মালদ্বীপের সমুদ্র সৈকতে (ভাড়ু অাইল্যান্ড) হানিমুন করতে এসেছে পলাশ আর হিয়া। আট বছর সম্পর্কের নানা রকম টানা পোড়োনের পর গত আট মাস আগে বিয়ে হয় দুজনের। রাতের সমুদ্রে দুজনে পাশাপাশি হাটছে তবু পলাশ কে যেন ছুঁতে পারছে না হিয়া...। মাঝে মাঝে সুমুদ্রের নীল ঢেউ গুলো ছুঁয়ে, ঘেঁটে নিচ্ছে সে, এক একটা বড় বড় নীল ঢেউ এসে ডুবিয়ে দিচ্ছে দুজনের পায়ের পাতা... পলাশ কে এই ক মাসে আরো কেমন চুপচাপ হতে দেখছে হিয়া। কলেজে এক সাথে পড়ার সময় যেমন হৈ হুল্লোড় করতে দেখেছে পলাশ কে তেমনটা আজ আর যেন নেই সে। তবুও আশা রাখে হিয়া একদিন সব ঠিক হবেই...
হোটেলে ফিরে দুজনে ডিনার সেরে ঘরে যেতেই পলাশ টিভিটা অন করে দেয়, হানিমুন কাপেল প্যাকেজের জন্য যে নীল ছবি গুলো চলতে শুরু করে তাতে প্রথমেই যে নায়িকা কে দেখায়...তাকে দেখেই গায়ে ঘাম দিতে শুরু করে ওর। পর পর তিনবার রিওয়ান্ড করে দেখে নেয় সবটা ঠিক আছে কি না! সবটাই ঠিক... সেই চোখ, সেই চুল, সেই বুকের খাঁজে আঁচিল, ঠোঁটের উপর বড় কালো তিল... পুপে মানে প্রজ্ঞা পারমিতা। সেই ক্লাস এইট... প্রথম প্রেম। দু জোড়া ঠোঁট ছুঁয়েছিল আরো দুবছর পর... অনেক না বলা কথা, না বলা শপথ, অলীক কল্পনারা...
একসময় দু বাড়ির জানা জানি... শহর বদল, স্কুল বদল, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন...পুরাণ চিন্তাধারা... আউট অফ সাইট আউট অফ মাইন্ড... কই পলাশ তো হতে পারে নি কোন দিন সেভাবে বিচ্ছিন্ন করতে পুপের থেকে নিজেকে...' পুপে কি পেরেছে? ' ভীষণ জানতে ইচ্ছা করছে তার... । রিসেপশনে ছুটে গিয়ে জানতে ইচ্ছা করছে এখানে কোথায় এই ছবি তৈরি হয়... একবার দেখা করতে চায় সে পুপের সাথে... । পরক্ষণেই বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে হিয়ার চোখ বেয়ে নামছে বর্ষার বারিধারা... সব কিছুই ধামা চাপা পড়ে যায় সময়ের স্রোতে...
জীবনে যে নতুন সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাকেই বা অস্বীকার করে কি করে! হিয়ার তো কোন দোষ নেই! সে তো বরাবর পলাশকেই ভালোবাসে... তার জন্যেই চোখের জল ফেলছে ...। নাহ্ পলাশ আর পুপেকে নিয়ে ভাববে না। আজ থেকে সে নতুন করে জীবন শুরু করবে। হিয়ার তো কোন দোষ নেই সে তো নিঃস্বার্থ ভাবেই ওকে ভালোবাসে।
বিছানায় ফিরে গিয়ে হিয়ার চোখের জল মুছিয়ে বলে, 'আজ থেকে আমাকে খুব শক্ত করে ধরে রাখো হিয়া, কোথায় কোনদিন কোন ঝড় যেন আমাদের দুজন কে উড়িয়ে দিতে না পারে '... 'এই ভাবেই থাকবো দুজনে চির দিন'।
হিয়াও চোখের জল সামলিয়ে শক্ত করে কোমর জড়িয়ে রাখে পলাশের, তার বুকে মাথা রেখে শুধু একটাই কথা বলে, 'আমি বেশী কিছু চাইছিনা শুধু ওর থেকে আমাকে একটু কম ভালো বেসো তাহলেই হবে' ...
পলাশ ওর সামনে জোরে হেসে বলেঃ 'ধুর পাগলী! ওকে আর আমি মনেই করি না, আজ দেখলে তো ওর পরিণতিটা ? কে ওর জন্যে মনখারাপ করবে? আমি? একটা বাজারের মেয়ের জন্য? নেভার! ওসব কথা রাখো, আজ রাতটা শুধু আমাদের দুজনের, লেটস এনজয় ইয়ার '... আর মনে মনে বলে 'যতই শক্ত করে শিকড় গাড়ো না কেন হিয়া, পুপের কথা কোনদিন ভুলতে পারবো আমি, তার জায়গা নদীর মতোন, নীরবে নিভৃতে আমার হৃদয়ের গহীন বনে বয়ে চলবে সে...
শুধু সময়ের স্রোত বেয়ে চারপাশে কিছু চরিত্ররা ঘোরাফেরা করবে তার মধ্যেই পুপে আর তার প্রথম প্রেমও রেশটুকু রেখে যাবে তাদের ভালোবাসার কাছে.....!
সুচিন্তিত মতামত দিন