গ্রামের ছেলে রমণীমোহন। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদীতে বোশেখ মাসে হাঁটু জল থাকলেও কিন্তু জোয়ারের সময় আজকাল অল্পস্বল্প জল ফুঁলে ওঠে। তা দূর থেকে ঠাহর করা না গেলেও নদীর পাশের লোকজন তা কিন্তু ঠাহর করতে পারে। ভাটার সময় আবার জল নেমে যায়।চোত-বোশেখ এলেই ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা নদীর হাঁটু জলে দাপাদাপি করে । রমণীমোহন সাত ক্লাসে পড়েও ছোটখাট নাদুসনদুস চেহারার জন্যে সে সহজেই তার চেয়ে ছোটছোট ছেলমেয়েদের সাথে মিশে যেতে পারে। প্রাইমারী স্কুলে পড়া ছেলমেয়েদের সাথে খেলাধুলো করায় তার সহপাঠীরা তাকে হাসিঠাট্টা করে নাজেহাল করতে ছাড়ে না। তবুও রমণীমোহন গরমকাল এলে বাচ্চা ছেলমেয়েদের সাথে চিত্রা নদীর জলে খেলায় মেতে উঠতে পিছপা হয় না।
শ্রাবণ মাস এলে চিত্র নদীর এ কূল ও কূল জলে টইটুম্পুর হয়ে ওঠে। চুপসে যাওয়া যৌবন হারানো নারী যেন আবার টসটসে যৌবনবতী হয়ে উঠে। বর্ষাকালে চিত্র নদীতে আবার নৌকা ভাসে। পাল তুলে পানসি নৌকা চলাচল করে। সে সময় রমণীমোহনদের হিজলতলার ঘাট থেকে যাত্রীরা পানসি নৌকায় আসা যাওয়া করে। নদীর ঘাটের উপরে রমণীমোহনদের বাড়ি। রুমের জানালা দিয়ে সে নদীর দৃশ্য দেখতে পায়।হিজলতলার ঘাট থেকে নারী পুরুষরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে নৌকায় ওঠে কিংবা নৌকা থেকে নামে।
গ্রামের মধ্যে চৌধুরী বাড়ির নামডাক এখনো অনেক। এক সময় চৌধুরী পরিবার ছিলএকান্নবর্তী। সে আমল থেকেই এ বাড়ির ছেলেরা বাইরে চাকরীবাকরী করে আসছে। ব্রিটিশ আমলে এ বাড়ির ছেলেরা কলকাতায় চাকরী করতো। দেশভাগের পর চৌধুরী বাড়ির বড় তরফ কলকাতায় চলে গেলেও চৌধুরী বাড়ির জৌলুস কোন অংশেও কমে নি। এ বাড়ির ছোট তরফের ছেলে রমণীমোহন। ওরা দু’ভাই, এক বোন । দিদি চিত্রা সবার বড়। নদীর নামের সাথে মিলিয়ে দিদির নাম নাকি রেখেছিলেন ঠাকুমা। একাত্তরের যুদ্ধের আগেই ঠাকুমা মারা যান, আর রমণীমোহনের জন্ম হয় একাত্তরে শ্মরণার্থী্ ক্যাম্পে। তার নাম রমণীমোহন কে রেখেছিল তা সে জানে না। তবে তার ঠাকুমা রাখেন নি এটা নিশ্চিত।
কিশোর রমণীমোহন স্কুলের শেষ ক্লাসে উঠার পর তার নামের মাহাত্ম বুঝতে পারে। পন্ডিত মশাই বয়স্ক মানুষ এবং রসিকও বটে। অনেকের বাবা,কাকা,দাদা ও দিদিরা এককালে তার কাছে পড়েছে। তার রিটায়ার করতে বছর খানেক বাকি আছে মাত্র। ক্লাসের ছেলেমেয়েরা তার নাতিনাতনি বয়সী। তাই তিনি প্রায় প্রায়ই তাদের সাথে হাসিঠাট্টা করেন।
একদিন হিন্দুধর্মের ক্লাসে পন্ডিত মশাই দশকর্ম্ অধ্যায় পড়াতে গিয়ে তিনি তার ক্লাসের ছেলমেয়েদের নামের ব্যাখ্যা করতে থাকেন। ওই ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধেক ছেলে আর অর্ধেক মেয়ে।
পন্ডিত মশাই বললেন,‘ শিশুদের নামকরণ অতি গুরুত্বপূর্ণ্ বিষয়। যদিও নাম মানুষকে বড় করে না। স্বভাব চরিত্র, আচার আচরণ ও ভাল কাজের দ্বারা মানুষের নামের মাহাত্ম প্রকাশ পায়। তোমরা তোমাদের নাম থেকে----’ পন্ডিত মশাইয়ের কথা শেষ করার আগেই রমণীমোহন বলে, ‘ আমাদের প্রশান্তের নাম অশান্ত হলে ভাল হতো, তাই না পন্তিত মশাই?’ রমণীমোহনের কথায় প্রশান্ত তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে। মেয়েরা রমণীমোহনের কথায় খুশি হয়। কারণ প্রশান্ত মাঝে মধ্যেই তাদেরকে আজেবাজে কথা বলে বিরক্ত করে। সত্যি সত্যি তাদের প্রশান্ত দুরন্ত স্বভাবের ছেলে।তাদের ক্লাসের মেয়েদের মধ্যে সাবিত্রী, মুক্তি আর শাহানা সবচেয়ে ভাল ছাত্রী। ছেলেদের মধ্যে রমণীমোহন, শাহরিয়ার ও শাহীন সবচেয়ে ভাল। লেখাপড়া, খেলাধুলো, গানবাজনায় এরাই বরাবরই কৃতিত্ব দেখিয়ে আসছে। মেয়েদের মধ্যেও দু’একজন বাচাল স্বভাবের হলেও তারা পড়াশোনায় ভাল। পন্ডিত মশাই এর ক্লাসে তাদের মধ্য থেকে শিবানী পন্ডিত মশাইকে প্রশ্ন করে,‘ রমণীমোহন নামটা খুব সুন্দর , তাই না,পন্ডিত স্যার?’ শিবানীর কথা শুনে রমণমোহন কার প্রতি কটাক্ষ করে। ক্লাসে সোরগোল উঠলে পন্ডিত মশাই সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলেন,‘ নামের কিছু শব্দের সাথে বিশেষণ যোগ না করলে নামের মানে প্রকাশ পায় না। যেমন ধর কোন পুরুষছেলের নাম রাখা হতে পারে না। হবে রাধাকান্ত , যার অর্থ্ দাঁড়ায় রাধার সখা বা রাধার বন্ধু। ঠিক তেমনই কোন পুরুষ ছেলের নাম রমণী রাখা যায় না। কারণ রমণী শব্দের অর্থ্ সুন্দরী নারী, মোহন শব্দের অর্থ্ মুগ্ধকারী বা চিত্তহারী। তাহলে যৌগিক শব্দ রমণীমোহনের অর্থ্ দাঁড়াল সুন্দরী নারীর চিত্তহারী বা মুগ্ধকারী।’ পন্ডিত মশাইয়ের কথা শুনে শিবাণীর মতো সুন্দরী মেয়েরা হেসে উঠে। অন্যদিকে, সুন্দর চেহারার রমণীমোহন যেন লজ্জায় রাঙা হয়ে যায়।
এক সময় সে ভাবল,কেন তার বাবা মা তার এ ধরনের নাম রেখেছেন। তারপর থেকে দুষ্ট ছেলেরা তাকে নিয়ে কত রকমের যে হাসিঠাট্টা শুরু করল। এমন কি তার নাম নিয়ে মেয়েরা পর্য্ন্ত আড়ালে আবডালে তার নাম নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে থাকল। মেয়েদের মধ্যে মুক্তি সবচেয়ে ভাল ছাত্রী। রমণীমোহন মেধাবী ও সুশ্রীমান হওয়ায় মুক্তির সাথে তার সম্পর্ক্ মধুর । সে রমণীমোহনকে সমীহ করে আসছে বরাবরই। তাদের বাড়ি পাশাপাশি, আর রমণীমোহন তার দূর সম্পর্কের দাদা হয়। মুক্তির মা তাকে বলেছিল,‘ রমণীমোহন তোর থেকে সাত মাসের বড় কিন্তু । ওকে তুই দা্দা বলে ডাকবি। তোদের দু’জনের জন্মই পশ্চিম বাংলার ধুবুলিয়া শ্মরণার্থী ক্যাম্পে। ওর জন্ম হয় একাত্তরের মে মাসে, আর তোর জন্ম হয় ষোলই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দু’দিন পরে। তাই আমরা তোর নাম রাখলাম মুক্তি।’ সেই মুক্তি একদিন রমণীমোহনকে নিভৃতে পেয়ে বলে বলল, ‘ দাদা, তোর নামটা রমণীমোহন কে রেখেছিল রে? আমার নাম মুক্তি হলে তোর নাম হওয়া উচিত ছিল বিপ্লব।’ মুক্তি প্রশ্নের উত্তর দিতে তার ইচ্ছে হয় নি।
বাড়ির ভাত খেয়ে স্থানীয় কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে স্টার নম্বর পেয়ে আই,এসসি পাশ করার পর ঢাকা ভার্সিটিতে কেমিস্ট্রিতে অনার্স্ নিয়ে আর মুক্তি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস এ ভর্তি হল। মুক্তি ভেবেছিল রমণীমোহনও ডাক্তারী পড়বে। কিন্তু সে ওপথ মাড়ায় নি।
বড়দা সুপ্রিয় ঢাকার বসুন্ধরাতে ফ্লাট কেনায় রমণীমোহনের সুবিধাই হয়। তার বড়দা একটা মাল্টিন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের সিইও। তার এক ছেলে, এক মেয়ে।দাদার গাড়ি ও নিজস্ব ড্রাইভার থাকলেও রমণীমোহনের বৌদিকে ছেলেমেয়ের স্কুলে আনা নেয়া করতে হয়।যদিও ওদের স্কুলে আনা নেয়ার জন্য দাদা যথাসময়ে গাড়ি পাঠায়। রমণীমোহন আসায় বৌদির ধকল অনেকটা লাঘব হয়। রমণীমোহন আসায় বড়দাও স্বস্তিবোধ করে। তাকে প্রায় অফিসের কাজে দেশের বাইরে যেতে হয়। বাসায় কোন পুরুষ মানুষ না থাকায় বাইরে গিয়ে সুপ্রিয়কে অস্বস্তিতে থাকতে হয়। বসুন্ধরার মুন গার্ডেন ম্যানসনের পাঁচতলার ফ্লাটের পুরোটই দাদার। ফ্লাটের ফাস্ট ব্লকে তারা নিজেরা থাকে। ওই ফ্লাটের সেকেন্ড ব্লকে নি:সন্তান এক দম্পতি তাদের ভাড়াটে। স্বামী ও স্ত্রীর ছোট সংসারে ছেলেপুলে না থাকায় তাদের দু:খের অন্ত নেই। রমণীমোহন ওদের সম্বন্ধে বৌদির কাছ থেকে এ সব কথা জেনেছিল।
