বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
পলাশ কুমার পাল
sobdermichil | সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭ |
অণুগল্প
| মিছিলে স্বাগত
"ঠাকুমাআআ! কাপড় পরে রেডি হলেএএ?"
"এই-এই তো..."
"একী! তুমি এই ময়লা কাপড় পরে ছবি তুলবে?"
"আমার তো একটাই নতুন কাপড়! ভাবছি অষ্টমীতে..."
"নাআআআ! আজইই!"
তরুলতা দেবী নাতনী অনন্যার মুখের দিকে তাকায়। আজ সে কেন যে ছবি তোলার এত জেদ ধরেছে বুঝতে পারে না। এতদিন কখনো তো তার কাছেই ঘেঁষেনি। অথচ আজকে? মাঝে মাঝে তরুলতা দেবীর সাধ হত একমাত্র নাতনীর পাশে বসে গল্প করা। সেই সুখ কখনো না পেলেও তরুলতা দেবী আজ আর নাতনীর আবদারগুলো অমান্য করতে পারল না। আজ যেন সে সেই সাধের সুখটুকু সুদে-আসলে পেতে চায়।
নতুন শাড়িটা বের করার আগে তরুলতা দেবী বাকি শাড়িগুলো উল্টে-পাল্টে দেখে। জীর্ণ শাড়িগুলো একটাও কাচা নেই। ক'দিন জ্বরের জন্য কাচতে পারেনি। বৌমাও কেচে দেয়নি। তার একমাত্র অবলম্বন এই নতুন শাড়িই। পূজোতে ছেলে দিয়েছে। ছেলের কাছ থেকে বছরে ঐ একবারই শাড়ি পায়। এছাড়া মেয়েরা কখনো কখনো দেয়। তবে এখন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই প্রায় ভুলে যায়। আজ নাতনীর আবদারে নিজের ভিতরের ব্যথাগুলো বাঁধ-ভাঙা আনন্দে তলিয়ে যায়। তরুলতা শাড়িটা পরে।
"এই দেখ অনু, কেমন লাগছে আমায়? তোর থেকে ইয়াং না?"
"দারুণ! এসো, এই সোফাতে বসো।"
"সোফাতে?"
প্রথম সোফাটা আনা থেকে এই নাতনী ও বৌমার মুখঝামটানিতে সোফাটা কোনোদিনই আর ছুঁয়ে দেখেনি। আজকে সেই নাতনীর কথায় তরুলতা অবাক হয়ে যায়।
অনন্যার কথা মতো তরুলতা সোফায় বসে। অনন্যা ঠাকুমার সঙ্গে নানারকম ভঙ্গিমাতে ছবি তোলে। ছবি তোলা হয়ে গেলে, সোফাতে বসেই অনন্যা আসার সময় লগ আউট করে আসা ফেসবুকটা লগ ইন করে। ছবিগুলো ফেসবুকে আপলোড করে স্ট্যাটাস দেয়-- 'আমার হৃদয় যার হৃদয়ের ছায়ায় ছায়ায় করে খেলা; এই সে ভালোবাসা, এই আমার ঠাকুমা...'
"কী সব করছিস বলতো, ছবি তুলে?"
"তুমি এখনও বসে আছো! যাও তুমি! তোমার ঘরে যাও! আর হ্যাঁ, মা বলেছে ঐ বাসনগুলো যেন মেজে রাখো!"
তরুলতা দেবী কয়েক মূহূর্ত আগে দেখা অনন্যার মুখের ছবির সঙ্গে এই অনন্যাকে মেলাতে পারল না। এই ছবি যে খুব চেনা দৈনন্দিন অনন্যার ছবি! কিন্তু কিছুক্ষণ আগে? বুঝতে পারে না ছোট্ট মাথায়। সোফা থেকে উঠে ধীর পায়ে সে বেড়িয়ে যায়।
অনন্যা ফোনে চোখ ফিরিয়ে দেখে, তার পোস্টে তখন পাঁচটা লাইক, একটা কমেন্ট। কমেন্টা খুলে দেখে তার বন্ধু সোমনাথ বলেছে- 'এই সেই তোর আদরের ঠাকুমা?

