হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে / ময়ূরের এ এ এ এ এ
শুরু হয়ে গেল সক্কাল সক্কাল স্বপনের সঙ্গীত। সেই যে সেবার সাড়ে সাতশো পটল কেনবার সময় কানে পশেছিল “কি গাব আমি কী শুনাইব আজি অখিল প্রভাতে...”, তখন থেকেই খানিকটা সাবধানী হয়ে গেছি। স্বপনের দোকানে খানিক লোকজন থাকলেই উঁকি দিই। নইলে ফাঁকা দোকানে সবজি কিনতে গেলেই ওর অসম্পূর্ণ স্বলিখিত কিন্তু রবীন্দ্র বা দীনু ঠাকুর সুরারোপিত গান শুনতেই হবে। ভাগ্যে বাড়ির লাগোয়া বাজার তাই ভাতের হাঁড়ি চাপিয়ে মূলোটা বেগুনটা কিনতে হামেশাই চটি ফটফটিয়ে নেমে যাই। সে যাই হোক তা বলে স্বপন যে গানটার জাতীয় পাখির বেশি এগোতে পারবে নি সে আমি জানতুম। কারণ আগেকার দিনে জাতীয় পশু পাখি ফুল ফল ইত্যাদি মুখস্থ করলে খাতায় পুরো নম্বর পাওয়া যেত বা যেত না, ইদানীং ব্যাপারটার মধ্যে ধর্ম চোখের জলে প্রজনন রাজস্থান কোর্টের বিচারপতি এটসেট্রা ঢুকে পড়ায় বেজায় সাবধানী হয়ে গেছছে সক্কলে। কীজানি! ব্রহ্মচারী ময়ূর সম্পক্কে কখন কী মানহানিকর কথা বলে ফেলি আর অমনি “দেশদ্রোহী” বলে গারদে পুরে দেয় দেশভক্তেরা।
- বুজলেন মা, জন্মানোর পর থেকেই আমনি সরকারের দায় হয়ে গেলেন।
- সে আবার কী?
- জিনিষের দাম দশ টাকা বাড়ালে সরকারের কত লোসকান বোজেন?
মাথাটা গুলিয়ে গেল। উত্তর দেবার আগেই এক মাঝবয়সী ক্রেতাকে চাট্টি লঙ্কা আর একটা বেগুন ব্যাগে পুরে কুড়িটাকা নিয়ে নিল।
বললাম ...
- ও স্বপন কী মাথামুন্ডু বলছ বোঝালে না? দাম তোমরা বাড়াচ্ছ আর লোকসান সরকারের হবে? কিভাবে?
আরো গম্ভীর হয়ে আমায় জিজ্ঞেস করল-
- আমনি কি চাইলেন যেন?
- বেগুন কত করে?
- জলের দাম , মাত্তর চল্লিশ টাকা।
স্পষ্ট দেখলাম চারশ বেগুন ব্যাগে পুরে পাঁচশোর দাম নিল। মুখে কিন্তু বলা যাবে না কিচ্ছু। জোরালো প্রতিবাদ করবে সে। কারণ সবাই জানে স্বপন খুব সৎ দোকানী। তা ওজনে কারচুপি এট্টু করেই দোকানীরা। পঞ্চাশ টাকার বেগুন যে সে চল্লিশ টাকা কিলো হাঁকল সে দিকে কী খেয়াল পড়ে না। আপনি কি বলছেন মুখে সেটাই সত্য। আপনি কি করছেন তা নয়, তাই না? সেদিক থেকে দেখলে স্বপন ব্যতিক্রম নয়। রাজনীতিরে কারবারিদের দেখুন মুখে কত হরি নাম করেন। কাজ যাই ন্যক্কারজনক করুন না কেন আপনি তাদের দিকে আঙুল তুলুন। অমনি দেখবেন পেশিবলে আপনার আঙুল মটকে দেওয়া হবে। এই সম্পূর্ণ মিথ্যেবাদীদের মুখের ভাষণ আপনাকে সত্য বলেই মানতে হবে হবে হবে। নইলে গোল্লায় যান। এই যে উত্তরবঙ্গে কী দারুণ বন্যা হল। কোথাও দেখেছেন কাগজে বা চ্যানেলে যে “বন্যা” হয়েছে বঙ্গে? না দেখেন নি। দেখেন নি কারণ তারা বলেন নি। তাই ব্যাপারটা ‘বন্যার মত’ হয়ে আছে বন্যা নয়। তা আপনি যতই গলা জলে ডুবে থাকুন না কেন দিনের পর দিন। এই যে রেল লাইন সড়ক লাইন বিচ্ছিন্ন প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে কত মানুষ মনুষ্যেতর জীবন কাটাচ্ছেন অসহায় তার জন্য রাজনীতির ব্যবসাদারদের কিছু বলতে শুনছেন? না কোথাও না। ত্রাণ তারা যা পাচ্ছেন তা অরাজনৈতিক মানুষগুলোর সুবাদে। পাশের রাজ্যে বন্যা হল। দেশচালক হেলিকপ্টারে পর্যবেক্ষণ করে গেলেন, বাণিজ্যনগরীতে একদিনে মারাত্মক বৃষ্টি হল টুইট হল কিন্তু এখানে বন্যা হয় নি। সারা বছর আনাজপাতি মাছমাংস আগুন হয়েই আছে। জিজ্ঞেস করুন ...
- এত দাম কেন?
- সামনে পুজো, ঈদ বৌদি
পুজোর পরে জিজ্ঞেস করুন শুনবেন শীত পড়লেই কমবে। কিন্তু শীতের অর্ধেক কেটে গেলেও দাম সেই শিকেয়।
- এত দাম কেন ভাই?
- আর বলবেন না বৌদি এবার শীতে একফোঁটা বিস্টি নেই। রবিশস্যের অবস্থা খুউব খারাপ, কিংবা এত শীতে সবজিগুলো মাঠেই নষ্ট হচ্ছে।
শীতও চলে যায় তারপর চৈত্রের রোদ, বৈশাখের পয়লা বৈশাখের বাজার, জস্টি মাসের অনাবৃষ্টি ইত্যাদি নানান কারণ থাকবেই তাদের ঠোঁটে। তাহলে উত্তরে বন্যা হলে দক্ষিণের বাজারে বেগুনের দাম বাড়লে আপনিই বা ঘ্যানঘ্যান করবেন কেন? সয়ে যান মশাই। সইতে না পারলে এট্টু দম নিন। তারপর আবার সইতে থাকুন। সহ্য একটি শীল। জানেন না?
Tags:
সোজা সাপটা