লিফট থেকে প্রথম একজন অপরিচিত মহিলাকে তাদের পাঁচতলায় নামতে দেখল রমণীমোহন। বৌদি বলেছিল ভদ্রমহিলার বয়স পয়ত্রিশের মত হবে, আর তার স্বামীর বয়স ষাটের কাছাকাছি। তার স্বামী কুমারস্বামী রাজন একটা বিদেশী ফার্মের চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় অবস্থিত অফিসে সাউথ রিজিয়নের সিইও হয়ে এসেছেন । কুমারস্বামী রাজনের পৈত্রিক আবাস দক্ষিণ ভারতে হলেও ছোটবেলা থেকে কলকাতায় মানুষ। স্ত্রী কমলিনী কলকাতার বাঙালি মেয়ে।সে ভাবে, এ মহিলাটি অবশ্যই সেকেন্ড ব্লকের বাসিন্দা নয়। কারণ তাকে দেখে তো পঁচিশ বছরের বেশি মনে হয় না! তার মনে কেন যেন মহিলাটি সম্বন্ধে কৌতূহল দেখা দেয়।
লিফট থেকে মহিলাটি তার সাথেই পাঁচতলায নামে।লিফট থেকে বের হয়ে আসার সময় তাদের চোখাচোখি হলেও কেউ কারো সাথে কথা না বললেও কিন্তু মহিলাটি রমনীমোহনের আপাদমস্তকের প্রতি দৃষ্টিপাত করে।এটা দেখে সে ভাবে, তার কলেজের বন্ধুরা ঠিকই বলত, তার প্রতি চোখ পড়লে কোন মহিলাই তার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে পারে না। মহিলাটিও কিন্তু কম সুন্দরী নয়। চেহারা বাঙালির মত হলেও পোশাকআশাকে কিন্তু বাঙালির মত নয়। পরনে চুরিদার পাজামা। গায়ে প্রায় হাঁটু অব্দি লম্বা সবুজ রঙের আটোসাটো জামার উপরে পাতলা ফিনফিনে কাপড়ের শর্ট্ জ্যাকেট। লাল রঙের একটা স্কার্ফ্ গলায় জড়ানো। উন্নত স্তনদুটো ফিনফিনে কাপড়ের জ্যাকেট ভেদ করে উঁকি দেয়ায় রমণীমোহনের চোখ সেদিকে পড়ে। ভদ্রমহিলা সত্যি সত্যি নজরকাড়ার মত সুন্দরী। রমণীমোহন মহিলাটির দিক থেকে নজর ফিরিয়ে নিজেদের ফ্লাটের দিকে হনহন করে হাঁটতে থাকে।মহিলাটি কিন্তু মন্ত্রমুগ্ধের মত রমণীমোহন যেদিকে যায় সেদিকের পানে চেয়ে থাকে।
রমণীমোহন তার রুমের অ্যাটাচ বাথ থেকে হাত মুখে জল দিয়ে ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে একটু রিফ্রেস হয়ে ডাইনিং রুমে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। কেন যেন একটু আগে দেখা মহিলাটির কথা মনের কোণে ভেসে উঠছে তা সে ভেবে পায় না। সে ভাবে, মহিলাটি হয়ত পাশের ব্লকের গেস্ট হবে। বৌদিকে জিজ্ঞেস করলে ভদ্রমহিলার পরিচয় পাওয়া যেতে পারে। একটু বিশ্রাম করে সে ডাইনিংরুমের দিকে পা বাড়ায়। ডান দিকের সেকেন্ড ব্লকের দিকে তাকিয়ে লিফট খেকে নামা ভদ্রমহিলাটিকে লালটুকটুকে শাড়ি পরে ব্যালকোনীতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার খটকা লাগে। বৌদি বলেছিল তাদের ফ্লাটের সেকেন্ড ব্লকের কুমারস্বামী রাজনের স্ত্রীর বয়স পঁয়ত্রিশের মত হবে। তাহলে বছর পঁচিশেক বয়সের এই মহিলাটি কে?
রমণীমোহন ডাইনিংরুমে ঢোকার পরপরই ব্যালকোনীতে দাঁড়িয়ে থাকা এক সাথে লিফটে থেকে নামা মহিলাটিকে গলা ছেড়ে রবীন্দ্র সঙ্গীতের কলি--- ‘ মুখপানে চেয়ে দেখি, ভয় হয় মনে--- ফিরেছে কি ফেরে নাই বুঝি কেমনে। আসন দিয়েছি পাতি----’ গাইতে গাইতে ডাইনিং রুমে ঢুকতে দেখে রমণীমোহন তো অবাক! ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে বৌদি চোখ না তুলেই বলে উঠে, ‘ কুমু বৌদি, ফিরেছে কি ফেরে নাই এখনো বুঝতে পার নি?’ সে তার দেওর রমণীমোহনের দিকে তাকিয়ে বলে ,‘ এদিকে তাকিয়ে দেখ নাগরটি ফিরেছে কি ফেরে নাই।’ বৌদির কথা শুনে রমণীমোহনের মুখটা লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠে। বৌদি তাকে নিয়ে প্রায় প্রায়ই হাসিঠাট্টা করে , তাইবলে কি একজন অপরিচিত মহিলার সামনে! দু’জন কেতাদুরস্ত মহিলার সামনে তার মুখ থেকে কথা না সরলেও সে ভাবে, তাহলে এই সুন্দরী মহিলাটিই কুমারস্বামী রাজনের স্ত্রী কমলিনী, সাবিত্রী বৌদি যাকে কুমু বৌদি বলে সম্বোধন করছে।
