বুবুন চট্টোপাধ্যায়

‘শব্দের মিছিল’ এর প্রিয় পাঠকের দরবারে জনপ্রিয় সাংবাদিক কবি ও সাহিত্যিক বুবুন চট্টোপাধ্যায়
‘তারে আমি চোখে দেখিনি , তার অনেক গল্প শুনেছি’, তো কবি ও সাহিত্যিক যশোধরা রায় চৌধুরীর বাড়িতে গল্প বৈঠকের ফাঁকে প্রথম আলাপেই ভেবেছিলাম, আই ওয়াণ্ট টু কাল্টিভেট দিস লেডি। যার কবিতা পড়ে মুগ্ধ হই রোজ, জানতে ইচ্ছে তো করেই তাঁকে আরো অন্তরঙ্গ। তাই প্রস্তাব পেশ ও পাশ হল ধ্বনিভোটে। আর আমরা আমাদের ‘শব্দের মিছিল’ এর প্রিয় পাঠকের দরবারে হাজির করলাম জনপ্রিয় সাংবাদিক কবি ও সাহিত্যিক বুবুন চট্টোপাধ্যায় কে । আমাদের সকলের পক্ষ থেকে এ মাসের অতিথির জন্য ফাগুন রঙের শুভেচ্ছা আর ঐকান্তিক ভালোবাসা । শুভ হোক তাঁর । 



আদ্যন্ত রোম্যান্টিক একটা মনের অধিকারী , যেন কবি হবার জন্যই জন্ম তোমার । অথচ সাংবাদিকতার মত কেঠো কাজে যুক্ত ছিলে , আছ । কিভাবে ব্যালেন্স কর মনের সাথে ? 




তাই? আমি বেসিক্যালি কিন্তু একেবারেই উল্টো, মোটেই চাঁদ, ফুল, তারা টাইপ নই বরং একটু ঠ্যাটা ই বলতে পারো। তাই আমার মনে হয় আমার লেখায় একটা সুক্ষ্ম টিপ্পনী বা চিমটি থাকে,একটু ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখতে পারবে। সেইজন্য সাংবাদিকতা ফুলফ্লেজে যতদিন করেছি খুব ভালবেসে করেছি। অসম্ভব একটা চার্ম পেতাম। নির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে একটা ভাল লেখা লিখতে হবে। ভাল এবং নির্ভুল একটা পাতা করতে হবে,পাতার কনটেন্ট অনুযায়ী সেই বিষয়ে উপযুক্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে নির্ঘাত কথা টা বের করে আনতে হবে। এর সমস্তটাই ডেডলাইনের হিসেব মেনে অসম্ভব চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার। খুব উপভোগ করি। এবার বলি মনের সাথে ব্যালান্স করার ব্যাপার টা। প্রথম যখন প্রতিদিন এ কাজ করতাম, নিউজডেস্কে ছিলাম। তখন টেলিপ্রিন্টার এ খবর আসতো। সারাদিন বিভিন্ন দেশের নানা ইন্টারেস্টিং খবরের মধ্যে থাকতাম। সপ্তাহে দু দিন নাইট ডিউটি থাকতো। পাতা ছেড়ে ভোর বেলায় বাড়ি ফেরা। এই দুটোদিন সবচেয়ে বেশি চাপে থাকতাম। কারণ পরেরদিন সম্পাদক এসে প্রতিটি পাতা স্ক্রুটিনি করবেন। একটা ভুল হলে যদি বলি sorry! বলবেন এই sorry টা পাঁচ লক্ষ পাঠকের বাড়ি গিয়ে বলে আসতে পারবে তো! কাজেই খুব চাপ। তো এই চাপের মধ্যে থাকতে থাকতে আমার মনে হল আমার কবিতা লেখার ক্ষতি হচ্ছে। ফিচার বা ম্যাগাজিনে কাজ করতে হবে। এইভেবে প্রতিদিন এর চাকরি টা ছেড়ে দিলাম। মিত্র প্রকাশন এ মনোরমা য় যোগ দিলাম। কিন্তু পরে ভেবে দেখেছি প্রতিদিন এ ওই দুদিন নাইট ডিউটি তে পাতা ছাড়ার পর অফিসে বসে যত কবিতা লিখেছি, পরে তত লিখতে পারিনি। আসলে যেকোনো সৃষ্টিকর্মের সঙ্গে রাত্তিরের একটা সংযোগ আছে। পরে বুঝেছি।



