প্রি য় দী প


 পলাশ গাঙের জোয়ার

আবারো একটি সূর্যোদয়, ঘুম ভাঙ্গা নীলাম্বরী আকাশ।
আকাশ মুড়ে, গমবর্ণ আবরণের ছটায় -
শস্য পল্লবিত মাঠ!
রৌদ্র স্নানে, কুঞ্জে কুঞ্জে গুঞ্জরিত ভ্রমরে ...
যৌবনে উপচানো দানায় দানায় -
সুখী সে সবুজায়ন।

সবুজায়নের আল বেঁয়ে, রাঙ্গা লালমাটি পথ।
যার পথ ঘ‍্যাষা  শোভন দুরত্মে মজে আসা সুন্দরী গাঙ,
গাঙের বুক চিড়ে -
শহরমুখী বহুদর্শী শীর্ণ সাঁকো।

সাঁকোর চিলতে উঠোনের ধারে, আমি কিংশুক -
আজও ঠায় দাঁড়িয়ে অকাল বার্ধক্যতায় ...
বাঁকলে বাঁকলে পঞ্জিভুত সঞ্চিত স্মৃতিগাঁথায়।

হেথায়, উজানে -
স্তুপাকৃত ইট পাঁথরে্র সামিয়ানায়, যুগ পরিবর্তিত সেতু।
অবরুদ্ধে তার জলস্ফীতি
ছলাৎ ছলাৎ  যৌবন -
কত না গর্জে ওঠা কল্লোলিত বসন্ত।

এহেন! বৈপরীত্যে,  বড়ই শূন্যগামী আমার পথ।
বিদ্দ্রুপ  অবহেলায় ...
মুছে যাওয়া সাবেকিয়ানায় ...
ধুধু প্রান্তরে আমি একা মহীরুহ।

তবুও -
নীরবে কান পেতে রই।
তুমি আসবে ভেবেই, অনুসারী দাবাদহে ...
ঝলসে নেই ডালপালা।

তুমি এলে -
পদ ধুলিতে আত্মহারা হবে এই লালমাটি পথ।
অনুপ্রাণনায় দখিনা মলয় বাতাস।
বাতাসে পরিপাকে, কুলকুুল বয়ে  চলা
সরু সরু ঠোঁটঢেউ -
উন্মীলনে, অনাচ্ছাদিত নিপুণ মনোহর বুক ...
উজ্জীবনে,  বিনীত অরণ্যের তৃষিত মুখ ...
উদ্দীপনে , প্রসারিত বৃন্তে বৃন্তে পরিপূর্ণে,  
মনোহর মধুঋতু ।

এহেন , অলীক মাদকতায় -
স্তম্ভের মেরুদণ্ড আজ বড়ই সপ্রতিভ।
পাঁজরের ক্ষয়ে যাওয়া ছাল বাঁকলে,তপ্ত হয় আমার দেহ,
কামনায় ছেয়ে যায় ... পল্লবিত শাখা প্রশাখা।
জুড়ানো‘য় হাল ছেড়ে দেয় মজে যাওয়া গাঙ।

তেমনি ,
শিকড় বাকড় জড়ানো তোমাকে লেখা -
হাজারো ঠিকানাহীন চিঠি, বয়ে বেড়ায় না কোন রানার।
খণ্ড এই দ্বীপে শুধু ভাসে নিঃস্পৃহ কোকিলের ডাক,
নিঃসাড় এই বুকে ক্রমশঃ বিলীন হয়ে যায় জলবিম্বের স্ফীতকনা।
ভাবনার ঐশ্বর্যতায়, ভেতরে ভেতরে হুটোপুটি করে নীরব অভিমান।

হে অরণ্য স্রোতস্বিনী ! দোহাই -
এহেনু উলঙ্গতায় আমাকে পাগল ভেবো না।
হয়তো আমি অবাধ্য, বীজে বাড়ন্ত অবিনশ্বর।
শুক পাখীর ঠোটের ন্যায় 
জন্মান্তর পিপাসী রক্তবর্ণ আমি ...
গাঢ় কমলার ঘন মুঞ্জুরিতে আমার সঞ্চিত সোহাগ।
অনাদরে ডাকনাম কিংশুক –
আদরে  বসন্তে পলাশ ... !

(১ম প্রকাশ মে ২০১২, সংশোধনী মার্চ ২০১৭ ) 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

নবীনতর পূর্বতন