‘ তাহলে এই তোমার সেই নাগর!’ গান থামিয়ে মহিলাটি সাবিত্রী বৌদিকে বলে। ‘ বরটার সাথে ফাওটিও তো ভালই পেয়েছ। লাজুক লাজুক চেহারার তোমার ফাওটি কিন্তু চোরের মত মেয়েদের দিকে তাকাতে ওস্তাদ।’ মহিলাটির কথার ফাঁকে রমণীমোহন তার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে কথার বলার সময় মহিলাটির মুখে টোল পড়ে। ক্ষণিকের মধ্যে তার সহপাঠিনী শিবানীর মুখটা তার মনের কোণে ভেসে উঠে। কথা বলার সময় ওর মুখেও টোল পড়ত। একদিন শিবানীকে নিভৃতে পেয়ে সে তাকে বলেছিল, ‘ কথা বলার সময় গালে টোল পড়লে মেয়েদের খুব সুন্দর দেখায়।’ তার কথা শুনে শিবানী শুধু মাত্র মুচকি মুচকি হেসেছিল।
ক্ষণিকের মধ্যে রমণীমোহন বর্তমানে ফিরে আসে। বৌদি তার সাথে কুমু বৌদির পরিচয় করিয়ে দেয়। ‘ এ হচ্ছে কুমার স্বামী রাজনের বেটার হাফ কমলিনী রাজন। বাঙালি বাড়ির মেয়ে কমলিনী কুমু নামে পরিচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক, তাই না কুমু বৌদি?’ সাবিত্রী বৌদি কথা থামিয়ে দেওরটির দিকে তাকিয়ে আবার বলতে থাকে, ‘ কুমু বৌদি, এ হচ্ছে সেই রমণীমোহন, যার কথা তোমাকে প্রায় প্রায়ই বলি। তুমি বাংলায় এম.এ. পাশ করেছ যখন, তখন রমলীমোহন শব্দের অর্থ্: সুন্দর নারীর চিত্তহারী বা মুগ্ধকারী পুরুষ, তাতো তুমি জানই।’
‘ তবেতো্ ও তোমার চিত্তহরণ করে বসেই আছে!’ ‘ না ভাই কুমু, ও করবে আমার চিত্তহরণ! তাহলেই হয়েছে!’ ‘ লিফট থেকে একসাথে নামার পর আমার দিকে একবার মাত্র তোমার রমণমোহন ঠারে ঠারে চেয়ে ওখান থেকে কেটে পড়ল। তুমি ভাই , মুগ্ধ না হলেও আমি কিন্তু ওকে দেখে কুপোকাত!’
তাকে নিয়ে ঠাট্টা করায় রমণীমোহন প্রথম দিকে বিরক্ত হলেও এক সময় তার মনটাতে খুশির ভাব জাগে। সে এতদিন গ্রামের কলেজে পড়াশোনা করে এসেছে। ভাল ছাত্র হিসেবে অনেক মেধাবী ও সুন্দরী মেয়েদের সাথে মেলামেশার সুযোগ পেলেও সে কখনো তাদের কাছ থেকে এমন ধরনের কথা শোনে নি।
সবাই কিছু সময় নীরব থাকার পর সাবিত্রী বৌদি নীরবতা ভাঙে,‘ বেচারীর বড়ই দু:খ একে তো ছেলেপিলে নেই তার উপর স্বামী বেচারা প্রায় প্রায়ই হিল্লি দিল্লি করে বেড়ায়। স্বামী বেচারা বাইরে গেলে কুমু বৌদিকে দেখাশোনা করার কেউ থাকে না।’
গ্রামের ছেলে রমণীমোহন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে নতুন পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয় অল্পদিনের মধ্যেই। দাদার গাড়িতে স্কুল থেকে ভাইপো, ভাইঝিকে আনা নেয়া করা ছাড়া তাকে বৌদির ফাইফরমাস তেমনটা খাটতে না হলেও দক্ষিণভারতীয় কুমারস্বামী রাজনের পত্নী কমলিনী রাজনের ফাইফরমাস কিন্তু খাটতে হয় নিত্যদিন। তার স্বামী প্রায় প্রায়ই দেশের বাইরে থাকায় কুমু বৌদির হাতের হাঠি এখন রমণীমোহন। কুমু বৌদিকে যথাসাধ্য সাহায্য করার জন্যে সাবিত্রী বৌদি তার দেওরকে প্রায় প্রায়ই বলে আসছিল। ‘ বেচারীর স্বামী বাইরে বাইরে থাকেন তাই তুমি কুমু বৌদিকে একটু সাহায্য কর। এ কারণে কুমু বৌদির বাসায় রমণীমোহনের অবাধ যাতায়াত। তাদের উপরতলার ফ্লাট একজন পুলিশ অফিসারের। তার স্ত্রী প্রায় প্রায়ই তাদের ফ্লাটে আসে, আরো আসে তাদের নিচের তলার ফ্লাটের সীমা ভাবী ও তার ননদ রিতা। সীমা ভাবী ও সাবিত্রী বৌদি কলেজে একই সাথে পড়ত। সেই সুবাদে সীমা ভাবীর সাথে সাবিত্রী বৌদির গলায় গলায় ভাব। সেও জানে তার বান্ধবীর দেওরটি কুমু বৌদির আপদে বিপদে সাহায্য করে থাকে। কুমু বৌদির বাসায় তাকে হরহামেশায় যেতে হয়।
ড্রয়িংরুমের পাশ দিয়ে যাবার সময় সীমা ভাবীর কথা রমণীমোহনের কানে যায়। ‘ বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে বুড়োটা সঙ্গ দিতে পারে না, এটা বড়ই দু:খের বিষয়। তোর রমণীমোহন একটুআধটুকু সঙ্গ দিয়ে কুমু ভাবীকে আনন্দেই রাখছে তাহলে।’ সীমা ভাবীর কথাগুলো রমণীমোহনের ভাল লাগে না। সাবিত্রী বৌদি সীমাভাবীর কথার প্রতিবাদ না করায় সে তার বৌদির উপর মনে মনে রাগ করে। রমণীমোহনের দৃষ্টিতে কুমু বৌদি ও তার স্বামী বেশই ভাল মানুষ। কুমু বৌদির ফরমাস মত টুকিটাকি কিনে আনা ছাড়া সে আর কিবা তার জন্য করে থাকে, তা সে ভেবেই পায় না।
