কান টানলেই যেমন মাথা আসে, তেমন ভাষার প্রসঙ্গ এলেই মানুষের মুখের ভাষার দৈনন্দিন ব্যবহারের কথাও মনে পড়ে যায়, বিশেষত আজকের দিনে। ভাষা দিবস মানেই শুধু মাতৃভাষা নিয়ে আবেগবিহ্বল হয়ে থাকার দিন বুঝি আজ আর নেই!
কেননা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা মাথায় বসে আছেন, বিশেষত যাঁরা রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতাভােগী এবং লােভী, তাঁদের মুখের ভাষা এবং তার প্রয়ােগ আজ ঠিক কতটা শিক্ষণীয় এবং গ্রহণীয় সেটা শুধু ভাবার নয়, রীতিমতো শঙ্কার এবং সঙ্কটের।
সবই কি তবে মহৎ ভাবনা, অনুপ্রেরণার জোয়ার? নাকি রাজনৈতিক কারবারিরা 'সুভাষিত' শ্রবণাতীত বয়ানে নিজেদের অক্ষমতার মদমত্ত প্রকাশ করছেন? সাধারণ ছাপােষা মানুষ বিস্ফারিত চিত্তে এই ভাষাসন্ত্রাস,এই ভাষাধর্ষণ দেখতে শুনতে ক্লান্ত। এর থেকে উত্তরণের উপায় এখনও অবধি কোনাে ভাষা দিবস দেখাতে পারেনি। এবারের ভাষা দিবসের কাছেও কি সেই উপায় আছে? নাকি এই খেলা হবে, চলবে ... মেধাহীন গাধাদের দৌলতে?
sobdermichil | মার্চ ২৩, ২০১৭ |
সঙ্গীত
| মিছিলে স্বাগত
তোমার কাছে মাটিই ছিল
মাটির দোহা মাটির শ্লোক
গান ফিরেছে মাটির কাছে
মৃত্যু কেবল মিথ্যে হোক ।
আর ক'টা দিন থাকলে হতো
চড়ুইভাতির সময় শেষ
দোতারা যায় আকাশ পানে
সেই যেখানে গানের দেশ ।
সবাই আগুন পেরিয়ে এলাম
সবাই তোমার গানের লোক
গান ফিরেছে মাটির কাছে
মৃত্যু কেবল মিথ্যে হোক ।"
- কবি শ্রীজাত
হ্যাঁ মাটির কাছে গান ও আছে , দোহাও আছে , কিছুটা ফেলে রাখা সুর ও আছে , কবির কথার রেশ ধরেই বলি মৃত্যুর এই মিথ্যে ছবিটুকু সরিয়ে গানে গানে সুরে সুরে আলাপচারিতায় রেখে দেই তাঁকে । এবারের গানঘর ষ্মরণে কালিকাপ্রসাদ ।
কিছুটা নিজের কথাই এবারের গানঘরের আলাপচারিতায় তুলে ধরি । সেটা ২০০৩ এর মে মাস ,সদ্য শেষ হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক । ঠিক সেই সময়েই বেতার জগতে কিছু বেসরকারী এফ এম চ্যানেলের আবির্ভাব । চ্যানেল সার্ফ করতে করতে একদিন দুটি গান শুনলাম - দোহারের বন্দনা "বন্দে গুরু বন্দে দোহার মুর্শিদেনামা" এবং " খেঁজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন" । তারপর এফ এম এম চ্যানেলেই দোহারের সম্বন্ধে জানা , তাদের নতুন এলব্যাম কেনার জন্য উৎসুক হয়ে থাকা এবং গান দরিয়া বলে দুই বাংলার মিলিত এক কনসার্টে দোহারের পারফম্যান্স দেখতে ছুটে যাওয়া । সেদিন দেখেছিলাম ব্যান্ড মানে শুধু রক নয় জ্যাজ নয় , ব্যান্ড মানে শুধু আধুনিক কবিতার সুরারোপ নয় ব্যান্ড মানে মাটিও হতে পারে , মাটির গানও হতে পারে । ব্যান্ড মানে শুধু স্প্যানিশ গীটার বা কি বোর্ড নয় , ব্যান্ড মানে একতারা দোতারা ঢাক ঢোল শিঙাও হতে পারে । যদিও কালিকা প্রসাদ কোনোদিন দোহারকে ব্যান্ড বলে স্বীকার করেন নি তিনি বলতেন " দোহার গানের দল , লোকগানের দল " ।
এরপর দিন গড়িয়েছে ,গড়িয়েছে সময় । নিজেও সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে বঙ্গীয় সঙ্গীত একাডেমীতে প্রায়ই যাতায়াত করতাম । এরকমই সময় একদিন দেখলাম লোকসঙ্গীতের ওয়ার্কশপ চলছে , পাঠ নিচ্ছেন কালিকাপ্রসাদ ভট্যাচার্য । রাগ সঙ্গীতের মানুষ হয়েও সোজা সেঁধিয়ে গিয়েছিলাম , ডুবে গিয়েছিলাম অতলে । আলাপ হয়েছিল অসম্ভব জ্ঞানী একজন মাটির মানুষের সাথে । কি অসম্ভব দক্ষতায় প্রতিটি গানের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। বাউলের দেহতত্ব হয়ে ঝুমুর ,ভাটিয়ালী , সহজিয়া । লালন ফকির থেকে হাসান রাজা,করিম শাহ্ প্রত্যেকের মধু ভান্ড তুলে ধরেছিলেন । মনে পড়ে সেদিনের সুর মেলানো ওনার সাথে -
গান গাই আমার মন রে বুঝাই
মন থাকে পাগল পারা
আর কিছু চাইনা মনে গান ছাড়া "
আসলেই স্মৃতিচারণ । এক অপূরনীয় ক্ষতি যার হিসাব মেলা ভার। মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায় । তবু বলি ... "তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দিবোনা "
এবারের কালিকাপ্রসাদ এবং দোহারের কিছু গান রেখে গেলাম গানঘরে । কিছুটা ভারাক্রান্ত হয়ে রইলো এবারের গানঘর । দেখা হবে আবার আগামী সংখ্যায় অন্য সুরে ।