তোমার লেখায় নস্টালজিয়া নিয়ে আসে ছোটবেলা । হারানো পাড়া কালচার । লিখবে ভেবেছ কখনো অটোবায়িগ্রাফিকাল নভেল ? 




লিখতে তো ইচ্ছে করে।কিন্তু আমার ছেলেবেলা টা অনেকের ছেলেবেলা। এক্ষেত্রে দুটো ব্যাপার আছে। এক: সেই লেখা কোনোদিন যদি হয় কিছু পাঠক হয়তো সাযুজ্য পাবেন নিজেদের ছেলেবেলা র সঙ্গে। তাতে আহ্লাদিত হবেন। কিছু পাঠক ভাববেন এ আর নতুন কী! আমার তো এমন ছিল! তাই সংশয়ে আছি। এতো আর কোনো মণিষির ছেলেবেলা নয়।



তোমাকে কোট করি , ‘একজন লেখক প্রতিদিন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার অপেক্ষায় থাকেন। কখন সেই বিদ্যুৎ তরঙ্গ আসবে আর লেখা হবে অমোঘ কিছু। শেষ পর্যন্ত একজন শিল্পী, একজন কবি, একজন গায়ক সেই তরঙ্গের জন্যই বেঁচে থাকেন। প্রতিদিনের ডাল-ভাতের অভ্যাস ছাড়িয়ে স্পৃষ্ট হবেন বলে’ । তাহলে কি বলব , একজন সাহিত্যিক যিনি ফরমায়েশি লেখাও লেখেন , কিম্বা উপার্জনের জন্য লিখতে বাধ্য হন , সেগুলো ঠিক ততটা সাহিত্য হয়ে ওঠে না ?


আমি এটা বিশ্বাস করি। মর্মে মর্মে বিশ্বাস করি একজন কবি লেখক কে চার্জড হতে হয়। যে কোনো ভাবে বিদ্যুৎতরঙ্গ কে ছুঁতে হয়, নাহলে লেখা হয় বটে, অভ্যাসে হয়। সেখানে সেই স্পার্ক, সৎ লেখার যে একটা ধার সেটি থাকে না। আপাদমস্তক নির্মাণ সর্বস্ব লেখায় আমি বিশ্বাসী নই। বিদেশে গল্প কবিতা লেখার স্কুলকলেজ আছে। ডিসট্যান্ট কোর্স ও আছে। তাহলে ওখানে যারা পড়েছেন লেখার টেকনিক জেনে সবাই বড় লেখক হতে পারতেন। ব্রিটিশ রা ঢপের ব্যাপারে আজ ও সেরা। তবে একটা কাজ হয়। ছন্দ জানার মতো। কাজেই যার মধ্যে লেখক বা কবি হওয়ার মেটিরিয়াল আছে তাদের এই টেকনিক টা জানলে লেখার সুবিধা হয়। বাকিরা নির্মাণ সর্বস্ব হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। কাজেই যে কোনো শিল্পকর্মের জন্য একটু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে হয়। কে কীভাবে হবেন, সেটি তার প্রকৃতি র উপর নির্ভর করে। তারাপদ রায় একবার আমাকে বলেছিলেন রোজ মদ্যপান না করলে উনি লিখতে পারেন না। আবার শঙ্খ ঘোষ বলেন, কবি সে তো নিজের জোরেই মাতাল। এটা যার যার পারসেপশন। আমার অনেক কিছুতেই বিদ্যুৎস্পর্শ হয়। ভাল লেখা পড়লে হয়। কেউ ভালবাসলেও হয়। মদ্যপানেও হয়। তবে সেটা একা খেলে। দলে নয়। একা খাওয়া টা খুব একটা indulge করি না, তাই সেভাবে চার্জড হওয়াটা কম ই হয়। আবার কেউ কেউ লিখে ভাল টাকা পাবেন সেটাও অনেকের কাছে চার্জ। কিন্তু আমাদের দেশে সে আর কটা টাকা পান লেখক? লেখক কে একটা কোথাও কোনো জোনাকি তাড়া করে না হলে হয় না সে লেখায় ফাঁকি থাকে কোথাও।



