অ্যালবার্ট অশোক

অ্যালবার্ট অশোক
ছবির দেশে - কবিতার দেশে এইসব শব্দবন্ধ শুনলে বোদ্ধা পাঠক কি ভাবতে থাকেন, জানি। এই দুই মাধ্যমের মণিকাঞ্চন যোগে যে সব সৃষ্টিশীল মানুষ এই মুহূর্তে বাংলা শুধু নয় গোটা দেশকে সম্মানিত করছেন, তাদেরই একজন এই সাহিত্যকর্মী এবং চিত্রশিল্পী অ্যালবার্ট অশোক। সৌভাগ্যক্রমে তিনি আমার বন্ধুজন ও বটে, আমার অসীম ভালোলাগার এবং শ্রদ্ধাভাজন । সেই তিনি আজ আমার দ্বিতীয় পরিবার "শব্দের মিছিল" এর মুখোমুখি। আমাদের পক্ষ থেকে তাঁর জন্য উদ্দাম উড়ানের শুভকামনা। 




আপনার চিত্রকলার ভাষা যেন বিদেশি আর অন্তঃকরণ ভারতীয় । এই মিশ্রণের কারণ কি ? 



কিছু কথা বলতে হয় নিজেকে নিয়ে নইলে আমি উত্তর দিতে পারবো না বা আমার উত্তর সঠিক বোধগম্য হবেনা।

