রীনাদির স্বামী হঠাৎই চলে গেলেন। অগত্যা রীনাদিকে সেলাই এর কাজ, টিউশনি, আচার বানানো এইগুলো কাজও করতে শুরু করতে হলো। প্রাণপাত করে ছেলে-মেয়েকে বড় করেছে রীনাদি। ছেলেটা চাকরি পেয়েছে কলকাতায়, মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে।
হঠাৎ একদিন ছেলে মেয়ে একসঙ্গে এসে হাজির। রীনাদি অবাক হয়ে বললো, ”কী রে, তোরা দু’ভাই বোন একসাথে? খবর দিস নি কেন?”
মেয়ে বললো, “তোমাকে দেখতে এলাম, মা।”
রীনাদি কিছু বুঝে উঠতে পারলো না, হঠাৎ ওরা দু’জন একসাথে এসেছে, শুধু মা’কে দেখতে? রীনাদির একটু খটকা লাগলো, জীবনের এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় চলতে চলতে পায়ের তলা রক্তাক্ত হয়েছে তার । সে এটাও জানে যে, সবকিছুই সময়ের হাতে ছেড়ে দিতে হয়। রীনাদি যেন অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই বললো, “রোদ পড়ে যাচ্ছে, আমার ছায়াটাও কেমন দীর্ঘ হচ্ছে। ক্রমশঃ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর।”
অনেক রাতে রীনাদি একটা ফিস ফিস কথার আওয়াজ শুনতে পেল । ছেলে আর মেয়ে আলোচনা করছে,“বাড়িটা বিক্রি করে আমরা টাকা ভাগ করে নিই। মা তোর আর আমার কাছে পালা করে থাকবে।” রীনাদি কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, তারপর ধীরে ধীরে চলে এলো নিজের ঘরে।
পরদিন রীনাদির আর কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। মেয়ে মায়ের ঘরে গিয়ে টেবিলের ওপর একটা ছোট্ট চিঠি পেল, রীনাদি লিখেছে– “আমি যেভাবে তোমাদের বড় করেছি, সেভাবে তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের বড় কর না। ভালো থেকো। ইতি তোমাদের মা।”
Tags:
অন লাইন