তোমার মধ্যে বেশ একটা প্রতিবাদী সোজাসাপটা অ্যাপ্রোচ আছে । এটা কি ইনহেরিট করা না আত্মনির্মাণ পর্বের অর্জন ?




আমার বাবা খুব সোজাসাপ্টা মানুষ ছিলেন। তাঁর অনেক দোষ, গুণ আমি পেয়েছি। এতো উত্তরাধিকার ই বলব। ভাণ জিনিষ টা,যেমন যাকে দেখে হাসতে ইচ্ছে করছে না, অথবা সেই মুহূর্তে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, অথবা কারোর উপর খুব রাগ হচ্ছে, কিন্তু সৌজন্যের দোহাই দিয়ে তাকে ঠিক উলটো বোঝাচ্ছি এ আমি জম্মেও পারিনি। ইনফ্যাক্ট পারতে চাই ও না। এই ভন্ডামি টা করলে আমি মানসিক ভাবে খুব কষ্ট পাই। অহেতুক আপোষেও বেশ কষ্ট হয়।

আমার বাবা শেষ জীবন অবধি এই লড়াই টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। শেষদিকে কিছু ঘটনায় নিজের মতাদর্শের সঙ্গে আপোষ করেন নি বলে খুব যন্ত্রণা ও পেয়েছেন। তখন আমি বিদেশে। পরে শুনেছি বাবা একটাই কথা বলতেন, এইসময় আমি যদি শারীরিক ভাবে বাবার পাশে থাকতাম বাবা একটু ভরসা পেতেন। সেইসব কথা মনে পড়লে আজ ও কষ্ট হয় খুব।



এই প্রসঙ্গেই জানতে চাইব , ঝকঝকে কেরিয়ারকে ছাপিয়ে সাহিত্য বাসনা কিভাবে জাগল ? কোন উত্তরাধিকারে না অনুপ্রেরণায় ? 