প্রথাগত পড়াশুনা - স্কুলের গন্ডী ছাড়ানো, শিক্ষাদীক্ষা আমার নেই। অশিক্ষিত ও অন্ধকারে বড় হওয়া মানুষ। বাড়ি আগরতলা ত্রিপুরা। টিলা পাহাড়, জঙ্গল, চাষ, অনুন্নত সমাজে থেকে শহরের মেধা , বুদ্ধির প্রকাশ এই পরিক্রমাতে বলা যত সহজ পথ-পরিক্রমা তত কঠিন। ঘটনা চক্রে শৈশবে অশিক্ষিত ও দরিদ্র বাসস্থানে আপনমনে ছবি একেঁ আদিম খুশী পেতাম। মনে হত গুহাযুগের আলোআঁধারির মায়াতে কেমন যেন অপটু হাতের ছবিগুলি নড়ছে। লুকিয়ে আঁকতাম। পিতামাতার চোখের আড়ালে। বেশী না আঁকা সম্ভবের জন্য মনের মধ্যে ছবি আঁকা বা লেখার প্রবণতা বেড়ে উঠছিল। বাড়ির ধারে কাছে কোন চিত্রশিল্পী বা লেখক ছিলনা, যে তার কাছে গিয়ে দেখি, শুনি। একদিন কৈশোরের শেষে বাড়ির দারিদ্রতা ও ছবি আঁকার প্রবল বাসনা নিয়ে কলকাতার দিকে পাড়ি দিলাম, আসতে প্রায় একবছর লেগেছিল। পথে না গ্লপ তৈরি হয়েছিল। তাই দীর্ঘ সময় লেগেছিল কলকাতায় পৌছুতে। তখনো আমি পাহাড়ি ছেলে, কেতাবী বিদ্যার থেকে লক্ষ যোজন দূরে। আমার ভাষা কেউ বুঝতনা। ঠাঁই নিয়েছিলাম কিছু সময় শ্রদ্ধেয়শিল্পী বিজন চৌধুরীর বাড়িতে (প্রায় সাত মাস)। ঐ সময় আমি পশ্চিমী বা পূবদেশীয় শিল্প সম্পর্কে ওয়াকি বহাল হই। ছবি যে এক সমুদ্রের মত চওড়া ও গভীর-- নৌকা নয় জাহাজ নিয়ে বেরুতে হয়, পাড়ি জমাতে হয় এটা ঠাহর করে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। যে আমার ছবি আঁকা হবেনা। বড়জোর আমি সাইনবোর্ড লিখে ভাত খাব, বিজন চৌধুরীর মত হতে পারবনা। শৈশবে নন্দলাল বসু আর সত্যজিত রায়ের নাম শুনে ছিলাম। তখন ভাবতাম তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্পী সাহিত্যিক ।আমি তাদের মত হব। কলকাতা আসার পর অনেক ভাবনা চিন্তা স্বচ্ছ রুপ পেল। বিজন চৌধুরীর বাড়িতে আমার ভাবনায় স্থান পেল যে ইংরেজি ভাষা অর্জন করতে হবে। পশ্চিমী শিল্প ইতিহাস পড়তে হবে। আর উপায় করে বাঁচার জন্য ছবিকেই পেশা করতে হবে। এ সবগুলিই ছিল আমার কাছে অসম্ভব। রাস্তায় বা ফুটপাতে শুয়ে, নিজের পেট চালাবো না বিলাসী স্বপ্ন দেখবো? ৭৯ এ কলকাতায় পা রেখেছি। ৮১ সালে একটা ফিল্ম ডিস্টিবিউটর কোম্পানিতে ফ্রিল্যান্স আর্টিষ্ট হিসাবে কাজ শুরু। ৮২ সালে কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় অলঙ্করণ ও প্রচ্ছদ এঁকে জীবিকা। তখন থেকে আমার নিজে নিজে ইংরেজি শেখা ও পশ্চিমী বই কিনে পড়া। বলে রাখি ছবি , লেখা আর ইংরেজি ভাষা প্রীত্রি আমার কৈশোর থেকেই। ওগুলো আমার জানা ছিলনা কিন্তু কোথাও দেখলে ভাল লাগত। আমার ছবি আঁকার শিক্ষাগুরু বই। ইংরেজি ছবি আঁকার টিউটরিয়াল বই। ওয়াল্টার ফস্টার দিয়ে শুরু। ইংরেজ জাতির বই আমাকে পথ দেখিয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকাতেই শিল্প আন্দোলন হয়েছে। ভারত তথা এশিয়ার দেশগুলি তো সবে ঘুম থেকে উঠেছে। এখান থেকে কি শিখব? ৮২সাল থেকে আমি ছবি এঁকেছি আর পশ্চিমী বই পড়ে ছবি সংক্রান্ত তথ্য ও শিক্ষারীতি নিয়ে বাংলায় ও ইংরেজিতে প্রায় ১০০ বই লিখেছি। বাংলায় তো ইংরেজদের মত বই পাওয়া যায়না। সুতরাং পশ্চিমকে চিনেছি নিজেকে চেনার জন্য। পশ্চিমী সংস্কৃতি আমাকে পেটের খাবার জুগিয়েছিল। 



অবশ্যই আপনি স্বকীয় । কিন্তু শিক্ষানবিশ কালে কাদের থেকে শিখেছেন ? নাকি আপনি স্বশিক্ষিত ?



আমার আঁকাতে পশ্চিম আসবেই। আমাকে এই বাংলার অনেক শিল্পী, ৭৯ সাল থেকে ২০১১ অব্ধি, আমার ছবি নিয়ে পড়াশুনার সময় প্রভাবিত করেছিল। যামিনী রায়, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, নীরদ মজুমদার, বিজন চৌধুরী, অধুনা বাংলাদেশের জয়নাল আবেদিন, কামরুল হাসান, কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ যারা জীবনান্দের মতো বাংলার ছবি -- প্রতিদিনের জীবন- অন্তঃপুরের ছবি মহিলাদের জীবন, পুরুষের জীবন ক্ষেত খামারের ছবি এঁকেছেন তা আমাকে অনেক প্রভাবিত করেছে। ফলতঃ আমার ছবিতে পশ্চিমী আদব কায়দা আর বাংলার মানুষ বিষয়ে স্থান পেয়েছে।

আমার বড় হওয়ার মধ্যে - এই কলকাতায়, ভাবনা চিন্তায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। কট্টর আস্তিক থেকে কট্টর নাস্তিক হওয়া - এই পথ চলা খুব সহজ নয়, কিন্তু আমি নিজেকে মানসিক গঠন দিয়েছি। আমাকে যুক্তিবাদী বা ন্যায় বা Rational হতে শিখিয়েছ। 



আপনি নিজেই বলেন এই মুহূর্তে অন্য সব শিল্প মাধ্যমের থেকে আঁকা আর লেখাকেই সুয়োরানী করেছেন । নাচ , গান ইত্যাদির প্রতি অনুরাগ এবং চর্চা কি আপনার আঁকাকে প্রভাবিত করে নি ?





