জয়া চৌধুরী

ভগবানের শাস্তি









বিশিষ্টতম ব্যক্তি কে রাজা বলা হয়- হ্যাঁ এটাই দেখলাম রাজা শব্দের অন্যতম অর্থ। তো স্বাধীন ভারতে তো রাজার বালাই নেই বলেই জানতাম। নেই মানে স্বাধীন ভারতের অনেক কিছুই গোলমেলে ঠেকে। এই ধরুন গে আইন শাসন বিচার তিনটে বিভাগ আলাদা। কেহই না কি কাহারো ওপরে ছড়ি ঘুরাইতে পারিবে না। তার মানে তারা সকলেই নিজেরাই বিশিষ্ট তম ব্যক্তি। ওদিকে সংসদের নিচের বাড়িটির নেতা হলেন প্রধান মন্ত্রী। মানে জনসাধারণের দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত ব্যক্তিদের নির্বাচিত বিশিষ্টতম ব্যক্তি তিনি। ওদিকে ফাঁসীর হুকুম রদ করার অধিকার থেকে ভিন্ন দেশে সারজিক্যাল অ্যাটাক হবে না কি কসমেটিক সার্জারি করা হবে সীমানা অঞ্চলে ...ইত্যাদি কঠিন বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার আছে কেবল রাষ্ট্রপতিরই। তো তিনি বিশিষ্টতম ব্যক্তি হলেন না? তাহলে এক দেশে কয়জন রাজা থাকবেন? আর সংবিধান থেকে শুরু করে জাপানি তেল কিংবা শিলাজিত এর বিজ্ঞাপন ছাপানো পত্রিকাগুলি... সব জায়গাতেই তো দেশের সাধারণ মানুষকেই সর্ব শক্তিমান বলে বর্ণনা করা হয়েছে। পাঠক মনে করুন ভোটের সময় কাদের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে? তাহলে বিশিষ্টতম ব্যক্তি কি সেই জনগণেশ ভদ্রলোকই নন? তা “রাজা হওয়া কি মুখের কথা”- রে ভাই! এ সত্য জানতেন স্বয়ং রামপ্রসাদ মশাই। 

অতএব শেষ লোকসভা নির্বাচনে জয় লাভ করে একজন বিশিষ্ট তম ব্যক্তি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী হলেন কোট আনকোট আমাদের “চাঁদিবাবু”। রাজা চাঁদিবাবু র একদিন হঠাত মনে হল তিনি একটি “দাগ” রেখে যাবার মত কাজ করে যাবেন। সকলেই জানেন তিনি গুজরাটে কী সব ইকিড়মিকিড় কাজ করার পরে সারা বিশ্বে নিন্দিত হয়েছিলেন, মায় এমনকী ভূস্বর্গে গোলোকধাম মার্কিন মুল্লুকে তাঁর ঢোকা বারণ হয়ে গিছিলো। এই সময় থেকেই তিনি ঘুরে দাঁড়ালেন। ঝটিতি সব কালা দাগ মুছে দিয়ে সফেদ দাগ বসানোর উদ্যোগ নিলেন। তা সে পথে অনেক পক্ককেশ লুপ্তকেশ বৃহদ্দাড়ি স্বল্পদাড়ি কিংবা মাকুন্দদের ডজ করে, সাইড করে, ব্যকভলি দিয়ে কিংবা গোলপোস্টের ওপর দিকে গোলকিক উড়িয়ে দিয়ে অবশেষে সিংহাসনারূঢ় হলেন। স্বামীজি বলেছিলেন না ? “জন্মেছিস যখন একটা দাগ রেখে যা” , আবার ওদিকে সার্ফ ওয়ালারা তো বলেই দিয়েছেন “দাগ আচ্ছে হ্যাঁয়”। অতএব তিনি ক্ষৌরকারের মত ছুরি হাতে ময়দানে নামলেন। এবং হঠাত একরাতে কালো ধন দূর করতে সবার হাতের টাকা কেড়ে নিলেন। ব্যাঙ্কে দাঁড় করিয়ে দিলেন ইচ্ছে মাফিক, বেশ কিছু মানুষ চোখ উল্টালেন, ও নানান স্তরে একটা হল্লা মচে গেল। মানুষ ভাবতে লাগল... এই হল আসলি বাঘের বাচ্চা। কাগুজে নোট আর কাগুজে বাঘ সকলের কাছে একরকম মূল্য রাখে না পাঠক। এবং এতদ্বারা জীবনের ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে তাহার আধিপত্য সূচিত হইল। তিনিই একক রাজা হইলেন।

