গল্পসল্পর আটচালা চুঁচুড়া শহরের সাহিত্য সংস্কৃতির জগত যে ঠিক কতটা সমৃদ্ধ তা প্রমাণ করে যখন জানতে পারি যে একুশে মে'র অধিবেশন তাঁদের একাশিতম অধিবেশন। এইসময়ের শক্তিশালী সব গল্পকারের গল্প শোনা ও আলোচনা শোনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আমাকে ব্যাক্তিগত ভাবে আবেগাক্রান্ত করে তুলেছিল। যারা ভাবেন সাহিত্যের উৎকৃষ্টতা নগরকেন্দ্রিক, বা বলা ভালো, কলকাতাকেন্দ্রিক, তাঁদের ধারণাই নেই যে ঠিক কী মানের সাহিত্যচর্চা এখানে হয়। লেখকগোষ্ঠীর বেশির ভাগের লেখাই লিটলম্যাগে প্রকাশ পায়। পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ তো প্রাতিষ্ঠানিক কাগজ দেয়না। তবু অনেকেই প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানের পরিচিত নাম।
বন্ধু অনুজা মহুয়া মল্লিক। ওর হাত ধরে, ওর সঙ্গে গিয়েছিলাম চুঁচূড়ায় গল্পসল্পের আটচালায়। ওকে নিজের সীমাবদ্ধতার কথা বলেছিলাম । ও যুক্তি দিয়েছিল - তুমি চলো । ওখানে সকলে খুব ভালো । গল্প নিয়ে দারুণ আলোচনা হয় । একসঙ্গে বেশ কয়েকটি গল্প শুনতে পাবো । আলোচনায় উঠে আসবে তার নানাদিক , এই লোভ কম নয় তো । অনুষ্ঠান শুরু হবার পরে পৌঁছেছিলাম । এই দেরী আমাকে লজ্জায় ফেলেছিল । পৌঁছে দেখলাম মহুয়া সত্যি বলেছে । আন্তরিকতার ছোঁয়া ওই ছোট্ট ঘরে সর্বত্র ।
সেদিনের গল্পের কথায় আসি । বিমল গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্পটি অসাধারণ ! প্রথমে শুনতে গিয়ে মনে হচ্ছিল একটি গায়ে পড়া যুবক একটি অপেক্ষারত অপরিচিত যুবতীকে বিরক্ত করে চলেছে । দুজনেই বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে । কিন্তু বাসে ওঠবার জন্য নয় । এক প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা । আস্তে আস্তে যুবকের যেচে কথা , অনেক কথার মধ্যে একটা নির্দিষ্ট কাব্যিক মায়া তৈরি হয় । যখন ভাবছি , হয়ত নতুন কোনও প্রেমের সংজ্ঞা তৈরি হতে চলেছে , ঠিক তখনই গল্পে অদ্ভুত মোচড় । ক্ষণকাল মিলিয়ে যায় মহাকালের মধ্যে । মহুয়ার গল্পে এক একা মেয়ের লড়াই । এর অনেকগুলো পরত আছে । একা , আদিবাসী বহুরূপী সম্প্রদায়ের মেয়ে । বিয়ে হয়েছিল অন্য জাতে । বিধবা একা মেয়ের গল্প । যার শেষ পর্যন্ত বেঁচে ওঠার হাতিয়ার হয় বহুরূপী বৃত্তি । সে সাজে শিব , কালী নয় , কোনও দেবী নয় । স্বয়ং মহাকাল । গল্পটি আলোচনা করলেন চার পাঁচ জন । এমন উত্তরণ তাই দাবী করে ।
আলোচনায় যখন মহাশ্বেতা দেবীর নাম উঠে এলো তখন মহুয়ার জন্য খুব গর্ববোধ করছিলাম । অবশেষে বলব গৌর বৈরাগী মহাশয়ের কথা । কী অপরূপ কী মায়াময় গল্পটি !! শুধু নিজের বুকের ভেতরটা দেখতে পাচ্ছিলাম যেন ! এই তো আমার উল্টোদিকে ট্রেনের কামরায় চেনা মুখ ! জানলার চৌখুপী আলো তার মুখে কখনও পড়ছে কখনও পড়ছেনা । কখনও সে অচেনা কখনও চিরচেনা । গন্তব্য জানা নেই । সকলে যা চায় তাইতে তৃপ্তি হয়না । অজানা পথে অচেনা গন্তব্যে তাই যাত্রা করি । হেথা নয় হোথা নয় অন্য কোথা অন্য কোনওখানে । গল্পের আলোচনা করতে এসে শতদ্রু মজুমদার চিহ্নিত করে দিলেন সেইসব অমোঘ বাঁকগুলো , যা গল্পের মাত্রাকে এক লহমায় অসীম করে দেয় । তিনি নিজেও যে একজন শক্তিশালী গল্পকার !
আলোচনায় যখন মহাশ্বেতা দেবীর নাম উঠে এলো তখন মহুয়ার জন্য খুব গর্ববোধ করছিলাম । অবশেষে বলব গৌর বৈরাগী মহাশয়ের কথা । কী অপরূপ কী মায়াময় গল্পটি !! শুধু নিজের বুকের ভেতরটা দেখতে পাচ্ছিলাম যেন ! এই তো আমার উল্টোদিকে ট্রেনের কামরায় চেনা মুখ ! জানলার চৌখুপী আলো তার মুখে কখনও পড়ছে কখনও পড়ছেনা । কখনও সে অচেনা কখনও চিরচেনা । গন্তব্য জানা নেই । সকলে যা চায় তাইতে তৃপ্তি হয়না । অজানা পথে অচেনা গন্তব্যে তাই যাত্রা করি । হেথা নয় হোথা নয় অন্য কোথা অন্য কোনওখানে । গল্পের আলোচনা করতে এসে শতদ্রু মজুমদার চিহ্নিত করে দিলেন সেইসব অমোঘ বাঁকগুলো , যা গল্পের মাত্রাকে এক লহমায় অসীম করে দেয় । তিনি নিজেও যে একজন শক্তিশালী গল্পকার !
Tags:
সাহিত্য সংস্কৃতি বার্তা