শিল্পের প্রতিটি অঙ্গনকে আমি শ্রদ্ধা করি। নাচ, গান, থেকে আরম্ভ করে সব। সৃজন সম্ভব শিল্প। এবং প্রতিটি শিল্প একের সাথে অন্যের যোগসূত্র বা আত্মীয়তা আছে।





আপনি খুব চাঁচাছোলা কথাবার্তা বলেন । কি লাভ শত্রু বাড়িয়ে ?




আমি দেখেছি রবি ঠাকুরের নোবেল পাওয়ার ১০০ বছরে আর কেউ নোবেল কেন সারাভারতের স্তরেও যেতে পারেনি। এই অবস্থা শিল্পের সবগুলি শাখাতে। বাংগালি ফাঁপা। শূন্য সবদিকেই। সারাভারতে সবগুলি রাজ্যের মধ্যে বাংলার স্থান ১০ এ ও নেই। এরকম একটা পরিস্থিতিতে যারা বাংলা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারবেনা তাদের তো-- বিশেষ করে আমাকে যতটুকু সম্ভব অবনতি রুখে বাঁচতে হবে। তাই আমার কথা অনেকে পছন্দ করেনা। সমালোচনা বা আত্মসমালোচনা শুনতে বাংলা অভ্যস্ত নয়। তাকে মিথ্যে প্রলোভন দেখাও তাতে সে খুশী।

অতি মাত্রায় নিরপেক্ষ ও যুক্তি প্রমান দরকার হয় কোন বিষয়কে প্রমান করতে হলে। আমি রাজনীতির ও ধর্মীয় বিষয় থেকে সহস্র মাইল দূরে থাকি। আমি কাউকে গাল দিই না। আমার সাথে শত্রুতাও কারুর নেই। থাকার কথা নয়।কিন্তু কিছু মানুষ নির্বোধ ও যারা নির্বোধ তারা পশুর চেয়েও হিংস্র হয়। নির্বোধ মানুষ শ্ত্রুতা করে, তার ঠুনকো বিশ্বাসকে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে ঈর্ষা অনুভব করে।হিংসা করে।



অবন ঠাকুর , গগনেন্দ্রনাথ থেকে মকবুল ফিদা হুসেন , এই যাত্রা ভারতীয় চিত্রকলায় কি কি মুভমেন্টের মধ্যে দিয়ে গেছে বলে আপনি মনে করেন ? আপনি নিজে কি কোন মুভমেন্টের জনক হবার স্বপ্ন দেখেন ?



অবন ঠাকুর , গগনেন্দ্রনাথ থেকে মকবুল ফিদা হুসেন এবং সাম্প্রতিক কাল অবধি ইউরোপের মতো আন্দোলন না হলেও প্রত্যেকের কাজের ধারা, ও চিন্তন স্বতন্ত্র। আমাদের এখানে বেংগল স্কুল ধারা, ভারতীয়করণ পদ্ধতি বা রীতি ১৯০০ সালের দিকে থেকে একটা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশই পশ্চিমী প্রভাব থেকে নিজেদের জারিত করেছেন। অমৃতা শেরগিল থেকে আরম্ভ করে অনেকেই ইউরোপীয় ধারায় দেশজ ছবি করেছেন। 

