বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে যত বিস্ময়! প্রাণের বৈচিত্র্য নিয়ে টিকে আছে পৃথিবী। কিন্তু আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রহস্যে ভরা গ্রহের উপরের সৌন্দর্যটাই শুধু দেখি। ভুলে যাই এর বাইরেও কিছু আছে, যেটার বসবাস সাধারণ জীবনের অনেকটা দূরে। আর সে রকমই এক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার রয়েছে ভূ-গর্ভে। যার আরেক নাম গুহা। গুহায় যেন আছে পৃথিবীর গুপ্তধন। আর সেই গুপ্তধনই যেন পরম মমতায় সবার চোখ থেকে আড়াল করবার চেষ্টা করেছে প্রকৃতি। আর সেটা করতে গিয়েই বাড়িয়ে দিয়েছে এর সৌন্দর্যকে, কয়েকশ গুণ বেশি। আজ থাকছে তেমনি সব গুহার গল্প।
গুহাবাসী মানুষের দিন এই পৃথিবীতে অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু দরিদ্র অবস্থা কাউকে কাউকে এখনো গুহবাসী হতে বাধ্য করে।
সম্প্রতি চীন ও ফ্রান্সের একদল অনুসন্ধানী চিহ্নিত করেছেন চীনের সবচেয়ে দীর্ঘতম গুহা। গুহাটি উচ্চতায় প্রায় একশো ৮৬ কিলোমিটার। চীনের সবচেয়ে উঁচু ও এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম গুহা। স্থানীয়রা গুহাটিকে লাও গ্যান ডং নামে চেনে। গুহা গবেষকরা চলতি বছরের ১৬ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের গাইজু প্রদেশের ওয়েনকোং জনপদের শুয়াংহি গুহায় একটি যৌথ অভিযান চালান।অনুসন্ধানীরা গুহার অভ্যন্তরে ১৩টি স্থানে মেরুদণ্ডী প্রাণীর জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন। পড়ে থাকা অস্থিগুলোর বেশকিছুকে তারা ভাল্লুক ও হাতির বলে ধারণা করছেন।কার্স্ট গুহাটি প্রথম আবিষ্কার হয় ১৯৮০ সালে। এরপর ১৯৮৭ সাল থেকে এ গুহা নিয়ে ১০টিরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে চীন ও বিদেশি গবেষকরা। এসব গবেষণায় গুহাটির মোট দুইশো তিনটি প্রবেশপথ খুঁজে পাওয়া গেছে।নতুন অভিযানে গবেষকরা জানান, ২০১৪ সালে শুয়াংহির উচ্চতা যতটুকু ছিলো তার তুলনায় সে ২৫ কিলোমিটার বেড়েছে।
আশ্চর্য গুহা ইয়ার ওয়াং ডং
এমন গুহা যার আলাদা আকাশ আছে। মেঘ-বৃষ্টি-কুয়াশা আছে। আছে খাল বিল পাহাড়ও। শুনে অবাক হচ্ছেন? চলুন ঘুরে আসি চীনের চঙকিং প্রদেশে। এমনই একটি গুহা রয়েছে এখানে।
পৃথিবীতে যেমন আকাশ রয়েছে। আকাশে মেঘ এবং কুয়াশা রয়েছে। তেমনি এই গুহার ভেতরেও রয়েছে আলাদা আকাশ। সেই আকাশে রয়েছে মেঘ ও কুয়াশা। শুধু তাই নয়। গুহাটির মধ্যে খাল, বিল, পাহাড়সহ রয়েছে আরো অনেক কিছু। চীনের এই গুহাটির নাম ‘ইয়ার ওয়াং ডং’।চঙকিং প্রদেশের বাসিন্দারা অনেক আগে থেকেই গুহাটি সম্পর্কে জানতেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের গুহাটির সামান্য ভিতরে যাতায়াতও ছিল। তবে তারা ভিতরের কোনো দৃশ্য ধারণ করে বাইরে নিয়ে আসেননি। আর স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া বাইরের কেউই তেমন যেতেন না গুহাটির মধ্যে। যে কারণে ‘ইয়ার ওয়াং ডং’ গুহাটি সম্পর্কে মানুষের অজানা ছিল।