিন্তায় আছেন। তবে তাদের জামাই বাবাজি বার বার আত্মস্থ করছে,,,,, কিচ্ছুটি ভাববেন না আপনারা। আমি সব ম্যানেজ করে নেব। আমি তো সব জেনেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইত্যাদি।
বিজয় মানে বিনয়বাবুর জামাই খুব ভালো ছেলে।সৎ, পরিশ্রমী। গ্রামের বেশ বড়ো ঘরের ছেলে। একসময় অনেক জমিজমা বাড়িতে ঠাকুর চাকর নিয়ে যাকে বলে অভিজাত ধনী পরিবারের ছেলে। বাবা এখনো জীবিত।মা অনেক কাল গত হয়েছেন।আর বেনুকাকা পিসিমা যারা বিজয় আর বোন জবাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন।বিজয় বেনুকাকা অন্তপ্রাণ। পিসিমা কখনো মায়ের অভাব বুঝতেও দেননি।জবার দুবছর হলো বিয়ে হয়ে গেছে। বিজয় চার বছর ধরে শহরের একটা বড়ো কোম্পানিতে চাকরি করে।নিশাদের পাড়ায় ভাড়া থাকে। বিজয় বরাবরই একটু ঝুঁকি নিয়ে চলতে ভালো বাসে।যাকে বলে সাহসী।তাই হয়তো নিশার সম্পর্কে সব জেনে শুনেও নিশাকে বিয়ে করতে পিছপা হয়নি।
সাতদিনের মধ্যে বিয়ে দুবাড়িতেই খুব তোরজোড় শুরু হয়েছে।বাজার ঘাট, নিমন্ত্রণ আমন্ত্রণ কতকিছু। বিয়ে বলে কথা। বিনয়বাবুর তো খুব আনন্দ।তার নিশা মায়ের বিয়ে। একপ্রকার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন।পাড়াপরশীদের মধ্যেও নানা রকম গুঞ্জন উঠেছে।এমন মেয়েকে হঠাৎ করে সব জেনে শুনে ভিনদেশী ছেলে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেল,,,,,,,, হুম,ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। ছেলেটার মাথার ঠিক আছে তো, নাকি অন্য কোন মতলব আছে কে জানে। আজকাল যা সব ঘটনা শোনো যায় চারদিকে। ভালো হলে তো ভালো। হাজার রকম আলোচনা। যার বিয়ে তার হুঁস নেই পাড়া পল্লীর ঘুম নেই। কেউ আবার বিনয়বাবুকে ডেকে ফ্রী এডভাইস দিতেও কার্পন্য করছেন না।
যাক্, শেষ পর্যন্ত সেই দিনটি এলো নিশার জীবনে। খুব ভালো ভাবে সব অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে গেল।সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে নিশাকে নিয়ে তার গ্রামের বাড়ির দিকে ট্রেনে চেপে রওনা হলো। স্টেশনে পৌঁছাতেই বেনুকাকা মস্ত বড়ো গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। গ্রামের মেঠোপথ ধরে কিছু দূর এগোতেই প্রমাদ ঘটলো। ড্রাইভার জানালো গাড়ি খারাপ হয়েছে । পায়ে হেঁটে যেতে হবে। নিশার তো মাথায় বাজ পড়ার মতো।একে তো গ্রামের পথ অভ্যাস নেই তার উপর নূতন বৌ। অগত্যা হাঁটতে শুরু করল। এদিকে বিজয় বেনু কাকার উপর সেই তর্জন গর্জন। বিজয়ের অগ্নিমূর্তি দেখে নিশা নিজের রাগ গেলো ভুলে। চুপচাপ লক্ষী মেয়ে হয়ে হাটতে লাগলো। মনে মনে ক্ষেপতে থাকলো। গ্রামের উঁচু নিচু পথে হাঁটার অভ্যাস নেই বার বার পড়তে যাচ্ছিলো। শেষ মেষ বড়ো রকম একটা হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে রাগ আর চেপে রাখতে পারলোনা।
