দীর্ঘ ছ ছটা বছর কাঞ্চনের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই । ও ফোন করলে আমি ধরি না । ফেসবুক হোয়াটস্ অ্যাপে ওকে ব্লক করে রেখেছি । আজ সক্কালবেলা বলা নেই কওয়া নেই মালটা দেখি এসে হাজির । মুখে নিম পাতার স্বাদ নিয়ে এক কাপ লিকার চা সামনে ধরে দিলাম । দিতেই হল । নাহলে শুঁড়িখানায় নিজের মান জলের দামে বিকোবে । চা টা খাচ্ছে ও তারিয়ে তারিয়ে । বিস্কুটগুলো ছোঁয়নি । ঠিক করলাম চলে গেলে ডাস্টবিনে ফেলে দেবো ওগুলো। ঠিক তখনই বাবির ফোন ।
- আমার লাল ড্রেসিং গাউনটা কোথায় রেখে গেছিস দিদি ? খুঁজে পাচ্ছি না । ’
- আমার লাল ড্রেসিং গাউনটা কোথায় রেখে গেছিস দিদি ? খুঁজে পাচ্ছি না । ’
দ্যাখ না সবুজ ব্রীফকেশটায় রেখে এসছি মনে হয় ...
দেখলাম । নেই ওখানে ।
তাহলে খুঁজে নে নিজে ! আমি ব্যস্ত ।
আড়চোখে কাঞ্চনকে দেখি চা শেষ করে ও একমনে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে । বিরক্তিতে গা জ্বলে যায় । রাগে মাথা দপদপ করে । জিভ শুকনো । কতক্ষণ বসবে কে জানে ? উটকো আপদ ! চড়াম করে সব রাগটা গিয়ে পড়ে বাবির ওপর । লাল গাউন পরে উনি যাবেন পার্টি অ্যাটেন করতে । সুখের চোদ্দ পোয়া । এদিকে বড়দিদি সুগার প্রেশার কোলেস্টরল অ্যালঝাইমার সব নিয়ে কয়েদী সেজে বসে । কি করলি তুই দিদির জন্য ? না অফিস থেকে বড় প্যাজেরোটা পাঠিয়ে ফোন করে বলে দিলি , দিদি ডাক্তারখানা চলে যা ...... ড্রাইভারকে বলাই আছে ! ’
কিচেনে প্রেশার কুকারটায় হুশহুশ করে পরপর তিনটে সিটি পড়ে গেল । দৌড়ে গিয়ে একটা চামচ দিয়ে হুইশলটা তুলে ধরলাম । কিছুটা স্টীম বের না করে দিলে খাবার সময় ভেতরের বস্তুটা আর চেনা যাবে না । গলার কাছে হৃৎপিন্ডটা লোফালুফি করছে । হঠাৎ দৌড়ে আসার ফল । চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা । নির্ঘাৎ সুগার ফল করেছে । স্নায়ু উত্তেজনাকে কোনো রকমে বাগে রেখে কেঠো স্বরে কাঞ্চনকে বললাম , আজ এসো ।
হঠাৎ ভীষণ ঘাম হচ্ছে । হাত পাগুলোও কেমন যেন ঝিমিয়ে আসছে । হায় আল্লা ! স্ট্রোক ফোক হবে না তো ? ডক্টর বলেই রেখেছিলেন এমন সিমটম দেখলে মিস্টি বা মিস্টি জাতীয় খাবার যা হোক কিছু খেয়ে নেবেন ।
কাঞ্চনের এঁটো কাপটা দেখে মনে পড়ল ও চায়ে চিনি খায়নি । কিন্তু কাপের পাশে ওটা কি ? কে আনল ? স্বচ্ছ পলিথিনের প্যাকেটের ভেতর গোটা ছয়েক বড় রসগোল্লা । নতুন গুড়ের ।
সুচিন্তিত মতামত দিন