নিষিদ্ধ পল্লি থেকে বলছি
কবি আমার জন্য একটা কবিতা লেখো তুমি, যার শরীর জুড়ে মাখিয়ে দিও একটা তিক্ত গদ্যের ভাষা।
না। আমার তাতে কষ্ট হবে না!
আমার তাতে দুঃখ হবে না!
সহজ ভাবে তুলে ধরো আমায়, তুলে ধরো ভদ্রতায় চাপা দেওয়া মুখোশ গুলোর সামনে বাস্তবোচিত উপমাহীন রূঢ় সত্যের মত।
কবি আমার জন্য ছাই চাপা আগুনে বসত বাড়ি পোড়ার একটা ইতিহাস লেখো তুমি,
আসক্ত মদিরায় বাইজী নাচের কামাতুর ঘুঙুরের আওয়াজ লেখো তুমি রাত্রির ছন্দে।
একটা নগ্নতার গল্প লেখো, গোলাপের গন্ধে আলো অাঁধারে বিকিয়ে যাওয়ার কিছু পঙক্তিমালা লেখো।
সহজ সরল ভাবে লেখো তুমি, লেখো আমার জন্য।
কবি তোমার মাও সে তুং এর উক্তি টি মনে আছে?
--" শত ফুল বিকশিত হোক"
দৃঢ় সমাজের জন্য কথাটা সত্যি প্রাসঙ্গিক বটে্।
তুমি সেই ঐতিহাসিক সৃষ্টিশীল লাইন টা উচ্চস্বরে আবারও বলো
তার পর আমার নামটা জুড়ে দিয়ে তাদেরকে বলো -
আমি রাতের রজনীগন্ধা, আঁধারে ফুটে থাকা মাধবীলতা, জুই, চাঁপা কিম্বা বর্ষার ভেজা কদম
আমি রাতের অন্ধকারে নীল আলোতে নিষিদ্ধ গোলাপের গন্ধ ছড়াই আর পাপড়ি থেকে ঝরাই শুধু বিষাক্ত ঘাম,
কেননা আমার এ ঘর্মাক্ত শরীর তো প্রেম বোঝে না!
আর মিথ্যে নাটকে তাকে তো আমি হারাতেও চাই নে...
ভয় হয়।
ভয় হয় ভীষণ !
একটু ফেলে আসা দিনগুলোর কথা বলি কবি
নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি ঠিক কবে তা মনে পরে না,
শুধু আবছা মনে পরে -
কবে আমি গেদে, নামখানা, বসিরহাট, শান্তিপুর লোকালে চেপেছিলাম ভাঙাচোরা লাল নীল কিছু স্বপ্ন নিয়ে!
তার পর বাকিটা এই শরীর লিখেছে দেহতটে লাল লিপিস্টিক মাখা ঠোঁটে।
বহুদিন হলো ফেরা হয় নি, চেনা মুখ গুলো দেখা হয়নি!
মাঠের পরে মাঠ পরে আছে,
খোলা আকাশের নিচে মেঠো পথ।
চেনা গলিটাও আমার খোঁজ রাখে নি আর, মোহন বাসিটাও বাজে নি আর ফাল্গুনী জ্যোৎস্নায়।
এ কেমন হল বলতো? আছে অথচ কিছুই নেই, এ একরকম নিস্প্রাণ বেঁচে থাকা বলতে পার!
কবি তুমি তো দুলাইনে বিপ্লব আনো, দু লাইনে পাহাড় থেকে সৃষ্টি কর নদী। নিমেষে শান্ত সমুদ্র কে করে তোলো উত্তাল
তবে আমার জন্য কিছু লেখো
কলমে এই মেকি সভ্যতার চিত্র আঁকো
তীব্র কন্ঠে উত্তর চাও, জানতে চাও তুমি ঠিক আর কতগুলি বসন্ত লাগবে আমার বিকশিত হতে?
Tags:
অন লাইন