'আরে দাঁড়াও দাঁড়াও -- হাউ সুইট ! নাইস ! বিউটিফুল ! '
টুসুর হাতে লাঠি , সি দাঁড়াইয়ে গিল । ওমনি আলো ঝলকাই উঠলো ।
বাবু ছেলে হেসে কইল -- 'তোমার দুটো ছবি নিলাম । কি সুন্দর তুমি --এই প্রকৃতির মাঝে তুমি ! আমি ওই বাংলোয় কাল এসেছি । এই জঙ্গল কি একটু ঘুরে দেখাবে ?'
'পারব লাই বাবু , ঘরে মিলাই কাজ পড়ে । বাপের লেগে ভাত রাঁধব ।'
টুসু পলাইয়া বাঁচল বটে তবু ঘরের কাজ করতি করতি বার বার মন উথাল পাথাল । বিকেল থাকতি আবার মহুল বনে দিখা হল সেই ফটো বাবুর সাথে , একলা উদাসপারা ভেলেছিল দূরে -- শালের বনে আলো -আন্ধারির বুকে রঙ ছড়িয়েছে আগুনপারা । পাতার খসখসানি শব্দে চমকাই গিল , টুসুর পানে ভেলে বলল -- এমন কেন হল ? তুমি আমার কে বল ?
ই কিমন কথা ! টুসুর মুখে কোন রা নাই , সে তখন অন্য কিছু ভাবছিল । ঝিরঝির করে বাতাস বইছিল , থিরথির করে গাছের পাতা কাঁপছিল ,বহুদূর থেকে মাদলের বোল ভেসে আসছিল ।এ কেমন ঘোর ! অন্য কুনদিন হলি সিও ভেসে যেত মাদলের বোলে বোলে কোমরে হাত দিয়ে তালি তালি পা মিলাইয়ে । আজ কেনে পা সরে না ।
'তুমি এই মহুল বনের সাঁঝবাতির মতন সুন্দর , তোমাকে এখানে যেমন মানায় ,সেই শহরে তোমায় মানায় না । তুমি আমার কেউ ছিলে , না হলে এত আপন মনে হচ্ছে কেন ? আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি না কোথাও। তুমি এইখানে থেকো ছবির মত সুন্দর, আমার বুকের মাঝে ।এর নাম ভালবাসা ।'
প্রতিবার ফাগুন আসে, শাল পিয়ালে রঙ জমে আর বুকের ভিতর উথাল পাথাল টুসুর। দুটি চোখ পথের পানে আকুল হয়ে ফেরে -- আরও ইকবার ইসো ভালবাসা । অস্পষ্ট হয়ে আসে দিনের আলো -- দূরে ময়ূর পাহাড়ে সাঁঝবাতি জ্বলে, মাদল বাজে, বাজে নাচের বোল আর বুকের মাঝে দ্রিম দ্রিম শব্দ ।
Tags:
অণুগল্প