আমি সেই মেয়ে
আমি সেই মেয়ে,
জীবনের আলো দেখার আগেই যাদের
শ্বাসরুদ্ধ করেছো তোমরা মাতৃজঠরেই।
মাটির অতল গহ্বরে, অন্ধকার কবরে
শায়িত করেছো যাদের অবহেলায়।
ধিক্কার জানাই আমি তোমাদের পৌরুষ সত্ত্বাকে
পিতৃত্বের মুখে কালিমা লেপন করেছে
তোমাদের মতো কিছু কাপুরুষ মাতৃহন্তা॥
আমি সেই মেয়ে,
প্রতিনিয়ত যাদের শ্লীলতাহানি করে চলেছো
তোমরা পথে ঘাটে, ট্রামে বাসে।
প্রতিবাদে মাথা উঁচু করলেই অ্যাসিডে ঝলসে
দিয়েছো যাদের অস্তিত্বকে,
পৌরুষের ধ্বজা উড়িয়ে।
মাথা নত হয় আমার , লজ্জায় , ধিক্কারে,
তোমাদের মতো পাশবিক অস্তিত্বের
জন্মদাত্রীও যে আমিই॥
আমি সেই মেয়ে ,
অসহায় পিতার পণের দাবী মেটানোর অক্ষমতায়,
যাদের তোমরা করেছো অগ্নিদগ্ধ,
লাঞ্ছনা, গঞ্জনায় জর্জরিত করে বাধ্য করেছো
যাদের আত্মঘাতী হতে।
ঘৃণার চাবুকে করেছি ক্ষত বিক্ষত আপন মাতৃসত্ত্বাকে,
তোমাদের মতো বুভুক্ষু পশুর দেহ যে
আমারই রক্তমাংসে গড়া॥
আমি সেই মেয়ে,
নষ্টা বলে যাদের করেছো তোমরা সমাজচ্যুত,
অথচ রাতের আঁধারে তাদেরই সাথে
মেতেছো ঘৃণ্য সম্ভোগের খেলায়।
আমি তাদেরই একজন,
যাদের যৌবনকে জরীপ করে চলেছে অহরহ
তোমাদের কামাতুর লোলুপ দৃষ্টি ।
যারা ধর্ষিতা প্রতিদিন তোমাদের হাতে,
প্রায়শই যাদের গলিত শব পাওয়া যায়
ক্ষেতে, জঙ্গলে , খালে বিলে॥
আর কতোকাল থাকবে তোমরা পৌরুষের
মাদকতায় মত্ত হয়ে?
চোখ মেলে দেখো, আমি সেই নারীসত্ত্বা
যার জঠরে জন্ম নিয়েছো তোমরা ।
আমি সেই নারীসত্ত্বা, যাকে তোমরাই
অধিষ্ঠিত করেছো দেবীর আসনে,
পূজিত করেছো নারী শক্তি রূপে ।
আর আজ তাকেই অহরহ করে চলেছো বিবস্ত্র
পৌরুষত্বের উন্মাদনায়?
ধিক্!
Tags:
দীর্ঘ কবিতা