এইবার এল প্রজার কথা। রাজতন্ত্র না থাকলেও যদি রাজা থাকেন তাহলে আর প্রজা থাকতে বাধা কই!! প্রজারা সকলে কেমন খুশি, সে খুশীর বহর হয়ত নিজে মাঠে না নামলে বোঝা যাবে না কতটা। রাজা ঘোষণা মাত্রই এক বৃহৎ সংখ্যক প্রজা খুশী হলেন। তাদের মধ্যে পড়ও আছেন আনপড়ও। আমরা চিরকাল বর্তমান ভুলে হয় অতীত নিয়ে চিবোই গরুর রোমন্থনের মত নাহলে ভবিষ্যতের স্বপ্নে মশগুল হয়ে থাকি। সত্তরের টালমাটাল সময়ে অমিতাভ বচ্চন যে স্বপ্নের সওয়ারী হয়ে মন ভুলিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হলেন অভিনেতা । অথচ স্বাধীন ভারতে রাজনীতির নেতারাই হয়ে গেলেন অভিনেতা। তাই মন ভোলানোর যত রকম ট্রিক তাদের জানা আছে সব প্রয়োগ করতে লাগলেন। যে কাজটিতে সার বস্তু না থাকলেও চলে শুধু কিছু সময়ের জন্য গণসম্মোহন করা জানতে হবে। এখনকার রাজা ও সেই পি সি সরকারের মত গণসম্মোহক হবার সাধনা করেছেন। তাই ৫০০/১০০০ এর কারেন্সী নোট তুলে নেবার মত অর্বাচীন কাজের ফল স্বরূপ কালোটাকা নির্মূল হবার গ্যাস বেলুন ছড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ সেটাকে সঠিক পথ বলে জড়িয়ে ধরেছেন বিদ্বান ওদের এক বড় অংশ। আর গরীব মানুষ চিরকালই আমাদের দেশে সহ্য শব্দটাকে চামড়ার মত অঙ্গীভূত করে জীবন কাটান। তাদের কাছে অর্থনীতির কচকচি বোঝার চেয়ে কালো টাকা দূর হবে আর গরীবের উপকার হবে এমন অতিসরলীকরণের তত্ত্ব যে চোখ বুজে মানা সহজ এতে আশ্চর্য কী!

অথচ আশ্চর্যের বিষয় এদেশ বিদেশ কোনো জায়গার কোনো বিশেষজ্ঞ এখনো পর্যন্ত এই কাজটিকে সদর্থক কাজ বলেন নি। এক অস্ত্রে দুই কোপ মারা। পকেটও ভরা যাবে আবার দেশদরদী হবার পথও প্রশস্ত। নইলে এমনিতে রাজনীতির নেতাদের মানুষ এখন আগের মত শ্রদ্ধা ভক্তি করেন বলে তো দেখি না। তবে যে দেশে অভিযোগ প্রমাণ করবার দরকার নেই জনগণকে টুপি পরালেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যায় ( বোফরস কেস মনে করুন), সে দেশে নেতাদেরও ভয় নেই। তারা নির্বিচারে অভিনয় করে যান। আর আমরা আস্তিক মানুষ “ভগবানের শাস্তি” নামক অলীক বস্তুটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি। নেতারা আরো দামী পোশাক পরুন আর জনগণকে কৃচ্ছ্রসাধনের বাণী আওড়ান... পাঠক ততদিন না হয় আসুন “তুই ভাল না মুই ভাল” এমত কাগুজে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকি।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

নবীনতর পূর্বতন