নিশা,,,,বাপের জন্মে এমন রাস্তা হাটিনি।এত কষ্ট হবে জানলে বিয়েই করতাম না। আর কখনো যদি এই পথ আমি মারিয়েছি।এই যে বর একটা অন্য গাড়ির তাড়াতাড়ি ব্যবস্হা করুন। নাহলে আমি এই বসে পড়লাম। বিজয়,,,,,( নিশার থেকেও দ্বিগুণ গলা চড়িয়ে) বেনুকাকা বৌদিমনির অর্ডার মতো অন্য গাড়ির ব্যবস্হা করো। তোমাদের এই সব নির্বুদ্ধিতার জন্য নূতন বৌদিমনিকে হাটতে হচ্ছে। আমি কিন্তু সহ্য করতে পারছিনা।বাড়ি গিয়ে এর একটা হেস্তনেস্ত করবো। বেনু কাকা,,,,,,খোকা এখন কোথা থেকে অন্য গাড়ি আনবো বাবা।এটা তো আর শহর নয়।কষ্টে সিষ্টে হেঁটেই যেতে হবে। বিজয়,,,,,,, তোমাদের যত্ত সব কান্ড। মাথাটা গরম হয়ে যায়।
নিশাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলো। দুঘন্টা পর কোন রকমে বাড়ি পৌঁছালো। ততক্ষণে নিশা খুব ক্লান্ত বিধ্বস্ত।
বিজয় - বেনুকাকা কি দাড়িয়ে দাড়িয়ে মুখ দেখছো। শিগগিরই বৌদিমনির বসার ব্যবস্থা করো।নিয়ম কানুন পড়ে হবে।
বেনুকাকা ছুটে একটা বড়ো সড়ো চেয়ার এনে বৌদিমনিকে বসতে দিলে।যেইনা নিশা চেয়ারটায় বসলো হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে গেল।
নিশা - উরে বাবারে আমার কোমোর গেলরে মা-বাবা তোমরা কোথায়।এই বলে কেঁদেই ফেললো।
বিজয় আর সবাই মিলে ধরাধরি করে নিশাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে বেনু কাকাকে সেই ধোলাই দিলো। পারে তো ধরে মারে আর কি। নূতন বৌ বলে কথা।কি অনাসৃষ্টি। এদিকে নিশার রাগ যে কোথায় গেলো কে জানে। উল্টে অসহায় জুবুথুবু একটা অবস্থা। বিজয়ের খুব মায়া হচ্ছিলো নিশাকে দেখে।
বিজয়দের বাড়ির সমস্ত রকম বিয়ের অনুষ্ঠান ভালো ভাবে শেষ হয়েছে। নিশার পারফরম্যান্স বলতে গেলে বেশ ভালো। বৌভাতে বাপের বাড়ির লোকজন যারা এসেছিল তারা তো বদমেজাজি নিশাকে খুঁজেই পেলো না। এ যেন এক অন্য নিশা। সবাই ফিসফাস,,,,,,,কি কান্ড ! ছেলে কি ম্যাজিক জানে নাকি। তবে নিশার বাবা মা বোন দিশা খুব খুশি এবং নিশ্চিন্ত খানিকটা। অষ্টমঙ্গলার জন্য নেমন্তন্ন করতেই বিজয় জানালেন,একবারেই যাবে।ভাড়া বাড়ি অন্য পাড়ায় শিফ্ ট করে তারপর।
বিয়ের দুমাস হয়ে গেল। বিজয় প্রতি সপ্তাহে আসে। নূতন ঘর পেয়েও গেছে। শুভ দিন দেখে নিশাকে নিয়ে গেল। দুজনে মিলে খুব জমিয়ে সংসার করছে। বিজয়ের কোন অসুবিধা নেই।নিশা যে এতটা পাল্টে যাবে বিজয়ও আশা করেনি। যাক্ ভগবান যা করেন সব মঙ্গলের জন্য করেন। এভাবেই চলতে লাগল খুশি খুশি।
এক বছর পর দিশার বিয়ে ঠিক হলো। বিয়েতে মামাতো পিসতাতো জেঠতুতো সব মিলিয়ে অনেক দিদি জামাই বাবুরা এসেছে। সবার কৌতূহল বিজয়-নিশার দিকে। খুব জানার ইচ্ছা বিজয় কি করে নিশাকে বাগে এনেছে।এই নিয়ে মাঝে মধ্যে বিজয়কে ছোটখাটো রসিকতা প্রায়ই শুনতে হয়।
দিশার বাসি বিয়ের দিন জামাইরা সব একজায়গায় আর মেয়েরা সব একজায়গায় তুমুল আড্ডা হচ্ছে। তার মধ্যে এক জামাইয়ের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো।
জামাই - সবাই একটা কথা শোন। একটা মজার খেলা খেলবো সবাই রাজি তো,,,?
