তুই যখন এলি একটা প্লাবন এল জানিস! বাতাসের গা বেয়ে ধানক্ষেতের ঢেউ তোলা সবুজ আঁচল ছুঁয়ে যেন উৎসব নামল আমার দোর গোড়ায়। সাঁঝের আলোয় ঝলমল করে উঠল অন্তঃপুরের ঝাড়বাতি। সেদিন আমার সঙ্গী হল অন্ধকারের উষ্ণতা, আমার ভালবাসার শুকতারা, শ্রাবণের অঝোর বৃষ্টিধারা আর দূরের ঐ পাহাড় মেঘ আকাশ।
তুই থাকতে এলি এমন চুপিসারে জানলনা না কেউ। জানল শুধু সেই সন্ধিক্ষণের আগুনশিখা, বর্ষার সজল মেঘ আর জ্যোৎস্না রাতের মায়াভরা আকাশ।
জানলার পাশে চড়াই আর কাঠবিড়ালির কিচির মিচির জানিয়ে দিল ওরা জেনে ফেলেছে তোর আসার গোপন খবরটুকু।
কোনদিন মাঝরাতের তারারা চুপি চুপি মায়া ছড়াতে এলে জানলা খুলে ছুঁয়ে ফেলতাম সেই সুখ আর আনন্দ- ইশারার হাতছানি। তোর জন্য বাঁচিয়ে রাখতাম মুঠোভরা তারার আলো, আর জোনাকি পোকার সুন্দর তা তুলে এনে ভরে দিতাম তোর বুকে। তুই চুপটি করে দেখতিস, হয়তো খুব মজা পেতিস। আমরা দুজনে কবে জানি একে অপরের অস্তিত্বে মিশে একে একে ক্ষিদে, দুঃখ, সুখ ভাগ করলাম, এমন কি শ্বাসও। শরীরে শরীর পেতে ভাগ করলাম সব যন্ত্রণা। তুই লেপ্টে থাকতিস আমার বুকের ভিতর সব উত্তাপ শুষে নিয়ে।
আস্তে আস্তে আমাদের নিজস্ব পৃথিবী গড়লাম; জ্ঞানবুদ্ধি বিবেক রাখলাম পথের ওপর, ঈশ্বরীয় করুণার আলো জ্বেলে দিলাম অন্ধকার কে দূরে রাখতে। তোর চোখে ভরে দিলাম শরতের শিশির ভেজা রোদ, টুকরো স্বপ্নের রামধনু রঙ, চড়াই পাখির চঞ্চলতা, পুকুরের কালো জলের গভীরতা আর দূরের ঐপাহাড় পাহাড় মেঘের অনঘ সরলতা। পিঠে দিলাম সোনালি পাখনা যাতে নীল ভেঙ্গে ভেঙ্গে ছুঁয়ে ফেলতে পারিস চাঁদের অপরূপ স্তব্ধতা। বুকের মধ্যে রাখলাম চাঁপাফুলের সৌরভ, রক্তে ভাসিয়ে দিলাম আত্মগর্বী চেতনার নির্যাস। চোখ মেললি তুই এক বৈশাখী রাতের নৈশব্দ ভেঙ্গে আমার অন্তরের সব আলো জ্বেলে দিয়ে।
আজ অনেকদিন পর যখন আলাদা হল শরীরের চেতনা, অনেক প্রশাখায় বিভক্ত হল ভাবনার ডালপালা, বর্তমানের রুক্ষতায় পা ফেলার বাস্তবতা মান্যতা পেল, তখন এই অক্ষম চোখের ছায়া পথের আদ্রতায় শুধুই নুয়ে পড়া অসহায়তার সীমাহীন কালাতিপাত।
Tags:
মুক্ত গদ্য