শিলচর-ভাষাশহিদদের উজ্জ্বল স্মরণে 'উজ্জ্বল এই আঁধার'

শিলচর-ভাষাশহিদদের উজ্জ্বল স্মরণে 'উজ্জ্বল এই আঁধার'
একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই উনিশে মে দিনটিও বাংলা ভাষার মর্যাদারক্ষার আন্দোলনে ভাষাশহিদদের জীবনদানের জন্য অমলিন হয়ে থাকবে বাঙালির ইতিহাসে। কিন্তু 'একুশে' নিয়ে বাঙালির যত ভাবাবেগের প্রদর্শনী, তেমনটা 'উনিশে' নিয়ে কই! অথচ দেশভাগোত্তর ভারতীয় বাঙালিদের নিজস্ব ভাষাদিবস তো এই 'উনিশে'ই! এই বিস্ময়, বিষাদ ও জিজ্ঞাসা নিয়ে বারাসাতের সুভাষ ইনস্টিটিউটে ২০-২১ মে 'উজ্জ্বল এই আঁধার' গোষ্ঠীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো লিটল ম্যাগাজিন ও পুস্তক প্রদর্শনী। সঙ্গে ছিল সাহিত্য-সংস্কৃতির অনুষ্ঠান।

প্রথম দিন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি সৈয়দ হাসমত জালাল ও তথ্যচিত্র-নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদার। তাঁরা দুজনেই ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিলচরের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখেন। শিলচর তথা
বরাক উপত্যকা এবং সমগ্র আসামে বাঙালি ও বাংলা ভাষার বর্তমান অবস্থান নিয়েও বিভিন্ন তথ্যে ঋদ্ধ ছিল তাঁদের বক্তব্য। প্রকাশিত হয় চারটি নতুন বই। ছিল কবিকন্ঠে মাতৃভাষা বিষয়ক কবিতাপাঠ, আবৃত্তি, বাংলা ও বাঙালি বিষয়ক একক ও সমবেতে গান ইত্যাদি। সুচারু সঞ্চালনায় ছিলেন সুজন ভট্টাচার্য।

দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণাকেন্দ্রের কর্ণধার সন্দীপ দত্তের। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে সুজনবাবুর সঞ্চালনায় 'লিটল ম্যাগাজিনের সমস্যা ও সঙ্কট' শীর্ষক একটি মনোজ্ঞ আলোচনায় অংশ নেন তিন সম্পাদক চন্দন ঘোষ, রূপক সামন্ত ও বৈজয়ন্ত রাহা। বঙ্গপ্রেমী ও রবীন্দ্র-অনুরাগী এক পাঞ্জাবসন্তান পরম সিং কল্যাণ তাঁর জলদগম্ভীর কন্ঠে তিনটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনিয়ে দর্শক-শ্রোতার মন জয় করলেন। এছাড়াও কবিতাপাঠ, আবৃত্তি, যন্ত্রসঙ্গীত, একক ও সমবেত কন্ঠসঙ্গীতে উপস্থাপকরা খুঁজে নিলেন, মাতৃভাষা বাংলা ভাষাকে আরাধনার আর্তি।

অনুষ্ঠানের দুটি দিনই লিটল ম্যাগাজিন ও প্রকাশকদের টেবিলগুলিতে ক্রেতাদের আনাগোনা লেগেই ছিল। তাঁরা কেউই বোধহয় একদম খালিহাতে ফেরেননি! আয়োজকদের আন্তরিকতাও ছিল দেখার মতো। উপস্থিত প্রত্যেককেই চা-বিস্কিট-সিঙাড়ায় আপ্যায়িত করেছেন তাঁরা দু'দিনই। আর অংশগ্রহণকারী পত্রিকা ও প্রকাশনীগুলিকে তুলে দিয়েছেন স্বীকৃতিপত্র। উনিশে মে-র স্মরণে এমন আন্তরিক অনুষ্ঠান প্রতি বছরই আয়োজিত হোক, এই ছিল দর্শক-শ্রোতাদের সার্বিক প্রতিক্রিয়া।



প্রতিবেদন - 
 রাহুল ঘোষ 
কলকাতা 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

নবীনতর পূর্বতন