মৌসুমী মণ্ডল. দেবনাথ

মৌসুমী মণ্ডল. দেবনাথ
 আমি অথবা তুমি 

এক কুয়াশা জড়ানো সকালবেলায়
আমার শুভ্রমেঘের মত চায়ের কাপে
মিশিয়ে ছিলে ক 'ফোটা স্নিগ্ধ ইক্ষু রস
সবুজ চায়ের উষ্ণ বাষ্প ছুঁয়ে গেলো অরণ্য
সেদিন থেকে আমার শ্বাস -প্রশ্বাসে,
চোখের তারায় আলো করে আছে
সবুজ প্রান্তর, শুধুই সবুজের আকাঙ্ক্ষা
আজ সোমত্ত তিস্তা নদীর মোহনা থেকে
উড়ে আসা কোকিলের ডানার
ভিতরে জমিয়ে রাখি
ঘুমিয়ে পড়া সেই মেয়ের বাড়ির রাস্তার ঠিকানা
পৃথিবীর সব মেয়ে রাস্তাগুলো কেন যে বদ্ধ ঘরের অন্ধকারে
যুগ যুগান্তর ধরে আটকে পড়ে আছে !
হে কবিতা, তুমি আমার মেরুদণ্ড কঠিন করো
আজ অই তিস্তা নদী আমি সাঁতরে পার হবো
শোন হে সূর্যদেব
এ পৃথিবী যতোটা তোমার সম্পদ
ততোটাই চন্দনা আর শালিখের
আর ততোটাই আমার পেলব মানবী জন্মের
আমি কন্যা তাইতো আজ তুমি পুরুষ ...



 ভয় 

আমার শিরা উপশিরা বেয়ে নামে
তারাদের ছায়াপথের
বিন্দু বিন্দু আলো—
আকাশের কিনারায় গাঁথা অই চাঁদ
আজ বড় দুর্গম লাগে
আমার আর সাহস হয়না
শেষের সেই দৃশ্যে দাঁড়াতে
বাবার দেহ শুইয়ে রাখা বারান্দায়
ভোররাতে নীহারিকার আলো গলেছিলো
তখনও তার দাগ লেগে রয়েছে তাঁর শরীরে
আমি দেখলাম মায়ের ভাঙা শাঁখা পড়ে আছে
প্রিয় বকুল বৃক্ষের তলায়
পাশের দীঘির জলতরঙ্গে
রাক্ষুসে মাছের মুখ হাঁ করা
বকুলগাছের মাথায় থ্যাবড়ানো সূর্যে
মায়ের সবটুকু সিঁদুর লাল হয়ে আছে
সাদা থানে ঢাকা বিধবার সাজ জুড়ে
নেমেছিলো দুর্গম চাঁদ জোছনা নিয়ে
আমি আকাশের উল্কাবৃষ্টি ঢকঢক্ করে
পান করেছিলাম সেই রাতে
মা শুয়েছিলো সমুদ্রের উপরে
সকাল এসেছিলো আকাশের তলায়
এসেছে দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যে
সব প্রহর বয়েছে নিয়মের সন্ধি মেনে
শুধু আসেনি ফিরে চেনা মানুষটার ঘ্রাণ

মা দাঁড়িয়ে আছে চেনা দরোজায়
বকুলতলায় ছড়িয়ে আছে
ফুলের সাথে মায়ের সাদা শাঁখা
এমন কঠিন দিনের আলোয়
চোখ ধাঁধিয়ে যায় মানুষের
মা তবু দাঁড়িয়ে আছে আকাশের মত
তলায় মেঘের ছায়া দীঘির নিটোল জলে
বুকের এতোটা কাছে জ্যোৎস্না নেমে এসেছে
ভয় লাগে চাঁদমুখো করোটিকে
কেউ জানেনা, আমি আর
সেরকম শেষের সকাল চাইনা


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

নবীনতর পূর্বতন