শিল্পী একটা ছবি সৃষ্টি করে কোন অনুশাসন না মেনেই। তার কাছে ছবিটা গড়া হল বড় বিষয়। আমরা পরে তাকে বোঝাবার জন্য কোন আন্দোলন বা বিশেষণ শব্দ দিয়ে চিহ্নিত করি।এছাড়া কোন ইজম নিয়ে কথা প্রসঙ্গ আসেনা।

আমি একটা নিজস্ব ভাবনায় আন্দোলন শুরু করেছি। এবং তা আমার ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি। এই আন্দোলনটার নাম ' উপাদান ত্রয়ীর মিশ্রণ', ইংরেজিতে 3 E S (থ্রি ই এস)3 elements sythetism. এখানে আমি তিনটি জিনিসের মিশ্রণ করে শিল্প সাহিত্যের উতকর্ষতা লাভ করা যাবে আমি আশাবাদী।

1. The science to portray the visual content of the environment easily , ( anatomy of life, anatomy of picture making, using geometry or science. or by any reduced plain form )

2. .Aesthetical consideration, ( creation of a super feelings, wild imagination )

3. The philosophy of common life and interms of pleasure or an idea. (The hints or message of human life and nature)

১। রুপ কল্প। অহেতুক কোন বস্তুর গঠন বিস্তারিত না দিয়ে সহজ ভাবে বস্তুকে প্রকাশ করা। জ্যামিতিক প্যাটার্ণ সাহায্য করে কোন বস্তুকে সহজ ভাবে বুঝাতে, বা কোন বৈজ্ঞানিক বা যুক্তি ভাবনায় বস্তুকে সহজ ভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। ছবিতে মূর্ত বা বিমূর্তকল্প একটা বিশেষ উপাদান।

২। নান্দনিক ভাবনা। ছবিকে দর্শকের মনে গ্রহন করতে কাজকরে, আপনার যদি অতি মাত্রায় অনুভূতি থাকে বা বন্য কল্পনা থাকে তবে তা অসাধারণ ও দর্শকের মনে প্রশান্তি ও বিস্ময় সৃষ্টি করে।

৩। বিষয়। এই ভাবনাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ছবিতে কি বিষয় থাকবে?



একজিস্টেনশিয়ালিসম , রিয়ালিসম ইত্যাদির পর সুপার রিয়ালিসম । আপনি কি মনে করেন  এইসব ইজম কোন প্রকৃত শিল্পীকে চিহ্নিত করতে পারে ?



শিল্প আন্দোলন পশ্চিমেই হয়েছে। তাই আমি চেয়েছি আমার ছবিও শিল্প আন্দোলন আনবে। কলকাতায় আসার পর থেকে ২০১১, এই সময়টা আমি আমার মতো পড়াশুনা করেছি। প্রায় ১০০ বই সৃষ্টি করেছি। ১০০ বই লিখতে কিরকম পড়াশুনা বা তথ্যের প্রয়োজন পড়ে তা যারা পড়াশুনা করেন তারাই জানেন। 

ছবিতে ও কবিতায় পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানা আন্দোলন বা তরঙ্গ এসেছে। তরঙ্গ মানে ছবি বা কবিতাকে প্রকাশ করার জন্য শিল্পী ও কবিরা এবং অন্যান্য মাধ্যমের শিল্পে যেমন নাটক গান নাচ ইত্যাদিতে নানা দর্শন শিল্প সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।সমালোচকরা তা চিহ্নিত করে সাধারণকে নানা পরিভাষায় নামকরণ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন । এগুলি ইতিহাস। এই ইতিহাস পড়াশুনা ছাড়া শিল্পী বা কবি হওয়া মুশকিল।



আপনার অতিসম্প্রতি হয়ে যাওয়া চিত্রশিল্প প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল ‘ওয়ান্ডার ল্যান্ড’। এই ওয়ান্ডার অর্থে কি নতুনত্ব , বিস্ময় ছাড়াও এস্থেটিক প্লেজারের গভীর কোন ব্যাঞ্জনা ছিল না ?