বেশ কয়েকদিন থেকে কুমু বৌদিকে মনমরা অবস্থায় দেখে সাবিত্রী চিন্তায় পড়ে। কুমু বৌদি একদিন সব কথা সাবিত্রীকে খুলে বলে। তারা স্বামী স্ত্রী দু’জনেই কলকাতা থেকে টেস্ট করিয়ে এসেছে। টেস্টে নেগেটিভ কিছু ধরা পড়ে নি। তবে কেন তার স্বামী এত কিছু করেও তাকে সন্তান দিতে পারছে না! এটাই কমলিনীর দু:চিন্তার একমাত্র কারণ।
কমলিনী ভাবে, তাকে মা হতেই হবে। যদি তার ছেলেপুলে না হয় তবে তার স্বামীর অগাধ সহায় সম্পত্তি নয়ছয় হয়ে যাবে। সব কিছু বারভূতে লুটেপুটে খাবে। সে এক রাতে সংকল্প করে তাকে যেনতেন প্রকারে মা হতেই হবে। তার স্বামীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও তার বাচ্চা ছেলে সড়ক দুর্ঘ্টনায় মারা যায়। ওই ছেলেটিও যদি বেঁচে থাকত তবে সে অবশ্যই তার স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হত।
কমলিনীর মনে ঘোর লাগে। সে ভাবে,তবে কী সে নিজেই সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম।এক সময় তার স্বামীর সন্তান জন্ম দেবার ক্ষমতা ছিল, কিন্তু এখন তা নাও থাকতে পারে।কিন্তু তার স্বামী ও তার নিকট আত্মীয়স্বজনরা কমলিনীকে সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম বলে দোষারোপ করে থাকে।তাদের এক কথা তার প্রথম স্ত্রীর গর্ভে যদি সন্তান জন্মে তবে তার স্বামীর দোষ কীভাবে থাকতে পারে।
কমলিনী জানে, সে নিজে একজন সতী নারী। নিজের চরিত্রকে সে কখনোই কলুসিত হতে দেয় নি। পনেরো বছরের দাম্পত্য জীবনে তার স্বামী তাকে কম সুখে রাখে নি। তবুও তার সন্তান না হওয়ায় সে আজ বন্ধ্যা নারী হিসেবে সবার গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে। কমলিনী এই গঞ্জনার হাত থেকে বাঁচতে চায়।
কুমারস্বামী রাজন ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের সকালের ফ্লাইটে জরুরী কাজে এক সপ্তাহের জন্যে বোম্বের হেড অফিসে গেছেন। সাতদিন স্ত্রীর সান্নিধ্য থেকে তিনি দূরে থাকবেন এ জন্যে কুমারস্বামী রাজন রাতের রাণী কমলিনীকে রাতভোর উপভোপ করেছেন মনের সুখে। নীলাভ ডিম লাইটের আলোয় আলোকিত দুগ্ধফেনিল শয্যায় নিজেকে স্বামীর কাছে মেলে ধরে কম তৃপ্তি পায় নি কমলিনী। সুখের রেশ কিন্তু কমলিনী বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে নি, তার একটাই কারণ প্রস্ফুটিত পুষ্পে ভ্রমর ঠিকই বসে কিন্তু ফল তো ধরে না। ছেলেমেয়ের স্কুলের গরমের ছুটিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর গত পরশুর ফ্লাইটে ছেলেমেয়েকে নিয়ে সাবিত্রী বৌদি যশোরের ষষ্ঠীতলায় বাপের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে। এদিকে রমণীমোহনের বড়দা সুপ্রিয়ও দেশের বাইরে, তবে বোম্বেতে নয় কলকাতায়। তাই দেওর রমণীমোহন বাসায় থাকবে সেই ভরসাতেই তার বাপের বাড়িতে যাওয়া।
যশোর যাবার আগে সাবিত্রী বৌদি দেওরের সামনেই কুমু বৌদিকে বলেছিল,‘ এক সপ্তাহের জন্যে দেওরটিকে তোমার জিম্মায় রেখে গেলাম।দেখ, তোমার জিম্মা থেকে আমার রমণীমোহন যেন পালিয়ে না যায়।’
‘ আমি তোমার রমণীমোহনকে বাঘবন্দী করে রাখব, যাতে আমার হাত থেকে কোথায়ও পালিয়ে যেতে না পারে।’
‘ তোমার হাতে সঁপে দিয়ে গেলাম,তোমার যা করতে ইচ্ছে তাই কর, তবে দেখ ও যেন উপোস করে না থাকে।’ সাবিত্রী কথগুলো বলে মুচকি মুচকি হাসে।
রাতে দু’জনের খাবারের আয়োজন করতে করতে কমলিনী ভাবে, রমণীমোহেনের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা অর্থেই সাবিত্রী বলেছিল ‘ দেখিস উপোস করে যেন না থাকে। ’ কমলিনী বেশক্ষণ ধরে কী যেন চিন্তা করে।
