হলদিয়া বিশ্ব বাংলা কবিতা উৎসব- ২০১৭

হলদিয়া বিশ্ব বাংলা কবিতা উৎসব- ২০১৭

উৎসব মুখরিত হয়ে থাকতে ভালবাসে সবসময় এই রাজ্যের নাগরিকেরা। কিন্তু কবিতা নিয়েও যে এত বড় উৎসব হতে পারে তা হলদিয়া বন্দর শহরে "সংবাদ সাপ্তাহিক আপনজন পত্রিকা" আয়োজিত (২১-২৩)জানুয়ারি নবম বিশ্ব বাংলা কবিতা উৎসব-২০১৭ তে না এলে বুঝতে পারতাম না। 

সত্যি এ যেন কবিতার ভুবনে এক মগ্ন অবগাহন। "শুধু কবিতার জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি..." এই লাইন আমাদের বলে যায়, কবিতা যারা ভালবাসেন তাদের কতটা ঘিরে থাকে কবিতা। আর তাই, তিনটি দিন ধরে শীতের আমেজ মাখা হলদিয়া মেরিন কলেজের বিশাল প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ( কলকাতা সহ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, বীরভূম, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, পুরুলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তরবঙ্গ), বহির্বঙ্গ ( আসাম, ত্রিপুরা, ওড়িশা, দিল্লি, ঝাড়খণ্ড, আন্দামান, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র) ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আগত চার শতাধিক কবি সাহিত্যিক শিল্পীদের সমাগমে। তাদের কবিতা পাঠে। 

২১ জানুয়ারি বেলা এগারোটায় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব গুহ, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, অমর মিত্র, অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রাক্তন সাংসদ লক্ষণ শেঠ, সভাপতি নলিনী বেরা(কবি ও সাহিত্যিক), সাধারণ সম্পাদক শ্যামলকান্তি দাশ(কবি ও সম্পাদক), সায়ন্তন ও সুদীপ্তন শেঠ ("আপনজন পত্রিকা"র প্রকাশক ও সম্পাদক) সহ ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত অসংখ্য কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-জ্ঞানী-গুণীজনের উপস্থিতিতে শুরু হয় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন পর্ব। উদ্বোধন হয় হলদিয়া কবিতা উৎসবের প্রধান হোতা ও চালিকাশক্তি সদ্য প্রয়াতা কবি তমালিকা পণ্ডা শেঠের পূর্ণাবয়ব মূর্তি উন্মোচন করে। তারপর জাতীয় পতাকা উত্তোলন। তমালিকা পণ্ডা শেঠ স্মৃতিমঞ্চে বটবৃক্ষ ও জলপূর্ণ পাত্রে অঞ্জলিপ্রদান এবং দীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে শুরু হয় প্রথম অধিবেশন পর্ব। একে একে উদ্বোধনী সঙ্গীত, নবম বিশ্ব বাংলা কবিতা উৎসব স্মারক সংকলন প্রকাশ ও গুণীজনের বক্তব্য শেষে প্রদান করা হয় আপনজন স্মারক সম্মাননা ২০১৭'। 

মধ্যাহ্ন ভোজনের বিরতির পর বসে কবিতা পাঠের আসর। সঞ্চালক আশিস মিশ্রের সুযোগ্য পরিচালনায়, কবিদের মন্দ্র, জলদগম্ভীর উচ্চারনে বদলে যায় সমস্ত পরিবেশ। মঞ্চে অপেক্ষারত উপবিষ্ট কবিগণ ও দর্শকাসন পরিপূর্ণ করে রাখা শ্রোতাবৃন্দ সবাই মন্ত্রমুগ্ধ। কবিতাতেই তো বলে ফেলা যায়--- 

"নিজের অতল থেকে তুলে আনি মাটি, দেশ ও গোটা একটা জাতি
একটা মানুষ একাই একটা পৃথিবী।" 

অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণের প্রতিটি কোণে ধ্বনিতরঙ্গবাহী যন্ত্রে ভেসে বেড়াচ্ছিল নবীন কবি থেকে আরম্ভ করে প্রতিষ্ঠিত কবিদের কণ্ঠস্বর। কবিতায় শোনা যাচ্ছিল কখনও কবির আত্মমগ্ন উচ্চারণ, কখনো প্রতিবাদী স্বরক্ষেপণ, কখনো তা হয়ে উঠছিল শ্লেষাত্মক বা বিদ্রূপাত্মক, আবার কখনো নির্মল হাস্যরসের ধারা। কবিতার সঙ্গে মননশীল সাহিত্য আড্ডা, আলোচনা, ঝুমুর নৃত্য, বাউল গান, গল্পপাঠ, বাচিক শিল্পীদের গমগম করে ওঠা শব্দঝঙ্কার, ২১ ২২ ২৩ পর পর তিনটি দিন(সকাল ন'টা থেকে রাত ন'টা) সমগ্র অনুষ্ঠানকে একদিকে যেমন বৈচিত্র ও বহুমাত্রা দান করেছে তেমনি করে তুলেছে একঘেয়েমিমুক্ত, উচ্ছল ও প্রাণবন্ত। সেই সঙ্গে আয়োজকদের সাদর আপ্যায়ন, অতুলনীয় ব্যবস্থাপনা, সকাল-দুপুর-বিকেল ও রাতের সুস্বাদু ভোজন, নির্বিঘ্নে রাত্রিযাপনের উত্তম ব্যবস্থা, উপহার, সাম্মানিক... কবি-সাহিত্যিকদের পারস্পরিক ভাবের আদানপ্রদান, বই ও পত্র-পত্রিকা বিনিময়ে এক প্রকৃত উৎসবের আনন্দে, প্রাণের আবেগ-আবেশে মোহময় হয়ে উঠেছিল মেরিন কলেজ প্রাঙ্গণ। তিনটি দিন ধরে নির্ভার এই আনন্দযজ্ঞে সামিল হওয়ার সুন্দর স্মৃতি সবার মত আমার অন্তরেও অমলিন হয়ে থাকবে বহুদিন। পরম বিশ্বাসে এখন আমিও বলে উঠতে পারব- 
















ইচ্ছে হলেই আমি এখন গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারি 
বেজে উঠেছে হুইসেল
আমি দাঁড় টানি। 

প্রতিবেদক -
 সুমিত্রা পাল 
হলদিয়া 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

নবীনতর পূর্বতন