শুক্রবার, জুন ৩০, ২০১৭
বনবীথি পাত্র
sobdermichil | জুন ৩০, ২০১৭ |
অণুগল্প
| মিছিলে স্বাগত
সামনের সপ্তাহ থেকে খালপাড়ের বস্তিতে একদিন করে চ্যারিটি ট্রিটমেন্ট করবো। রিমোটে এসির ঠাণ্ডাটা অ্যাডজাস্ট করতে করতে আলগা ভাবেই কথাটা বলে কুন্তল । টাকাগুলো আলমারির লকারে গুছিয়ে রাখতে রাখতে একটু থমকে দাঁড়ায় মিঠু ।
ডাঃ কুন্তল লাহিড়ীর হঠাৎ কি হলো যে এসি চেম্বার ছেড়ে খালপাড়ের বস্তিতে ..... মিঠুর কথা শেষ করার আগেই খেঁকিয়ে ওঠে কুন্তল, দেশের খবর-টবর রাখো না নাকি কিছু !
মুখভার করতে গিয়েও রাগটা সামলে নেয় মিঠু ।
- কি হলো কি , শান্ত স্বরেই জানতে চায় ।
যেভাবে ভুয়ো ডাক্তারদের ধরাধরি চলছে, একবার ধরা পড়লে কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছো। গরীবদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করলে হয়তো শকুনের নজর থেকে বাঁচা যাবে । সমাজসেবা করলে হয়তো ....
- কতবার বলেছি , যত টাকা লাগে লাগুক, নিজের পাশের সার্টিফিকেটটা পাকাপোক্ত করো ; গজগজ করে ওঠে মিঠু ।
- এতো বছর তো ঐ সার্টিফিকেটেই চলছিল, অভাব তো কিছু ছিল না ।
- কি হবে গো যদি ধরা পড়ে যাও । সামনে এখন কতো খরচ। মেয়েটাকে এইবছর-ই একটা ভালো ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করতে হবে । গাড়ির ই.এম.আই.টা এখনো শোধ হয়নি .....
- বাহ্ বাহ্ তোমরা নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবছো । ধরা পড়লে আমার যে জেল হয়ে যাবে এটা ভেবেছ একবার!
- সেকি গো, জেলও হতে পারে ? কুন্তলের কথায় আকাশ থেকে পড়ে মিঠু । ওসব কোন ব্যাপার নয়, এখন থেকে একটা ভালো ল-ইয়ারকে ফিট করে রাখো । টাকার অঙ্কটা মোটা হলে উনিই সব সামলে দেবেন ।
মিন্তি কখন ঘরে ঢুকেছে খেয়াল-ই করেনি ওরা দুজনে। মেয়েকে দেখে দুজনেই যেন চমকে ওঠে । মেয়ে সব কথাই তবে শুনে ফেলেছে !
- কদিন পরে পরীক্ষা, আর তুমি পড়া ফেলে লুকিয়ে লুকিয়ে বাবা-মায়ের কথা শুনছো ? এতটুকু ম্যানার্স জ্ঞান নেই তোমার ? মেয়েকে একটু জোর গলায় শাসন করতে যায় মিঠু ।
- শোনো তোমাদের কথা শোনার কোন ইচ্ছা নেই আমার । কালকে আমার পনের হাজার টাকা লাগবে , সেটাই বলতে এসেছিলাম ।
- পনের হাজার টাকা কি করবে , জানতে চায় মিঠু ।
- একটা ফিজিক্স সাজেশন কিনব , 95% সিওর কমন আসবে ।
- তোমাকে ভালো স্যারের কাছে পড়ানো হচ্ছে , টাকা দিয়ে সাজেশন কিনে পরীক্ষা দিতে হবে ?
- এর আর নতুন কি ! বাবাও তো......
মিন্তির শেষ না করা কথাটা বুঝতে অসুবিধা হয় না কারো । সমস্ত প্রাচুর্য-ঐশ্বর্যকে ভেদ করে নিজেদের কঙ্কালসার সত্যিটার সামনে নির্বাক তিনজনেই .......