আমি তো বেশ ছোটো বয়স থেকে লিখি। ১৬ বছর বয়সে আমার প্রথম দেশ পত্রিকায় কবিতা ছাপা হয়েছিল। তখন দেশ এ কবিতা ছাপা হওয়া বেশ শ্লাঘা র ব্যাপার ছিল। কিন্তু স্কুলে পড়ার সময় লেখক হওয়ার কোনো দুঃস্বপ্ন দেখিনি। কিন্তু একবার হল কী আমার দু-একজন বন্ধু কবিতা লিখত। একবার স্কুল ম্যাগাজিনে লিখবো  বলে জেদ চেপে গেল। কবিতা নয়, প্রবন্ধ লিখেছিলাম। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে নিয়ে। আমাদের বাংলার শিক্ষিকা যিনি পত্রিকার দায়িত্বে ছিলেন তিনি আমাকে ডেকে বললেন, তুমি লিখেছো? খুব আঁতে লেগেছিল। বলেছিলাম, বিশ্বাস হলে ছাপাবেন নাহলে নয়। লেখা টা বেরিয়েছিল। অনেক বছর পরে স্কুলের রি-ইউনিয়নে তিনি ই আমার সেইসময় প্রকাশিত একটা ধারাবাহিক লেখা পড়া আমাকে বলেছিলেন, মুগ্ধ হয়ে তোমার গদ্য পড়ছি। উনি এমন ই একজন শিক্ষিকা ছিলেন টানা পঁয়তাল্লিশ মিনিট একটু ও না থেমে আমাদের পড়াতেন,আর সকলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম। তো এটা আমার কাছে বিরাট পাওয়া ছিল। সেইসময় মানে স্কুলে থাকাকালীন আমি প্রচুর খেলাধুলো করতাম। অ্যাথলেট রীতা সেন এর স্বামী আশিস সেন এর কাছে ফোর্ট উইলিয়াম এ নিয়মিত প্র্যালক্টিস করতাম। আমার একশো মিটার এ টাইমিং দেখে উনি আমার বাবা কে বলেছিলেন ওকে এশিয়াডে পাঠাবো। আপনি তৈরি থাকুন। তারপর কখন কবি হয়ে গেলাম। এই ট্রান্সফরমেশন টা কীভাবে হল আমার কাছে এখনো ধোঁয়াশা। সাংবাদিকতা দিয়ে কেরিয়ার এর শুরু। এ লাইনে আমার কোনো বাবা কাকা ছিল না। যা করেছি নিজেনিজেই।  একদিন আনন্দবাজারের রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এর কাছে গিয়ে বললাম,  লিখতে চাই। উনি তখন পত্রিকার দায়িত্বে। একটা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে বললেন, যদি ভাল হয় ছাপা হবে। লেখা জমা দিলাম। বললেন, ছাপা হলে পরের অ্যাসাইনমেন্ট। তারপর দেশ এ নিয়মিত বুক রিভিউ করেছি। তারপর চাকরি। সেটাও এক মজার ব্যাপার। যাদবপুর এর বন্ধুদের সঙ্গে বসে আড্ডা মারছি। কথা বলছি চাকরি যদি করি সাংবাদিকতা ই করবো।  কিন্তু কোথায়। তখন প্রতিদিন নতুন কাগজ।কিন্তু তারা কেন ই বা আমাকে চাকরি দেবে। বিভিন্ন বন্ধু বিভিন্ন মতামত দিচ্ছে। আমার এক ফোটোগ্রাফার বন্ধু কে বললাম, খোঁজ নে তো, অফিস টা কোথায়। তো দিন কয়েকবাদে ও খোঁজ নিয়ে জানল, অফিস টা ট্যাংরা র কাছে। শিয়ালদহ থেকে অটো যায়।  চললাম দু জনে। ভাবলাম, চাকরি নাই বা করি, অফিস টা তো দেখতে হবে। একদিন বাস, অটো, রিক্সা করে চলে গেলাম প্রতিদিন এর সেদিনের দপ্তরে। সামনে দারোয়ান কে বললাম সম্পাদক অঞ্জন বসু র সঙ্গে দেখা করতে চাই। দেখা পেলাম । প্রথমে নিজের সামান্য টুকু ঠিকুজিকোষ্ঠী বলে বললাম, এখানে চাকরি করতে চাই। উনি শুনেই ঘাবড়ে গেলেন। তারপর কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে একজন কে ডেকে পাঠালেন। একজন মধ্যবয়সী এলেন। আলাপ করিয়ে দিয়ে বললেন, ইনি সুজয় বিশ্বাস। আমাদের চিফ সাব-এডিটর। বলে ওঁকে বললেন, সুজয় দা ওকে ডেস্কে নিয়ে গিয়ে কিছু কপি দিন। সন্ধ্যে সাতটা অব্ধি নানা ধরনের কপি লিখলাম। ফেরার সময় অঞ্জন দা বললেন, কাল সকালে কাগজে যদি কিছু বেরোয় তাহলে আসবে, নাহলে নয়। পরেরদিন দুরু দুরু বুকে খবর কাগজ খুলে দেখি আমার দুটো করা খবর বেরিয়েছে। পনেরো দিন এইভাবে চলল। তারপর অঞ্জন দা ডেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দিলেন। এইভাবে সাংবাদিকতায় হাতে-খড়ি। কিন্তু বরাবর ই ফিচারের দিকে ঝোঁক। নিউজডেস্ক ভাল লাগে না। সেইসময় প্রতিদিন এর ফিচার এডিটর ছিলেন প্রফুল্ল রায়। কাগজে আমার দু-একটা বাইলাইন স্টোরি পড়ে একদিন প্রফুল্ল দা ডেকে বললেন,  প্রতি শনিবার তাঁর পাতায় একটি করে ফিচার লিখতে হবে। বিষয় নির্বাচন ও আমাকেই করতে হবে। আমি তো হাতে চাঁদ পেলাম যেন!  টানা দু-বছর লিখলাম। তারপর তো চাকরি ছেড়ে দিয়ে মনোরমায় এলাম। মনোরমায় যোগ দেওয়ার কিছুদিন পর গল্প-কবিতা-বুক রিভিউ এর পাতা টা আমাকে দেখতে হত। খালি মনে হত, পত্রিকা টায় অনেক খামতি আছে। আরো মননশীল করতে হবে। সিরিয়াস লেখকদের জড়িয়ে নিতে হবে। আমি ওইরকম একটি পত্রিকায় সুকুমারী ভট্টাচার্য কে দিয়ে বুক-রিভিউ করিয়েছি। যিনি স্টেটসম্যান ছাড়া কোনো কাগজে লিখতেন না। তখন আমার কত ই বা বয়েস। সেইসময় লেখক মহলে একটা কথা চালু ছিল। এত কমবয়সী সম্পাদক এর আগে কেউ হননি। 



