অ্যাক্রোপলিস মলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল বিদিশা। অয়ন আসবে বলেছে ঠিক পাঁচটায়। সকালে যখন ফোন করেছিল, ও বেশ অবাকই হয়েছিল। স্কুল থেকে ছাড়াছাড়ি হবার পর, অয়ন হেরিটেজে কমার্স আর বিদিশা আশুতোষে মাসকম্যুনিকেশন এণ্ড জার্নালিজম নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। কিছুদিন যোগাযোগ ছিল। তারপর আস্তে আস্তে যে-যার ফিউচার নিয়ে ভাবতে ভাবতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। শেষে শুধু ওই বার্থ-ডে উইশ ছাড়া ফোনটোন হত না। পাশ করে বেরনোর পর অয়ন একটা রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হল। বিদিশা কলকাতার একটা নামকরা ইংরেজি দৈনিকের ইন্টার্নশিপে যোগ দিয়েছিল।
তারপর পাঁচ বছর কেটে গেছে। একদিনের জন্যও বিদিশার সঙ্গে অয়নের দেখা হয়নি। আজ এতদিন পর তারা মুখোমুখি হবে।
কে যেন গায়ে ঠেলা দিল। বিদিশা চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে অয়ন। সেই দুষ্টুমিষ্টি হাসি। যা একসময় তাকে পাগল করত। অয়নও কি তাকে পছন্দ করত?
“কিরে চ’, দাঁড়িয়ে থাকবি ! আমার হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই।” অয়ন তাড়া লাগায়।
“দাঁড়া, তোকে একটু ভাল করে দেখি।”
“দেখাদেখি পরে হবে, এখন আয়—”
অয়ন একরকম জোর করে বিদিশাকে টেনে মলের মধ্যে হপিপোলা কাফেতে নিয়ে বসাল। কফি আর চিকেন রেশমি কাবাব অর্ডার দিয়ে বিদিশার দিকে চেয়ে বলল, “বল, কি বলবি বলে ডেকেছিস?”
“কি জানিস অয়ন. আসলে আমার বাবা খুব অসুস্থ। ওনার ক্যানসার ধরা পড়েছে—”
বিদিশাকে কথা শেষ করতে দেয় না অয়ন। “ঠিক আছে, পরে শুনছি। আগে তো কফিটা খাই আয়।”
কফি এসে যেতে অয়ন যেন কেমন ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আনমনে একটা কাবাব তুলে মুখে দিয়ে কফির কাপে চুমুক দিল। তারপর জিনসের পকেট থকে একটা খাম বের করে বিদিশার হাতে দিয়ে বলল, “ আমার একটা খুব জরুরি কাজ মনে পড়ে গেল। এক্ষুনি যেতে হবে।
যাওয়ার পর খামটা দেখিস। সব খেয়ে যাবি কিন্তু । “
এরপর অয়ন কফির বিল মিটিয়ে দ্রুত কাফে ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
অয়ন চলে যাওয়ার পর বিদিশা খামটা খুলল। একটা চেক তার নামে এক লাখ টাকার। আর একটা চিঠি।
“ডিয়ার বিদিশা, সকালে তুই ফোন করার পর আমি তোর বন্ধু মধুরিমাকে ফোন করেছিলাম। কেননা, তোর সম্বন্ধে অনেক কথা শুনছিলাম কিছুদিন ধরে। তুই আজকাল অন্যরকম লাইফ লিড করছিস। বন্ধুদের নিয়ে ডিসকে যাচ্ছিস। দেদার দামি সিগারেট খাস। মদ খেয়ে নেশা করে অনেক রাত্রে ফ্ল্যাটে ঢুকিস। পরদিন সকালে হ্যাংওভার থাকে। অফিস যেতে পারিস না ঠিক মত। গত মাসে ওরা তোকে স্যাক করেছে। তাই এখন নেশার টাকা জোগাড় করতে বাবার ক্যানসারের গল্প বানিয়ে ফেসবুকে বন্ধুদের কাছে সাহায্যের আবেদন পোস্ট করছিস। অথচ মধুরিমা বলল, তোর বাবা হার্ট অ্যাটাকে দু’বছর আগেই মারা গেছেন। আর আমি তোর সম্বন্ধে যা যা শুনেছি সবই সত্যি। বিদিশা, তুই আমাদের বন্ধু ছিলিস, ভাবতে খারাপ লাগে সামান্য নেশার জন্য জীবনটা নষ্ট করবি? ওসব ছেড়ে দে। আমি তোকে একটা চেক দিলাম, সংকোচ করিস না, যদি তোর কোন কাজে লাগে। পারলে আবার কোন কাগজে বা চ্যানেলে জয়েন কর। তোর লেখার হাত সত্যিই খুব ভাল। ওটাকে নষ্ট করিস না। আমার কিশোর বয়সের প্রথম ভালোলাগা তুই, এভাবে হারিয়ে যাস না। প্লিজ….ফোন করিস। অয়ন।”
কফি কাবাব সবই পড়ে আছে। অয়ন তার মিথ্যেটা ধরে ফেলেছে। বিদিশা অয়নের দেওয়া এক লাখ টাকার চেকটা টুকরো টুকরো ছিঁড়ে কাবাবের প্লেটে রেখে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ল।
Tags:
অণুগল্প
ভালো লেখা