গুহা বিশেষজ্ঞ এবং ফটোগ্রাফারদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল ‘ইয়ার ওয়াং ডং’ গুহার গোপনীয়তা আবিষ্কার করেন এবং ভেতরের বেশ কিছু দুর্লভ ছবি তুলে নিয়ে আসেন।অভিযাত্রীদের মতে, গুহাটির ভিতরে মেঘ বালুকনা জলীয়বাষ্পসহ রয়েছে আলাদা আবহাওয়া যা অনেকটা শীতল। আবহাওয়ার পাশাপাশি আর্দ্রতাও শীতল। যে কারণে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ অনেকটা কষ্টসাধ্য। গুহার ভিতরে যে খাল রয়েছে তা খুবই ভয়ঙ্কর ও বিধ্বংসী। কেননা এসব খালের জলে রয়েছে তীব্র স্রোত যা সহজেই কাউকে ভাসিয়ে নিতে পারে।
অভিযাত্রী দলের একজন সদস্যর ভাষ্যমতে, এর আগে এত বিস্তৃত কোনো গুহা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। ‘ইয়ার ওয়াং ডং’-এর মধ্যে রয়েছে অসাধারণ কিছু বিষয় যা সত্যি আমরা অবাক করেছে। বিশাল এই গুহাটি প্রায় ৮২০ ফুট উঁচু। উপরের অংশের অর্ধেকটাই কুয়াশা এবং মেঘে ঢাকা। গুহাটির ভিতরে যে জল রয়েছে তা নোনতা স্বাদযুক্ত।
বাঁশির গুহা
প্রায় ১,২০০ বছর আগে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় চীনের এই গুহাটি। এটি সব সময়ই ভরে থাকে নানা রকম আলোয়। এ এক অদ্ভুত ঘটনা বৈকি! এ আলোর উৎস আসলে ভেতরে জমে থাকা চুনাপাথরের স্তর। এই বিচিত্র আলোর গুহার রূপে মানুষের মুগ্ধ হওয়ার শুরু সেই ৭৯২ সালে। তখন চীনে চলছে থাং রাজত্ব। এখনও কেবল চীনবাসীই নয়, এর রূপে মুগ্ধ হয়ে আছে সমগ্র বিশ্ববাসী।কিন্তু প্রশ্ন হল, এর নাম আলোর গুহা না হয়ে কেন বাঁশির গুহা হল? খুব সোজা, কেবল আলোই না, এই গুহাটির আছে আরও একটা বিশেষ গুণ। এর ভেতরে জন্মে এক ধরনের নলখাগড়া। সেই নলখাগড়া দিয়ে ভীষণ সুন্দর আর মিষ্টি সুরের বাঁশি বানানো যায়। আর সে জন্যই এই ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যরে গুহাটির নাম হয়ে গেছে বাঁশির গুহা।
চীনের ব্যতিক্রমী গুহা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জীবন।
গুহা বিদ্যালয়। ভাবছেন প্রাচীনকালের কোনো এক অখ্যাত বিদ্যালয়ের কথা বলছি, যার শুরুটা হয়েছিল গুহাতে? একদমই না।ডংজং মিড কেভ প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের এই বিদ্যালয়টি এই সময়েরই একটি বিদ্যালয় যেটির অবস্থান চীনের গুইজোও রাজ্যের মিয়াও গ্রামে। ডংজং এর অর্থ গুহার ভেতরে। আর নামের সঙ্গে মিল রেখে এই বিদ্যালয়টিও গুহার ভেতরেই অবস্থিত। তবে ইচ্ছে করে নয়, অনেকটা বাধ্য হয়েই এরকম জায়গায় বিদ্যালয় গড়ে তোলার কথা ভাবতে হয়েছে এই রাজ্যের মানুষগুলোকে। সেই অনেক আগ থেকেই চীনা সরকারের কাছ থেকে খুব কম অর্থনৈতিক সাহায্য পেয়ে আসছিল এই রাজ্যটি। আর তাই যে সামান্য অনুদান পাওয়া যায় সেটা দিয়ে কোনো নিত্য-নতুন দালান কোঠা নয়। বরং নিজেদের সামর্থের ভেতরে থাকা গুহাতেই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে চীনের এই গরির রাজ্যের মানুষেরা। গুহা বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে।
এ যুগেও গুহাবাসী চীনের কয়েকটি পরিবার!
