সায়ন্ন্যা দাশদত্ত

ফিনিক্স এখনো জেগে  ।
সোনালী ডানার চিল বরাবর ঈর্ষার মত প্রবল । একটি নবীন চারার কপালে চুমু খেয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ...তোমায় আমি রোদ দেখাব প্রাণ ! তারপর তিলে তিলে সহবাস । তিলে তিলে সাজিয়ে তুলছি তোমায় । একটি আলো রাখলাম । একটি সুর । একটি আঙ্গুল ছুঁইয়ে শিখিয়ে দিলাম স্নেহ । তুমি আমার আত্মজন l আমার স্নেহ । তোমার ঘুমন্ত চোখটির পাশে চিবুক রেখে একশোবার মনেমনে বিপ্লব ভাবতে পারি আমি । সেবার এখানে বর্ষা !তীব্র আলো ঘিরে ফেলছে পথঘাট । আকাশের গর্ভ ছিঁড়ে  কাঁপিয়ে দিচ্ছে গাছপালার ঘ্রাণ ! তোমারও সেই প্রথম বৃষ্টি । প্রথমবার ভিজে যাচ্ছ তুমি । প্রথমবার বুকে মুখটি রেখে বলতে চাইছ তোমায় নিয়ে বর্ণমালা লিখব ।
             
কবিতার মত প্রশস্ত হচ্ছিল তোমার শাখাপালার সংসার ! আমি কোন এক ক্লান্ত দুপুরে দাওয়ায় বসে অল্প ছায়া মাখছি বুকে । তুমি তখন কিশোর । সদ্য আসা যৌবন তোমায় দীপ্তিমান করেছে । আমি জানি বিশ্বজয় আসন্ন ।
           
বিশ্বস্রবা ঘোড়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে তোমার বয়স । আমি তখন গর্বিত পিতা । আমি তখন সন্তানসুখে আরক্ত । যত্ন করে সাজিয়ে দিচ্ছি পালক !
                 
তারপর আমাদের গল্প থেমে যায় । যতগুলি চিল আজন্ম শুষে খেয়েছে আলো । আচমকা দুর্দৈব সুলভ ক্ষিপ্রতায় ছিঁড়ে ফেলছে পালক । আগুন ,বড্ড আগুন জ্বলছে আজ ।  এলোমেলো  মলাট অভিবাবকহীন ,অনাথ ! আগুন আমাদের পুড়িয়ে দেয় । প্রতিজ্ঞা এখন ভুয়ো !লজ্জা নয় ...প্রতিজ্ঞার অন্যমুখে স্নেহ লিখেছিলাম ।
           
এই নীরব নদীটি আমার দোসর। আমি শূন্যমুখে দাঁড়াই। গোপনে তোমার কথা বলি।গোপনে বলি আমাদের বিশ্বস্রবা ঘোড়াটি অনন্ত আকাশের নিচে এখনো প্রতীক্ষমান। আমি ওকে তোমার কথা বলি ....আমার স্নেহ ...আমার নবীন চারা,আমার কিশোর পাতাটির কথা বলি ।
        
প্রতিউত্তরে ফিনিক্স শুনতে পাই । যখনই চিলের ডানা ঈর্ষার মতো বিষ ....যখনই আগুন সর্বনাশা ....যখনই গ্রাস করে নেয় দিকচক্রবাল ...তখন ফিনিক্স গল্প লেখে ,ছাই আর আগুনের পায়ে !



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.