রক্তে রাঙানো এই একুশে ফেব্রুয়ারির অনুপ্রেরণা সঞ্চারিত হয় সকল পূর্ব পাকিস্তানী মানুষের মধ্যে। তুমুল ভাষা আন্দোলনের ফলে ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পায় বাংলা ভাষা। তারপর এই বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে আরও আন্দোলন সংগঠিতর মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। তাঁর ও গৌরবময় ইতিহাস আমরা অবগত।
ভারতবর্ষ দিখন্ডীত হয়েছিল ১৯৪৭সালে স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে। জন্ম হয়েছিল নতুন রাস্ট্র পাকিস্তান। পাকিস্তানের অংশ দুটি হল পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান। তখনও বাংলা ভাগ হয়নি, তখন পূর্ব দিকের ৬২ভাগ নিয়ে গঠিত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান। এবং পশ্চিম পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল পাঞ্জাবের পশ্চিম অংশকে নিয়ে। পশ্চিম পাকিস্তানের আয়তনূ বড়ো হলেও পশ্চিম পাকিস্তানের থেকে পূর্ব পাকিস্তানের লোক সংখ্যা ছিল বেশি। এবং শতকরা ৯৮শতাংশ মানুষই ছিল বাংলাভাষী। সেই হেতু দেশ বিভাগের পূর্বে ডঃ মহম্মদ শাহিদুল্লাহর মতো পন্ডিত ব্যাক্তি বাংলা ভাষাকেই পাকিস্তানের ভাষা করা উচিত বলে দাবী জানিয়েছিলেন। ১৯৪৬সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের রাস্ট্র ভাষা বাংলাকেই ঘোষনা করা হয়।কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। পশ্চিম পাকিস্তানি উর্দুভাষী রাস্ট্র প্রধানদের ইচ্ছানুসারে পশ্চিম পাকিস্তানের মতো পূর্ব পাকিস্তানেও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র,শিক্ষক এবং বিভিন্ন মানুষেরা প্রথম থেকেই সোচ্চার হন। ১৯৪৮সালের জানুয়ারি মাসে একটি পরিষদ গঠিত হয় বাংলাকে রাস্ট্রভাষা করার দাবিতে।এই পরিষদের অর্থাৎ "রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ" দাবি জানিয়েছিল যে পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত স্তরে স্বীকৃতি পাবে বাংলা ভাষা। এবং উর্দুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষাও হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান জানিয়ে দেন যে,বাংলা নয় উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এতে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন আরও তীব্রতর হতে থাকে।
মাতৃভাষার জন্য এই কালজয়ী আন্দোলন ও আত্ম বলিদানের কথা স্মরণ করে ইউনেস্কোর (UNESCO) পক্ষ থেকে ১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস সম্মেলনে ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০০ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সহযোগী দেশসমূহে পালন হয়ে আসছে। ২০১০ সালের ২১ শে অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের ৬৫ তম অধিবেশনে এ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাস হয় এবং তখন থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় ১১৩ টি দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।