'ওয়ান্ডার ল্যান্ড' সরাসরি এলিস ইন ওয়ান্ডার ল্যান্ড এর কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রায় দেড়শ বছর আগে Charles Lutwidge Dodgson লুই ক্যারল নামে আশ্চর্য নগরীতে এলিস বলে গল্প শুনিয়েছিলেন। কখনো উদ্ভট কিছু- বোধগম্যহীন ছবি ছড়া ও সাহিত্য শিল্প হিসাবে মানুষকে খুশী করেছে ও স্থান পেয়েছে। না। আমার ছবি উদ্ভট কিছু নয় । সচেতন ভাবে ব্যঙ্গ সমাজের প্রতি, রাস্ট্রের প্রতি। যখন একজন মূর্খ ব্যক্তি রাজার সিংহাসন দখল করে চেপে বসেন। যোগ্য ব্যক্তিকে সরিয়ে। শাসন করেন তার চেয়েও অনেক অনেক বড় বড় মানুষকে তখন বিস্ময় লাগেনা? যেখানে সরাসরি আপনি সত্যি কিছু আশা করছেন সেখানে যদি আপনি মিথ্যার আশ্রয় দেখেন তখন আমরা অবাক হই। আমার ছবির জগত তেমনই কিছু ভাবনাকে প্রশ্রয় দেয় ও তারা বিস্মিত হওয়ার অবকাশ আনে।



শিল্প এবং যৌনতা কি মরালিটির কাছে হার মানা উচিৎ ? সাম্প্রতিক কালে যৌনতার প্রদর্শনীর ধুঁয়া তুলে রাজনৈতিক গুণ্ডামিকে কি চোখে দেখেন ?



যৌনতা বা নীতি তত্ব এসব আমার বিশ্বাস নেই। আপেক্ষিক বা ভেক কথা এগুলি। স্থান বা ভৌগোলিকভাবে এসবের মূল্য পালটে যায়। শিল্পী সাহিত্যিকরা তাদের নিজের ভাবনায় এসব ব্যবহার করেন। কারুর চোখে ভাল বা মন্দ লাগতেই পারে। ভারতে অধিকাংশ লোক মূর্খ তারা আক্ষরিক অর্থে বই পত্র পড়েছে, ডিগ্রী করেছেন। কিন্তু সবই মুখস্থ বিদ্যা। প্রকৃত অর্থে তারা ষোড়শ শতাব্দিতে বাস করছে। আর আছে তেমন অশিক্ষিত রাজনৈতিক দাদাদের ক্ষমতার গুন্ডামি।আমাদের ভারতএর সরকারে যারা বসে আছেন অধিকাংশ দুষ্ট চক্র ও অপরাধী। এই ভারতের মূল কেন্দ্রেই পদ্ধতিগত ভ্রান্তির বীজ।



আপনার ছবি তো এদেশে বহুল সমাদৃত । দেশের বাইরে কি কখনও এগুলি প্রদর্শিত হয়েছে ? কথায় বলে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না । বিদেশি স্বীকৃতি সত্যিই কি দরকার বলে মনে করেন ?



আমার ছবি এদেশে কতটুকু সমাদৃত জানিনা, কিন্তু বিদেশের পত্র পত্রিকায় আমাকে ফিচার করেছে, ও আমার ছবি সংগ্রহিত হয়েছে যা এদেশে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে কোনটাই হয়নি। আমাকে উড়িষ্যা থে সেরা শিল্পীর শিরোপা দেওয়া হ্যেছে। ত্রিপুরা থেকে আমাকে একটি পত্রিকায় ফিচার করেছে। হাইদ্রাবাদের অ রাজস্থানের দোইনিক বহুল প্রচারিত পত্র পত্রিকায় প্রকাশ করেছে। পশ্চিমবঙ্গে হয়নি।