পাঁচতলার পুরো ফ্লাটটাতে এখন মাত্র দুটো প্রাণী ছাড়া কেউ নেই। বাইরের থেকে এ এখানে কেউ আসতে পারবে না,এ ফ্লাটের মেইন গেটে তালা লাগানো থাকায় তারা কেউই রুমের দরজা দিয়ে ঘুমানোর অভ্যেস নেই। তাছাড়া এ ম্যানসনের মূল ফটকে দু’জন সশস্ত্র প্রহরী কড়া প্রহরায় নিয়োজিত থাকে।
রাতে কুমু বৌদির ড্রয়িংরুমে ঢুকে কুমু বৌদির বুকের দিকে চোখ পড়ায় প্রথম দৃষ্টিতে রমণীমোহন অবাক ও লজ্জিত দুই হয়। প্রায় বুক খোলা শর্ট্ লেডিস’ ফতুয়ার নিচে ব্রাহীন বুকের সুঠোল স্তনদুটোর অর্ধেকাংশ রমণীমোহনের চোখে পড়ায় সে ভাবে , আজ রাতে কুমু বৌদি এমন পোশাক পরেছে কেন? তাকে এ অবস্থায় দেখে কে বলবে সে একজন ত্রিশ উতির্ন নারী। রমণীমোহনের মনে ক্ষণিকের জন্যে কাব্যিক ভাবে উদয় হয়। পীনোন্নত পযোধর,রক্তিম ওষ্ঠ আর আরক্তিম চিবুকদ্বয়ের মোহময়তায় রমণীমোহনের মনের বিস্ময় ও লজ্জা খুশিতে পরিণত হয়।
‘ কুমু বৌদি, আজ কি তোমার বিয়েবার্ষিকী, এ জন্যেই কি তুমি এমন সাজে সেজে আছ? ’ রমণীমোহন নিজের অজান্তেই তাকে প্রশ্ন করে । বিয়ে বার্ষিকী হলে কী তোমার দাদা বোম্বে থাকতেন? তা ধর, তোমার রূপে পাগল হয়েছি।’
তারপর রমণীমোহন ও কুমু বৌদি ডাইনিং রুমে এসে পাশাপাশি চেয়ারে বসার পর সে রমণীমোহন বলে, ‘ আজ অব্দি যা তোমাকে খাওযাই নি আজরাতে তোমাকে তাই খওয়াব, তবে এখন নয়।’ কুমু বৌদির কথা শুনে রমণীমোহন কী বলবে ভেবে পায় না।
খাবার পর্ব্ শেষ হবার পর রমণীমোহন বলে,‘ঘুম পেয়েছে,এখন তবে উঠি কুমু বৌদি।’ ‘সবে তো সন্ধে, এত সকালেই তোমার ঘুম পেয়ে গেল! এতদিন সাবিত্রী বৌদির আঁচলের তলায় ছিলে এখন কিন্তু আমার----’ কুমু বৌদি কথা শেষ না করে তার পাশে বসা রমণীমোহনের দিকে মুখটা এগিয়ে সে তার গালে একটা চুমু দেয়। এতে রমণীমোহন হকচকিয়ে গিয়ে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে আবার বসে পড়ে।
‘ তুমি কি আমাকে সাবিত্রী বৌদি পেয়েছ? এখন তোমাকে আমার কথায় উঠবস করতে হবে। সন্ধে হতে না হতেই উঠি বললেই হল!’ কী বলবে রমণীমোহন ভেবে পেল না। ‘ উঠ, যেখানে আমি নিয়ে যাই সেখানে চল।’ চেয়ার থেকে রমণীমোহনকে হাত ধরে উঠিয়ে কমলিনী তাকে তার বেডরুমে নিয়ে গিয়ে পাশাপাশি ডিভানের উপর বসে সে তাকে বলে, ‘ আগে কি কখনো এখানে এসেছিলে? এতদিন এখানে আছ যদি আমাদের বেডরুমেই না আস তবে তুমি অবশ্যই ভাববে আমি তোমাকে পর পর ভাবি।’ কথা শেষ করে সে ডাইনিং রুমে গায়ে পরা অ্যাপ্রোনটা খুলে ফেলে ডিভানের এক পাশে রাখে।
ঘটনার আকস্মিকতায় এতক্ষণে রমণীমোহন বুঝতেই পারে নি রুমটাতে নিস্প্রভ গোলাপী আলো জ্বলছে। কুমু বৌদি তার গায়ের অ্যাপ্রোনটা ডিভানের উপর খুলে রাখায় রমণীমোহনের বিস্মিত হবার মত ঘটনা না হলেও সে এবার যা করল তাতে সে রীতিমত রোমাঞ্চিত ও সাথে সাথে লজ্জিত হয়।
কুমু বৌদি নিমেষ মাত্র দেরি না করে রমণীমোহনের চোখের সামনে তার গায়ের ফতুয়াটা খুলে নাইটি পড়তে থাকলে তার উদম শরীরের আনাচেকানাচেয় ক্ষণিকের জন্য রমণীমোহনের চোখ পড়তেই সে চোখ সরিয়ে নেয়। কুমু বৌদি কিন্তু সেদিকে কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ করে না।
তারপর কুমু বৌদি ডিভান থেকে রমণীমোহনকে জাপটে ধরে বিছানার উপর নিয়ে গিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে, ‘ এখন তুমি দেখতে পাবে আমি তোমাকে কেমন করে বাঘবন্দী করি। নীল কাঁচপোকা কিভাবে তেলাপোকাকে সম্মোহিত করে পাকড়া করে তা তুমি হয়ত দেখেছ। তুমি স্বেচ্ছায় আমার খাঁচায় ধরা না দিলে আমি তোমাকে নীলকাঁচ পোকার মত পাকড়াও করব।’
কিছু বুঝে উঠবার আগেই রমণীমোহন কুমু বৌদির বাহুলগ্না হয়ে তার বিছানায় যেতে বাধ্য হয়। রমণীমোহনের জীবনে আগে কখনো এমন ঘটনা ঘটে নি। সে এক সময় শিবানীকে পাগলের মত ভালবাসত, কিন্তু লঞ্চ ডুবিতে রাক্ষসী পদ্মা তাকে কেড়ে নেয়ায় সে এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