তুমিই ছুঁড়ে দিয়েছিলে প্রশ্নটা , ‘নরম (soft) কবিতা কি কবিতা হিসেবে তত টা ধারালো নয়?’ তো উত্তর পেলে কিছু ? মনমতো হোল সে উত্তর ? 




উত্তর আর পেলাম কই? আমি আসলে নরম কবিতা ই ভালবাসি।  নরম, নরম লাজুক কবিতার মধ্যেও একরকমের ধার থাকে, দূর থেকে বোঝা যায় না, কাছে গিয়ে সেই কবিতা কে আলতো করে ছুঁলে বোঝা যায় তার মধ্যে কী তীক্ষ্ণ সূর্যরশ্মি লুকিয়ে আছে। অথবা হারিয়ে যাওয়া কোনো নক্ষত্রের আলো। যেমন আলো উঠলে সত্যি ই হৃদি ভেসে যায়। আমি তেমন কবিতার কাছেই বরাবর থাকতে চাই। যে আমাকে কেটে কেটে খাবে মাংস নয় মাখনের ছুরি দিয়ে।




একজন সাংবাদিকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জানতে চাইব , ‘পরিবর্তন’ পরবর্তী বাংলাকে কেমন দেখছ ?





প্রথমেই যেটা মনে হচ্ছে পরিবর্তনের পর মানুষ হঠাৎ খুব ধার্মিক হয়ে গেছে। শীতলা থেকে সন্তোষী মা এই ছোটখাটো পুজো গুলোও বেশ বারোয়ারি হয়ে যাচ্ছে। আর এইসব পুজো ঘিরে ভোটের পাবলিক দেদার ফুর্তি করছে। তাহলে কী মানুষের কাজ নেই, হঠাৎ অবসর এসেছে? এই সবই ভাবছি। তবে রাস্তাঘাটের কিন্তু বেশ উন্নতি হয়েছে। আগের চেয়ে শহর টা অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়েছে। এই আর কী! তবে চিন্তার কারণ কর্মী মানুষের কী অবসর এলো?  নাহলে এতো পুজো আচ্চার সময় কোথা থেকে আসছে? এমন কী অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরাও আজকাল খুব ধার্মিক। নানারকম পুজো করে। নিয়মিত কালিঘাট মন্দিরে যায়। বুঝতে পারছি না। এই অংবং কোন মেধাশক্তি র দিকে তাদের নিয়ে যাবে।



তোমার সাংবাদিকতা পেশা কি সরাসরি প্রভাবিত করে তোমার গল্পলেখক স্বত্বাকে ? শংকরকে দেখেছি , রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ... ।




সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা সত্যিই নানারকম মানুষের সঙ্গে আলাপ হওয়ার একটা পরিসর গড়ে ওঠে। সাধারণ মানুষ তো বটেই অসাধারণ মানুষদের ও কাছ থেকে দেখার একটা সুযোগ  ঘটে। তবে আমার দেখার বৃত্ত টা বেড়েছিল প্রায় একদশক বিদেশে থাকার ফলে। দিনের পর দিন একটা কসমোপলিটান সমাজে থেকে বুঝেছি মানুষ যে প্রান্তের ই হোক না কেন সহজাত যাপন এবং সংষ্কারের ক্ষেত্রে একজন পেরুভীয় র সঙ্গে একজন বাঙালি র ও কোথায় একটা মিল আছে। এই জায়গাটা আমাকে খুব বিষ্মিত করে। আর বিষ্মিত করে বিভিন্ন দেশ থেকে, বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতে আসা সেই মাইগ্রেট করা মানুষ গুলো। ভবিষ্যতে মানুষের এই মায়গ্রেশান নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে আছে। কত দেশের, কত রকম মানুষ যে দেখেছি। আলাপ করেছি। আমার মন ভরে গেছে, কিন্তু আরো, আরো কত কিছু যে দেখার বাকি!

প্রবাসে জন্মান মেয়ের নাম রেখেছ শালিখ । যতদূর জানি তোমার জন্ম বা বেড়েওঠা শহর কেন্দ্রিক । তবে এই নামকরণ কি শুধু কাব্যময় রোম্যান্টিসিজম নাকি আরো প্রবল কোন টান ? পাশ্চাত্যের সাথে এদেশের শিশুপালন বিধিতে কতটা ফারাক দেখেছ ? সেটা কেমন লাগে তোমার ? 




জীবনানন্দ আমার প্রিয় কবি। আর শালিখের পায়ের মতো হলুদ রোদ। বিলেতে রোদের বড় ই অভাব ছিল। তাই যখন মেয়ে হল, প্রথমেই মনে হল ও আমার রোদ্দুর,  ও আমার শালিখ। সেই মুহূর্তে এছাড়া আর অন্যকোনো ভাবনা ছিল না।
মস্ত তফাৎ।  প্রথম এবং প্রধান পার্থক্য ওদেশে বাবা মা রা কেউ নেকুপুষু টাইপ নয়। কেউ ছেলে মেয়ে নিয়ে এখানকার মতো আদিখ্যেতা করে না। কারণ তারা বিশ্বাস করে একটা শিশুরও প্রাইভেসি আছে এবং সেটা তাকে দিতে হবে। ফলে ওরা স্বাবলম্বী হয় খুব তাড়াতাড়ি। তবে এই আদিখ্যেতা না করার মস্ত বড় কারণ প্রতিটি মানুষ সমাজ ও অর্থনীতি র প্রেক্ষিতে একটি নিশ্চিত নিরাপত্তা র মধ্যে বাস করে।
দুর্ঘটনা,  অঘটন, রাজনৈতিক হাঙ্গামা এসব কালেভদ্রে হয়। আর একটি কারণ স্কুল। যেখানে ছেলেমেয়ে রা বড় হতে শেখে, অহেতুক চাপের বোঝায় তাদের থাকতে বাধ্য করে না।



তোমার কবিতা বড় নির্জন । যেন স্বগতোক্তির মত । অথচ সামাজিক তোমায় দেখে তেমন বিচ্ছিন্ন মনে হয় না । তবে কি বলব তুমি ডুয়েল স্বত্বাবিশিষ্ট সাহিত্যিক ? 




হ্যাঁ, আমার কবিতা নির্জন।  কিছু টা আত্মকথনের ভঙ্গি ও বলতে পারো। আমি কবিতায় নিচু স্বরে কথা বলতে ই ভালবাসি।  কিন্তু, আমি মানুষ টা খুব মিহি নই। তাই বলতে চাইছো তো ? হতে পারে। কিন্তু আমি মানুষ টা বন্ধুদের নিয়ে হৈ হুল্লোরে হলেও দিনশেষে আমি আমার সেই নির্জন কোণ টা খুঁজি যেখানে আমার ই শুধু বাস। আর কারোর নয়।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

নবীনতর পূর্বতন