এক সময় গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছে মানুষ। সভ্য হয়েছে তারা। আদিমতা বিসর্জন দিয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় জীবনমানের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে মানবসভ্যতা। কিন্তু চীনের ১৮টি পরিবার এই আধুনিক যুগেও সেই আদিম মানবের মতো গুহাবাসী হয়ে আছেন। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের পর্বতমালার বিশাল একটি গুহায় বাস করছেন তারা।একটা সময় চোর-ডাকাতদের দখলে ছিল ওই গুহা। সাহসী মানুষও এর ধারেকাছে ঘেঁষতে ভয় পেত। চীনের এক পর্যটন প্রতিষ্ঠান এই গুহা ও শহরের সংযোগ ঘটিয়েছে। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যাবল কার। যাতায়াতব্যবস্থা তৈরি করতে ৮ মিলিয়ন দিরহাম বাজেট করা হয়েছে।পর্যটনকে জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় করতেই এই গুহাবাসীদের সঙ্গে সংযোগ ঘটানো হবে পর্যটকদের। এই মানুষগুলোকে মানব সভ্যতার শেষ গুহাবাসী বলে মন্তব্য করছেন অনেকে। এই ১৮টি পরিবার গুহায় থাকতে বদ্ধপরিকর।
চীনের এক দম্পতি দরিদ্রতার কারণে গুহাতেই ৫৪ বছর ধরে সংসার করছেন এই দম্পতি। সেখানেই বড় করে তুলেছেন ৪ সন্তানকে।দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের নানচোং শহরের কাছে একটি গুহায় বাস করেন এই দম্পতি। স্বামীটির নাম লিয়াং জিফু। বয়স ৮১ বছর। স্ত্রীর নাম লি সুইং। বয়স ৭৭ বছর। বিয়ের পর কোনো ঘর ভাড়া নেওয়ার মতো পয়সা ছিল এই দম্পতির। তাই গুহার ভিতরেই সংসার পেতেছিলেন তারা। অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে সেখানেই শোভা পাচ্ছে তাদের সুখী সংসার! নিজেদের ঐকান্তিক চেষ্টায় বর্তমানে এই গুহার ভিতরে তিনটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর ও একটি লিভিং রুম গড়ে তুলেছেন তারা।গুহার মধ্যে সুন্দর বাড়িটিতে এ দম্পতির একটি রান্না ঘর, তিনটি শোবার ঘর ও টেলিভিশন-সহ একটি বসার ঘর রয়েছে।বিয়ের তিন বছর গুহাটি খুঁজে পেয়েছিলেন, এমনটাই জানিয়েছেন লিয়াং জিফু। স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। আরও তিনটি পরিবার তাদের সঙ্গে বাস করত সেই গুহায়। তবে একটা সময় বাকি পরিবারগুলো গুহা ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু থেকে যান লিয়াং জিফু ও লি সুইং।বর্তমানে গুহায় নিজেদের মতো বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে লিয়াং জিফু ও তার পরিবার। সেখানে একটি শূকরের খামারও গড়ে তুলেছেন তারা। পাহাড়ের উপরিভাগে নিজেদের জন্য ফসলও উৎপন্ন করে তারা। ফসল কাটার মৌসুমে লিয়াং ঝুড়ি ও রশি নিয়ে পাহাড়ের উপরে উঠে যান। গুহায় তিনি যখন ফেরেন তখন ঝুড়িগুলো থাকে শস্যে ভরা।লিয়াং জিফু ও লি সুইংগুহার জীবনে বেশ মানিয়ে নিয়েছেন লিয়াং জিফু ও লি সুইং।স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অনেকবারই লিয়াং ও তার পরিবারকে গুহা থেকে সরিয়ে ভালো কোনো বাসায় নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু লিয়াং-এর পরিবার বারবারই তা প্রত্যাখান করেছে। কারণ, গুহার এই সংসারে মায়া পড়ে গেছে তাদের। সেখানেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা। গরমের মৌসুমে গুহার শীতল পরিবেশ এবং শীতের মৌসুমে সেখানকার উষ্ণ পরিবেশ বড় ভালো লাগে লিয়াং পরিবারের।