কুমু বৌদির দু’বাহুর মাঝ থেকে ছাড়া পাবার জন্যে রমণীমোহন হাত বাড়িয়ে বেড সুইজটা অন করলে নিস্প্রভ গোলাপী আলো আরো ম্লান হয়ে গিয়ে স্নিগ্ধ আলোয় রুমটা উদ্ভাসিত হয়ে উঠলে সে কুমু বৌদির চোখেমুখে কমনীয়তার লেশমাত্র দেখতে পায় না । তার চোখেমুখে কামনার বহ্নি! তাকে ওই অবস্থায় দেখে রমণীমোহনের মনে হয়, কুমু বৌদি যেন সত্যি সত্যি একটা বাঘিনী। এমন চেহারায় তো তাকে কখনো দেখি নি।
সে কুমুবৌদির হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে ডিভানে বসলে কুমুবৌদিও তার পশে এসে বসে। মুহূর্তের মধ্যে তার চোখে মুখে বিষণ্নতার আভাস ফুটে উঠায় রমণীমোহন অবাক ।।
কুমুবৌদি তাকে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,‘ আমি নষ্টা মেয়েছেলে নই। আমি যে বন্ধ্যা নারী নই সেটা প্রমাণ করার জন্যে আমি তোমাকে পেতে চাই। আমাকে করুণা কর।’ কথা শেষ করে কুমু বৌদি রমণীমোহনের হাত জড়িয়ে ধরে।
কুমু বৌদি আলোটা নিভিয়ে দিয়ে গোলাপী ডিম লাইটটা জ্বেলে দিলে রুমটার মধ্যে আবার মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কমলিনী মনে মনে বলে,‘ ওকে ছেদো কথায় কাজ হবে না। ওর মত একজন সুবোধ বালককে উত্তেজিত করে তুলে ওর যৌবনের প্রথম অভিষেক আমাকেই করতে হবে। ওকে মাতাল করে শক্তি এখনো আমার নি:শেষ হয়ে যায় নি।’
রমণীমোহন ডিভানে বসে আছে, মুখে কোন কথা নেই। কুমু বৌদি তার গা থেকে নাইটি খুলে ফেললে রমণীমোহনের চোখে পড়ে তার গায়ে ব্রাহীন ফিন ফিনে অন্তর্বাস। রমণী মোহন এক নজর সেদিকে তাকিয়ে ভাবল, অন্তর্বাস ভেদ করা সুউন্নত স্তনদুটো কী রমণীমোহনকে পাগল করে দেবে! কুমু বৌদি পাগলের মত তাকে জড়িয়ে দরে ওর গালে একের পর এক চুমু দিতে থাকে । কমলিনীর মনে হল ফিন ফিনে অন্তর্বাসের আড়ালের তার স্তন দুটো রমণীমোহনের শরীর স্পর্শ্ করার ওর শরীরও যেন উত্তেজিত হয়ে উঠছে। এক সময় কুমু বৌদির চুমুর জবাবে সেও তাকে একটা চুমু দেয়। কমলিনী মনে মনে বলে, ‘ ওষুধ ধরেছে। আমি যদি আমার বয়স্ক স্বামীকে রাতে উত্তেজিত করে তুলতে পারি তবে এই যুবক ছেলেটি কেন পারব না।’ এক পর্যায়ে কমলিনী বজ্রের মত আঘাত হানলে ছেলেটি যেন পাগল হয়ে উঠে।
পর মুহূর্তেই কমলিনী উপলব্ধি করল উনিশ বিশ বছরের একজন যুবক কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। সে তার চেয়ে বেশি বয়সী স্বামীর কাছ থেকে আজকের রাতের মত সুখ সে উপভোগ করে নি। এক সময় কমলিনীর মনে হল সে যেন বাসর রাতের কনে।
সাতদিন পরে সবাই ফিরে এল।বাঘ একবার রক্তের স্বাদ পেলে সে তার পেছনেই ছুটতে চায়। তারা ফিরে আসার আগে আরো তিন রাত কুমু বৌদিকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দেয়।
তারপরে ঘটনা সংক্ষিপ্তই বলতে হয়। কুমারস্বামী রাজন পরের মাসে বোম্বের হেড অফিসে বদলী হয়ে যাওয়ায় কমলিনীরা ঢাকার পাঠ চুকিয়ে বোম্বে চলে গেল। এদিকে সাবিত্রী বৌদি ফিরে আসার পর পরই রমণীমোহন হলে সিট পেয়ে হলে গিয়ে উঠল। ভার্সিটির পাঠ শেষ করে রমণীমোহন দাদার মাল্টিন্যাশনাল ফার্মে যোগদান করার পর থেকে সে আ.মোহন চৌধুরী নামে পরিচিত হল। চাকরী পাবার পাঁচে বছরের মাথায় সাবিত্রী বৌদির মাসতোত বোন অবন্তিকার সাথে আর,মোহন চৌধুরীর বিয়ের পর তার ভাগ্যের চাকা সামনের দিকে চলতে শুরু করল। পর পর দুটো প্রোমশন পবার পর সে তাদের ফার্মের দিল্লি অফিসের বস হওয়ায় নতুন বৌ অবন্তিকা পয়মন্ত মেয়ে বলে সবার প্রশংসা পেল। বিয়ের তিন বছর পর অবন্তিকা ছেলে জন্ম দেযায় সবচেয়ে খুশি হল তার স্বামী আ. মোহন চৌধুরী ওরফে রমণীমোহন। দিল্লিতে আর.মোহন চৌধুরীকে মোহন সাহেব বলে সম্বোধন করে থাকে। সে ইন্ডিয়া গেটের কয়েক কিলোমিটার দুরের অভিজাত আবাসিক এলাকার দশতলা ফ্লাটের সাত তলার একাংশে তারা বাসা নিল। এই ফ্লাটের সাত ও আট তলার মালিক এক দক্ষিণ ভারতীয় পরিবার। সাত তলা ভাড়া নিয়ে আট তলায় তারা নিজেরা থাকেন। মালিকের সাথে তার সাথেেআজ অব্দি দেখা হয় নি। বাড়া এগ্রিমেন্ট ও পেমেন্ট মালিকের ম্যানেজারের সাথে হয়েছে।
