দোল উৎসবের আগামবার্তা এসে গেল দিল্লী ইউনিভার্সিটির লেডিজ হোষ্টেলে । হোলিখেলো তবে অন্তঃপুরে । ২০১২সালে প্যারামেডিক্যাল ছাত্রী শ্রীমতি জ্যোতি সিং এর অপমৃত্যুর পরে ভারতীয় নারীদের নির্ভয়া অ্যাওয়ার্ডের দাম চুকানোর পালা। নির্ভয়া বা ফিয়ারলেস তকমা আখেরে মেয়েদের কাওয়ার্ড বানানোর এক অনন্য প্রয়াস। যে দেশে মেয়েরা মা হবার জন্য দুইবার ২৬ সপ্তাহ ও তৃতীয়বার ১২ সপ্তাহের ছুটি পায় তাদের হোলি খেলার বিধিনিষেধের আওতায় পড়তে হয়। নারী দিবসের প্রাক্কালে মেলে উপহার আর দিবসোত্তরে মেলে রুদ্ধদুয়ার সেলিব্রেসন।
এমন সিদ্ধান্তের পেছনে বাধ্যতা কি? এপ্রশ্ন মনে আসতেই পারে এমনটা মনে করার অবকাশ খুব কম। কেননা মেয়েদের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত বীনা জিজ্ঞাসায় আমাদের সমাজ তথা আমরা মেনে নিতে অভ্যস্থ। যা হচ্ছে তা নিশ্চিত ভাবে খারাপের জন্য নয় এর অন্য কারন আছেই, মানুষ খুব আস্থার সাথে এমনটা বলে শুনি। মেয়েদের সেফটি খুব জরুরী। কেন ও কাদের থেকে তখন মানুষের কোনো রিফ্লেক্স আয়াক্সন কাজ করেনা। অবরোধ প্রথা তো কবেই অবসোলেট হয়ে গেছে তবে? সভ্যতার এই স্তরে এত্ত নগ্নতার সাথে তা ফিরিয়ে আনার কি খুব প্রয়োজন! ছাত্রীদের আগত গেষ্টসহ হোষ্টেলে এন্ট্রি ও ডিপার্চারের উপর ফরম্যান জারী কি জন্য? আসলে নারী স্বাধীনতা এক বিরাট বিজ্ঞাপন। ক্ষমতা বানানো ও তা টিকিয়ে রাখার এক সহজ সস্তা উপায়। নারী অন্দরেই বেশী সুরক্ষিত আর সেটাই খুব মর্য্যাদার সঙ্গে লালিত। বাস্তিলের প্রাচীরের পেছনে উদ্বেল সব প্রনোচ্ছল মেয়ে যাদের স্বাদ ও ইচ্ছা তার সমবয়সী ছেলেদের মতই। শরীর সেখানে বড় বালাই। এমন বেদিতলে কে বা চেয়েছিল আরাধনা পেতে! পূজিত নয় বাঁচার সব আনন্দের শরীক তারাও হতে চায়। কিন্তু বৈদিকোত্তর সম্পদ ও সুরক্ষার সেই ভাবনায় কি বেশী জোর পাচ্ছি আমারা? আইন,পুলিশ,প্রসাশন সব তবে পুরুষের সমাজের জন্য? এদের উল্লাস মিছিলে পুলিশ আর মেয়েদের বন্দী করার জন্য পরিকল্পিতভাবে অথরিটির চাপ। সুরক্ষার এ এক আশ্চর্যজনক প্রয়াস।