চীন ছাড়াও বিশ্বের আরোও কিছু গুহা
বরফের গুহা
বরফের গুহা, তাও আবার হয় নাকি? ওই অতটুকু বরফের আইসক্রিমই যখন ফ্রিজ থেকে বের করার খানিক বাদেই গলে যায়, অত বড় গুহা সেখানে কী করে দাঁড়িয়ে থাকবে?এমনি গুহাও আছে। তবে সেটা আমাদের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশে নয়, একদম হিম ঠাণ্ডার দেশ আইসল্যান্ডে। নাম গ্লেসিয়ার গুহা। এই গ্লেসিয়ার মানে হিমবাহ। হিমবাহের ঠাণ্ডায় জমাট-বাঁধা জল থেকে এর উৎপত্তি বলেই এমনতর নাম।তবে এর উচ্চতা অবশ্য সবসময় এক রকম থাকে না। ১৯৮০ সালে এর উচ্চতা সর্বোচ্চ হয়েছিল। তখন এর উচ্চতা পৌঁছেছিল ২.৮ কিলোমিটার পর্যন্ত।
মেলিসসানি গুহা
অদ্ভুত সুন্দর এই গুহাটি গড়ে উঠেছে মেলিসসানি হ্রদকে ঘিরে। গ্রিসের কেফালোনিয়া দ্বীপে এই হ্রদের অবস্থান। একপাশে পাহাড়, অন্যপাশে বন। আর তাই পাহাড় আর বনের সঙ্গে আকাশের নীলের মিশেলে এক অনবদ্য সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে এই গুহায়।আর এই বন-পাহাড়ে মোড়া গুহাতে যাতে সবাই সহজে যেতে পারে, তাই এর এক পাশে বানানো হয়েছে রাস্তা। সঙ্গে গাড়ি রাখার জায়গাও আছে। আছে গুহার বুকে নৌকায় করে ভেসে বেড়ানোর ব্যবস্থাও।
জলের গুহা
গুহাটি অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে। মিসৌরি উদ্যানে গেলেই গুহাটির দেখা পাওয়া যাবে। অপূর্ব সৌন্দর্যের এই গুহাটি তৈরি মূলত স্ট্যালেগমাইট দিয়ে। আর জলের উৎস জোয়ার-ভাঁটা।
ফিঙ্গেলস গুহা
পাশাপাশি দাঁড়ানো অনেকগুলো ছোট ছোট স্তম্ভ। একে অপরের গায়ে গা ঠেকিয়ে সোজা উঠে গেছে আকাশ পানে। তারপর অনেক উঁচুতে গিয়ে গড়ে তুলেছে এক প্রাকৃতিক ছাদ। স্কটল্যান্ডের এই অদ্ভুতুড়ে গুহাটির নাম ফিঙ্গেলস গুহা।সাগরতীরের এই গুহাটির গুণপনার এখানেই শেষ নয়। এই গুহার ভেতরে গিয়ে দাঁড়ালে নাকি স্বর্গীয় অনুভূতি হয়। আর এই স্বর্গীয় অনুভুতির কারণ-- প্রতিধ্বনি। গুহার গঠন এমন যে, ভেতরে প্রতিধ্বনি হয়। আর সাগরের ঢেউ যখন এর ভেতর দিয়ে বয়ে যায়, তখন সৃষ্টি হয় অদ্ভুত সব প্রতিধ্বনি। ফলাফল-- স্বর্গীয় অনুভূতি।
স্ফটিক বা ক্রিস্টালের গুহা
মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়া রাজ্যের নাইকা শহরে এই গুহাটির অবস্থান। গভীরতা ৩০০ মিটার। এই গুহাটি ভর্তি নানা রকমের নানা আকৃতির স্ফটিক দিয়ে। এর কোনো কোনোটা আকৃতিতে পৃথিবীর সবচাইতে বড় স্ফটিক হওয়ারও দাবীদার। গুহার ভেতরের সবচেয়ে বড় স্ফটিকের ওজন হবে অন্তত ৫৫ টন।সমস্যা হল, গুহাটির ভেতরে ভীষণ গরম। তাপমাত্রা মাঝেমাঝে ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। আর বাতাসের আর্দ্রতাও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে, ঠিক মতো প্রস্তুতি ছাড়া নামলে ওই গুহায় কোনো মানুষ দশ মিনিটও টিকতে পারবে কিনা, সন্দেহ। আর সে কারণেই গুহাটি সম্পর্কে জানাশোনার পরিমাণও কম।
স্পেনের অদ্ভুত এক শহরের মানুষ এখনও গুহাবাসী।