শিল্পীরা সাহিত্যিকরা বিদেশে (পশ্চিমে) সমাদৃত হলে এখানকার পন্ডিতগন তখন সেই সুরে গলা মেলান ও আত্মপ্রসাদ পান। এমন ঘটনা অনেক আছে। ২০০৬ অব্ধি কলেজ স্ট্রীট পাড়ায় নিজেকে আবদ্ধ রেখেছিলাম। এতদিন আমি সেই অর্থে পেইন্টিং করিনি। প্রদর্শনী তো নয়ই। ২০০৮ সালে, একটি বিশ্ব সংগঠন 'Article 19' আমাকে একটি প্রতিযোগিতায় নিয়ে গেল আমন্ত্রণ করে। তাদের সাথে আমার মানবাধিকার নিয়ে চিঠির যোগাযোগ ছিল। আমার আর্টিকল নাইন্টিন এর উপর ব্লগ ছিল, তাতে তাদের খবর লিখতাম পোস্ট করতাম। সারা বিশ্বের ৮০টি দেশের প্রায় হাজার খানেক শিল্পী ঐ প্রতিযোগিতায় প্রবেশ করেছিল। আমার স্থান ছিল নবম। তাই ওরা আমাকে ওদের আন্তঃর্জাতিক ওয়েবসাইটে একবছর সময় হিউম্যান রাইটস শিল্পী ও ফিচারড্ আর্টিষ্ট বলে প্রচার করেছিল। এই প্রথম, আমি শিল্পী বলে প্রকাশিত হয়ে যে আনন্দ পেয়েছিলাম তা আমাকে পেইন্টার হিসাবে ভবিষ্যতের দিকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। ২০১০ এ হঠাৎ উড়িষ্যার ললিত কলা ও একটি জেলা সর্বভারতীয় তিনদিনের চিত্রশালা বা ক্যাম্প আয়োজন করে আমাকে প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রণ জানায়। সেখানে প্রায় শখানেক শিল্পীর মধ্যে আমাকে সেরা শিল্পীর সম্মান 'সত্য শিব সুন্দর' এ ভূষিত করে। এরপর নানা রাজ্যে, ও বিদেশে আমার নাম ছড়িয়ে পড়ে। আমি তখনো শিল্পী হিসাবে দু একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করছি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমার মনে হয় কেউ চিনতনা।কিন্তু এরাজ্যের বাইরে এবং ইউরোপে আমি আমার চারকোলের ড্রয়িং নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছি।নানা জার্নালে ফিচারড্‌ আর্টিষ্ট হয়েছি।

আমি জানিনা পশ্চিমের সাথে আমার যোগসূত্র কি? ২০১১ থেকে স্থির করলাম আমি ছবি এঁকে প্রদর্শনী করব। শৈশবের স্বপ্নটা পূরন করব। বিজন চৌধুরির মতো আমার একটা নাম হবে ইতিহাসের পাতায়। 



আপনার ছবির ক্রেতারা মূলত কোন শ্রেণীর? তারা কি সাধারণ শিল্পপ্রেমী জনগণ নাকি পয়সাওয়ালা এলিট শ্রেণী ?




আমার ছবির ক্রেতা সাধারণত বিত্তবান লোকেরাই। তারা কেমন বলতে পারছিনা। আমি আশাবাদী ভাল ছবি হলে লোকে কেনে ও সমর্থন করে। বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। 





শিল্পকলায় নাকি পয়সা হয় না । নতুন আর্টিস্টদের কোন মেসেজ দিতে চান ?




আমার ছবি আঁকার জীবন খুব ছোট। মাত্র বছর পাঁচেক। তাতেই আমি দেশ বিদেশ থেকে সাড়া পাচ্ছি। নতুন শিল্পী দের আমার ভাবনায় ছবি আঁকলে তারকা হতে পারবে আমি এই আশাই পোষণ করি । 

আমার কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম আমি যেমন বুঝি সেই নিরিখে। শুভ কামনা সবাইকে।




আপনাকেও আমাদের অফুরন্ত ভালোবাসা এবং অভিনন্দন। ভালো থাকুন খুব।








একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

নবীনতর পূর্বতন