দেশের নানা কলেজে রং খেলা নিয়ে নানা বিধিনিষেধ আরোপিত করেছে কলেজ ও হোষ্টেল কতৃপক্ষ কিন্তু ছেলেদের হোষ্টেলে আটকে রাখার কথা তারা ভাবেই নি। কেননা কোনো ভাবেই তারা এমনটা ভাবতে নিজেদের অভ্যস্থ করে তোলে না। কর্নাটকের চিত্রকলা পরিষদ কলেজের অধক্ষ্য তেজেন্দ্র সিং বানই ক্যাম্পাসের মধ্যে হোলি খেলা নিষিদ্ধ করেন জলের অভাব ও ক্যাম্পাস ক্লিন রাখার স্বার্থে। মেয়েদের সুরক্ষা নিয়ে তারা বিন্দুমাত্র ভাবেন না শুধু তাই নয় ছেলেদের একদিন ঘরে রেস্ত্রিক্ট করার কথা তাদের মনেও আসেনা। মাউন্টক্যামেল কলেজের মেইন্টেন্যাস অফিসার বলেই ফেলেন ছেলেদের ক্যাম্পাসের বাইরে হোলি খেলায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ আমরা করতে পারিনা। ক্যাম্পাসের মধ্যে না খেলার নিয়ম রেখে থাকি।
হোলির উল্লাস মিছিল মেয়েদের হোষ্টেলের সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে থামে কিছুক্ষন, নাচানাচি,বিকৃত অঙ্গভঙ্গি, অশ্লীল শব্দের সাথে নেশার ফোয়ারা সাথে কর্মরত পুলিশের দল। মেয়েদের এই উত্তাল জনসমুদ্র থেকে রেহাই পেতে হেল্পলাইন যা হাজার বাজিয়ে কখনো কিছু স্থানে সাড়া দেয় না অন্যদিকে উদযাপনের ও সামাল দেবার জন্য মজুদ প্রহরী। এই অফেন্সিভ হোলি র্যা লিতে ডিসগাষ্টেট আবাসিক ছাত্ত্রীদের পিটিসন করে ক্লান্ত হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। প্লিজ, প্রেয়ার, পিটিসনের জীবন মেয়েদের। কোথা ও কোনো স্ফুলিঙ্গ নেই যা একবার জ্বলে ও জ্বালিয়ে দিতে পারে সব অন্যায়পথ ও অন্যায়কারী।
২০১২র নৃশংসতা ইয়ুথদের মুখেমুখে ব্লেম সিফটের যে স্লোগান ছিল তা ২০১৩ ক্রিমিন্যাল অ্যাক্ট সংশোধনের মধ্যে দিয়ে লালফিতের ফাঁসে ধুকতে থাকে। প্রোটেক্সন নামকা মেকানিজমের বাধ্যতা তীব্র হয় ক্ষমতা বা অধিকারের ধারনা বা বিশ্বাসকে একরকম ব্যাকসিটে বসিয়ে দেওয়া হয়। পুরুষের দুর্বৃত্তায়নকে সুরক্ষিত করার জন্য মেয়েরা স্যাক্রিফাইস করছে তাদের অধিকার হাতে হেল্পলাইনের মেকি রক্ষা কবচ নিয়ে, অন্যদিকে ছেলেরা তাদের হিরোইজম সেলিব্রেট করছে লেডিজ হোষ্টেলের সামনে মুখভর্তি নেশা ও অশ্লীল শব্দনিয়ে। পেছনে রক্ষক পুলিশ খোলা আকাশের নীচে এই রোড রোমিও, টম বয়, জাগদের বিচরন করার সূযোগ করে দিচ্ছে। ভায়োলেন্স, ভয়েউরিজম, হ্যারাসমেন্ট সব পরিভাষা জন্ম নিচ্ছে এই মাটি থেকে। গুলিয়ে যাচ্ছে অধিকার ও ক্ষমতার সীমানা। অন্দরে গনগনে আগুন জ্বলছে। পিঞ্জরা তোড়রা একদিন ছোটোখাট সব অবরোধের, স্বৈরতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে দেগে দেবে মুক্তির ঘোষনাপত্রের ইস্তিহার।
হোলি হে !এক্সারসাইজ রাইটস, ফ্রিডম।প্লেসেফ।