সকলে মিলে একসাথে বলে উঠল,সবাই রাজি ।কি খেলা আগে তো বলো।
জামাই - মন দিয়ে শোন। আমরা এক এক করে নিজের নিজের বৌকে লোক দিয়ে ডেকে পাঠাবো কোন অজুহাতে।দেখবো কার বৌ কত তাড়াতাড়ি কত খুশি মনে ছুটে আসে।
সবাই,,,,,,, বাহ্ ! খুব ভালো খেলা তো। দারুন মজা হবে। বোঝো যাবে তাদের স্বামীকে কত ভালোবাসে।
প্রথমে একজনের বৌকে ডাকা হলো। একজনকে দিয়ে বলতে বলা হলো , দিদিকে গিয়ে বলো জামাই বাবুর খুব মাথাব্যথা তোমাকে ওষুধ নিয়ে আসতে।
দিদি,,,,,, ইসসসসসস কোনো শান্তি নেই। সবসময় ডাকবে। সবকিছু হাতে তুলে দিতে হবে। একটু গল্প করছি তাতেও শান্তি নেই। ওনাকে গিয়ে বলো ব্যাগের ভিতরেই আছে নিয়ে খেতে বলো। আমি এখন যেতে পারবো না।
এভাবে এক এক করে এমনকি দিশাকেও নানা অজুহাতে ডাকা হলো।কেউ আড্ডা ছেড়ে আসতে রাজি হলো না। উল্টে নানা কথা শুনিয়ে দিলো। সবশেষে নিশার পালা।ডাকা হলো কোনো অজুহাত না দেখিয়ে। শুধু বলা হলো বিজয় ডাকছে।
নিশা -এক ছুটে এসে মিষ্টি গলায় ,,,,,,, তুমি আমাকে ডেকেছো?
বিজয় - হ্যাঁ নিশা ডেকেছি তো। তুমি আমাকে জিতিয়ে দিয়েছো। আমার সন্মান রেখেছো।
নিশা -মানে,,? এমনটা কেন বলছো ?
বিজয় সবকিছু নিশাকে বুঝিয়ে বললো। নিশা শুনে তো হেসে লুটিয়ে পড়লো। আর যারা মজাটা দেখতে চেয়েছিলো তাদের চোখ সবার কপালে উঠে গেল। মনে মনে ভাবতে লাগলো,এও কি সম্ভব ? স্বপ্ন দেখছে নাতো ?
বিজয় সবার মুগ্ধতা দূর করতে জোরে বলে উঠলো, বন্ধু সকল নিউটনের তৃতীয় সূত্র কাজে লাগিয়েছি যে,তাই তো অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে,,,,,, নিশার রাগের দ্বিগুণ রাগ আমি দেখিয়েছি।প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। নিশার রাগ তাই বশ্যতা স্বীকার করেছে ভালোবাসার আঙিনায় , বুঝলে বন্ধুরা,,,,,,, হাহাহাহাহা।
সুচিন্তিত মতামত দিন