আমাদের মাতৃভাষা
মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের মতো। মাতৃভাষাকে অপমান করা মানে নিজের মাকে অপমান করা। এসব তো অনেক হল। সেই কোন ছোটবেলা থেকে দেখে শুনে আসছি, লোকদেখানো আধুনিকেরা বলে চলেছেন, "বাংলা আমার ঠিক আসে না।" কত না অভিভাবকদের দেখেছি গর্বে বুক ফুলিয়ে বলতে, "বাংলা ও ঠিক মতো পারে না।" প্রায় ত্রিশ বছর ধরে শিক্ষকতা করার দরুণ এবং আমার বিষয়টা যেহেতু বাংলা, তাই এসব দেখে শুনে এখন আর মন্তব্য করতে রুচি হয় না। তাই একটা বিষয়ের প্রতি আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অনেকেই হয়তো জানেন বা জানেন না, আই এস সি বোর্ডের অন্তর্গত স্কুলগুলিতে বাংলা এতদিন দ্বিতীয় ভাষা ছিল। এখন বাংলা অপশন্যাল্। অর্থাৎ তুমি বাংলা নিতেও পারো, নাও নিতে পারো। এই নিয়ে কোনো আন্দোলন নেই। অথচ এই বিষয়টা নিয়ে রাজ্যজুড়ে একটা বিরাট আন্দোলনের সম্ভাবনা ছিল। আন্দোলন দূরের কথা, এই ঘটনাটি রাজ্যের মানুষ জানেই না। সরকারেরও তদন্তকোনো হেলদোল নেই। জানি না এর পিছনে তাদের কোনো স্বার্থ আছে কি না। অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু রাজ্যে আমরা এরকম ভাবতে পারি? সেখানে ওই রাজ্যের মাতৃভাষা না শিখে অন্যরাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের স্কুলজীবন অতিবাহিত করা কল্পনারও বাইরে। অথচ আমাদের রাজ্যে দেখুন!
আর একটা কথা। মানুষের উদ্দেশ্যে বলছি। এরমধ্যে আমি আপনি সবাই পরি। আপনি মাতৃভাষা ছাড়া যতগুলি ভাষাতেই পারদর্শী হোন না কেন, সেই ভাষাগুলি যখন আপনি শোনেন তখন তার অর্থ কোন ভাষার মাধ্যমে আপনার মধ্যে প্রবেশ করে? মাতৃভাষা ছাড়া এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। পৃথিবীর সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রে এটা সমানভাবে সত্য। এটা একবার ভেবে দেখেছেন? তাই আপনি যখন বলেন, "বাংলাটা ঠিক আসে না", তখন একজন মানুষ হিসেবে লজ্জা হয় না?
ঐতিহাসিক প্রস্তাব
অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে ধন্যবাদ জানানোর কোনো ভাষা নেই। তিনি তাঁর বাজেটে প্রস্তাব রেখেছেন, কোনো সন্তান যদি তার পিতামাতাকে না দেখে তাহলে তার মাসিক বেতন থেকে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা কেটে নেওয়া হবে। তারপর সেই টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে মা বাবার কাছে। হিমন্তের এই প্রস্তাব ভারতের প্রতিটা রাজ্যে যেন অনুসরণ করা হয়। বাবা মা অনেক কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করেন। তাই তাদের দুঃখ সভ্যতার লজ্জা। কুসন্তানদের এইভাবে ভাতে মারারই দরকার।
সোনার মেয়ে জুলেখা
৮ মার্চ। নারীদিবস। তার আগে এক সোনা মেয়ের গল্প। নাম জুলেখা। মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের মহরুল গ্রাম পঞ্চায়েতের সিঙ্গার হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। রাজমিস্ত্রি পাত্রকে ফিরিয়ে দিয়ে এখন সে পড়াশোনায় মগ্ন। সত্যই এদের জন্য ভারতবাসী হিসেবে গর্ব হয়। রাজমিস্ত্রি পাত্রকে বিয়ে না করায় বাবা মা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। জুলেখা এখন স্কুলেই নিজের বাড়ি তৈরি করে নিয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ জুলেখার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যাঁরা জুলেখার পড়াশোনার খরচ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন।
জুলেখা, এগিয়ে চল। অসংখ্য নারীর চোখে আঙুল দিয়ে তুমি দেখিয়ে দিচ্ছ কাকে বলে নারীবাদ। কথায়, চালচলনে, খাদ্যদ্রব্যে নারীবাদ নয়। নারীবাদের আসল প্রকাশ কাজে।
Tags:
সোজা সাপটা