কয়লা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে চোদ্দ বছরের রাজু।চলন্ত ট্রেনে পকেট কাটতে গিয়ে ধরা পড়ে ন ' বছরের ল্যাংড়া হাবু। আরশাদের পা দুটো রিকশা চালিয়ে ফুলে কলাগাছ হয়ে আছে।যন্ত্রনায় সতেরো বছরের জোয়ান মরদের শরীর কুঁকড়ে যাচ্ছে। নতুন ফ্ল্যাট হচ্ছে, কাজ পেয়েছে এগারো বছরের হারান। মাথায় আট, দশটা ইঁট নিয়ে উঠে যেতে হচ্ছে ওপরে। দেরী হলেই বড় বাবুর মুখ ঝামটা না হলে মার। তাই বাড়ি ফিরে কেঁদে ফেলে ব্যাথায়।"উফফ, বড্ড কষ্ট মা!" তার মা তাকে ঝুপড়ির ছোট্ট ঘরে রাস্তার আলোয় রসুন তেল মালিশ করে দেয়।
প্রফেসর রায়ের ছেলে মস্তবড় এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে। ডাক্তার আলির ছেলে আজ উকিল।অভিনেতা, অভিনেত্রী বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে নেশার ঘোরে ট্রাফিক নিয়ম ভাঙে। রাতের পার্টিতে চলে মদ, মাংসের মোচ্ছব । গনতান্ত্রিক দেশ আমাদের, সবার সমান অধিকার।কেউ টাকা চুরি করে বাড়িতেই ব্যাঙ্ক বানায়। এদের কিন্তু জেল হয়না। আইনের ফাঁকে কখনো হাতিও গলে যায়।আম জনতা হল কবি নীরেন্দ্রনাথের " উলঙ্গ রাজার " মতো।কেউ কিছু দেখে না, কেউ কিছু বোঝে না।
রাজুর বাবা বছর দুই আগে ট্রেনে কাটা পড়েছে। বাড়িতে এক বোন আর বিধবা মা।বোনের দিকে শালা পাড়ার দালালের নজর। বলেছে এক রাতে অনেক টাকা!মা কে পাড়ার যোগেন কাকু রাতের বেলায় বলেছে টাকা দেবে ধার। সংসার বাঁচাতে রাজু চুরি করে।
ল্যাংড়া হাবু পড়তো, ইংরেজি স্কুলে নয় পাড়ার কর্পোরেশন অবৈতনিক স্কুলে। দুবেলা শাক, ভাতও জোটে না ওদের কপালে।এদের আবার রাজরোগ! মায়ের পেটে ক্যান্সার।চিকিৎসা করাতে গিয়ে হাবুকে চুরি করতে হয়।মা ছাড়া যে তার আর কেউ নেই!
আরশাদের দিদির বিয়ে তাই একটু বেশি সময় ধরে রিকশা চালাতে হচ্ছে।ছোট্ট হারানের বোনের টিবি হয়েছে তাই বোনকে সারাতে মা আর ও দুজনেই কাজ করে।এদিকে স্বাধীনতা দিবসে মন্ত্রীরা কত গাল ভরা ভাষন দেয়, দারুন লাগে মাইরি শুনতে!
কত আনন্দ, কত অনুষ্ঠান চারিদিকে আবৃত্তি হবে, গান হবে, নাচ হবে।আজ একটু বেশি রোজগার হবে।তাই আরশাদ সকাল থেকেই রিকশা নিয়ে বেড়িয়েছে।
লক আপে মার খেয়ে রাজুর পিঠে কালশিটে দাগ।
ল্যাংড়া হাবুকে খেতে দেওয়া হয়নি আজ দুদিন।
অথচ কথা ছিলো স্বাধীনতার পরে সবার হবে সমান অধিকার।
স্বাধীনতা যুগ যুগ জিও!!
সুচিন্তিত মতামত দিন