নতুন বাসা নেবার দিন বিশেক পরের ঘটনা, আর, মোহন অফিস থেকে সোজা ফিরে কারটাকে বেসমেন্টে ঢুকিয়ে দিয়ে ড্রাইভিং সিট থেকে নামতেই তার কারের পেছনে আর একটা কার এসে থামল। একজন ভদ্রমহিলাটি নয় দশ বছরের একটা বাচ্চা ছেলেকে, ‘ একটু ভেতরে বস বাবা,’ বলে কারের দরজা খুলে ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,‘ আমার কি চিনতে পেরেছ রমণীমোহন?’ মহিলাটির পরনে জরির সুতোর পাড়ের হালকা সোনালী রঙের সিল্কের ধুতি, বিধবা মহিলারা এ ধরনের ধুতি শাড়ির মত করে পরে থাকে। প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা দেহে ধুতিটা শাড়ির মত করে পরায় মহিলাটিকে সুন্দর লাগছে। সে এটা ভেবে অবাক হল দিল্লিতে কে তাকে রমণীমোহন নাম ধরে তুমি বলে সম্বোধন করতে পারে। এখানে তো কেউ রমণীমোহন নামে চেনে না। সে বিধবা মহিলাটির মুখের দিকে চেয়ে আমতা আমতা করে বলল,‘মনে তো করতে পারছি না, তবে কোথায় যেন আপনাকে দেখেছি।’
বিধবার পোশাক পরা বয়স্ক মহিলাটি এবার তার নিজের পরিচয় দিল। ‘ প্রায় এক যুগ পরে তোমাকে এ বেশে দেখে আমার চিনবার কথা নয়। তুমি কতটা পাল্টে গেছ। সে মহিলাটিকে বলল।
‘ নয় বছর হতে চলল আমি এ বেশে আছি। ঢাকা থেকে বোম্বে বদলি হয়ে আসার দু’বছর পরে কুমার স্বামী আকস্মিক ভাবে হার্টকে অ্যাটাকে মারা গেলে আমি অকূল পাথারে পড়ি। ঈশ্বরের ইচ্ছায় এতদিন পর আবার তোমার দেখা হল। তুমি কোথায় থাক, আর কী করছ, বিয়ে করেছ? কুমু বৌদি এক নি:শ্বাসে একগুলো প্রশ্ন করায় রমণীমোহন শুধুমাত্র দুটো প্রশ্নের উত্তর দিল।
‘ চাকুরীর সুবাদে এই ফ্লাটে সাত তলায় ভাড়া থাকি।’
‘ ওহ ! বেশ।’ এবার কুমু বৌদি তার গাড়ির কাছ থেকে একটু দূরে সরে এসে যা বলল রমণীমোহন তার মাথা মুন্ড কিছুই বুঝতে পারল না।
‘ তোমার ছেলেটি কারের সামনে সিটে বসে আছে। তা, তুমি বিয়ে করেছ? ছেলেপেলে কি হয়েছে?’ ‘ তুমি কী আবলতাবল বলছ! আমার চার মাসের একটা ছেলে আছে। প্রকৃতপক্ষে, তোমার কিন্তু সব মিলে দু’ছেলে।’
‘দু’ছেলে?’
‘ হ্যাঁ, তুমি আমাকে একটা সুন্দর ছেলে উপহার দিয়েছ।’ তার কথাশুনে রমণীমোহন রোমাঞ্চিত হল।‘ওইতো সে কারে বসে আছে, এখন ওর বযস ন’বছর কয়েক মাস। ও ঠিক যেন তোমারই মত দেখতে। যাহোক তুমি আমার রক্ষাকর্তা। তোমার স্বর্গীয়দান আমার স্বামীর উপার্জ্জিত টাকা পয়সা ও সহায় সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভে সক্ষম হয়েছে। তা নইলে আমার স্বামীর সব সহায় সম্পত্তি তার ওয়ারিশরা লুটে পেটে খেত।
এ ফ্লাটের সাততলা ও আটতলা আমার স্বামী কিনেছিলেন। কুমু বৌদির কথা শুনে রমণীমোহন তো হতবাক। ক্ষণিকের মধ্যে রমণীমোহনের মনটা পেছনে ফিরে গেল। সে ভাবল, ‘নি:সন্দেহে আমার ছেলে পুরোপুরি আমার মত দেখতে, আমার ঔরসজাত সন্তান,আমার তখন আঠারো উনিশ বছর বয়স, আর মহিলাটি আমার চেয়ে পনেরো ষোল বছরের মত বড়্। আমার অজান্তেই ছেলেটির জন্ম। গত বছরে সে বেড়ে উঠেছে।’
‘ আমাকে খারাপ মেয়েছেলে ভাবটা তোমার পক্ষে অস্বাভাবিক নয়। বিয়ের পনেরো বছরের মধ্যে যে স্বামী আমাকে সন্তান দিতে পারল না তার ভরসা করে নি তার অগাধ সম্পত্তি আর ব্যাংক ব্যালান্সকে রক্ষা করতে পারতাম?’ কমলিনী তাকে বলল।
রমণীমোহনের মুখ থেকে কোন কথা বের হল না।
‘ আমি চাইনে তুমি এখনো আমার কাছে বাঘবন্দী হয়ে থাক। তুমি এখন তোমার বাসায় যাও। আমি একটু পরে উপরে যাব। রমণীমোহন কী যেন বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার কোন না শুনে সে সেখানে থেকে প্রস্থান করল।
Tags:
গল্প