গুহায় বসবাস করাকে যদি আদিম যুগের বিষয় বলে মনে করেন তাহলে ভুল করবেন। কারণ বিশ্বে এখনও বহু মানুষ রয়েছে যারা গুহায় বসবাস করে। এ ধরনের গুহাবাসী মানুষের দেখা পাওয়া যাবে স্পেনে। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে বিবিসি। স্পেনের একটি ছোট শহরের নাম গুয়াডিক্স। এ শহরের বাসস্ট্যান্ডে এসে নামলে যে কারো কাছে সাধারণ অন্য স্প্যানিশ শহরগুলোর মতোই মনে হবে। কিন্তু কিছুদূর এগিয়ে গেলেই পার্থক্যটা বোঝা যাবে। শহরের বাড়িগুলো যেন খুবই অদ্ভুত মনে হবে যে কোনো মানুষের কাছে। কারণ শহরের প্রায় সব বাড়িই মাটির নিচে।সম্প্রতি এ শহর পরিদর্শন করেছেন এসমে ফক্স। এ শহরের প্রবেশ করার পর তিনি যখন আগ্রহভরে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলেন তখন এক বৃদ্ধ ব্যক্তি তাকে বলেন, ‘আপনি কি একটি গুহার ভেতর দেখতে চান?’ সে অঞ্চলের গুহাবাসী মানুষ বন্ধুবৎসল। তারা বাইরের মানুষকে সাদরে অভ্যর্থনা জানায়। গুহার ভেতরের পরিবেশ সম্পর্কে অনেকেরেই নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। প্রায় সবারই গুহা বলতে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ ও অন্ধকার এলাকা মনে করে। কিন্তু এ শহরের গুহাগুলো মোটেই সেরকম নয়।
গুহার ভেতর রয়েছে বিভিন্ন কক্ষ। এ কক্ষগুলোতে সাজানো রয়েছে পোড়ামাটির বিভিন্ন জিনিস। এছাড়া রয়েছে আধুনিক নানা উপকরণ। রয়েছে রান্নাঘর ও বড় খাবার কক্ষ, যেখানে সাজানো রয়েছে কাঠের চেয়ার-টেবিল। এছাড়া রয়েছে খাবারের জন্য নানা মসলা ও উপকরণ। এ শহরের ইতিহাস অতি প্রাচীন। রোমানরা খনি থেকে রূপা উত্তোলনের জন্য এ শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখনও এ শহরের বাসিন্দারা মাটির গুহাতেই বসবাস করছেন।
গুহাবাড়ী শহর মাটমাটা
ঘরগুলো সব পাহাড় কেটে বানানো। বেশ নির্জন, সাদামাটা। এখানকার অধিবাসীরা পরিচিত নির্জন গুহাবাসী মানুষ হিসেবে। তবে গুহাবাসী হলেও আদিম গুহাবাসীদের মতো অতটা কষ্টকর জীবন তাদের নয়।বলছি তিউনিশিয়ার অনেকটা ‘আধুনিক’ গুহাবাসী মানুষদের কথা। দেশটির নেসল্যান্ডের পাহাড়ের গহ্বরে বাসবাস করেন প্রায় দু’হাজার মানুষ। আদিমভাবে বসবাস করলেও বেশ জাঁকজমকপূর্ণ তাদের ঘরগুলো।স্থানীয়ভাবে এ গুহাঘরগুলোকে মাটমাটা বলা হয়। পাথুরে পাহাড় খনন করে গর্তগুলো করা হয়।পাথরে গা চেঁছে সমান করে, কোথাও খাঁজ কেটে তবেই ঘরগুলো বানানো হয়। এভাবে পাশাপাশি কয়েকটি ঘর তৈরি করে ব্যবস্থা করা হয় নির্জন বসবাসের। শহরটি প্রথমে গড়ে ওঠে রোমান ও মিশরীয় সৈন্যদের গণহত্যা এড়ানোর জন্য। অন্য এলাকা ছেড়ে নিরপত্তার জন্য পাহাড়ের গায়ে এ গুহাঘরে জাড়ো হতে থাকেন অধিবাসীরা। এ ঘটনা বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের।এটা এখনো একটি কার্যকরী শহর। এখানকার অধিকাংশ পুরুষ কাজ করেন পার্শ্ববর্তী এলাকার জলপাই বাগানে। পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র এখন মাটমাটা। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অধিবাসীদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পর্যটকদের নজর কাড়ে। তবে এই জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে বসবাস করা বেশ কষ্টসাধ্য। এখানকার প্রাণী, পারিবারিক কাঠামো, সংস্কৃতি সবই অন্য জাতিগোষ্ঠী থেকে আলাদা।তিউনিশিয়ার এই অংশটি গ্রীষ্মে খুব বেশি গরম থাকে। কিন্তু আধুনিক সুবিধা ও পুরনো সৌন্দর্যের শহর মাটমাটা ঠান্ডা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
Tags:
অন্যরকম